প্রত্যেক মানুষই চুলের প্রতি সচেতন, সকলেই চান চুল ঘন এবং মজবুত হোক, কিন্তু যাদের চুল অঝোরে পড়ে গিয়ে মাথায় টাক দেখা দেয় তাহলে চুল পড়ার সমস্যার হাত থেকে বাঁচতে নানা উপায় অবলম্বন করেন। চুল পড়া বর্তমানে এমন একটি সমস্যা যার সম্মুখীন হন নারী পুরুষ উভয়ই, অনেকেরই বয়সের তুলনায় অনেক আগেই চুলে টাক পড়ে, অনেকের আবার চুল হয়ে যায় সাদা, অবশ্যই এ-র পেছনে অনেক কারন রয়েছে।
দিনে ৫০-১০০ টা চুল পড়লে তা অস্বাভাবিক কিছু নয়, কিন্তু যদি তার থেকে অধিক চুল পড়ে যায় তাহলে সে ব্যাপারে নজর দেওয়া উচিত। বংশগত কারনে অনেক সময় দ্রুত চুল পড়ে যায়, এছাড়াও হরমোনাল ইমব্যালেন্স, থাইরয়েড, শরীরে পুষ্টির অভাব, অত্যধিক ধূমপান, চুলে কালার করা, ওষুধের সাইড এফেক্ট ইত্যাদি কারনে চুল পড়ার সমস্যা ব্যপকভাবে বৃদ্ধি পায়।
তবে কিছু ঘরোয়া উপায়ে সহজেই এই সমস্যা থেকে অনেকাংশে রেহাই পাওয়া যায়। চুল পড়া কমানোর কিছু উপায় উল্লেখ করা হল –
চুল পড়া রোধের উপায়
আমলকির ব্যবহার
শরীরে ভিটামিন সি এর অভাবে অতিরিক্ত পরিমাণে চুল পড়ার সমস্যা দেখা দেয় এবং আমলকিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকায় আমলকি চুলের দ্রুত বৃদ্ধি ঘটাতে সহায়তা করে আমলকি।
আমলকি, আমলকির তেল বা আমলকির রস চুলের ফলিকল গুলিকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি চুলে পুষ্টি জোগায়, চুলের প্রাকৃতিক রং ধরে রাখে।
নারকেল তেলের সাথে কাঁচা আমলকির রস মিশিয়ে মাথায় কিচ্ছুক্ষণ লাগিয়ে শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে নিতে হবে। এই পদ্ধতির মাধ্যমে দ্রুতহারে চুল পড়া থেকে নিস্তার পাওয়া যায়।
Khadi Natural Ayurvedic Amla and Bhringraj Hair Cleanser(Shampoo), 210ml @ ₹ 145.00
অ্যালোভেরা
আমরা প্রায় সকলেই জানিবহু রোগ নিরাময়ে ব্যবহৃত অ্যালোভেরা ত্বকের জন্য ভীষণ উপকারি।তবে শুধুমাত্র ত্বকের জন্য নয়, এটি
চুলে পুষ্টি জোগায় এবং চুলের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়।অ্যালোভেরা ক্ষতিগ্রস্ত স্ক্যাল্পকে করে তোলে সতেজ এবং চুল গজাতে সাহায্য করে। ভিটামিন সি এবং ভিটামিন ই সমৃদ্ধ অ্যালোভেরা চুলকে মসৃন রাখে।
প্যাকেটজাত অ্যালোভেরা জেল বা গাছ থেকে তুলে ২চামচ অ্যালোভেরা জেল চুলের গোড়া থেকে ডগা পর্যন্ত ১ ঘন্টা লাগিয়ে রেখে তারপর চুলটা ধুয়ে নিতে হবে। প্রতি সপ্তাহে ১, ২ দিন এই জেল চুলে লাগালে চুল সুন্দর হবে এবং চুল পড়াও রোধ হবে।
গ্রিন টি
চুল পড়ার নিয়ন্ত্রণে ঘরোয়া উপায় গুলির মধ্যে অন্যতম গ্রিন টি।
গ্রিন টি র মধ্যে প্রচুর পরিমাণে রয়েছে পলিফেনোল ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট যা চুলকে ক্ষতিকারক ইউভি রশ্মির হাত থেকে বাঁচানোর পাশাপাশি চুলের দ্রুত বৃদ্ধি, চুলে খুশকি, এবং স্ক্যাল্পের সমস্যা, ডগা ফাটা প্রভৃতি সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে এবং চুলের বৃদ্ধি এবং চুলের পুষ্টি তে সহায়তা করে।
সপ্তাহে দু দিন চুলে বা স্ক্যাল্পে গ্রিন টি লাগিয়ে জলে ধুয়ে নিতে হবে।
Goodwyn Peppermint Tea, Herbal Tea to Refresh and Rejuvenate, 50 Grams @ ₹ 399.00 ( 100Rs Off )
লেবুর রস
চুল পড়া রোধ করার একটি অন্যতম উপাদান হলো পাতিলেবু। লেবুতে ভিটামিন সি থাকায় তা অধিক মাত্রায় চুল পড়ে যাওয়াকে কমাতে সাহায্য করে।
লেবু সাইট্রিক অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন সি সমৃদ্ধ হওয়ায় চুলের খুশকি দূর করে চুলকে উজ্জ্বল রাখে এবং মাথার ত্বকে কোনো সমস্যা হলেও তার সমাধান করে।
সপ্তাহে এক দিন পাতি লেবুর রস মাথার ত্বকে মেখে কিছুক্ষন রেখে জলে ধুয়ে নিতে হয়।
পেঁয়াজের রস
চুল পড়া রোধ করে চুলের দ্রুত বৃদ্ধি ঘটাতে অন্যতম কার্যকরী উপাদান হল পেঁয়াজের রস। পেঁয়াজের রসে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ফাঙ্গাল উপাদান থাকায় চুলকে পুষ্টি জুগিয়ে চুলকে ঘন ও মজবুত করে তোলে।
ডিমের ব্যবহার
চুল উঠে যাওয়ার সমস্যায় ব্যবহার করতে পারেন ডিম। এই উপাদানটি চুলের দ্রুত বৃদ্ধি ঘটাতে সাহা্য্য করে। চুলকে মসৃন করে তোলে।
যাদের চুল তৈলাক্ত তারা ব্যবহার করবেন ডিমের সাদা অংশ এবং যাদের চুল শুষ্ক তারা ডিমের কুসুমের অংশটি ব্যবহার করতে পারে। ডিমের মধ্যে থাকে প্রোটিন যা চুলকে পুষ্টি জুগিয়ে সুস্থ এবং উজ্জ্বল করে তোলে।
ডিমের কুসুম এবং লেবুর রসের মিশ্রণ মাথার স্ক্যাল্প থেকে চুলের ডগা লাগিয়ে মিনিট ২০ রেখে শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে নিতে হবে।
এছাড়াও ডিম, টক দই, কলা বা ডিম,মধু, নারকেল তেল দিয়েও বানানো যেতে পারে ডিমের মাস্ক।এটি মাসে এক বা দুবার ব্যবহার করলে চুল পড়া কমবে এবং দ্রুত চুলের বৃদ্ধি ঘটবে।
চুল পড়া রোধে জবা ফুল
চুল পড়া রোধ করে চুলের দ্রুত বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ঘরোয়া উপায় গুলির মধ্যে অন্যতম জবা ফুল। আমাদের প্রায় প্রত্যেকের বাড়িতেই জবা ফুল গাছ থাকে। তাই এই উপায়টি খুবই সহজ এবং জবা ফুল প্রাকৃতিক উপাদান হওয়ায় অনেক বেশি কার্যকরী।
জবা ফুলে ভিটামিন সি এবং অ্যামিনো এসিড প্রচুর পরিমাণে উপস্থিত থাকে যেকারণে চুলকে সমস্ত ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে চুলের খুশকি,রুক্ষতা দূর করে চুলকে পুষ্টি জোগায়।
জবা ফুলের পাতা এবং জবা ফুল নারকেল তেলের সাথে ফুটিয়ে সেই তেল মাথায় কিছুক্ষণ লাগিয়ে শ্যাম্পু করে নিতে হবে। এই তেল ঘরে বানিয়ে ১ মাস পর্যন্ত রাখা যায়। প্রতি সপ্তাহে ১,২ বার এই তেল ব্যবহার করার পর দেখতে পাবেন এর সুফল
Dabur Vatika Enriched Coconut Hair Oil with Hibiscus – 300 ml @ 130 RS Only [ 50% Discount ]
নারকেল তেল
চুলে তেল লাগাতে পছন্দ না অনেকেরই, শ্যাম্পু দেওয়া চুল তেল চিপচিপে করতে চান না অনেকে, কিন্তু তেল চুলের বৃদ্ধি এবং চুল পড়া রোধে কার্যকরী ভূমিকা নেয়৷ রাতে ঘুমানোর আগে বা যে কোনো সময় ১৫ মিনিট চুলে তেল মাসাজ করলে তা স্ক্যাল্পের গভীরে প্রবেশ করে চুলে পুষ্টি জোগায় । তবে চুলের জন্য সব থেকে উপকারী নারকেল তেল, তবে আমন্ড অয়েল, জোজোবা অয়েল ও ব্যবহার করা যেতে পারে।
নারকেল তেল চুলের হারিয়ে যাওয়া সজীবতা ফরিয়ে আনার পাশাপাশি চুলকে সুন্দর ও স্বাস্থোজ্জ্বল করে তোলে।
Maxcare Virgin Coconut Oil (Cold Pressed) 500ML
যষ্টিমধু
আয়ুর্বেদিক উপাদান যষ্টিমধু চুলের ক্ষয় রোধে সহায়ক। অনেকেই টাকের সমস্যায় চিন্তিত থাকেন, সেই সমস্যা সমাধানে কার্যকরী ভূমিকা নেয় যষ্টিমধু। খুশকি দূর করে চুল কে মজবুত করে চুলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বজায় রাখে।
যষ্টিমধু ফোটানো জলে নারকেল তেল মিশিয়ে মাথায় লাগিয়ে রাখতে হবে সারা রাত,সকালে শ্যম্পু করে নিলেই দেখতে পাবেন এ-র উপকারিতা। সপ্তাহে একদিন করে এটি করতে পারেন
ঘন ঘন চুলে রং করা বন্ধ করুন
চুলকে আকর্ষণীয় এবং স্টাইলিশ করার জন্য অনেকেই বিভিন্ন ধরনের রঙ করে থাকেন চুলে, কিছুদিন পর পর পরিবর্তন হয় সেই রং, সেই সব কেমিক্যাল ট্রিটমেন্ট চুল দ্রুত সাদা করে দেয় এবং চুল দ্রুত উঠতে থাকে।তাই চুলকে ভালো রাখতে বন্ধ করতে হবে ঘন ঘন রং করা।
পর্যাপ্ত পরিমাণ জল খেতে হবে
পরিমাণ মত জল খেলে শরীর সুস্থ থাকার পাশাপাশি সুস্থ থাকবে চুল ও। পর্যাপ্ত পরিমান জল খেলে শরীর থেকে টক্সিন বেরিয়ে শরীর দূষণমুক্ত থাকে। কিন্তু সঠিক পরিমাণে জল না খেলে টক্সিন শরীরের ভিতর জমে যায় এবং মাথায় রক্ত সঞ্চালন কমে যায়। ফলে চুল পড়া বৃদ্ধি পায়।
তাই দিনে কমপক্ষে ৪-৫ লিটার জল খেতে হবে।
পর্যাপ্ত ঘুম
চুলের যত্ন নিতে পর্যাপ্ত জল খাওয়ার পাশাপাশি পর্যাপ্ত পরিমান ঘুমেরও প্রয়োজন। অনেকেই কাজের চাপে রাতে দেড়িতে ঘুমিয়ে সকালেই উঠে পড়েন। তাদের চুল ওঠার সম্ভাবনা থাকে অনেক বেশি।
ধূমপান নিয়ন্ত্রণ
অতিরিক্ত ধূমপান শরীরের সাথে সাথে চুলেও প্রভাব ফেলে, ফলে চুল পড়া শুরু হয়, তাই চুল পড়া নিয়ন্ত্রণে বন্ধ করতে হবে ধূমপান।
ব্যায়াম
প্রতিদিন ৩০ মিনিট করে ব্যায়াম করলে মস্তিষ্কে সঠিক রক্ত সঞ্চালন হয়, শরীর মন উভয়ই রিলাক্সড থাকে এবং চুল পড়া কমে চুলের দ্রুত বৃদ্ধি হয়।
সুস্থ থাকতে রোজ হাঁটুন, জেনে নিন হাঁটার বিভিন্ন উপকারিতাগুলি
চুল নিয়ে কিছু প্রশ্নোত্তর
পেঁয়াজের তেল, আমলকির তেল এবং আলমন্ড তেল
নারকেল তেল
চুল সুন্দর, মসৃন ও ঘন থাকে।
সাবানে যে কেমিকাল থাকে তা চুলকে ড্রাই ও অমসৃণ করে দেয়
পেঁয়াজের ও জবা ফুলের তেল