মার্কিন প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকনের জীবনী, Best Biography of US President Abraham Lincoln in Bengali 


আমেরিকার সবচেয়ে লম্বা প্রেসিডেন্ট বলুন কিংবা  প্রথম দাড়ি ওয়ালা প্রেসিডেন্ট বলুন না কেন দুটো রেকর্ডই একজন ব্যক্তির দখলে রয়েছে, যার নাম আব্রাহাম লিংকন, যিনি ছিলেন আমেরিকার ১৬ তম প্রেসিডেন্ট। লিঙ্কন এমন একজন প্রেসিডেন্ট ছিলেন যিনি আমেরিকায় দাসদের স্বাধীনতার ঘোষণা করেছিলেন। তাঁকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্রান্তিকালের মহানায়কও বলা হয়।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকনের জীবনী, Best Biography of US President Abraham Lincoln in Bengali 

কিন্তু এসবের বাইরেও এই মহারথীর জীবনের আরও ভিন্ন কিছু দিক রয়েছে যা আমাদের মধ্যে অনেকেরই অজানা। আজকের এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে আপনারা এই ঐতিহাসিক ব্যক্তির জীবনের জানা অজানা কিছু ঘটনা সম্পর্কে জেনে নিতে পারবেন।

আব্রাহাম লিংকনের জন্ম ও পরিবার পরিচয়, Birth and family history of Abraham Lincoln

বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিত্ব আব্রাহাম লিংকনের জন্ম হয়েছিল কেন্টাকি রাজ্যের হার্ডিন কাউন্টির দক্ষিণ পূর্বে অবস্থিত কাঠের তৈরি এক কক্ষ বিশিষ্ট বাড়িতে। ১৮০৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি জন্ম হয় তাঁর। তিনিই ছিলেন আমেরিকার প্রথম প্রেসিডেন্ট যে যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম অংশে জন্ম গ্রহণ করেছেন। লিংকনের পিতার নাম থমাস লিংকন এবং মায়ের নাম ন্যান্সি হ্যাঙ্কস।

দুজনেই পেশার দিক থেকে কৃষক ছিলেন। লিংকন এর বয়স যখন মাত্র ৯ বছর ছিল, অর্থাৎ ১৮১৮ সালে তাঁর মা হঠাৎ করে মারা যান, মৃত্যুর কারণ কেউই প্রথম বুঝে উঠতে পারেন নি। পরবর্তীতে জানা গিয়েছিল যে তাঁর মা সেদিন গাভীর দুধ পান করেছিলেন এবং সেই গাভী টি হয়তো কোন বিষাক্ত ঘাস বা পাতা খেয়ে ফেলেছিল যার কারণে দুধেও সেই বিষ মিশ্রিত হয়ে যায়। ওই দুধ পানের ফলেই ন্যান্সির মৃত্যু হয়েছিল। পরে তাঁর বাবা আরেকটি বিয়ে করেন বলে সৎ মায়ের আগমন ঘটে লিংকনের জীবনে।

আব্রাহাম লিংকনের জন্ম ও পরিবার পরিচয়

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের জীবনী, Best biography of Bill Clinton in Bengali

কিন্তু সৎ মায়ের সাথে কখনই খারাপ সম্পর্ক ছিলনা লিংকনের, বেশ ভালই দিন কাটছিল তাদের। এমনকি লিংকনের পড়াশুনার ক্ষেত্রেও সৎ মা সর্বদা সমর্থন করতেন। তবে নিজের বাবার সাথে লিংকনের সম্পর্ক তেমন ভাল ছিলনা, যার কারণে তিনি বাবার শেষকৃত্যের অনুষ্ঠানেও উপস্থিত ছিলেন না।

লিংকনের শিক্ষাজীবন, Education 

লিংকন নিজের জীবনের বেশিরভাগ সময় নিজেই পড়াশুনা করেছেন, তাই তাঁকে একজন স্বশিক্ষিত ব্যক্তি বলা চলে। তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সময়কাল সব মিলিয়ে ছিল মাত্র ১৮ মাস। তবে তিনি পড়াশুনা করতে খুব ভালবাসতেন।

লিংকনের শিক্ষাজীবন

যখনই তাঁর কিছু জানার দরকার বলে মনে করেছেন তখন তা নিজে নিজেই পড়ে নিয়েছেন। একসময় তাঁর মনে হয়েছিল তিনি উকিল হবেন, তখন তিনি নিজে থেকেই আইন সম্পর্কিত সবকিছু পড়েছিলেন। এমন কি আইন বিষয়ক কোন ডিগ্রি না থাকতেও তিনি আইন অনুশীলন করেছিলেন। 

বারাক ওবামার জীবনী, Best Biography of Barack Obama in Bengali 

প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগেকার কর্মজীবন, Abraham Lincoln’s Career before becoming President

রাষ্ট্রপতি হিসেবে ক্ষমতা পাওয়ার পূর্বে আব্রাহাম লিংকন বেশ কিছু পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। ১৮৩২ সালে তিনি ব্ল্যাক হক যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। এছাড়া ইলিনয়ের আইন প্রণেতা হিসেবে নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পরও তিনি ১৮৩৩ সালে পোস্ট মাস্টার হিসেবে ইলিনয়ের নিউ সালেম এ যোগদান করেন। তবে পোস্ট অফিসটি ১৮৩৬ সালে বন্ধ হয়ে যায়।

এরপর তিনি আইনী কাজে নিজেকে নিয়োজিত করার সিদ্ধান্ত নেন। এরজন্য বার কাউন্সিলে ভর্তি হন এবং ১৮৩৭ সালে সফল উকিল হিসেবে কাজ শুরু করেন।

প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগেকার কর্মজীবন

প্রেসিডেন্ট হিসেবে আব্রাহাম লিংকন, Abraham Lincoln as president

 ব্যাপক অর্থ প্রতিপত্তি তথা কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকা সত্ত্বেও আব্রাহাম লিংকন ১৮৬০ সালে রিপাবলিকান দলের হয়ে প্রেসিডেন্ট পদের জন্য নমিনেশন পান। তখন তাঁর প্রতিপক্ষও অনেক বেশি প্রভাবশালী ছিল। কিন্তু শেষমেশ ১৮৬০ সালে ডেমোক্রেটিক দল কে হারিয়ে দিয়ে লিংকন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। এর আগে ১৮৪৭ সাল থেকে ১৮৪৯ সাল অবধি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি।

প্রেসিডেন্ট হিসেবে আব্রাহাম লিংকন

পরে ১৮৫৮ সালে তিনি মার্কিন সিনেট নির্বাচনে রিপাবলিকান দলের প্রার্থী হিসেবে অংশগ্রহন করেন। কিন্তু স্টিফেন ডগ্লাসের বিপক্ষে প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে হেরে যান তিনি। তবে ‘লিংকন ডগ্লাস বিতর্ক’ এবং কৃতদাস প্রথা সম্পর্কে ক্যানসাস-নেব্রাস্কা আইন নিয়ে বিতর্ক অল্প কিছু দিনের মধ্যেই লিংকন কে জাতীয় খ্যাতি এনে দিয়েছিল। লিঙ্কন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতায় আসার কিছুদিনের মধ্যেই আমেরিকায় গৃহ যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। তিনি না থাকলে দেশটি হয়তাে দু-টুকরাে হয়ে যেত।

১৮৬১ সালের ১ জানুয়ারি স্বাধীনতার ঘোষণা পত্রে সই করেন লিংকন। এর মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে দাস প্রথা বিলুপ্ত করেন। তিনি প্রায় ৩৫ লক্ষ ক্রীতদাসকে মুক্ত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তাঁর অর্জনগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলো হল- মরিল অ্যাক্ট সাইন করা, যার ফলস্বরূপ প্রতিটি রাজ্যে কৃষি এবং প্রযুক্তি বিষয়ক কলেজ গড়ে তোলা হয়েছিল, আমেরিকায় দাস প্রথা বিলুপ্ত করার জন্য স্বাধীনতার ঘোষণা পত্র, জাতীয় ব্যাংকিং সিস্টেমের প্রণয়ন করা, এছাড়াও তিনি প্যাসিফিক রেলপথ অ্যাক্ট শুরু করেন, যার মাধ্যমে প্রথম আন্তঃমহাদেশীয় রেললাইন তৈরির কাজ শুরু হয়।

মার্কিন রাষ্ট্রপতি জো বাইডেনের জীবনী, Best Biography of President Joe Biden in Bengali

বৈবাহিক জীবন, Married life

মার্কিন রাজনীতিবিদ আব্রাহাম লিঙ্কন দাম্পত্য সঙ্গী হিসেবে পেয়েছিলেন মেরি টোড কে। ১৮৪২ সালের ৪ নভেম্বর তাদের বিয়ে হয়। সে সময় মেরির বয়স ছিল ২৩ বছর এবং লিংকনের বয়স ছিল ৩৩ বছর। পরবর্তী সময়ে এই দম্পতির ঘরে চার সন্তানের জন্ম হয়। তাদের নাম রবার্ট টড লিঙ্কন, এডওয়ার্ড বেকার লিঙ্কন, উইলি লিঙ্কন এবং টেড লিঙ্কন।

বৈবাহিক জীবন

ফ্র্যাংকলিন রুজভেল্টের জীবনী, Best Biography of Franklin Roosevelt in Bengali

আব্রাহাম লিংকনকে কিভাবে হত্যা করা হয়, How was Abraham Lincoln assassinated?

প্রথম মেয়াদে লিঙ্কন জনগণের স্বার্থে বহু দুঃসাহসিক কাজ করেন, ফলে তিনি প্রভূত জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন। তবে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার কিছুদিন পরই লিংকন আততায়ীর হাতে খুন হন। ঘটনাটি ঘটেছিল ১৮৬৫ সালের ১৪ এপ্রিল। সেদিন তিনি ফোর্ড থিয়েটারের একটি অনুষ্ঠানে নাটক দেখতে গিয়েছিলেন। সেইখানেই জন উইকস বুথ নামক ব্যক্তি তাঁর মাথার পিছনে গুলি করে হত্যা করে।

এই খুনি টি একটি বিখ্যাত নাটুকে পরিবারের সদস্য ছিল। এছাড়া আরও এক অদ্ভুত ব্যাপার হল প্রথমবার লিংকনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণের দিন যে ফটোগ্রাফ নেওয়া হয়েছিল সেই ফটোগ্রাফটিতে তাঁর হত্যাকারী জন বুথ লিংকনের ঠিক পাশেই দাড়িয়ে ছিল। মানবতাবাদী রাষ্ট্রনায়ক আব্রাহাম লিংকনকে হত্যা করার কারণ এই ছিল যে জন বুথ কনফেডারেটের একজন সমর্থক ছিলেন অন্যদিকে লিংকন ছিলেন কনফেডারেটের বিরোধী।

আব্রাহাম লিংকনকে কিভাবে হত্যা করা হয়

ফোর্ড থিয়েটারে খুন হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পূর্বেই তিনি আমেরিকান সিক্রেট সার্ভিস তৈরির জন্য একটি আইন প্রণয়ন করেছিলেন। তখন এই সিক্রেট সার্ভিসের মূল কাজ ছিল ব্যাপক হারে বাড়তে থাকা মুদ্রা জালিয়াতি বন্ধ করা।  লিংকনের মৃত্যু হওয়ার পরও এই সিক্রেট সার্ভিস তাঁর রক্ষার কাজে নিয়োজিত ছিল, এর কারণ ১৮৭৬ সালে এক ডাকাতের দল ইলিনয়ের ওক রিজ কবরস্থানে লিংকনের সমাধি থেকে তাঁর মৃতদেহ চুরি করার চেষ্টা করে।

ডাকাতরা পরিকল্পনা করেছিল যে লিংকনের মৃতদেহের বদলে তারা ২০০,০০০ ডলার দাবি করবে। কিন্তু সিক্রেট সার্ভিস এজেন্টদের দক্ষতায় এই ডাকাতির পরিকল্পনা অসফল হয়। এই ঘটনার পর লিংকনের মৃতদেহ অন্য এক কবরে সরিয়ে একটি স্টিলের তৈরি কফিনে রেখে দিয়ে ১০ ফুট কংক্রিটের নিচে সমাধিস্থ করা হয়েছিল।

উপসংহার, Conclusion

বিশ্ববিখ্যাত মার্কিন রাষ্ট্রপতি আব্রাহাম লিংকন আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্টদের মধ্যে অন্যতম সম্মানিত একজন ব্যক্তি। তিনি ছিলেন গণতন্ত্রের মহান পুজারি। আব্রাহাম লিঙ্কন বহু প্রতিকূলতার মাঝেও মানুষের জন্য অনেক কাজ করে গিয়েছেন। এই সব কাজ তাঁর আগে হয়তো আর কেউ করার সাহস করেনি।

তিনি অত্যন্ত সাধারণ অবস্থা থেকে যেভাবে লড়াই করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতাে একটি গণতন্ত্রের প্রধান হয়ে উঠেছিলেন তা সকলকে মুগ্ধ এবং বিস্মিত করে রাখে। আব্রাহাম লিঙ্কনের চারিত্রিক মাধুর্য তথা মানবিকতাবোধ এবং তাঁর দুর্লভ রাজনৈতিক জ্ঞান তাকে কেবলমাত্র আমেরিকার জাতীয় ইতিহাসেই নয় বরং সারা বিশ্বের ইতিহাসেও চিরস্মরণীয় করে রেখেছে।

বিশ্ববিখ্যাত মার্কিন রাষ্ট্রপতি আব্রাহাম লিংকন

Frequently asked questions:

 আব্রাহাম লিংকন কে?

আব্রাহাম লিংকন ছিলেন আমেরিকার ১৬ তম প্রেসিডেন্ট।

আব্রাহাম লিংকন কবে জন্মগ্রহণ করেন?

১৮০৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি

আব্রাহাম লিংকন কবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন?

 ১৮৬০ সালে।

আব্রাহাম লিংকন আমেরিকার কত তম রাষ্ট্রপতি?

১৬ তম।

Recent Posts