কলকাতার রসগোল্লা থেকে দই, ট্রামের ঘন্টাধ্বনি থেকে গড়ের মাঠে আড্ডা, দুর্গাপুজো, প্যান্ডেল হপিং এসবকিছুকে ঘিরে উন্মাদনা সর্বত্রই ছড়িয়ে আছে কলকাতা জুড়ে। পুরনো ঐতিহ্যের সাথে আধুনিকতার ছোঁয়ার যুগলবন্দী, শহর কলকাতার অলিগলি জুড়ে এক অকৃত্রিম ভালোবাসা, সিটি অফ জয় এ-র সাথে পরিচিত হতে গেলে শহর কলকাতার বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান যেখান গেলে মানুষের মন আনন্দিত হয়ে ওঠে তেমনি কিছু স্থানের বিবরণ দেওয়া হলো, যেসব স্থানে না গেলে বাকি থেকে যায় কলকাতাকে চেনা।
কলকাতার ২১ টি উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থানের নামের তালিকা
- কফি হাউস
- প্রিন্সেপ ঘাট
- কালীঘাট
- ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল
- বোটানিক্যাল গার্ডেন
- অ্যাকোয়াটিকা
- সায়েন্স সিটি
- আলিপুর চিড়িয়াখানা
- জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি
- নন্দন
- দক্ষিণেশ্বর কালীমন্দির
- বিড়লা প্ল্যানেটোরিয়াম
- সেন্ট পলস ক্যাথিড্রাল
- ইকো পার্ক
- নিক্কো পার্ক
- ইন্ডিয়ান মিউজিয়াম
- ন্যাশনাল লাইব্রেরি
- কলেজস্ট্রিট
- মাদার্স ওয়াক্স মিউজিয়াম
- ভাসমান বাজার
- স্নো পার্ক
কফি হাউস
কলেজস্ট্রিটে প্রেসিডেন্সি কলেজের উল্টোদিকে কফি হাউস, কলকাতার প্রাচীনতম কফি হাউস বাঙালিদের আড্ডার অন্যতম ঐতিহ্যবাহী স্থান, কলকাতার ভিন্টেজ ফিল কে ধরে রাখে এই স্থান। অন্যান্য cafe র তুলনায় অনেক কম দামে কফি,কাটলেট স্যন্ডুইচ প্রভৃতি পাওয়া যায় । কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে টেবিলে বসে মান্না দের বিখ্যাত লাইন ‘কফি হাউসের সেই আড্ডাটা’ অনুভব করতে চাইলে অবশ্যই যেতে হবে কফি হাউসে।
প্রিন্সেপ ঘাট
জেমস প্রিন্সেপ এর স্মৃতিতে নির্মিত প্রিন্সেপ ঘাট কলকাতা সবচেয়ে পুরনো দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম। এখান থেকে অনেকে নদীতে প্রমোদ ভ্রমণে যায়,২০১২ সালে প্রিন্সেপ ঘাট থেকে কদমতলা ঘাট পর্যন্ত নদীতীরের উদ্বোধন করা হয়েছে, এই অংশটি আলোকমালা, বাগান, ফোয়ারা দিয়ে সাজানো হয়েছে। ঐতিহ্যময় ঘাট টি উনিশ শতকের নস্টালজিয়া কে ধরে রেখেছে।
কালীঘাট
কালীঘাট মন্দির কলকাতার প্রসিদ্ধ কালী মন্দির, একান্ন শক্তিপীঠের অন্যতম হিন্দু তীর্থক্ষেত্র এটি। পুরাণে বলা আছে এখানে সতীর অঙ্গচ্ছেদের পায়ের আঙ্গুল পড়েছিল।
ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল
শ্বেত পাথরের তৈরি ইংল্যান্ডের মহারানী ভিক্টোরিয়ার নামাঙ্কিত স্মৃতিসৌধটি কলকাতার অন্যতম পর্যটন আকর্ষণ। এর ভিতরে রয়েছে ২৫ টি গ্যালারি, চারিপাশে রয়েছে বিশাল বাগান। ভিক্টোরিয়া স্মৃতিসৌধের নির্মাণকার্য শুরু হয় ১৯০৬ সালে এবং সৌধটির উদ্বোধন হয় ১৯২১ সালে।
বোটানিক্যাল গার্ডেন
হাওড়া শিবপুর এ অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক উদ্ভিদ উদ্যান বোটানিক্যাল গার্ডেন। এই উদ্যানে মোট ১৪০০ প্রজাতির প্রায় ১৭ হাজারটি গাছ রয়েছে এই উদ্যানে। ২৭৩ একর আয়তনবিশিষ্ট এই উদ্যানটি শিবপুর বোটানিক্যাল গার্ডেন নামে পরিচিত। বোটানিক্যাল গার্ডেনের সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য দ্রষ্টব্য হল মহাবটবৃক্ষ, যা আড়াইশো বছরের প্রাচীন বৃক্ষ।
অ্যাকোয়াটিকা
অ্যাকোয়াটিকা একটি জল উদ্যান যা ২০০০ সালে নির্মিত হয়েছে। অ্যাকোয়াটিকা রাজারহাটে কোচপুকুরে ৮ একর এলাকা জুড়ে অবস্থিত। এখানে একটি প্রধান আকর্ষণ ঢেউ যুক্ত পুল, যেখানে কৃত্রিম ঢেউয়ের মাধ্যমে সমুদ্র সৈকতের অনুভূতি পাওয়া যায়। এই জল উদ্যানে উপভোগ করা যায় বিভিন্ন রাইডসও, অ্যাকোয়াটিকায় অ্যাকোয়া ক্যাফে নামক একটি রেস্তোরাঁও আছে।
সায়েন্স সিটি
পূর্ব কলকাতার ইস্টার্ন মেট্রোপলিটান বাইপাস ও জে বি এস হ্যালডেন এভিনিউ এর সংযোগস্থলে ৫০ একর জমির ওপর অবস্থিত সায়েন্সসিটি। এটি মূলত বিজ্ঞান সংগ্রহশালা ও বিজ্ঞান কেন্দ্রিক বিনোদন উদ্যান। সায়েন্সসিটি প্রতিদিন সকাল ৯ টা থেকে ৭ টা পর্যন্ত খোলা থাকে।
আলিপুর চিড়িয়াখানা
কলকাতার একটি জনপ্রিয় ভ্রমন কেন্দ্র আলিপুর চিড়িয়াখানা, চিড়িয়াখানায় সবচেয়ে বেশি লোক সমাগম দেখা যায় শীতের মরশুমে, ৪৫ একর আয়তনের এই পশুশালা টি ১৮৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। চিড়িয়াখানার উল্টো দিকে একটি অ্যকোয়ারিয়াম রয়েছে, সারা বিশ্বের বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছ এবং জীবের সমাহার রয়েছে সেই অ্যাকোয়ারিয়ামে।
জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি
উত্তর কলকাতায় অবস্থিত জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি কলকাতা ভ্রমণের অন্যতম দর্শনীয় স্থান গুলির মধ্যে একট। অষ্টাদশ শতকের শেষের দিকে দ্বারকানাথ ঠাকুর বাড়িটি নির্মাণ করেছিলেন, লাল রঙের বিশাল আকার দালান, চারিদিকে সবুজ বৃক্ষের সমাহার । রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মস্থান এখানে, তার ব্যবহৃত জিনিসপত্র সাজানো আছে উপর তলার ঘরে, প্রতিটি ঘরই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিচিহ্ন বহন করে। মোট চারটি ভবনের আঠারোটি গ্যালারি জুড়ে রবীন্দ্রভারতী মিউজিয়াম।
নন্দন
নন্দন একটি সরকারি প্রেক্ষাগৃহ ও চলচ্চিত্র উৎকর্ষ কেন্দ্র যা প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৮৫ সালে। পশ্চিমবঙ্গের চলচ্চিত্র শিল্পের বিকাশ সাধনে গড়ে ওঠে নন্দন, যার মূল ভবনে চলচ্চিত্র প্রদর্শনের জন্য মোট তিনটি অডিটোরিয়াম রয়েছে, সেমিনার ও সাংবাদিক সম্মেলনের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয় চার নম্বর অডিটোরিয়ামটি। নন্দন কলকাতার আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের প্রধান অনুষ্ঠানস্থল।
দক্ষিণেশ্বর কালীমন্দির
হুগলি নদীর তীরে দক্ষিণেশ্বরে অবস্থিত কালীমন্দিরটি ১৮৫৫ সালে জমিদার রানি রাসমণি প্রতিষ্ঠা করেন, এই মন্দিরে কালীসাধনা করতেন রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব।
বিড়লা প্ল্যানেটোরিয়াম
বিড়লা প্লানেটরিয়াম অবস্থিত থিয়েটার রোড ও চৌরঙ্গী রোড ক্রসিং এ। গম্বুজটি ৭৫ মিটার উঁচু যার হলঘরে প্রোজেক্টরের সাহায্যে আকাশের গ্রহ-নক্ষত্রের সাথে পরিচয় করানো হয়, তুলে ধরা হয় মহাজাগতিক বিভিন্ন রহস্য। কলকাতার গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন হিসেবে জনপ্রিয়তা রয়েছে বিড়লা তারামণ্ডলের।
সেন্ট পলস ক্যাথিড্রাল
১৮৪৭ সালে তৈরি হওয়া এই চার্চটি কলকাতার একটি বিখ্যাত চার্চ। যা বিড়লা প্লানেটরিয়াম এর কাছে অবস্থিত।
ইকো পার্ক
কলকাতার রাজারহাটে অবস্থিত ৪৮০ একর আয়তনের উদ্যানটি ভারতের বৃহত্তম উদ্যান, এই পার্কের মধ্যে বিশাল জলাশয় আছে, মাঝখানে একটি দ্বীপ আছে, যেখানে খাবার রেস্তোরা ও থাকার হোটেল আছে। ইকো পার্কে মোট ছটি গেট আছে। চার নম্বর গেটের কাছে বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্যের প্রতিরূপ রয়েছে।
নিক্কো পার্ক
সল্টলেকে অবস্থিত মোট ৪০ একর এলাকায় বিস্তৃত চিত্তবিনোদনমূলক পার্ক হিসেবে নিক্কোপার্ক রাজ্যের পর্যটকদের আকৃষ্ট হওয়ার অন্যতম স্থান। বিভিন্ন আনন্দদায়ক রাইডস্ এ-র পাশাপাশি এখানে নৌকা চালানোর জন্য লেক রয়েছে।
ইন্ডিয়ান মিউজিয়াম
প্রায় আট হাজার বর্গমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই জাদুঘর, সাতটি গ্যালারিতে মোট ৬ টি ভাগে শিল্পকলা, প্রত্নতত্ত্ব, নৃতত্ব, ভূতত্ত্ব, প্রাণিবিদ্যা, উদ্ভিদবিদ্যা প্রভৃতি বিভিন্ন ধরনের অসংখ্য সংগ্রহ গ্যালারিতে সুসজ্জিত রয়েছে।
ন্যাশনাল লাইব্রেরি
পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ গ্রন্থাগার ন্যাশনাল লাইব্রেরী অবস্থিত আলিপুরে। বর্তমানে এই গ্রন্থাগারে প্রায় কুড়ি লক্ষ বই এবং ৫ লক্ষ পান্ডুলিপি রয়েছে।
কলেজস্ট্রিট
মধ্য কলকাতায় অবস্থিত কলেজস্ট্রিট পৃথিবীর বৃহত্তম বাংলা বইয়ের বাজার এবং পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম পুরনো বইয়ের বাজার, যা বই পাড়া নামেও খ্যাত।
মাদার্স ওয়াক্স মিউজিয়াম
নিউ টাউন এ অবস্থিত এই মোম শিল্পকর্মের জাদুঘরটি ভারতের প্রথম এমন জাদুঘর। প্রায় পঞ্চাশটি মোমের মূর্তি সমৃদ্ধ এই জাদুঘরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নজরুল ইসলাম, শাহরুখ খান, অমিতাভ বচ্চন, মহাত্মা গান্ধী, মাদার টেরিসা ছোটদের সুপারম্যান, মটু পাতলু সকলের মোমের মূর্তি বর্তমান।
ভাসমান বাজার
কলকাতার জনবহুল পাটুলি তে অবস্থিত ভাসমান বাজারে মোট ১১৪ টি নৌকায় ২৮০ দোকানের এই ভাসমান বাজার দক্ষিণ কলকাতায় গোটা দেশের মধ্যে প্রথম তৈরি করা হয়।
স্নো পার্ক
প্রচণ্ড গরমে বরফের মজা নিতে নিউটাউনের এক্সিস মলে একদম শেষ তলায় ৯ হাজার বর্গফুট এলাকা জুড়ে শহরের প্রথম স্নো পার্ক গড়ে উঠেছে, প্রচন্ড গরমে কলকাতা ভ্রমণে এসে বরফের মজা উপভোগ করতে চাইলে চলে যেতে হবে স্লো পার্কে।
কলকাতা থেকে ১০০ – ২০০ কিলোমিটারের মধ্যে ঘোরার জায়গা
কলকাতার কাছাকাছি আরও বেশ কিছু স্থান আছে যা ভ্রমণের পক্ষে খুবই ভালো, কলকাতার কাছে অবস্থিত তেমন কিছু ঘোরার জায়গার নাম হল –
- দীঘা,
- মন্দারমনি,
- তাজপুর,
- বকখালি,
- পুরুলিয়া,
- মুর্শিদাবাদ,
- মায়াপুর,
- টাকি,
- সুন্দরবন,
- শান্তিনিকেতন