সত্যেন্দ্রনাথ বসুর জীবনী ~ Biography of Satyendra Nath Bose in Bengali


বিজ্ঞানের ইতিহাসে যার গবেষণা অমর হয়ে থাকবে তিনি হলেন সত্যেন্দ্রনাথ বসু ভারতবর্ষের জাগতিক উন্নতি সাধনে বাঙালি পদার্থবিদ সত্যেন্দ্রনাথ বসুর অবদান অনস্বীকার্য। 

সত্যেন্দ্রনাথ বসুর জীবনী
Pin it

জন্ম 

১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দে বছরের প্রথম দিন অর্থাৎ পয়লা জানুয়ারি তিনি জন্মগ্রহণ করেন কলকাতার গোয়াবাগান অঞ্চলের ২২ নম্বর ঈশ্বর মিত্র লেনে। তার পিতার নাম সুরেন্দ্রনাথ বসু, তিনি ছিলেন পূর্ব ভারতীয় রেলওয়ে হিসাব রক্ষক আর তাঁর মায়ের নাম আমোদিনী দেবী, তিনি ছিলেন আলিপুরের বিখ্যাত মতিলাল রায়চৌধুরীর কন্যা। 

শিক্ষাজীবন 

ছোট থেকেই মেধাবী ছিলেন সত্যেন্দ্রনাথ বসু। শিক্ষা জীবন শুরু হয় নিউ ইন্ডিয়ান স্কুলে,  এরপর তিনি ভর্তি হন হিন্দু স্কুলে, ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে এন্ট্রান্স পরীক্ষায় পঞ্চম স্থানাধিকারী হন, তারপর  প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন। ১৯ বছর বয়সে ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে, দু’বছর পর ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে মিশ্র গণিতে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।

 স্কুল জীবনে তিনি ১০০ তে ১১০ পেয়েছিলেন। এই ঘটনায় সকলেই হতবাক হয়ে গেছিল আসলে পরীক্ষার খাতায় প্রত্যেকটি অংক সঠিকভাবে সমাধান করার পাশাপাশি তিনি জ্যামিতির সমাধান গুলি একাধিক পদ্ধতিতে করার অংক শিক্ষক উপেন্দ্রনাথ বক্সী তার মেধা অনুভব করেন এবং তাকে ১০০ তে ১১০ নম্বর দেন। শিক্ষা জীবনে তিনি আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু এবং আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের মতো মহান ব্যক্তিদের সান্নিধ্য লাভ করেন।

বিবাহজীবন 

১৯১৪ সালে সত্যেন্দ্রনাথ বসু ডাক্তার যোগেন্দ্রনাথ ঘোষের কন্যা উষাবতী দেবীকে বিয়ে করেন।

Pin it
সত্যেন্দ্রনাথ বসুর পরিবার

কর্মজীবন 

স্নাতকোত্তর পাশের পর এক বছর তিনি টিউশন পড়িয়ে ছিলেন। সেইসময় বহু সরকারি অফিস, কলেজে চেষ্টা করেও তিনি সুযোগ পাননি। সেখানে তাকে কৃতি ছাত্রের উপযুক্ত চাকরি নেই বলে জানানো হয়,তিনি  প্রমথেশ বড়ুয়াকে প্রাইভেট পড়াতেন।

তারপরে আশুতোষ মুখার্জির ডাকে সত্যেন্দ্রনাথ বসু কলকাতা বিজ্ঞান কলেজের প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯২০ সালে সত্যেন্দ্রনাথ বসু এবং মেঘনাথ সাহা যৌথভাবে অনুবাদ করেন ‘থিওরি অফ রিলেটিভিটি’। ১৯২১ সালে সত্যেন্দ্রনাথ বসু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন রিডার পদে।

সত্যেন্দ্রনাথ বসু biography in bangla
Pin it

এরপর তিনি তার লেখা ‘প্ল্যাঙ্কের সূত্র ও আলোক কোয়ান্টাম তত্ত্ব’ পাঠিয়ে দেন ফিলোসফিক্যাল ম্যাগাজিন নামক একটি বিজ্ঞান সাময়িকীতে,যা ইংল্যান্ড থেকে প্রকাশিত হতো। কিন্তু চার পৃষ্ঠার এই প্রবন্ধটি ওই সাময়িকীতে মনোনীত হল না, হাল ছাড়লেন না তিনি। সত্যেন্দ্রনাথ বসু লেখাটি পাঠালেন আইনস্টাইনের কাছে এবং লিখলেন – 

” Respected sir, I have ventured to send you the accompanied article for your perusal and opinion.”

Satyendra Nath Bose

বিখ্যাত বিজ্ঞানী আইনস্টাইন সত্যেন্দ্রনাথ বসুর প্রতিভাকে চিনলেন এবং তার প্রবন্ধটি জার্মান ভাষায় অনুবাদ করে ‘ সাইটশ্রিফট ফ্যুর ফিজিক’ জার্নালে প্রকাশ করলেন।এবং তার প্রবন্ধটি সম্পর্কে  বললেন –

“আমার মতে বোস কর্তৃক প্ল্যাঙ্কের সূত্র নির্ধারণ পদ্ধতি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।”

১৯২৪ সালে তিনি ইউরোপ গেলেন এবং সেখানে আলোচনা করলেন আইনস্টাইনের সাথে প্যারিসে গিয়ে তিনি দেখা করলেন মাদাম কুরির সাথে, তার ল্যাবরেটরি তে কাজ করার সুযোগ পান, কিছুদিন তিনি দ্য ব্রগলির ল্যাবেও কাজ করেন।

সত্যেন্দ্রনাথ বসু
Pin it
সত্যেন্দ্রনাথ বসু

১৯২৭ সালে সত্যেন্দ্রনাথ বসু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যার প্রধান অধ্যাপক এবং সায়েন্স ফ্যাকাল্টির ডিন নির্বাচিত হন।১৯৪৫ থেকে ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত সত্যেন্দ্রনাথ বসু কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের খয়রা অধ্যাপক হিসেবে কাজ করেন।

বীরাঙ্গনা মাতঙ্গিনী হাজরার জীবনী

সৃষ্টি 

সত্যেন্দ্রনাথ বসুর সৃষ্ট সংখ্যায়ন তত্ত্ব,বোসন কণাসমূহ,প্রাইম নাম্বার থিওরি, প্রভৃতির দ্বারা তিনি বিজ্ঞানে একটা বড় স্থান অর্জন করেছিলেন।

কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক, সত্যেন্দ্রনাথ বসু কে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়নি কিন্তু তার বসু-আইনস্টাইন পরিসংখ্যান বসু-আইনস্টাইন ঘনীভবন, বোসনের ওপর গবেষণা করে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন অনেকেই।

সম্মাননা

তিনি একাধিক সম্মানলাভ করেছেন তার অবদানের জন্য। 

  • ১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দে সত্যেন্দ্রনাথ বসু ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসের পদার্থ বিজ্ঞান শাখার সভাপতি এবং ১৯৪৪ খ্রিষ্টাব্দে কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হন।১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি লন্ডনের রয়েল সোসাইটির ফেলো হন। ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউট, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়,
  •  এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয় ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় সত্যেন্দ্রনাথ বসুকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করে। ১৯৫৯ খ্রিষ্টাব্দে ভারত সরকার তাকে জাতীয় অধ্যাপক পদে মনোনীত করেন। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় তাকে দেশিকোত্তম এবং ভারত সরকার 
  • ‘পদ্মবিভূষণ’উপাধিতে ভূষিত করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তার নামে সত্যেন বসু অধ্যাপক (Bose Professor) পদ রয়েছে। ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতা শহরে সত্যেন্দ্রনাথ বসু জাতীয় মৌলিক বিজ্ঞান কেন্দ্র নামক গবেষণাকেন্দ্র স্থাপিত হয়।

হুমায়ূন আহমেদ এর জীবনী ~ Biography of Humayun Ahmed in Bengali

বিজ্ঞানের পাশাপাশি সংগীত এবং সাহিত্যেও তার গভীর টান ছিল। তিনি দক্ষতার সহিত বাজাতেন এস্রাজ।  

সত্যেন্দ্রনাথ বসুর জীবনী
Pin it

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর ‘বিশ্বপরিচয়’ অন্নদাশঙ্কর রায় তার ‘জাপানে ভ্রমণ কাহিনি’ এবং সুধীন্দ্রনাথ দত্ত তাঁর ‘অর্কেস্ট্রা’ কাব্যগ্রন্থ উৎসর্গ করেন সত্যেন্দ্রনাথ বসুকে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ তাঁর সম্পর্কে বলেছিলেন – 

” A Man of genius with a taste for literature and who is a scientist as well.”

বিখ্যাত উক্তি 

সত্যেন্দ্রনাথ বসু দেখিয়ে দিয়েছিলেন বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান চর্চা সম্ভব। বাংলা ভাষায় তার বিজ্ঞান চর্চার অবদান অনস্বীকার্য। ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদ গঠিত হয় তার নেতৃত্বে।  তিনি বলেন- 

” যারা বলেন বাংলায় বিজ্ঞান চর্চা সম্ভব নয় তারা হয় বাংলা জানেন না অথবা বিজ্ঞান বোঝেন না।”

স্বামী বিবেকানন্দের জীবনী ও বাণী সমূহ

মৃত্যু

তার জীবনের প্রত্যেকটি দিন ছিল কর্মময়। মৃত্যুর আগেও তিনি গবেষণা চালিয়ে গেছেন। ১৯৭৪ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ভোর ছটায় তিনি শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।


Recent Posts