হোমি জাহাঙ্গীর ভাভা- নিউক্লীয় পদার্থবিজ্ঞানী, Best Biography of Homi J. Bhabha in Bengali



ভারতের একজন প্রসিদ্ধ নিউক্লীয় পদার্থবিজ্ঞানী ছিলেন হোমি জাহাঙ্গীর ভাভা। তিনি টাটা মৌলিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানের পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক তথা প্রতিষ্ঠাকালীন ব্যবস্থাপক ছিলেন৷

এছাড়া ভাভা ভারতের প্রসিদ্ধ শিক্ষা তথা গবেষণা প্রতিষ্ঠান ট্রম্বে এটমিক এনার্জি নামক প্রতিষ্ঠানেরও প্রতিষ্ঠাকালীন ব্যবস্থাপক ছিলেন, যেটিকে বর্তমানে তাঁর নামে নামাঙ্কিত করা হয়েছে; তবে উভয় প্রতিষ্ঠানই ভারতের নিউক্লিয়ার অস্ত্রের অগ্রগতির ভিত্তি হিসেবে কাজ চালিয়েছিল এবং সেখানে ভাভা স্বয়ং তত্ত্বাবধায়করূপে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ভারতের নিউক্লীয় পদার্থবিদ্যার উন্নতির ক্ষেত্রে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য।  হোমি জাহাঙ্গীর ভাভা ‘ভারতের নিউক্লীয় প্রোগ্রামের জনক’ হিসেবে পরিচিত।

হোমি জাহাঙ্গীর ভাভা- নিউক্লীয় পদার্থবিজ্ঞানী

হোমি জাহাঙ্গীর ভাভার জন্ম ও বাল্যকালের স্মৃতি, Birth and Childhood memories

হোমি জাহাঙ্গীরের জন্ম হয়েছিল একটি ধনী এবং বিখ্যাত শিল্পপতি পরিবারে। একটি দীর্ঘ ঐতিহ্যবাহী এবং রাষ্ট্রীয় কাজে আনুগত্য প্রদর্শনকারী সম্ভ্রান্ত পরিবারে তিনি ১৯০৯ সালের ৩০ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম ছিল হরমুসজি ভাভা এবং মাতার নাম মেহেরিন।  পিতা পেশাগত ভাবে ছিলেন একজন সুপরিচিত আইনজীবী।

তাঁর পিতার দেওয়া জেহাঙ্গির নামটি একটি ফারসি শব্দ থেকে এসেছে, যার অর্থ ‘বিশ্ব বিজেতা’। বাবা হরমুসজি ভাভা ও কাকা দরাব টাটার ইচ্ছে ছিল জাহাঙ্গীর ভাভা যেন কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর ডিগ্রি অর্জন করে ভারতে ফিরে আসে, কারণ তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল ভাভা যেন জমসেদপুরের টাটা আয়রন অ্যান্ড স্টিল কোম্পানির ধাতুবিদ্যা বিশারদ হিসেবে যোগদান করতে পারেন।

হোমি জাহাঙ্গীর ভাভার জন্ম ও বাল্যকালের স্মৃতি

শ্রীনিবাস রামানুজনের জীবনী, Best Biography of Srinivas Ramanujan in Bengali

হোমি জাহাঙ্গীর ভাভার শিক্ষাজীবন, Educational Life

সুখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী ব্যালকালীন শিক্ষা শুরু করেন মহীশূরে। হোমি জাহাঙ্গীর ভাভা প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন মুম্বইয়ের ক্যাথেড্রাল ও জন কন্নন বিদ্যালয় থেকে। বিদ্যালয় জীবনের পড়া শেষ করেছিলেন কৃতিত্বের সঙ্গেই।

তিনি বিজ্ঞান বিষয়টি ভালবাসতেন, তবে পাঠ্যক্রম বহির্ভূত বিষয়ের ক্ষেত্রেও পিছিয়ে ছিলেন না তিনি; অঙ্কন, কাব্যচর্চা বা সঙ্গীত ইত্যাদিতেও আকর্ষণ ছিল তাঁর। তবে কলেজে ভর্তি হওয়ার পূর্বে বিষয় নির্বাচন করাও জরুরী ছিল। কিন্তু শেষ অবধি কোনদিকে না তাকিয়ে পিতা ছেলেকে বিলেত পাঠিয়ে দেন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার জন্য। মাত্র ১৫ বছর বয়সেই তিনি সিনিয়র কেম্ব্রিজ পরীক্ষায় সম্মানের সাথে উত্তীর্ণ হন এবং সেই সুবাদে এলফিনস্টোন কলেজে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পান।

হোমি জাহাঙ্গীর ভাভার শিক্ষাজীবন

১৯২৭ সাল অবধি মুম্বইয়ের রয়্যাল সাইন্স ইন্সটিটিউটে অধ্যয়ন করেছিলেন। একই বছর তিনি কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় এর গনভিল ও কাইয়াস কলেজে ভর্তি হন। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৩০ সালে গণিতে ট্রাইপস ডিগ্রি লাভ করেন তিনি। পরবর্তী সময়ে বেশ কিছু গবেষণার সাথে যুক্ত হন তিনি। তিনি ডক্টরাল উপদেষ্টা হিসেবে পেয়েছিলেন রাল্ফ ফাউলারকে।

বিক্রম সারাভাইয়ের জীবনী, Best Biography of Vikram Sarabhai in Bengali

হোমি জাহাঙ্গীরের কর্মজীবন, Career life

১৯৩২ থেকে ১৯৩৪ সাল অবধি অর্থাৎ দু’বছর জাহাঙ্গীর ভাভা জুরিখে পাউলির অধীনে এবং রোমে বিজ্ঞানী এনরিকো ফার্মির অধীনে গবেষণার কাজ করেছিলেন। পরবর্তীতে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৩৫ সাল থেকে ১৯৩৯ সালের মধ্যে বেশ কয়েকবার মহাজাগতিক রশ্মির বিকিরণ, কোয়ান্টাম গতিবিদ্যা, পারমাণবিক বিজ্ঞান ইত্যাদি বিষয়ে বক্তৃতা দেন তিনি।

সেই সময়ই ভাভা বিজ্ঞানী নীলস্ বোরের অধীনে থেকে গবেষণার কাজ করেন এবং আইজ্যাক নিউটন স্টুডেন্টসিপ ও রয়্যাল একজিবিশন বৃত্তি পেয়েছিলেন। ১৯৩৭ সালে গবেষনা চলাকালীন সময়, মহাজাগতিক রশ্মি সম্বন্ধে ক্যাসকেড তত্ত্ব আবিষ্কার করেন হোমী জাহাঙ্গীর ভাভা। এই বিশেষ আবিষ্কারের পরিপ্রেক্ষিতে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাঁকে অ্যাডামস পুরস্কার দেওয়া হয়। অতঃপর নিজের দেশে ফিরে এসে ১৯৪০ সালে ব্যাঙ্গালোর স্থিত Indian Institute of Science-এ অধ্যাপক হিসেবে নিয়োজিত হন তিনি, পরের বছরই এই প্রতিষ্ঠানের F. R.S. নির্বাচিত হন।

হোমি জাহাঙ্গীরের কর্মজীবন

১৯৪১ সালে জাহাঙ্গীর ভাভার কর্মজীবনের শুরু হয়েছিল। ব্যাঙ্গালোর স্থিত ইন্ডিয়ান ইনসটিটিউট অব সায়েন্স এর তত্ত্বীয় পদার্থবিদ্যা বিভাগের যোগ দিয়েছিলেন তিনি। সকলের পরিচিত, ভারতীয় শিল্প সাম্রাজ্যের অন্যতম রূপকার জামশেদজী টাটা ও জাহাঙ্গীর ভাবার পারিবারিক সম্পর্ক ছিল। কিছুকাল রিডার পদে কাজ করার পর, ১৯৪৫ সালে টাটা ও ভাভার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় টাটা ইনস্টিটিউট অব ফান্ডামেন্টাল গবেষণা কেন্দ্র শুরু হয় এবং এর অধ্যক্ষ হিসেবে ছিলেন স্বয়ং জাহাঙ্গীর।

সেখানে বেশ কিছু বছর কাজ করেন তিনি। পরে ভারত সরকার গঠিত পারমাণবিক শক্তি কমিশনে যোগদান করেন তিনি, ১৯৫৮ সালে সেখানকার চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত হন হোমি জাহাঙ্গীর ভাভা। বৈজ্ঞানিক হিসেবে কর্মজীবনে তাঁর কর্মক্ষেত্রের মূল দিক ছিল আণবিক পদার্থ বিজ্ঞান। এই মহান বিজ্ঞানীর সুখ্যাতির অন্যতম কারণ হল :

ভারতীয় নিউক্লীয় প্রোগ্রাম

কসমিক রশ্মি

পয়েন্ট পার্টিকল

শ্যামল মিত্রের জীবনী, Best biography of eminent singer Shyamal Mitra in Bengali

বিজ্ঞানীর প্রাপ্ত পুরস্কার ও সম্মাননা, Awards and Recognition

নিজের অনস্বীকার্য অক্ষয়কীর্তির পরিপ্রেক্ষিতে হোমি জাহাঙ্গীর ভাভা প্রভূত খ্যাতি ও সম্মান অর্জন করেছেন, এমনকি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুও ভাবার বিজ্ঞান প্রতিভার স্বীকৃতি জানিয়ে ছিলেন। এসবের পাশাপাশি সম্মানিত হয়েছিলেন বেশ কিছু উপাধির মাধ্যমেও। সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:

● পদ্মভূষণ উপাধি, ১৯৫৪ সাল।

● অ্যাডামস পুরস্কার।

এছাড়াও ২০২২ সালে রকেট বয়েজ নামক ওয়েব সিরিজ মুক্তি পায়, যা ছিল হোমি জে. ভাভা, বিক্রম সারাভাই এবং এ.পি.জে. আবদুল কালামের জীবন থেকে অনুপ্রাণিত ৷

বিজ্ঞানীর প্রাপ্ত পুরস্কার ও সম্মাননা

সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়ের জীবনী, Best biography of renouned author Sanjib Chattopadhyay in Bengali  

হোমি জাহাঙ্গীর ভাভার অকাল মৃত্যু, Untimely death of Homi Jahangir Bhava

এই মহান বিজ্ঞানী ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দে ২৮ জানুয়ারি এক বিমান দুর্ঘটনাতে অকাল প্রয়াত হয়েছিলেন।  সেদিনের ওই অভিশপ্ত বিমানে থাকা ১০৬ জন যাত্রীর মধ্যে তিনিও একজন ছিলেন। তিনি ভিয়েনার উদ্দেশ্যে এয়ার ইন্ডিয়া বিমানে চড়ে আই.এ.ই.এ. সম্মেলনে যোগদান করার জন্য আসছিলেন। ইতিমধ্যে ভারতের সাথে একগুচ্ছ চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল ফ্রান্স।

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায় যে, ওই বিমানে কোনও রকম যান্ত্রিক ত্রুটি ধরা পড়েনি। এমনকি যাত্রার মাঝপথেও নিয়ম মেনে নিয়ে কোনো যান্ত্রিক ত্রুটি নেই বলেও রিপোর্ট করা হয়, অথচ জেনেভা এয়ারপোর্টে নামার ঠিক ৫ মিনিট পূর্বেই ভেঙে পড়েছিল সেই বিমানটি। পরে ভারত সরকার দুর্ঘটনাটির তদন্ত খুব বেশি দীর্ঘায়িত করেনি। বিমানের দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে প্রকাশ করা হয় যে জেনেভার এয়ার ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের সাথে এয়ার ইন্ডিয়া বিমান চালকের ভুল বোঝাবুঝির ফলে বিমানটি ক্র্যাশ করে।

অন্যদিকে সাম্প্রতিক বেশ কিছু তথ্য দুর্ঘটনার কারণ অন্য কিছুই ইঙ্গিত করে। ১৯৬৫- সালের অক্টোবর মাসেই অল ইন্ডিয়া রেডিও’য় এক অনুষ্ঠানে জাহাঙ্গীর ভাবা বলেছিলেন যে, ” সরকার সবুজ সঙ্কেত দিলে দেড় বছরের মধ্যেই পরমাণু বোমা বানিয়ে ফেলতে পারবে ভারত।” সেই উদ্দেশ্যেই জরুরি পরমাণু সম্মেলনে যোগ দেওয়ার জন্য তিনি ইউরোপে যান।

হোমি জাহাঙ্গীর ভাভার অকাল মৃত্যু

এই ঘোষণার তিন মাস পরই বিমানটি ক্র্যাশ হয়। তাঁর মৃত্যুতে দেশের বিশাল ক্ষতি হয়, বেঁচে থাকলে হয়তো তিনি বিজ্ঞানের ব্যবহার অবিরামভাবে চালিয়ে দেশকে আরো উন্নত করে তুলতে সক্ষম হতে পারতেন। ভারতের পারমাণবিক শক্তির চর্চা ও তার প্রয়োগের পথিকৃৎ এই বিজ্ঞানী ভারতীয় বিজ্ঞান সাধনায় অক্ষয়কীর্তি স্থাপন করে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন।

তাঁর মৃত্যুর পর, তাঁকে সম্মান জানাতে মুম্বাইয়ের পারমাণবিক শক্তি সংস্থার নাম পরিবর্তন করে ভাভা অ্যাটমিক রিসার্চ সেন্টার রাখা হয়। একজন দক্ষ বিজ্ঞানী এবং প্রশাসক হওয়ার পাশাপাশি, ভাভা একজন চিত্রশিল্পী এবং একজন শাস্ত্রীয় সঙ্গীত এবং অপেরা উৎসাহী ছিলেন, পাশাপাশি একজন অপেশাদার উদ্ভিদবিদও ছিলেন।

উপসংহার, Conclusion 

স্বাধীন ভারতের পরমাণু বিজ্ঞানের ইতিহাসে পদার্থবিজ্ঞানী হোমি জাহাঙ্গীর ভাভা একটি স্মরণযােগ্য নাম। তাঁর প্রেরণার পরিপ্রেক্ষিতেই ভারতের পরমাণু শক্তির উন্নয়ন সম্পর্কিত গবেষণা শুরু করা হয়েছিল, পাশাপাশি প্রতিষ্ঠিত হয় আমাদের দেশের প্রথম পরমাণু শক্তি চুল্লি বা অ্যাটমিক রি- অ্যাক্টর।

পদার্থবিজ্ঞানী হোমি জাহাঙ্গীর ভাভা একটি স্মরণযােগ্য নাম

অন্যদিকে তিনি মহাকাশ গবেষণার দিক থেকেও ভারতের ভূমিকাকে উজ্জ্বলতর করেছিলেন। তাঁর উদ্যোগেই তেজষ্ক্রিয় সৌরবিদ্যা তথা জীবাণুবিদ্যা সংক্রান্ত গবেষণা শুরু হয় এবং স্থাপন করা হয় উটকামন্ডের রেডিয়াে টেলিস্কোপ।

Frequently Asked Questions: 

হোমি জাহাঙ্গির ভাবার জন্ম কবে হয় ?

১৯০৯ সালে ।

হোমি জাহাঙ্গির ভাবার পিতার নাম কী ?

হরমুসজি ভাভা ।

হোমি জাহাঙ্গির ভাবার মায়ের নাম কী ?

. মেহেরিন ।

হোমি জাহাঙ্গির ভাবার উল্লেখযোগ্য পুরস্কার কী ?

 পদ্মভূষণ (১৯৫৪)

হোমি জাহাঙ্গির ভাবা কিভাবে মারা যায় ?

বিমান দুর্ঘটনায় ।

কত সালে তিনি মারা যান ?

১৯৬৬ সালে ।

Recent Posts