ভ্রমণপিপাসুদের জন্যে রইলো হায়দ্রাবাদের সেরা দর্শনীয় স্থানগুলির সম্পর্কে সমস্ত তথ্য


দক্ষিণ ভারতের উত্তর অংশে দাক্ষিণাত্য মালভূমিতে, মুসি নদীর তীরে ৬৫০ বর্গ কিলো মিটার এলাকা নিয়ে অবস্থিত হায়দ্রাবাদ ভারতের তেলঙ্গানা রাজ্যের রাজধানী ও বৃহওম শহর, হায়দ্রাবাদ শহরকে বলা হয় সিটি অফ পার্ল , পুরনো দিনের দুর্গ, মিনার স্থাপত্যে ভরা অপূর্ব সুন্দর এই শহরে অসংখ্য পর্যটন স্থান রয়েছে।

হায়দরাবাদে ঘোরার জায়গাগুলি
Pin it
হায়দ্রাবাদের বেড়ানোর জায়গাগুলি

হায়দ্রাবাদের বেড়ানোর জায়গাগুলির লিস্ট

বহু ভ্রমণ স্থানের মধ্যে বিখ্যাত কুড়িটি হায়দ্রাবাদের পর্যটন স্থানের ব্যাপারে নিচে বর্ণনা করা হল- 

গোলকুণ্ডা দুর্গ  

গোলকুণ্ডা দুর্গ
Pin it
গোলকুণ্ডা দুর্গ  

হায়দ্রাবাদ শহর থেকে ১১ কিলোমিটার দূরে পশ্চিমে গোলকুণ্ডা দুর্গ। ইতিহাসখ্যাত গোলকুণ্ডা দুর্গ  মোচারূপী গ্রানাইট পাথরের পাহাড়ের চুড়োয় মাটির তৈরি। পুরো এলাকাটা মনোহর বাগান এবং সুদৃশ্য বড় পাথরে ঘেরা।

ওয়ারাঙ্গালারের কাকাতীয় রাজা গণপতি ১২ শতকে তৈরি করেন গোলকুন্ডা দুর্গ। বহুবার সংস্কার হয়েছে গোলকুণ্ডা দুর্গের। এর পরিধি ১১ কিলোমিটার, ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ, ১৫ থেকে ১৮ মিটার উঁচু দেওয়ালে বেষ্টনী,  আটটি প্রবেশদ্বার অলংকৃত গ্রানাইট পাথরে।

আজও কুতুবশাহীদের বন্দুক রয়েছে সেখানে। হাতির আক্রমণ প্রতিরোধ করতে গজাল বসানো দরজা, বুরুজ ৮৭ টি। নির্মাণশৈলীতে রয়েছে অভিনবত্ব।

Pin it
গোলকোন্ডা ফোর্ট

কুতুবশাহী সমাধি

গোলকুণ্ডা দুর্গ থেকে এক কিলোমিটার উত্তরে কুতুবশাহী সমাধি। এখানে সাত কুতুবশাহী সমাধি ছাড়াও রয়্যাল ফ্যামিলির আরোও অনেক মানুষের সমাধি রয়েছে। সমাধিসৌধ অসামান্য কারুকার্যময়, হিন্দু মুসলিম ও পাঠান স্থাপত্যে অনবদ্য এই সমাধিসৌধ। 

শিল্পরমম

শিল্পরমম অর্থাৎ শিল্পগ্রাম, হায়দ্রাবাদ শহর থেকে জুবিলি হিল ছাড়িয়ে ১৪ কিলোমিটার দূরে মাধপুরে ৩০ একর জুড়ে অবস্থিত। ঘাসের জাজিমে এবং ঝরনায় পাথর খুদে তৈরি হওয়া নানা শিল্পসম্ভার পর্যটকদের জন্য বিশেষ আকর্ষণীয়। এছাড়াও মার্চে শিল্প উৎসব হয় যা বিশেষ আকর্ষণীয়। 

ওসমান সাগর

১৯০৮সালে প্লাবন থেকে বাঁচাতে বাঁধ দিতে তৈরি হয় এই কৃত্রিম জলাশয়। ৪৬ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে রয়েছে ওসমান সাগর, ওসমান সাগরের কাছে রয়েছে ১৫ একর ব্যপ্ত অসাধারণ ড্রিম ভ্যালি রিসর্ট।

হায়দরাবাদ ফোর্ট
Pin it
চারমিনারের কাছাকাছি

হিমায়ত সাগর 

হায়দ্রাবাদ থেকে কুড়ি কিলোমিটার দূরে অবস্থিত হিমায়ত সাগর। এটি একটি কৃত্রিম লেক, ৭ম নিজাম ওসমান আলি খানের তৈরী।৮৫ বর্গকিলোমিটারের আয়তন মনোরম পরিবেশের স্থানটি হায়দ্রাবাদের উল্লেখযোগ্য স্থান গুলির মধ্যে অন্যতম। 

বনস্থালিপুরম ডিয়ার পার্ক

3500 একরের এই পার্কটিতে রয়েছে বিভিন্ন জাতির পশুপাখি। হরিণ, চিঙ্কারা,ব্ল্যাক বাক,বন্য শূকর, শজারু প্রভৃতির পাশাপাশি একশো অধিক পাখি রয়েছে এই পার্কে। 

ফলকনুমা প্রাসাদ 

নবাব ভাইকার-উল-উমরা নির্মিত এই প্রাসাদটির  বিশ্ব প্রসিদ্ধি আছে, এই প্রাসাদের বিলাসবহুল রাজকীয় রিসেপশন ঘরটি হীরা স্ফটিক ও মূল্যবান সব ধাতু দিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে। এই লাইব্রেরীতে পাণ্ডুলিপি ও দুষ্প্রাপ্যবইয়ের সংগ্রহ উল্লেখযোগ্য। দীর্ঘ নয় বছর ধরে প্রাসাদ কে সজ্জিত করার জন্য ৯ বছর সময় লাগে| এটা সম্পূর্ণ ভাবে ইতালীয় মার্বেল দিয়ে তৈরী করা হযেছে এবং এটি ৯৩,৯৭১ বর্গ মিটার এর উপর বানানো হযেছে| এই প্রাসাদের বিখ্যাত ভোজনশালায় ১০০ জন অথিতি একসাথে বসতে পারে| এই টেবিলের দৈর্ঘ্য ১০৮ ফুট, প্রস্থ ৫.৭ ফুট এবং উচ্চতা ২.৭ ফুট| বর্তমানে সুসজ্জিত ৬০ কক্ষ বিশিষ্ট ফলকনুমা প্রাসাদ হায়দ্রাবাদের অন্যতম দর্শনীয় স্থান।

ওসমানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়

সেকেন্দ্রাবাদ থেকে ৮ কিলোমিটার পূর্বে ১৪০০ একর জুড়ে ওসমানিয়া বিশ্ববিদ্যালয় অবস্থিত। সারাবিশ্ব থেকে গৃহিত স্থাপত্য ও ভাস্কর্যে অনবদ্য এই বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে রয়েছে বোটানিক্যাল গার্ডেন। নিজাম মীর ওসমান আলী খান ১৯১৭ তে শুরু করে যা পরবর্তীকালে ১৯৩৪ এ নতুন ভবনে স্থানান্তরিত হয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠের মাধ্যম উর্দু।

হায়দরাবাদ মার্কেট
Pin it
হায়দরাবাদের ব্যস্ত বাজার

পাবলিক গার্ডেন 

হায়দ্রাবাদ রেল স্টেশনের উত্তরে নাম পালীতে অবস্থিত বোটানিক্যাল গার্ডেন মনোরঞ্জনের একটি অন্যতম পর্যটন স্থান।  একশো কুড়ি একর স্থান জুড়ে অবস্থিত এই গার্ডেনেটিকে ১৯ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। উদ্যানের মধ্য দিয়ে আঁকাবাঁকা পথে বয়ে চলা লেকে ফুটে থাকা পদ্ম, এছাড়াও মনমুগ্ধকর বিভিন্ন ফুলের সমাহার স্থানটিকে অপূর্ব সুন্দর করে তুলেছে। পাবলিক গার্ডেন এর মধ্যে রয়েছে হায়দ্রাবাদ মিউজিয়ামটি, যার আকর্ষণ বাড়িয়েছে অজন্তা প্যাভেলিয়নে অজন্তা গুহার ফ্রেস্কো চিত্র। এছাড়াও মিউজিয়ামে আগ্নেয়াস্ত্র, মুদ্রার সংগ্রহ, পান্ডুলিপি উল্লেখযোগ্য।

নওবত পাহাড়

পাবলিক গার্ডেন এর কাছেই নওবত পাহাড়, অতীতে ড্রাম পিটিয়ে রাজাজ্ঞা ঘোষিত হওয়া এই পাহাড়ে ১৯৪০ সালে দুটি প্যাভেলিয়ান করে আকর্ষণ বাড়িয়ে তুলেছিলেন নবাবের প্রধানমন্ত্রী স্যার মির্জা ইসমাইল।

হুসেন সাগর

হায়দ্রাবাদ আর সেকেন্দ্রাবাদের সংযোগকারী বাঁধ গড়তে হুসেন সাগরের সংস্কার। সান্ধ্য ভ্রমণের আদর্শ পর্যটন স্থান হিসেবে উল্লেখযোগ্য হুসেন সাগর। লেকের বুকে সেতুতে ৩৬ মানুষের মূর্তি হয়েছে মর্মরে। লেকের পাড়ে রয়েছে এন টি আর গার্ডেন।  রাতের আলোকমালা লেকের পরিবেশকে মোহময় করে তোলে। লেকের ঠিক মাঝখানে বুদ্ধের মনোলিথিক স্ট্যাচু। লেকের বুকে বোটিং করা যায়। হুসেন সাগর এর পাশেই লুম্বিনী পার্ক।

সালার জং মিউজিয়াম

Pin it
সালার জংদের ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিষপত্র

সালার জং জাদুঘর হায়দ্রাবাদ শহরের অন্যতম জাদুঘর এবং বিশ্বে অনন্য মিউজিয়াম গুলির মধ্যে একটি। ইতিহাস কে জীবন্ত করে তোলা এই জাদুঘর  ভারতীয় তিনটি জাতীয় জাদুঘরের একটি। মেইন, ইস্টার্ন, ওয়েস্টার্ন তিনটি ব্লক এ ৩৫টি ঘরে ৩৫০০০ বর্ণাট্য সম্ভারের প্রাচুর্যে গড়ে উঠেছে এই মিউজিয়াম।

এই জাদুঘরে রয়েছে সালার জংদের ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিষপত্র ছাড়াও ভিন্ন ভিন্ন সভ্যতার নিদর্শন। এই মিউজিয়ামে চীন, জাপান ও বর্মার, পৃথক পৃথক হল ছাড়াও জুয়েল হল, পেইন্টিং হল, স্কাল্পচার হল, ম্যানাসস্ক্রিপ্ট হল মানুষকে মুগ্ধ করে।

সালার জং মিউজিয়াম
Pin it
সালার জং মিউজিয়াম

চারমিনার

চারমিনার
Pin it
হায়দরাবাদ শহর

কুতুবশাহ ১৯৫১-১৯৫৩ সালে গড়ে তোলেন কারুকার্যময় চারমিনার। চারপাশে চারটি সরু মিনার, প্রতিটি মিনার ৫৬ মিটার উঁচু, পূর্ব,  পশ্চিম, উত্তর ও দক্ষিণের চারমুখী চার গেট।মিনারে চড়া যায় ১৪৯, ধাপের স্পাইরাল সিঁড়ি বেয়ে। তবে পঁচাশি সালে হওয়া দুর্ঘটনার পর সিঁড়ি বন্ধ করে দেওয়া হয়। দ্বিতলে রয়েছে মন্দির, ত্রিতলে মসজিদ। হায়দ্রাবাদের প্রধান প্রধান স্থান গুলির মধ্যে অন্যতম চারমিনার।

মক্কা মসজিদ

চারমিনারের কাছে অবস্থিত দক্ষিণ ভারতের বৃহত্তম মসজিদ মক্কা মসজিদ। মসজিদের অন্দরে প্রায় ১০০০০ ধর্মার্থী একত্রে নামাজ পড়তে পারেন। এই মসজিদটির মূল ভবন নির্মাণ কাজে ব্যবহার করা ইট তৈরী করা হয় সৌদি আরবের মক্কা থেকে আনা মাটি থেকে, যা ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের কাছে পবিত্র স্থান, তাই এই মসজিদের নামকরণ “মক্কা মসজিদ” করা হয়। ১৬১৪ খ্রিস্টাব্দে ষষ্ঠ সুলতান আবদুল্লা কুতব শাহের হাতে শুরু হলেও শেষ হয় ওরঙ্গজেব এর হাতে ১৬৮৭ তে।

মীর আলম ট্যাঙ্ক

চারমিনার থেকে আড়াই কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে ব্যাঙ্গালোরে রোডে অবস্থিত কৃত্রিম লেক মীর আলম ট্যাঙ্ক ২০ বর্গকিলোমিটার ব্যপ্ত।  এটি একটি পপুলার পিকনিক স্পট, লেকের জলে বোটিং এর ব্যবস্থা রয়েছে।

নেহেরু জুলজিক্যাল পার্ক

৩৫০ একর জমিতে বহু প্রজাতির প্রায় ২৪৫০ প্রানীর সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে নেহেরু জুলজিক্যাল পার্ক। ভারতের প্রথম লায়ন সাফারি পার্কটি আকর্ষণ বাড়িয়েছে এই পার্কের। শিশু মনোরঞ্জনের জন্য রয়েছে টয়ট্রেন। ২৪০ টি প্রজাতির পাখি রয়েছে। নিশাচর প্রাণী দের জন্য বিশেষ আবাস রয়েছে নেহেরুর জুলজিক্যাল পার্কে। 

রামোজি ফিল্ম সিটি

রামোজি ফিল্ম সিটি
Pin it
রামোজি ফিল্ম সিটি

হায়দ্রাবাদ ভ্রমণের বিশেষ স্থান গুলির মধ্যে অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান রামোজি ফিল্ম সিটি। দুই হাজার একর জুড়ে গঠিত রামোজি ফিল্ম সিটি হায়দ্রাবাদ শহর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।

মুম্বাই ট্রেন স্টেশনের সেট
Pin it
মুম্বাই ট্রেন স্টেশনের সেট

বিশ্বের এই ইন্টিগ্রেটেড ফিল্ম প্রোডাকশন কমপ্লেক্সে রয়েছে প্রাসাদ- পুরী, স্কুল-কলেজ  চার্জ মন্দির-মসজিদ, বিমানবন্দর প্রভৃতি এছাড়াও রয়েছে হোটেল এবং রেস্তোরাঁ,এই ফিল্ম সিটিতে প্রায় ১২০০ চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে ।

রামোজি ফিল্ম সিটি বাস
Pin it
রামোজি ফিল্ম সিটি বাস

হানামকোন্ডা

হানামকোণ্ডা পাহাড়ি ঢালে ১১৬২ খ্রিস্টাব্দে ১০০০ পিলারের রুদ্রেশ্বর শিব মন্দির টি তৈরি করেন রাজা রুদ্রদেব। শিল্প সৌকর্য অসামান্য এই মন্দিরের, স্থাপত্যশৈলীতে চালুক্য ছাপ। এই মন্দিরে হাতি ও নন্দীর মূর্তি দুটি অনবদ্য। 

পাখাল ওয়াইল্ডলাইফ স্যাংচুয়ারি

ওয়ারাঙ্গাল থেকে ৫০ কিমি পুবে পাখাল লেকের পাশে অবস্থিত পাখাল ওয়াইল্ডলাইফ স্যাংচুয়ারি।  ৯০০ বর্গকিলোমিটার ব্যপ্ত এই পাখাল ওয়াইল্ডলাইফ স্যাংচুয়ারি টি গড়ে ওঠে ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে। অক্টোবর থেকে মার্চ মাসে বাঘ, চিত, হরিণ, ভাল্লুক, হায়না প্রভৃতি ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের জন্তু এবং দেশি-বিদেশি নানান পাখি দেখা যায়।

লাখানাভরম লেক

পাখাল থেকে কুড়ি কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত লাখানাভরম লেক। অরণ্যের মনোরম প্রকৃতির মধ্যে ৬০০ হেক্টর জুড়ে রয়েছে এই লেক। দেশ দেশান্তর থেকে এসে ভিড় করে পরিযায়ী পাখিরা, কুমির, বাঘের দেখাও পাওয়া যায়। 


Recent Posts