লক্ষ্মীরতন শুক্লা – বাংলার গর্ব ~ Biography of Laxmi Ratan Shukla in Bengali


ভূমিকা:  

লক্ষ্মী রতন শুক্লা একজন নামকরা প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেটার এবং এক জনপ্রিয়   রাজনীতিবিদ। ক্রিকেটের জগতে  তিনি  ছিলেন ডানহাতি মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান এবং ডানহাতি মিডিয়াম পেস বোলার। লক্ষ্মীরতন শুক্লা   বেঙ্গল ক্রিকেট দলের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন এবং   তিনি আইপিএল দলের কলকাতা নাইট রাইডার্স, দিল্লি ডেয়ারডেভিলস এবং সানরাইজার্স হায়দরাবাদেও খেলোয়াড় ছিলেন।পরবর্তীকালে তিনি সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিনিধিত্বকারী পশ্চিমবঙ্গের আইনসভার সদস্য ছিলেন এবং ২০২১ সালের  ৫ ই জানুয়ারী মন্ত্রীর পদ থেকে তিনি পদত্যাগ করেন।

লক্ষী রতন শুক্লার জীবনী

প্রথম জীবন:

লক্ষ্মী রতন শুক্লা পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া জেলায় ১৯৮১ সালের ৬ই মে জন্মগ্রহণ করেন।  শ্রী হনুমান জুট মিল হিন্দি উচ্চ বিদ্যালয় এবং লিলুয়ার ডন বসকো হাই অ্যান্ড টেকনিক্যাল  স্কুলে প্রথম জীবনে তিনি অধ্যয়ন করেছিলেন।   

লক্ষ্মীরতন শুক্লা – ক্রিকেট জীবনে প্রবেশ:

 ১৯৯৭– ৯৮ সালে  মাত্র সতেরো বছর বয়সে  দুর্দান্ত প্রতিভা প্রদর্শন করে তিনি রঞ্জি ট্রফিতে সবার মনোযোগ আকর্ষণ করেছিলেন এবং দক্ষিণ আফ্রিকার এমটিএন যুব বিশ্বকাপে ভারতীয় অনূর্ধ্ব -১৯ দলের হয়ে দক্ষতার সাথে খেলার জন্য   জন্য তিনি শীর্ষস্থান অর্জন করেছিলেন। 

রঞ্জি ট্রফি তে লক্ষী
রঞ্জি ট্রফি তে লক্ষী

তাঁর জীবনের প্রথম একদিনের ক্রিকেট ম্যাচ খেলার গোড়াপত্ত  হয় শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে এবং পরবর্তীকালে তিনি মাত্র দুটি একদিনের ম্যাচ খেলার সুযোগ পান । তিনি বাংলা দলের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন  উইলস ট্রফিতে যেখানে পরবর্তীকালে বাংলা সেমিফাইনালে উত্তীর্ণ হয়েছিল। তিনি বাংলার ওপেনার হিসাবে ম্যাচ জয়ের সেঞ্চুরি করেছিলেন  দিল্লির বিপক্ষে এই উইলস ট্রফির সেমিফাইনালে। 

নজরকাড়া খেলার সুবাদে লক্ষ্মীরতন শুক্লাকে ভারতীয় ক্রিকেট দলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়  ।(2000 সালের শুরুর দিকে, শুক্লাকে জাতীয় ক্রিকেট একাডেমির প্রশিক্ষক হিসাবে বেছে নিয়েছিল।তবে চোটের কারণে তাকে চলে যেতে হয়েছিল।  একই মরসুমে পরের পেপসি কাপে  শ্রীলঙ্কানদের  বিরুদ্ধে   চার ওভার বল করে ৩২ রান দিয়েছেন এবং তাঁরই বোলিং বিপর্যয়ের ফলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের কঠিন বাস্তবতার বিষয়ে তিনি সম্যক জ্ঞান লাভ করেছিলেন।

ব্যাটিং এবং বোলিং উভয় তেই তাঁর খুব খারাপ প্রদর্শন হওয়ার ফলে তাকে ভারতীয় ক্রিকেট টিম থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল। তাঁর পরের ম্যাচ,কোকা কোলা সিঙ্গাপুর চ্যালেঞ্জে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিনি উন্নততর খেলার প্রদর্শন করেছিলেন। তবে তার পরে তাঁকে নির্বাচকরা উপেক্ষা করে থাকেন।

সেই বছরে বোলার হিসাবে তিনি আর সুযোগ পান নি কারণ জহির খান ও আশিস নেহরার মতো অন্যান্য তরুণ পেস বোলাররা দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের কারণে ভারতীয় সিনিয়র দলে জায়গা করে নিয়েছিল।যদিও শুক্লা অলরাউন্ডার হিসাবে তার দক্ষতার জন্য খ্যাতিলাভ করেছিলেন, কিন্তু  নির্বাচকরা সঞ্জয় বাঙ্গার, কণিতকর এবং  ইরফান পাঠানের মতো খেলোয়াড়দের  দীর্ঘকালীন দলে থাকার সুযোগটি  করে দিয়েছিলেন।

তিনি প্রথমে আইসিএলের সাথে একটি চুক্তি  স্বাক্ষর করেন  তবে বিসিসিআই ঘরোয়া খেলোয়াড়দের বেতন বৃদ্ধির ঘোষণা করার পরেই তিনি পশ্চাৎপদ হয়ে পড়েন  ।  লক্ষ্মীরতন শুক্লা কে  শীঘ্রই বেঙ্গল অধিনায়ক ঘোষণা করা হয় এবং পরের বছর, তিনি  আইপিএল চুক্তি  স্বাক্ষর করেন। 

laxmi playing ipl in kkr

তিনি সর্বশেষ ২০১৪ সালে আইপিএল ম্যাচে খেলেছিলেন। লক্ষ্মীরতন  শুক্লাকে অনেক সময়  জুনিয়র কপিল দেব হিসাবে অভিহিত করা হয়ে থাকত।জুনিয়র স্তরের সবচেয়ে প্রতিশ্রুতিশীল খেলোয়াড় , লক্ষ্মীরতন শুক্লা  ক্রিকেট জগতে  ফিরে আসার আর সম্ভাবনা পাননি।  আধুনিক কালের  তরুণ ক্রিকেটারের পক্ষে এটি সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক।

বিজয় হাজারে ট্রফি ২০১২

বাংলার ক্রিকেট জগতের অন্যতম উজ্জ্বল নক্ষত্র লক্ষ্মীরতন শুক্লা। বাংলা তার প্রথম “বিজয় হাজারে ট্রফি’ লাভ করেন ২০১২ সালে সৌরভ গাঙ্গুলির অধিনায়কত্বে এবং লক্ষ্মীরতন শুক্লার দুর্দান্ত অবদানের জন্য । কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে ঝাড়খণ্ডের বিরুদ্ধে একটি গ্রুপ স্টেজ ম্যাচে তিনি ৯৬ বলে  ১৫১ রান করেছিলেন। তিনি সেই ম্যাচে ১৬টা চার ও ৮ টি ছয় উপহার দিয়েছিলেন।

পরবর্তীকালে যাদবপুর ইউনিভার্সিটি স্পোর্টস কমপ্লেক্সে অনুষ্ঠিত ত্রিপুরার সাথে পরের ম্যাচে  তিনি ৩৭ রানে চারটি উইকেট নিয়েছিলেন। কোয়ার্টার ফাইনালে  মধ্যপ্রদেশের বিরুদ্ধে তিনি সাঁইত্রিশ রানে দুটি উইকেট নিয়েছিলেন।সেমিফাইনালে তিনি পাঞ্জাবের সর্বোচ্চ স্কোরার মনদীপ সিংয়ের উইকেট টি নিয়েছিলেন ।

ফাইনালে অজিত আগরকারের নেতৃত্বে মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে তিনি ৩৮ রানে চারটি উইকেট  নিয়ে থাকেন এবং তৎপর ২৪৮ রানে মুম্বাই টিমকে অলআউট করে দেন এবং সেই ম্যাচেই অনুষ্টুপ মজুমদারের সাথে মিলে ৮৩ বলে তিন ১০৭ রান করেছিলেন এবং শেষ পর্যন্ত লক্ষ্মীরতন শুক্লা নটআউট ছিলেন।  তেইশ বল বাকি থাকতেই সেই বছর বিজয় হাজারে ট্রফি বাংলা জিতে নিয়েছিল।

 বিজয় হাজারে ট্রফি ২০১৩:

বিজয় হাজারে ট্রফি ২০১২-তে অলরাউন্ডার হিসাবে তার সাফল্যের পরে, তাঁকে  ‘বিজয় হাজারে ট্রফি ২০১৩’-তে বাংলার অধিনায়ক করা হয়েছিল। তিনি ৩৪ রানে ৫টি উইকেট  নিয়ে উজ্জ্বলভাবে টুর্নামেন্ট শুরু করেছিলেন এবং এইভাবে ওড়িশাকে কেবল ১৭৫ রানে আটকে দিয়েছিলেন এবং ১১ রানে বাংলা জয়লাভ করেছিল।

রাজনৈতিক কর্মজীবন

 তিনি ২০১৬ সালে  পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের আগে অল ইন্ডিয়া তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদান করেছিলেন এবং হাওড়া উত্তর আসন থেকে প্রার্থী হিসেবে মনোনীত হয়েছিলেন ।  তিনি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের  প্রার্থী  সন্তোষ কুমার পাঠককে পরাজিত করে এই আসনটি লাভ করেন। তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের  সরকারে রাজ্য ক্রীড়া ও যুবসেবার মন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিলেন  । কিন্তু ব্যক্তিগত কারণবশত ২০২১ সালের ৫ই জানুয়ারী, তিনি যুব পরিষেবা ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করেন।

উপসংহার :

লক্ষ্মীরতন শুক্লা এক দক্ষ ক্রিকেটার হওয়া সত্ত্বেও তাঁর দক্ষতার যথার্থ  মূল্যায়ন করা হয়নি।  তিনি রঞ্জি ট্রফি 150 টি উইকেট অর্জনকারী কতিপয় কিছু ভালো খেলোয়াড়ের একজন।২০১৪ সালে দিল্লি ডেয়ারডেভিলসে যাওয়ার আগে তিনি আইপিএলে কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়েও খেলেছিলেন।কিন্তু বয়স তাঁর  পক্ষে  না থাকায় ভারতীয় দলে এই গুণী ক্রিকেটারের  ফিরে আসা প্রায় বাতিল হয়ে যায়। লক্ষ্মীরতন শুক্লা ক্রিকেট জগৎ থেকে অকাল অবসর না নিলে তরুণ প্রজন্মের উঠতি ক্রিকেট খেলোয়াড়রা অনেক কিছু শিখতে পারত।

FAQ :

লক্ষ্মীরতন শুক্লা কে ছিলেন ?

লক্ষ্মী রতন শুক্লা একজন নামকরা প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেটার এবং এক জনপ্রিয়   রাজনীতিবিদ।  

ক্রিকেট দুনিয়ায় লক্ষ্মীরতন শুক্লা কী ধরনের ব্যাটসম্যান ও বোলার ছিলেন?

ক্রিকেটের জগতে  তিনি  ছিলেন ডানহাতি মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান এবং ডানহাতি মিডিয়াম পেস বোলার। 

লক্ষ্মীরতন শুক্লা কত বছর বয়সে ক্রিকেট জীবনে পদার্পণ করেছিলেন ?

সতেরো বছর বয়সে  

লক্ষ্মীরতন শুক্লার খেলার সুবাদে বাংলা পরপর কোন দুই ট্রফি জিতেছিল?

বিজয় হাজারে ট্রফি ২০১২ এবং ২০১৩

লক্ষ্মীরতন শুক্লা কত সালে রাজনৈতিক জীবনে প্রবেশ করেন?

২০১৬ সালে  শ্রীমতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তত্ত্বাবধানে  তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী হয়ে তিনি রাজনৈতিক জীবনে প্রবেশ করেন ।

Recent Posts