ছোটদের ১৫ টি নীতিমূলক গল্প – Top 15 Moral Stories for Kids in Bengali


আধুনিক কর্মব্যস্ত জীবনে তথ্যপ্রযুক্তির উন্নতি মানুষকে অগ্রগতির পথে নিয়ে গেলেও তাকে যান্ত্রিক করে তুলেছে আর তার ভুক্তভোগী আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের শিশুরা। কথায় আছে কাউকে কিছু উপদেশ দিয়ে শেখানোর থেকে উদাহরণ দিয়ে শেখানো সহজতর। আর এই ক্ষেত্রে ছোটদের জন্য রচিত নীতিমূলক গল্পের ভূমিকা অগ্রগণ্য। 

best bangla moral stories for children with video and PDF

গল্প পড়া ও গল্প শোনার মধ্য দিয়ে ছোটরা  বিনোদনের সাথে সাথে  নৈতিক মূল্যবোধগুলো হৃদয়ঙ্গম করে নেয়। তাই শিশু মনে  প্রয়োজনীয় মূল্যবোধ জাগানোর সবথেকে সহজ উপায় এই গল্পের মাধ্যম; যা ভবিষ্যতে তাদের দৃঢ ব্যক্তিত্ব, সৎ এবং প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে  সাহায্য করে।

নীতিকথা কাকে বলে?

মানব সমাজে বিভিন্ন সামাজিক ও পারিবারিক   নীতিগুলির মাধ্যমে যে লোক কাহিনি বর্ণিত করা হয় তাকেই বলা হয় নীতি কথা।

১৫ টি ছোটদের শিক্ষামূলক ছোট গল্প | 15 Bengali Moral Stories – Watch Online

এই পোস্টে আমরা এরকমই কিছু সেরা ছোট শিক্ষনীয় মজার গল্প শেয়ার করলাম যা বাচ্চাদের খুব ভালো লাগবে এবং ওদের জন্যে শিক্ষণীয় হবে।

১)লোভী কুকুর

একদিন একটি লোভী কুকুর একটি কসাই – এর দোকান থেকে এক টুকরো মাংস চুরি করল। তা দেখে কসাই তাঁর পিছনে তাড়া করল কিন্তু কিছুদূর পর্যন্ত গিয়ে সে তার নিজের দোকানে ফিরে এল। এদিকে কুকুরটা ভীষণ ভয়ে ছুটতে লাগল প্রাণপণে।

অনেকটা যাওয়ার পর সে পিছন ফিরে  তাকিয়ে দেখল যে কসাইটা তার দিকে তাড়া করে আসছে কিনা। কাউকে আসতে না দেখে সে তার গতি কমিয়ে ধীরে সুস্থে হাঁটতে লাগল।কিছুক্ষণ পরে  সে এসে পৌঁছল একটা ছোট্ট নদীর কাছে।

সে তখন মুখের মাংসের টুকরোটা নিয়ে সেতুর ওপর দিয়ে নদী পার হতে লাগল ।সেসময় নদীর পরিষ্কার জলে তার প্রতিবিম্ব ভেসে উঠতে সে সেদিকে তাকিয়ে দেখল। লোভী আর বোকা কুকুরটা নিজের প্রতিবিম্বকে মাংস মুখে অন্য একটি কুকুর মনে করল।সেই মাংসের টুকরোটাও পাওয়ার জন্য তার খুব লোভ হলো।

সে এবার অন্য কিছু চিন্তা ভাবনা না করে নদীর জলে ঝাঁপিয়ে পড়ল আর সঙ্গে সঙ্গে জলের স্রোত তাকে ভাসিয়ে নিয়ে গেল।লোভী  কুকুরটা   মাংসের টুকরোটার সাথে সাথে তার মূল্যবান প্রাণ টা ও হারাল।

নীতিকথা ~”অতিরিক্ত লোভ মানুষের সর্বনাশের কারণ” 

গোপাল ভাঁড়ের মজার গল্প বাংলাতে | Gopal Bhar Stories in Bengali – Download PDF

২)বুদ্ধিমান কাক :

একটা কাক উড়তে উড়তে  এমন একটা স্থানে   এসে পৌঁছালো যেখানে জল পাওয়া খুবই দুষ্কর।অথচ পিপাসায় তার গলা শুকিয়ে যাচ্ছিল। অনেক খোঁজাখুঁজি করার পর কাক একটা কলসি পেল।

কিন্তু কলসির কাছে গিয়ে সে হতাশ হলো শুধু ঠোঁট বাড়িয়ে চেষ্টা করল অনেকবার জল পান করার।কিন্তু জলের নাগাল না পেয়ে কাকটি চিন্তা করতে লাগল কী করা যায়! কলসির আশেপাশে কিছু নুড়িপাথর পড়েছিল ;সেগুলো দেখতে দেখতে হঠাৎ কাকের মাথায় একটি বুদ্ধি এল।

একটি একটি করে নুড়িপাথর নিয়ে কলসির মধ্যে ফেলতে লাগল সে ।পাথর জায়গা দখল করায় জল উঠে এল কলসির মুখের কাছে। তৃষ্ণার্ত কাকের প্রাণ খুশিতে ভরে উঠল।ঠোঁট ডুবিয়ে ডুবিয়ে প্রাণ ভরে জল পান করে সে তার তৃষ্ণা   মেটাল।

নীতিকথা~ “বুদ্ধি থাকলে উপায় হয়”।

৩)শিয়াল ও আঙুর ফল:

তিন দিন ধরে অনবরত বৃষ্টি হওয়ার কারণে একটি শিয়াল  খাবারের খোঁজে কোথাও বেরোতে পারেনি। খিদের জ্বালায় থাকতে না পেরে শিয়ালটি বনের মধ্যে খাবারের সন্ধানে ঘুরতে লাগল ।

হঠাৎ একটি ঝোপের দিকে তার নজর পড়ল।সে দেখল ঝোপের পাশে একটি আঙুরগাছ এবং অনেক পাকা আঙুরের থোকা ঝুলছে সেখানে। খিদের জ্বালায় সেই আঙুর খেয়েই পেট ভরাবে বলে শেয়ালটি মনস্থির করল।

কিন্তু গাছের এত উপরে থাকা আঙুরের থোকা গুলির সে কীভাবে নাগাল পাবে সেই নিয়ে ভাবতে শুরু করল । কিন্তু শিয়ালটি তার কোনও উপায়ই বার করতে পারল না। অবশেষে বিফল মনোরথ হয়ে সে সেই স্থান পরিত্যাগ করল ।

ফেরার পথে সে বলতে লাগল -“আঙুর ফল টক; ওই আঙুর আমি খেতেও পারতাম না অার খেলেও আমার পেট ভরত না”।

নীতিকথা ~ নিজের অযোগ্যতা ঢাকার জন্য পরনিন্দা করা অনুচিত।

ঘুমন্ত পুরী – রূপকথার গল্প – Bengali Story of The Sleeping Beauty

৪) রাখাল ছেলে আর নেকড়ে :

এক গ্রামে একটি রাখাল ছেলে বাস করত। তার বাবা  তাকে  ভেড়াদের যত্ন নিতে আদেশ দিয়েছিল। প্রতিদিন ছেলেটিকে ঘাসের মাঠে ভেড়া দের ছড়াতে নিয়ে যেতে হতো।রাখাল ছেলেটির এই কাজ একদম পছন্দ ছিল না কারণ সে দৌড়তে আর খেলতে চাইত। তাই একদিন সে গ্রামের লোকের সাথে মজা করার সিদ্ধান্ত নিল।

হঠাৎ সে চিৎকার করে বলল “নেকড়ে ,নেকড়ে!” রাখাল ছেলেটির চিৎকার শুনে পুরো গ্রামের লোক নেকড়েকে তাড়ানোর জন্য পাথর, শাবল, লাঠি যে যা পারল নিয়ে এল। কিন্তু বনে এসে গ্রামবাসীরা যখন দেখল যে কোনও নেকড়ে নেই ,রাখাল বালকটি তাদের সময় নষ্ট করেছে এবং তাদের ভয় দেখাবার জন্যই মিথ্যা কথা বলছে তখন তারা বিরক্ত বোধ করল এবং যে যার বাড়িতে ফিরে গেল

পরের দিন ছেলেটি আবার চিৎকার করে বলল ,”নেকড়ে নেকড়ে”! আর গ্রামবাসীরা আবারও নেকড়ে তাড়াতে রাখাল ছেলেটির কাছে দৌড়ে এল ।ছেলেটি তাদের ভয় দেখে যখন হেসে উঠল গ্রামবাসীরা চলে গেল এবং কেউ কেউ খুব রাগান্বিত হল রাখাল ছেলেটির কীর্তিকলাপ দেখে।

তৃতীয় দিন ছেলেটি ভেড়া চড়াবার জন্য ছোট্ট একটি পাহাড়ে উঠেছিল আর হঠাৎ সে দেখল সত্যিকারের  একটা নেকড়ে বাঘ তার ভেড়াদের ওপর আক্রমণ করেছে। সে প্রাণপণ চিৎকার করে বলল “নেকড়ে ,নেকড়ে!!”

কিন্তু গ্রামবাসীরা ভাবল রাখাল ছেলেটি বুঝি তাদের আবার বোকা বানানোর চেষ্টা করছে তাই এবার কেউ ছেলেটিকে উদ্ধার করতে এল না। মিথ্যে বলার কারণে রাখাল ছেলেটি তার তিনটি ভেড়াকে হারাল।

নীতিকথা : “মিথ্যে গল্প বানানো কখনো উচিত না কারণ আসল প্রয়োজনে কেউ সাহায্যের হাত বাড়াবে না”।

নাসিরুদ্দিন হোজ্জার গল্প – Bengali Stories of Mullah Nasreddin Hooja [ PDF ]

৫) বুদ্ধি খাটিয়ে গণনা :       

একবার আকবর তার আদালতে  একটি প্রশ্ন রেখেছিলেন যা সবাই কে অবাক করেছিল । রাজসভার সবাই  যখন  উত্তর বের করার চেষ্টা করছিল তখন বীরবল এগিয়ে গিয়ে জানতে চিইলেন কি ব্যাপার। আর তাই তারা বিরবলকে প্রশ্নটি করে জানতে চাইল ,

“শহরে কতগুলো কাক আছে?’

বীরবল সাথে সাথেই হাস্য বদনে  আকবরের কাছে গিয়ে ঘোষণা করলেন যে তাঁর প্রশ্নের উত্তর হল, একুশ হাজার পাঁচশো তেইশটি কাক গোটা শহরে উপস্থিত। যখন সম্রাট  জানতে চাইলেন যে বীরবল   কিভাবে উত্তরটি দিতে পারলেন, তখন বীরবল উত্তরে বলেছিলেন , ‘ মহারাজ  ,আপনার লোকেদের কাকেদের সংখ্যা গণনা করতে বলুন।

যদি আরো  কাক থাকে, তাহলে শহরের বাইরে থেকে কাকেদের আত্মীয়রা তাদের দেখা করতে এসেছে অর যদি কম থাকে, তাহলে কাকেরা শহরের বাইরে তাদের আত্মীয়–স্বজনের সাথে দেখা করতে গেছে। ‘ উত্তর পেয়ে খুশী হয়ে, আকবর বীরবলকে পুরস্কৃত করেছিলেন  ।

নীতিকথা: “প্রত্যেক উত্তরের ইএকটি সঠিক ব্যাখ্যা থাকা প্রয়োজন”।

পরে নিন গোপাল ভাঁড়ের চরম হাসির গল্পগুলি

৬)এক অসৎ বন্ধুর কাহিনি :

এক সময় এক গ্রামে দুই বন্ধু বাস করত। তাদের মধ্যে এমন গভীর বন্ধুত্ব ছিল যেএকজন আরেকজনকে না দেখে থাকতে পারত না। তাছাড়া তাঁরা পরস্পরকে অত্যন্ত বিশ্বাস করত। একদিন এক বন্ধু বাণিজ্য করার উদ্দেশ্য নিয়ে কয়েক মাসের জন্য অন্য একটা শহরে রওনা দিয়েছিল। এ সময় সে তার বন্ধুটির দায়িত্বে লোহার সিন্দুকটি রেখে গেল ।

কয়েক মাস পরে শহর থেকে ফিরে এসে তার লোহার সিন্দুক টা সেই বন্ধুটির কাছ থেকে ফেরত নেওয়ার জন্য সে তার বাড়ি গেল ।কিন্তু বন্ধুটি  তাকে বলল যে তার সিন্দুকটা উইপোকায় খেয়ে ফেলেছে । বন্ধুটি তখন অন্য বন্ধুটিকে কিছু না বলে নিজের বাড়িতে ফিরে এল। সে তাকে একটা উচিত শিক্ষা দেবে বলে ঠিক করলএবং উপযুক্ত সুযোগের জন্য অপেক্ষা করতে লাগল।

একদিন তার বন্ধুর ছেলেকে এক জায়গায় একা একা খেলা করতে দেখে তাকে অপহরণ করল।অন্য বন্ধুটি পরিষ্কার বুঝতে পারল তার বন্ধুই তার ছেলেকে অপহরণ করেছে। সেইমতো তাকে বলল তার ছেলেকে ফেরত দিতে ।বন্ধুটি তখন বলল তার ছেলেকে চিলে নিয়ে গেছে ;তার কথা শুনে অবশেষে অসৎ  বন্ধুটি নিজের ভুল বুঝতে পারল এবং উচিত শিক্ষা পেল।এরপর সে তার বন্ধুর লোহার সিন্দুকটি ফিরিয়ে দিয়ে তাঁর নিজের ছেলেকেও সে ফেরত পেল। 

নীতিকথা: “মন্দকাজের জন্য ফলভোগ করতেই হবে ”    

৭) ইঁদুর এবং একটি বিড়ালের গল্প:

 একসময় একটা বাড়িতে কতগুলো ইঁদুর বাসা বেঁধেছিল। ইঁদুরগুলো বাড়ির মালিকের ক্ষতি করছিল নানারকমভাবে। বাড়ির মালিক অত্যন্ত বিরক্ত হয়ে তাদের হাত থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য একটা বিড়াল নিয়ে এল।

বিড়ালটা প্রতিদিন অনেকগুলো করে ইঁদুর মারতে শুরু করল। তাতে ইঁদুরগুলো ভীষণ ভয় পেয়ে সর্বদাই তাদের গর্তের মধ্যে আটকে রইল ।বাইরে বেরিয়ে আসতে তারা সাহস করল না। তারা কীভাবে এই বিপদ থেকে রক্ষা পাবে সেটা নিয়ে আলোচনা করার জন্য একটা সভা ডাকল।অনেকে অনেক রকম  পরামর্শ দিল কিন্তু কোনোটাই উপযুক্ত বলে মনে হলো না ।

অবশেষে এক বৃদ্ধ ইঁদুর দাঁড়িয়ে বলল, “আমি একটা খুব ভালো উপায়ের কথা চিন্তা করেছি ।আমরা যদি বিড়ালটির গলায় ঘণ্টা বেঁধে দি তাহলে বিড়ালটা যে আসছে সেই ঘণ্টার  শব্দ শুনেই পরিষ্কারভাবে বোঝা যাবে।”বৃদ্ধ ইঁদুরের যৌক্তিকতার সবাই খুব প্রশংসা করল ,

কিন্তু অন্য একটা বৃদ্ধ ইঁদুর তাঁর আসন থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলল ,”আমাদের বৃদ্ধ বন্ধুটি এইমাত্র যে উপায়ের কথা করলেন তা নিঃসন্দেহে খুবই ভালো কিন্তু সমস্যাটা হল ;বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে??”তাঁর কথা শুনে সকলেই চুপ করে রইল, কেউ একটি কথাও বলতে পারল না কারণ বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধার মতো কেউ সেখানে ছিল না। 

নীতিকথা :”বলা খুব সহজ কিন্তু করা কঠিন”।

ঈশপের শিক্ষণীয় গল্প সমগ্র

৮) সোনার স্পর্শ :

  একটি খুব লোভী ধনী মানুষের একদিন একটি পরীর দেখা পেয়েছিল। পরীর চুলের গুচ্ছ গাছের শাখায় আটকে গেলে লোভী লোকটি পরীকে সাহায্য করার বদলে তার একটি ইচ্ছা পূরণ করতে বললেন।

তিনি বললেন, ‘যা আমি স্পর্শ করব তা–ই যেন সোনাতে পরিণত হয়ে যায়‘, এবং তার এই ইচ্ছা পরী মেনে নেয়। লোভী লোকটি তার স্ত্রী ও মেয়েকে তার বরদান প্রাপ্তির খবর দেবার জন্য বাড়ির দিকে রওনা দিলেন এবং পথে সব পাথর ও নুড়ি স্পর্শ করে সোনায় রূপান্তরিত করতে করতে চললেন।

বাড়ি ফেরার পর তাঁর মেয়েটি তাঁকে অভিবাদন করার জন্য দৌড়ে এলে যেই তিনি মেয়েকে  কোলে নিলেন, সে একটি সোনার মূর্তিতে পরিণত হল। তিনি তাঁর মূর্খতা বুঝতে পারলেন। এবং তার কৃতকর্মের জন্য আক্ষেপ করতে লাগলেন।

নীতিকথা :লোভ,পতনের মূল কারণ   

৯)বিপদ যখন দরজায় ধাক্কা দেয়:

এই গল্পটি আমাদের ব্যাখ্যা দেয় কিভাবে প্রত্যেকটা মানুষ  আলাদা আলাদাভাবে বিপত্তির মোকাবিলা করে।  এক  বাবা একটি ডিম, একটি আলু, এবং কিছু চা পাতা তিনটি পৃথক পাত্রের মধ্যে ফুটন্ত জলে রেখেছিলেন।

তিনি তার ছেলে কে দশ মিনিটের জন্য পাত্রগুলির উপর নজর রাখতে বলেছিলেন ও এই দশ মিনিট শেষে তিনি ছেলেকে আলুর খোসা ছাড়াতে, ডিমের খোসা ছাড়াতে এবং চা পাতাগুলো ছেঁকে নিতে বললেন। ছেলেটি অবাক হয়ে গেল!

তার বাবা ব্যাখ্যা করে বলেছিলেন যে  জিনিসগুলি প্রত্যেকটিই উষ্ণ জলের পাত্রের মধ্যে একই অবস্থায় রাখা হয়েছিল কিন্তু তারা কিভাবে ভিন্নভাবে প্রতিক্রিয়া করেছে সেটাই লক্ষণীয়।

আলু যখন নরম, ডিম তখন কঠিন আবার চা জলকেই পরিবর্তন করে দিয়েছে। প্রত্যেক মানুষই এই দ্রব্যগুলোর মত, ভিন্ন ভিন্ন  । যখন বিপত্তি আসে, আমরা ঠিক আমাদের মতো করেই প্রতিক্রিয়া জানাই। 

নীতিকথা: কঠিন পরিস্থিতিতে কিভাবে প্রতিক্রিয়া করব সেটা আমরাই বেছে নিতে পারি।

১০) গর্বিত গোলাপ

 একটি গোলাপ  নিজের সুন্দর চেহারা নিয়ে গর্বিত ছিল আর তার বিরক্তির কারণ ছিল যে সে কুৎসিত ক্যাকটাসের পাশে বেড়ে উঠেছে। অহংকারী  গোলাপটি প্রতিনিয়তই ক্যাকটাসকে তার চেহারা নিয়ে অপমান করত, কিন্তু ক্যাকটাস চুপ করে থাকত।

rose and cactus moral story in bengali

এক গ্রীষ্মে, বাগানে উপস্থিত কুয়োটি শুকিয়ে গেলে জলের অভাবে গোলাপ গাছটি নিস্তেজ হতে শুরু করল। সে দেখল  যে একটি চড়ুই ক্যাকটাসের মধ্যে ঠোঁট ডুবিয়ে জল পান করার চেষ্টা করছে।

লজ্জিত ও অসহায় গোলাপটি ক্যাকটাসকে জিজ্ঞেস করল, যদি সেও কিছু জল পেতে পারে। সহৃদয় ক্যাকটাস এক কথায় সম্মতি প্রদর্শন করল এবং তারা উভয়ই কঠিন গ্রীষ্ম বন্ধু হিসাবে পার করে দিল।

নীতিকথা :চেহারা দিয়ে কাউকে বিচার করা উচিত নয়।

১১)পেনসিলের গল্প:

ইংরেজি পরীক্ষায় খারাপ ফল হওয়ার কারণে ছোট ছেলেটির মন খারাপ ছিল  । তার ঠাকুমা তাকে একটা পেন্সিল দিলেন এবং তারপর তিনি তাঁর নাতিকে  ব্যাখ্যা করলেন  এই বলে যে একটা   পেন্সিল থেকে অনেক কিছু শিখতে পারা যায়, কারণ সেটি একটি ছাত্রের মতোই ।

এটিকে ধারালো করার সময় এটি যে যন্ত্রণা অনুভব করে  যেমনভাবে পরীক্ষায় ভাল না করায় তাঁর নাতিটি   মনে ব্যথা পেয়েছে। তবে, পেনসিলটি তাকে  একজন ভালো ছাত্র হতে সাহায্য করবে। ঠিক যেমন পেন্সিল থেকে যে ভালো জিনিস আসে তা এটির নিজের মধ্যে থেকেই আসে, তেমনি সে ও এই বাধা অতিক্রম করার শক্তি পাবে।

এবং অবশেষে, ঠিক যেমন এই পেন্সিলটি কোনো পৃষ্ঠায় তার চিহ্ন তৈরি করে, তেমনি মন থেকে চাইলে ছেলেটিও তার পছন্দ করা কোনো বিষয়ে  তার চিহ্ন ছেড়ে যেতে সক্ষম হবে  । ছোট ছেলেটি   সঙ্গে সঙ্গেই সান্ত্বনা পেল এবং সে নিজের কাছে প্রতিজ্ঞা করল যে আরও ভালো করবে।

নীতিকথা: ইচ্ছাশক্তি স্বার্থকতা আনে ।

১২) লাঠির বান্ডিল: 

তিন প্রতিবেশী তাদের ফসল নিয়ে সমস্যায় পড়েছিল কারণ মাঠে কীটপতঙ্গে ছেয়ে যাওয়ায়   ফসল গুলি নিস্তেজ হয়ে পড়ছিল। প্রতিদিন তারা তাদের ফসল বাঁচানোর জন্য বিভিন্ন ভাবে চেষ্টা করতে লাগল।

প্রথম জন একটি কাকতাড়ুয়া ব্যবহার করল, দ্বিতীয় জন কীটনাশক ছড়াল, এবং তৃতীয় জন তার ক্ষেতের চারদিকে একটি বেড়া লাগাল, কিন্তু এসবে কিছু লাভ না।

একদিন গ্রামের প্রধান এসে তিনজন কৃষককে ডেকে তাদের প্রত্যেককে একটি করে লাঠি দিলেন এবং লাঠিগুলি ভাঙতে বললেন। কৃষকরা সহজেই সেগুলি ভেঙে দিল কিন্তু যখন তিনি তাদের তিনটি লাঠির একটি বান্ডিল দিয়ে সেটিকে ভাঙতে বললেন কৃষকরা খুব পরিশ্রম করেও তা ভাঙতে পারল না ।

গ্রামের প্রধান বুঝিয়ে দিলেন যে একা একা কাজ করার চেয়ে একসাথে কর্ম করা বেশী সহজ ,শক্তিশালী এবং লাভজনক । কৃষকরা তাদের সম্পদ একত্রিত করল এবং তাদের ক্ষেত কীটপতঙ্গ থেকে মুক্তি পেল।

 নীতিকথা:ঐক্য ই বল।

১৩)পিপীলিকা এবং ফড়িং:

একটি পিঁপড়ে এবং একটি ফড়িং খুব ভালো বন্ধু ছিল।   ফড়িং সারাদিন আরামে কাটাতো এবং গিটার বাজাতো কিছু  পিঁপড়েটি, সারাটা দিন কঠোর পরিশ্রম করে বাগানের সব কোণ থেকে খাবার সংগ্রহ করত।

ফড়িংটি প্রতিদিনই পিঁপড়েকে  বিরতি নিতে বলত কিন্তু পিঁপড়ে নিজের কাজ চালিয়ে যেত। শীঘ্রই, শীত এল। রাতে ঠান্ডার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ার ফলে খুব কম প্রাণী বাইরে বের হত। ফড়িংটি খাদ্যাভাবে সব সময় কষ্টে দিন যাপন করত ।

কিন্তু, পিঁপড়েটির কাছে সারা শীত নিরুদ্বেগে কাটানোর মতো যথেষ্ট পরিমাণে খাদ্য সঞ্চয় করা ছিল তাই সে হাসিখুশিভাবে শীতকাল অতিবাহিত করতে পেরেছিল।

নীতিকথা: সময় ভালো থাকা অবস্থায় কাজকর্ম গুছিয়ে নেওয়া উচিত।

১৪) ভাল্লুক এবং দুই বন্ধু:

দুই সেরা বন্ধু একটি জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে একটি নির্জন এবং বিপজ্জনক পথ দিয়ে হাঁটছিল। সূর্য় অস্ত যেতে শুরু করলে, তারা ভয় পেয়ে গেল, কিন্তু একে অপরকে ধরে থাকল।

হঠাৎ, তারা তাদের পথে একটি ভাল্লুক দেখল। ছেলেদুটির একজন নিকটতম গাছের দিকে দৌড়ে গেল এবং এক মুহুর্তের মধ্যে গাছে উঠে পড়ল। অন্য ছেলেটি জানত না যে কিভাবে গাছে উঠতে হয়, তাই সে মাটিতে শুয়ে পড়ে মারা যাওয়ার ভান করল।

ভাল্লুকটি মাটিতে ছেলেটির কাছে এসে তার মাথার চারপাশে শুঁকল। ছেলেটি মারা গেছে ভেবে, ভাল্লুক তার পথে চলে গেল। গাছের ছেলেটি গাছ থেকে নেমে বন্ধুকে জিজ্ঞাসা করল যে, ভাল্লুকটি তার কানে চুপিচুপি কী বলল।

ছেলেটি   উত্তর দিল, ‘তোমার খেয়াল রাখে না এমন বন্ধুদের বিশ্বাস করো না।

 নীতিকথা: প্রয়োজনের সময় যে বন্ধু পাশে থাকে সে–ই প্রকৃত বন্ধু।

 ১৫) সিংহ ও ইঁদুর :

একদিন এক সিংহ তার গুহায় গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন থাকা অবস্থায় একটি ছোট ইঁদুর ছোটাছুটি করতে করতে সিংহের নাকের এক ছিদ্রে ঢুকে পড়েছিল।

সিংহের ঘুম ভেঙে যাওয়ার ফলে সে রেগে গিয়ে ইঁদুরটিকে থাবা দিয়ে মেরে ফেলতে চেষ্টা করেছিল কিন্তু  ইঁদুরটি অত্যন্ত বিনয়ী সুরে সিংহের কাছে প্রার্থনা করেছিল তাকে না মেরে ফেলার। ইঁদুরটি এও বলেছিল যে সময় হলে সেও  সিংহের উপকারে আসতে পারে।

ইঁদুরের মতো এত ছোট জীব, সিংহের মতো এত বিশাল জন্তুকে কীভাবে রক্ষা করবে সে কথা ভেবে সিংহের হাসি পেল আর দয়াপরবশ হয়ে সিংহ ইঁদুরটিকে ছেড়ে দিল। এর কিছুদিন পরে সেই সিংহটি একদিন একটি দড়ির শক্ত ফাঁদে আটকে পড়ল ।

ফাঁদে পড়ে যাওয়া  সিংহটির গর্জন শুনে ছোট্ট ইঁদুরটি ছুটে চলে এসে সিংহর দুরবস্থার সম্মুখীন হল। ছোট্ট ইঁদুরটি তার ধারালো দাঁত দিয়ে ফাঁদের দড়িটি কাটতে শুরু করল এবং এভাবে   অবশেষে সে সিংহকে ফাঁদ থেকে মুক্তি দিল।

মুক্তি পেয়ে সিংহটি ইঁদুরকে অনেক ধন্যবাদ জানাল আর সেই সঙ্গে বলল যে ,”তোকে আমি অবজ্ঞা করেছিলাম একসময়। কিন্তু  অাজ বুঝলাম ,কাউকে ছোট করতে নেই ।”

নীতিকথা: ছোট বলে কাউকে অবজ্ঞা করতে নেই। উপকারে সবাই লাগতে পারে।           

উপসংহার: 

নীতিমূলক এই গল্পগুলি ছোটদের একটি গুণমানযুক্ত সময় কাটানোর সহায়ক। ভালোভাবে সময় কাটানো ও বিনোদনের  সাথে সাথে নীতি সমৃদ্ধ এই ছোট গল্পগুলি   তাদের মানসিক বিকাশ ও সুশিক্ষা  ও প্রদান করবে।  

 FAQ (সম্ভাব্য প্রশ্নাবলি  )

নীতিমূলক গল্প শোনার বা পড়ার প্রয়োজনীয়তা কি?

শিশু মনে  প্রয়োজনীয় মূল্যবোধ জাগানোর সবথেকে সহজ উপায় নীতু সমৃদ্ধ গল্পের মাধ্যম; যা ভবিষ্যতে তাদের দৃঢ ব্যক্তিত্ব, সৎ এবং প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে  সাহায্য করে।

নীতিকথা কাকে বলে?

মানব সমাজে বিভিন্ন সামাজিক ও পারিবারিক   নীতিগুলির মাধ্যমে যে লোক কাহিনি বর্ণিত করা হয় তাকেই বলা হয় নীতি কথা।

নীতিমূলক গল্প থেকে যেকোনো দুটি নীতির উল্লেখ করো।

১) ছোট বলে কাউকে অবজ্ঞা করা উচিত নয়  
২) অধিক লোক ক্ষতিকারক ।

ছোটদের নীতি সমৃদ্ধ গল্প আমরা কোন কোন বই থেকে পেয়ে থাকে ?

জাতকের গল্প ,উপনিষদের গল্প , ঠাকুমার ঝুলি  প্রভৃতি বই থেকে।

Download PDF

গল্পগুলি ডাউনলোড করুন ক্লিক করে

Recent Posts