বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে আছে চোখ ধাধানো স্থান, যা দেখলে মনে হবে স্বপ্ননগরী অথবা ভূস্বর্গ। প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য যা আমাদের বিস্মিত করে, বিশ্বজুড়ে এমন ২০ টি স্থান হল-
১. ভেনিস
১১৮ টি দ্বীপপুঞ্জের সমাহারে উত্তর ইতালির ভেনেটো অঞ্চলের রাজধানী ভেনিস ভাসমান শহর ,যেখানে চারিদিকে নীল জল, সেতুর দ্বারা যুক্ত দ্বীপগুলো, এ শহরে রয়েছে ১৭৭টি খাল। অসামান্য সুন্দর এই স্থানে বলিউড থেকে হলিউডের বিভিন্ন সিনেমা এবং গানে উঠে এসেছে এই শহরের ছবি।
২. সান্তরিনি
গ্রীসে বিশ্বের বৃহত্তম আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের ফল সান্তরিনি যার দৃশ্য মুগ্ধ করে মানুষকে।প্রতিবছর হাজার হাজার দর্শক এর ভৌগলিক দৃশ্য, স্থাপত্য দেখতে মুগ্ধতার সন্ধানে যায়।
৩. সিডনি
অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস এর রাজধানী এবং সবচেয়ে বড় শহর সিডনি। সমুদ্র ঘেরা এই শহরে প্রধান আকর্ষণ অপেরা হাউস, হার্বার ব্রিজ। মহাসাগরের এক প্রান্তে নৌকার পালের ন্যায় অবস্থিত অপেরা হাউজ কোটি কোটি পর্যটকের আকর্ষণের কেন্দ্রে আছে। বিভিন্ন অনুষ্ঠান হয়ে থাকে এই স্থানে।
৪. তাজমহল
১৯৮৩ সালে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে তালিকাভুক্ত হয় তাজমহল, মুঘল স্থাপত্য শৈলীর আকর্ষণীয় নিদর্শন যার নির্মাণশৈলীতে পারস্য, তুরস্ক, ভারতীয় এবং ইসলামী স্থাপত্যশিল্পের মেলবন্ধন আছে। সাদা মার্বেলের গম্বুজাকৃতির রাজকীয় তাজমহল দেখতে দেশ বিদেশ থেকে বহু মানুষ আসে। ভারতের পর্যটন স্থান গুলির মধ্যে অন্যতম তাজমহল, যার সৌন্দর্য্য দেখে মুগ্ধ হবে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।
৫. বোরা বোরা
মালার মতো দেখতে অপরুপ এই দ্বীপটি ফরাসি পলিনেশিয়ার পশ্চিমে অবস্থিত। মাত্র ৩৯ স্কয়ার মাইল আয়তন বিশিষ্ট বোরা বোরা পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে জলের উপর ভাসমান বিলাসবহুল রিসোর্টগুলোর জন্য।
৬. চিনের রংধনু পর্বতমালা
চীনের উত্তর-পশ্চিমে গানসু প্রদেশে ১২৪ বর্গমাইল জায়গা জুড়ে রং বেরং ঝাংয়ে দাংজিয়া ল্যান্ডফর্ম জিওলজিকাল পার্ক। গোটা একটা পর্বতশ্রেণির সাতটি পাহাড় অবিশ্বাস্য রঙের ফোয়ারা যা বিশ্বের ভূতাত্ত্বিক বিস্ময় গুলির মধ্যে অন্যতম।
৭. বারোস আইল্যান্ড
প্রায় আড়াই হাজার দ্বীপ এর সমন্বয়ে গঠিত নয়নাভিরাম পর্যটক প্রিয় স্থান মালদ্বীপ এর বারোস আইল্যান্ড। অন্যতম সুন্দর এই দ্বীপ পর্যটকদের প্রধান আকর্ষন। আকাশের প্রাণবন্ত রূপ নীল সাগরের সমাহারে বারোস আইল্যান্ডকে সবচেয়ে সুন্দর স্থানের মধ্যে অন্যতম করে তুলেছে।
৮. কিউকেনহফ
নেদারল্যান্ডসের কিউকেনহফ বিশ্বের বৃহত্তম ফুলবাগান। ‘গার্ডেন অব ইউরোপ’ নামে খ্যাত এই বাগানটি ৮০ একর জমির উপর বিস্তৃত । প্রতিবছর প্রায় ৭০ লাখ টিউলিপ উৎপাদন করা হয় এই বাগান থেকে। অপরূপ সুন্দর এই বাগানটি প্রতিবছর মধ্য মার্চ থেকে মধ্য মে পর্যন্ত উন্মুক্ত থাকে পর্যটকদের জন্য।
৯. ফি ফি দ্বীপপুঞ্জ
অসামান্য আকর্ষনে ভরপুর ফি ফি দ্বীপপুঞ্জে ভ্রমণপ্রিয় মানুষদের জন্য রয়েছে ক্রুজ, ক্লিফ ডাইভিং,রক ক্ল্যাইম্বিং, ফিশিং। এছাড়াও এখানে আছে নৈসর্গিক সৌন্দর্যে ঘেরা মায়া উপসাগর যা পর্যটক প্রিয় স্থানগুলির মধ্যে অন্যতম ।
১০. টানেল অফ লাভ
ছোট শহর ক্লেভান, যা ইউক্রেনের পশ্চিমে অবস্থিত, সেই ক্লেভান শহর থেকে সামান্য দূরে প্রকৃতির নিজের সৃষ্ট সবুজে ঘেরা সুড়ঙ্গ, যার মাঝ দিয়ে ১.৮ মাইল দীর্ঘ ট্রেন লাইনে গেছে যা একেবারে সবুজে ঘেরা, রোজ এই রেলপথে তিনবার ট্রেন চলাচল করে। রোমান্টিক এই জায়গাটি পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর স্থান।
১১. মেন্ডেলহল আইস কেভস
পৃথিবীর এমন কিছু স্থান আছে যা দেখলে স্বপ্ন বলে মনে হবে। এমনই একটি স্থান হল মেন্ডেনহল আইস কেভস। যার অবস্থান আলাস্কার জুনো শহর থেকে ১৯ কিলোমিটার দূরে মেন্ডেনহল উপত্যকার মেন্ডেনহল হিমবাহে । এই আইস কেভস বা বরফের গুহাটি ২১ কিলোমিটার দীর্ঘ।
১২. গ্লো ওয়ার্ম কেভস
নিউজিল্যান্ডের ওয়াইটোমোর এক বিস্ময়কর গুহা গ্লো ওয়ার্ম কেইভস। লক্ষাধিক জোনাকি এই গুহায় তাদের হাল্কা আলোর বিচ্ছুরণ করে যার ফলে নীলাভ আলোয় ঢেকে থাকে এই গুহা। অসাধারণ এই স্থানটি দেখতে ভিড় লেগে থাকে পর্যটকদের।
১৩. সালার দে ইয়ুনি
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক আয়না হল সালার দে ইয়ুনি। প্রায় ১০ হাজার ৫৮২ বর্গকিলোমিটার বিস্তৃত লবনের মাঠটি বলিভিয়ার দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থিত। এই প্রাকৃতিক স্থানের সৌন্দর্য্য দেখতে লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রতিবছর এখানে আসে।
১৪.ইনকাসভ্যতা
ইতিহাসপ্রেমিদের জন্য অবশ্যই দর্শনীয় স্থান মাচুপিচু। বহু সুন্দর মসজিদ ,পার্ক, অভয়ারণ্যের সমাহারে বিশ্বের দর্শনীয় স্থানগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য। ইনকাদের হারানো সভ্যতা বলা হয় মাচুপিচুকে। মাচু পিচু পর্যটকদের কাছে একটি আকর্ষণী দর্শনীয় স্থান হয়ে উঠেছে। মাচুপিচুকে ১৯৮১ সালে পেরুর সংরক্ষিত ঐতিহাসিক এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং ১৯৮৩ সালে ইউনেস্কো এটিকে তাদের বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের অন্তর্ভুক্ত করে।
১৫. গ্রেট ব্লু হোল
বৃত্তাকার গ্রেট ব্লু হোল বেলিজ সিটি থেকে ৬০ মাইল দূরে অবস্থিত। এটি একটি বৃহৎ সমুদ্রগর্ভস্থ গর্ত। যার ব্যাসার্ধ ৩০০ মিটার (৯৮৪ ফুট) এবং ১২৪ মিটার (৪০৭ ফুট) গভীর। ডিসকাভারি চ্যানেলের এক রিসার্চে ২০১২ সালে গ্রেট ব্লু হোল পৃথিবীর ১০ টি আশ্চর্যজনক স্থানের মধ্যে প্রথমে ছিল। এই স্থানটি সারাবছর পর্যটকদের সংখ্যা থাকে অগনিত।
১৬. চীনের প্রাচীর
বিশ্বে মানব সৃষ্ট অসাধারণ নিদর্শন হল চীনের মহাপ্রাচীর। এই মহাপ্রাচীরের বিস্তৃতি সাড়ে 6 হাজার কিলোমিটার। এর দেয়াল পূর্বে ডাং ডং থেকে শুরু করে পশ্চিমে লপ লেক পর্যন্ত ৮৮৫০ কিমি দীর্ঘ বিস্তৃত।
১৭. উইস্টেরিয়া টানেল
উইস্টেরিয়া টানেল জাপানের কাওয়াচি ফুজি গার্ডেনে অবস্থিত। চরম স্বর্গীয় অনুভূতি লাভ করতে চাইলে অবশ্যই যেতে হবে এই স্থানে, যেমন এর সৌন্দর্য্য, তেমন শান্তিপূর্ণ উইস্টেরিয়া ফুলের সমাহার, এই বাগানটি সর্বসাধারণের জন্য সবসময় নয়, শুধুমাত্র উইস্টেরিয়া ফুলের মরশুমেই উন্মুক্ত করা হয়।
১৮.ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাত
জিম্বাবুয়ের বর্ডার ও জিম্বাজি নদীর কাছে অবস্থিত অপূর্ব সৌন্দর্য্য মন্ডিত এই ঝর্ণাটি।প্রায় ৩৫৪ ফুট উঁচু এই জলপ্রপাত টি ২০ কিমি পর্যন্ত কুয়াশার সৃষ্টি করে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ আসে এখানকার সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে।
১৯. হা লং বে
হা লং বে ভিয়েতনামের কুয়াংনি প্রদেশে অবস্থিত। ১৫৫৩ বর্গকিলোমিটার আয়তন বিশিষ্ট হা লং বে উপসাগরের স্বচ্ছ নীল জলে ৫০ কোটি বছর আগে সৃষ্টি হওয়া নানা চুনাপাথর এর সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে। হা লং বে-তে ৯২৮টি দ্বীপ থাকলেও বড় দ্বীপের সংখ্যা মাত্র দুটি। হা লং উপসাগরে রয়েছে প্রায় ১৪ প্রজাতির ফুল,প্রায় ২০০ প্রজাতির মাছ, ৪৫০ ধরনের প্রাণী। চারটি ভাসমান গ্রাম ও কৃত্রিম গুহাও রয়েছে এখানে। রূপসী এই স্থান পৃথিবীর অন্যতম দর্শনীয় স্থানগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য।
২০.ভ্যালি অব ফ্লাওয়ারস
সুউচ্চ পশ্চিম হিমালয়ে অবস্থিত উত্তরাখণ্ড প্রদেশের অপরুপ সুন্দর জাতীয় উদ্যান ফুলের উপত্যকা। উদ্যানটি বিভিন্ন দুর্লভ ও বিপন্ন জীববৈচিত্রের সমাহার দেখা যায়। যেমন এশীয় কালো ভাল্লুক,তুষার চিতা, মাস্ক ডিয়ার , লাল শিয়াল এবং নীল ভেড়া ইত্যাদি । নন্দা দেবী রাষ্ট্ৰীয় উদ্যান-এর বন্য পাৰ্বত্য আরণ্যর পরিপূরক ফুলের উপত্যকা জাতীয় উদ্যান। উদ্যানটি ৮৭.৫০ বৰ্গ কিঃমিঃ জুড়ে বিস্তৃত।