সাহিত্যের একটি আকর্ষণীয় দিক হলো রহস্য। ট্রাজেডি, কমেডি, ঐতিহাসিক কাহিনী, রোমান্টিক কাহিনীর পাশাপাশি রহস্যের প্রতি মানুষের টান, মানুষের কৌতূহল একটু বেশি একথা বললে ভুল হবেনা।
সেরা বাংলা রহস্যের বইগুলির লিস্ট
রহস্য কাহিনী শেষটুকু অনুসন্ধানে পাঠকের মনে যে উৎকণ্ঠার সৃষ্টি হয় এবং তার সমাধানে পৌঁছে যে পরিতৃপ্তি আসে তা ভাষায় ব্যক্ত করা কঠিন। বাংলা সাহিত্যে বহু জনপ্রিয় রহস্যের বইয়ের মধ্যে সেরা ২০ টি হল-
কিকিরা সমগ্র
সাহিত্যিক বিমল করের সৃষ্ট গোয়েন্দা চরিত্র কিকিরা, কিকিরা সিরিজের বেশিরভাগ উপন্যাস আনন্দমেলা তে প্রকাশিত। কিকিরা বাংলা সাহিত্যের বাকি গোয়েন্দাদের সমগোত্রীয় নয়,সে একটু ভিন্ন ধরনের, জাদুকরী হাত এবং তীক্ষ্ণ বুদ্ধি দ্বারা কিকিরা অর্থাৎ কিঙ্কর কিশোর রায় বিভিন্ন রহস্য সমাধান করে।
যখের ধন
সাহিত্যিক হেমেন্দ্রকুমার রায় সৃষ্টি রহস্য রোমাঞ্চ কাহিনি ‘যখের ধন’। ১৯২৩ সালে ধারাবাহিকভাবে ‘মৌচাক’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় ‘যখের ধন’। বিমল ও কুমার নামক দুই যুবক রহস্যের সন্ধানে দেশ-দেশান্তরে অভিযান করে, হেমেন্দ্রকুমার রায়ের এই বিখ্যাত রহস্য উপন্যাস ‘যখের ধন’ দু বার চলচ্চিত্রায়িত হয়।
কর্ণেল সমগ্র
সাহিত্যিক সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ চরিত্রটিকে নিয়ে প্রাপ্তবয়স্ক এবং শিশুদের জন্য গোয়েন্দা কাহিনি লেখেন। প্রথম কর্নেল কাহিনি অমৃত পত্রিকায় প্রকাশিত হয় ১৯৭০ সালে। কর্নেল নিলাদ্রি সরকার অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল এবং একজন প্রকৃতিপ্রেমী। সে বিভিন্ন সময় রহস্যে জড়িয়ে পড়ে এবং তার সমাধান করে।
কাকাবাবু সমগ্র
বিখ্যাত সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কাল্পনিক চরিত্র কাকাবাবু। কাকাবাবু শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী হলেও তার সাহসিকতা, মনের জোর, যেকোনো বিষয়ে তাঁর প্রবল জ্ঞান তাকে যেকোন সমস্যার সমাধানে পৌঁছে দেয়।
কাকাবাবুর আসল নাম রাজা রায়চৌধুরী। কাকাবাবুকে নিয়ে ৩৬ টি উপন্যাস লেখেন সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়. বাংলা সাহিত্যের রহস্যের বইগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য কাকাবাবু সমগ্র।
অর্জুন সমগ্র
সত্যসন্ধানী অর্জুন এবং অর্জুন সিরিজের সমস্ত গল্প-উপন্যাস বাংলা সাহিত্যের সেরা রহস্য কাহিনী গুলোর মধ্যে অন্যতম। সমরেশ মজুমদার সৃষ্ট অর্জুন সিরিজের প্রথম বই ‘খুনখারাপি’ প্রকাশকাল ১৯৮৪ সাল।
‘খুনখারাপি’ ও ‘সীতাহরণ রহস্য এই দুই গ্রন্থের গল্প অবলম্বনে নির্মিত সিনেমাটির নাম হল ‘কালিম্পংয়ে অর্জুন’। অর্জুন সিরিজের ‘দেড়দিন’ অবলম্বনে নির্মিত হিন্দি সিরিয়াল টির নাম হল ‘জঙ্গল কি গেহরাই মে’।
ফেলুদা সমগ্র
বাংলা সাহিত্যের অন্যতম জনপ্রিয় ও বহুল পঠিত কাল্পনিক গোয়েন্দা কাহিনী ফেলুদা সিরিজ। ফেলুদার ভালো নাম প্রদোষচন্দ্র মিত্র। জনপ্রিয় গোয়েন্দা সিরিজ ফেলুদার স্রষ্টা সত্যজিৎ রায়। ফেলুদার নাম প্রদোষ চন্দ্র মিত্র। ফেলুদা সিরিজের প্রথম গল্প ‘ফেলুদার গোয়েন্দাগিরি’ ১৯৬৫ সালে ‘সন্দেশ’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
ফেলুদা চরিত্রের সাথে অনেকাংশে মিল পাওয়া যায় শার্লক হোমসের। নেশা এবং পেশায় ফেলুদা গোয়েন্দা। ১৯৬৫ – ১৯৯৭ সালে ফেলুদা সিরিজের মোট ৩৫ টি সম্পূর্ণ ও ৪ টি অসম্পূর্ণ গল্প ও উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছে।
‘সন্দেশ’ পত্রিকায় ১৯৬৫ সালের ডিসেম্বর মাসে ‘ফেলুদার গোয়েন্দাগিরি’র মাধ্যমে ফেলুদা সিরিজের আত্মপ্রকাশ ঘটে। মার্শাল আর্টে পারদর্শী ফেলুদা যেকোন রহস্যের সমাধান করতে পারে।
পান্ডব গোয়েন্দা সমগ্র
ষষ্ঠীপদ চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘পান্ডব গোয়েন্দা’ বাবলু,বিলু,ভোম্বল, বাচ্চু, বিচ্ছু এবং তাদের সঙ্গী পঞ্চুকে নিয়ে তাদের নানা গোয়েন্দাগিরি, রোমাঞ্চকর রহস্যের কাহিনী উঠে এসেছে পান্ডব গোয়েন্দা সিরিজে।
ব্যোমকেশ সমগ্র
বাংলা সাহিত্যের সেরা রহস্যকাহিনী গুলির মধ্যে যার নাম প্রথম সারিতে সর্বদা বিরাজমান তাহলে ব্যোমকেশ বক্সী সিরিজ সত্যান্বেষী ব্যোমকেশ চরিত্র টিকেট নিয়ে তেত্রিশটি কাহিনী রচনা করেন শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় ব্যোমকেশ বক্সী চরিত্রগুলিকে নিয়ে একাধিক চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে
টেলিভিশন ধারাবাহিকেও দেখা গেছে ব্যোমকেশ বক্সীর কাহিনি।১৩৩৯ বঙ্গাব্দ ২৪ শে মাঘ এই সিরিজের প্রথম গল্প ‘সত্যান্বেষী’র মাধ্যমে সাহিত্যিক শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় পাঠকের কাছে নিয়ে আসেন বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয় রহস্য কাহিনি ব্যোমকেশ সমগ্র।
পরাশর সমগ্র
বাংলা সাহিত্যে প্রেমেন্দ্র মিত্রের ছোটগল্প গুলিতে যেমন একটা অপ্রত্যাশিত চমক থাকে, যা পাঠকের মনে এক অনুরণন সৃষ্টি করে, ঠিক তেমনি তার গোয়েন্দা চরিত্র পরাশর বর্মার রহস্য উন্মোচনের কাহিনি পাঠকের মনে দাগ কাটে। পরাশর পেশায় কবি হলেও তার নেশা গোয়েন্দাগিরি। তীক্ষ্ণ বুদ্ধি সম্পন্ন এই চরিত্রটিকে নিয়ে প্রেমেন্দ্র মিত্রের রহস্য গল্প উপন্যাস গুলি পাঠকের মনে চিরদিন থাকবে।
কিরীটী অমনিবাস
উপন্যাসিক নীহাররঞ্জন রায়ের শ্রেষ্ঠ গোয়েন্দা চরিত্র কিরিটি রায়ের আবির্ভাব ঘটে ‘কালো ভ্রমর’ উপন্যাসটির মধ্য দিয়ে। রহস্যভেদী কিরীটি রায়ের কাহিনি অবলম্বনে বেশ কিছু চলচ্চিত্র নির্মিত হয়।
লন্ডনে বিখ্যাত গোয়েন্দা কাহিনি লেখক ও অগাথা ক্রিস্টির সাথে পরিচয় হয়েছিল নীহাররঞ্জন গুপ্তের, বাংলা রহস্য উপন্যাসের দিকনির্দেশে কিরীটি রায়ের অবদান অনস্বীকার্য।কিরীটি রায় সিরিজের উপন্যাসগুলি একত্রে কিরীটি অমনিবাস নামে সমাদৃত।
কাঁটায় কাঁটায়
নারায়ণ সান্যাল এর সৃষ্ট গোয়েন্দা সিরিজ কাঁটায় কাঁটায়।যার বেশিরভাগ গল্প ইরল স্ট্যানলি গার্ডনার (Erle stanley Gardner) এবং অগাথা ক্রিস্টির উপন্যাস থেকে অনুপ্রাণিত। কাঁটায় কাঁটায় সিরিজের ব্যারিস্টার পি.কে বসু চরিত্রাঙ্কনে Perry Mason ছায়া রয়েছে।
জগুমামা রহস্য সমগ্র
ত্রিদিব কুমার চট্টোপাধ্যায় রহস্যভেদী বিজ্ঞানী চরিত্র জগুমামার সৃষ্টিকর্তা।১৯৮৫ সালে শারদীয়া কিশোর ভারতী পত্রিকায় প্রকাশিত ‘হাত’ উপন্যাসের মাধ্যমে প্রথম আত্মপ্রকাশ জগুমামার। জগুমামা অর্থাৎ ডঃ জগদ্বন্ধু মুখোপাধ্যায় ছিলেন বিজ্ঞানী, যুক্তিবাদী জগুমামা রহস্য ভেদ করে সত্য অনুসন্ধান করে।
গোয়েন্দা গার্গী
গার্গী ব্যানার্জী সাহিত্যিক তপন বন্দ্যোপাধ্যায় সৃষ্ট এক মহিলা গোয়েন্দা চরিত্র, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের গনিতের ছাত্রী গার্গী রহস্যের জালে জড়িয়ে পড়ে অপ্রত্যাশিত ভাবে,আবার সেই রহস্য ভেদ করে আসল অপরাধীকেও খুঁজে বের করে।গোয়েন্দা গার্গীকে নিয়ে তিরিশটিরও বেশি উপন্যাস লিখেছেন তপন বন্দ্যোপাধ্যায়।
গোয়েন্দা ইন্দ্রনাথ রুদ্রসমগ্র
সাহিত্যিক অদ্রীশ বর্ধনের গোয়েন্দা ইন্দ্রনাথকে নিয়ে অজস্র গোয়েন্দাকাহিনি রচনা করছেন যার মধ্যে ছোটদের জন্যও যেমন কাহিনি আছে তেমনই প্রাপ্তবয়স্কদের জন্যও রহস্যের উদ্ঘাটন করেছেন।রসিক ইন্দ্রনাথ প্রতিকূল পরিস্থিতিকেও নিজের অনুকূলে নিয়ে আসে।
গোগল অমনিবাস
কিশোর উপযোগী অনবদ্য গোয়েন্দা কাহিনি গোগলের রূপকার হলেন সাহিত্যিক সমরেশ বসু। কৌতুহলী গোগল একজন বালক চরিত্র যে নানা বিপদের সম্মুখীন হয় এবং বুদ্ধি দ্বারা রহস্যজাল ভেদ করে বিপদকে অতিক্রম করে। গোগলের অনেক গল্প এবং উপন্যাস আছে, যার আত্মপ্রকাশ ‘ইদুরের ঘুটঘুট ‘ এর মাধ্যমে।
মিতিনমাসী
বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয় মহিলা গোয়েন্দা চরিত্র মিতিনমাসী। সাহিত্যিক সুচিত্রা ভট্টাচার্য এই চরিত্রটির স্রষ্টা। গোয়েন্দা মিতিনের ভালো নাম প্রজ্ঞা পারমিতা মুখার্জী। বোনঝি টুপুরের মিতিনমাসী যেমন রান্নায় পারদর্শী তেমনি অপরাধবিজ্ঞান,অপরাধী মনস্তত্ত্বতেও তাঁর বিপুল জ্ঞান।
আনন্দবাজার পত্রিকায় ‘পালাবার পথ নেই’ উপন্যাসের মাধ্যমে মিতিনমাসীর আত্মপ্রকাশ। প্রাপ্তবয়স্ক দের পাশাপাশি কিশোর দের জন্যও মিতিনমাসীর কাহিনি প্রকাশিত হয়েছে।
রবার্ট ব্লেক রহস্য
সাহিত্যিক দীনেন্দ্রকুমার রায় বাংলা পাঠকের জন্য রবার্ট ব্লেক সিরিজের অন্তর্গত ২১৭ টি উপন্যাস প্রকাশ করেন যা মূলত স্যাক্সটন ব্লেকের ডিটেকটিভ গল্পের ভাবানুবাদ। রবার্ট ব্লেক লন্ডনের বেকার স্ট্রীটের বাসিন্দা। তাঁর হাত ধরেই পাঠকও পরিচিত হয় ইংল্যান্ডের বিভিন্ন স্থানের সঙ্গে। বাংলা সাহিত্যে জনপ্রিয় এই সিরিজ।
মিসির আলি
রহস্যময় চরিত্র মিসির আলি হুমায়ূন আহমেদের এক অনবদ্য সৃষ্টি। মিসির আলি কাহিনিগুলোর প্রথম আত্মপ্রকাশ ‘দেবী’ উপন্যাসের মাধ্যমে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মিসির আলি যুক্তিনির্ভর, এই চরিত্রটি কে কেন্দ্র করে রহস্যময় কাহিনির সিরিজ বেশ জনপ্রিয়।
ঋজুদা সমগ্র
সাহিত্যিক বুদ্ধদেব বসুর সৃষ্ট ঋজুদা সিরিজের কাহিনির প্রেক্ষাপট পূর্ব ভারতের অরণ্য। অ্যাডভেঞ্চারের পাশাপাশি গোপন রহস্য সমাধান করতে ঋজুদা ভারতবর্ষ ছাড়াও আফ্রিকার অরণ্য যাত্রা করেছে। ঋজুদা সিরিজের আত্মপ্রকাশ ১৯৭৩ সালে ‘ঋজুদার সঙ্গে জঙ্গলে’ উপন্যাসের মাধ্যমে। জনপ্রিয় এই রহস্য কাহিনী গুলিতে অরন্যের নিখুঁত বর্ণনার পাশাপাশি খাবারের বর্ণনাও অপূর্ব।
এই লিস্টের বাইরে যদি আপনাদের কোনো পছন্দের বই বা চরিত্র থাকে তাহলে আমাদের ফেইসবুক পেজ এ মেসেজ করে জানান।
Recommended Read,
Best Classic Bengali Movies to watch
Best Bengali Romantic Books