আদি শঙ্করাচার্য এর জন্মজয়ন্তী- বাণী ও অনুপ্রেরণামূলক উক্তি, Inspirational quotes of Adi Shankaracharya in Bengali


প্রতি বছর বৈশাখ মাসের শুক্লপক্ষের পঞ্চমী তিথিতে অর্থাৎ এপ্রিল থেকে মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে শঙ্করাচার্যের জন্মবার্ষিকী  উদযাপন করা হয়। এই বছর অর্থাৎ ২০২৫ সালে ২ রা মে’তে তাঁর জন্মবার্ষিকী পালন করা হবে। তিনি ভাগবতপদ আচার্য এবং জগৎগুরু নামেও পরিচিত।আদি শঙ্করাচার্য ছিলেন অষ্টম শতাব্দীর এক মহান ভারতীয় দার্শনিক এবং ধর্মগুরু। তাঁর শিক্ষা হিন্দুধর্মকে বিকশিত করেছিল। অদ্বৈত বেদান্তের মতবাদ তিনি ব্যাখ্যা করেছিলেন।

আদি শঙ্করাচার্য এর জন্মজয়ন্তী- বাণী ও অনুপ্রেরণামূলক উক্তি
Pin it

শঙ্করাচার্যের জন্ম হয়েছিল ৭৮৮ খ্রিস্টাব্দে কেরালার এক রক্ষনশীল হিন্দু পরিবারে। তাঁর বাবার নাম ছিল শিবগুরু ও মায়ের নাম ছিল আর্যম্বা। তিনি কম বয়সেই ‘ব্রহ্মসূত্র’ , ‘মনীষ পঞ্চকাম’ , ‘গীতাভাষ্য’, ‘বিবেক চূড়ামণি’ , ‘প্রবোধ সুধাকর’ , ‘সমবেদান্ত সিদ্ধাত্ত’ এর মতো উন্নতমানের ধর্মীয় পুস্তক রচনা করেছিলেন। এছাড়াও তিনি নিজের আদর্শ ও বাণী প্রচার করতে বহু দর্শনগ্রন্থ লিখেছিলেন, যার মধ্যে “ব্রহ্মসূত্র ভূষ্য”, “দাক্ষিণামূর্তিস্তোত্র” এবং “ভগবদ্গীতা ভূষ্য” অন্যতম।

প্রচলিত মত অনুযায়ী তাঁর জন্মের পেছনে একটি কাহিনি রয়েছে। যখন মানুষ পবিত্রতা ও আধ্যাত্মিকতা থেকে অনেক দূরে ছিল, তখন সকল ঋষিরা একসাথে ভগবান শিবের কাছে সাহায্য চেয়েছিলেন। ভগবান শিব তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে তিনি হিন্দু ধর্মের মানুষকে আলোকিত করার জন্য আদি শঙ্করাচার্যের রূপে পৃথিবীতে জন্ম গ্রহণ করবেন। তাই মনে করা হয় তাঁর জন্ম হিন্দু ধর্মকে শিক্ষা ও সাহায্য করবার জন্য হয়েছিল।

অন্যদিকে শঙ্করাচার্যের বাবা-মা দীর্ঘদিন ধরেই নিঃসন্তান ছিলেন। তাঁরা ত্রিশূরের শিবমন্দিরে পুত্রকামনা করে পূজো দিয়েছিলেন। তারপর আদ্রা নক্ষত্র তিথিতে তাঁর জন্ম হয়।  তিনি যখন খুব ছোট ছিলেন তখনই তাঁর বাবার মৃত্যু হয়। তাই তাঁর উপনয়ন দেরিতে হয়। তিনি ছোটো থেকেই খুব মেধাবী ছিলেন। মাত্র আট বছর বয়সেই তিনি চারটি বেদ পড়ে ফেলেছিলেন। সেই ছোটবেলায় তিনি সন্ন্যাস গ্রহণ করেছিলেন। চলুন আজ তাঁর কিছু বিখ্যাত উক্তি জেনে নিই যেগুলো আমাদের জীবনকে প্রভাবিত করবে।

আদি শঙ্করাচার্যের  অনুপ্রেরণামূলক উক্তি,  Adi Shankaracharya Inspirational Quotes

আদি শঙ্করাচার্যের উক্তি 1
Pin it
আদি শঙ্করাচার্যের উক্তি 2
Pin it
আদি শঙ্করাচার্যের উক্তি 3
Pin it
আদি শঙ্করাচার্যের উক্তি 4
Pin it
  • “ধন-সম্পদ, মানুষ, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব, অথবা যৌবন নিয়ে অহংকার করো না। সময়ের দ্বারা চোখের পলকে এগুলো সবই কেড়ে নেওয়া হয়। এই মায়াময় জগৎ ত্যাগ করে, পরমকে জানো এবং অর্জন করো।”
    “জাগরণ না হওয়া পর্যন্ত পৃথিবী, আসক্তি এবং বিতৃষ্ণায় ভরা স্বপ্নের মতো বাস্তব বলে মনে হয়।”
  • “বাস্তবতা কেবল বোধগম্যতার চোখ দিয়েই অনুভব করা যায়, কেবল একজন পণ্ডিতের দ্বারা নয়”
  • “তোমার ইন্দ্রিয় ও মনকে দমন করো এবং তোমার হৃদয়ের মধ্যে প্রভুকে দর্শন করো।”
    “বন্ধন থেকে মুক্ত হতে হলে জ্ঞানী ব্যক্তিকে এক-আত্মা এবং অহং-আত্মার মধ্যে পার্থক্য অনুশীলন করতে হবে।
  • কেবলমাত্র তখনই তুমি আনন্দে পরিপূর্ণ হয়ে উঠবে, নিজেকে বিশুদ্ধ সত্তা, চেতনা এবং পরমানন্দ হিসেবে স্বীকৃতি দেবে।”
  • “সত্যের অনুসন্ধান কী? এটি হল দৃঢ় বিশ্বাস যে আত্মাই বাস্তব, এবং তা ছাড়া অন্য সবকিছুই অবাস্তব।”
  • “মাটির পাত্রে সূর্যের আলো জ্বলে কিন্তু মাটির পাত্র ধ্বংস হয়ে গেলে যেমন সূর্য নষ্ট হয় না; একইভাবে আত্মা দেহে আলো দেয় এবং দেহ মৃত হলে আত্মাও বিনষ্ট হয় না।”
  • “ আমাদের নিজস্ব ইন্দ্রিয়গুলি আমাদের শত্রু কিন্তু জয়ী হলে তারা বন্ধুতে পরিণত হয়। “
  • “তিনি সত্যিই ধনী যিনি সম্পূর্ণরূপে সন্তুষ্ট। যে মন জয় করেছে সে বিশ্ব জয় করেছে।”
  • “যখন মহান বাস্তবতা জানা যায় না, তখন ধর্মগ্রন্থের অধ্যয়নও নিষ্ফল হয়।”
  • “বিরহের যন্ত্রণা থেকে মুক্তির পথটি আত্ম-জ্ঞান।”
আদি শঙ্করাচার্যের উক্তি 5
Pin it
আদি শঙ্করাচার্যের উক্তি 6
Pin it
আদি শঙ্করাচার্যের উক্তি 7
Pin it
আদি শঙ্করাচার্যের উক্তি 8
Pin it
আদি শঙ্করাচার্যের উক্তি 9
Pin it

আদি শঙ্করাচার্য এর জন্মজয়ন্তী সংক্রান্ত আমাদের আজকের এই পোস্টটি ভালো লেগে থাকলে আশা করি মহাবীর জয়ন্তী র শুভেচ্ছা সম্পর্কিত আমাদের এই পোস্টটি ও আপনার মনের মতন হবে।

আদি শঙ্করাচার্যের উক্তি 10
Pin it
আদি শঙ্করাচার্যের উক্তি 11
Pin it
আদি শঙ্করাচার্যের উক্তি 12
Pin it

আদি শঙ্করাচার্যের অমর বাণী, Adi Shankarachaya and his immortal sayings

আদি শঙ্করাচার্যের উক্তি 13
Pin it
আদি শঙ্করাচার্যের উক্তি 14
Pin it
আদি শঙ্করাচার্যের উক্তি 15
Pin it
আদি শঙ্করাচার্যের উক্তি 16
Pin it
আদি শঙ্করাচার্যের উক্তি 17
Pin it
  • “সঠিক বিদ্যা না থাকার ফলে মানুষ ব্রহ্মকে বুঝতে পারে না”। আত্মই হল ব্রহ্ম। এই ব্রহ্ম নির্গুণ এবং আনন্দময়।কিন্তু ব্রহ্ম আবার পারমার্থিক দৃষ্টিতে ব্রহ্ম হলেও ব‍্যবহারিক দৃষ্টিতে ঈশ্বর বলে প্রতিভাত হয় । অবিদ‍্যা ব্রহ্মের শক্তিবিশেষ যার ফলে জীব নিজেকে ব্রহ্মের থেকে ভিন্ন মনে করে । প্রকৃতপক্ষে , জীবাত্মা ও পরমাত্মা অভিন্ন ।”
    “দাসত্ব থেকে মুক্ত হতে জ্ঞানী ব্যক্তিকে অবশ্যই নিজের এবং অহং-নিজের মধ্যে বৈষম্য অনুশীলন করতে হবে। এর মাধ্যমেই একজন ব্যক্তি আনন্দে পূর্ণ হয়ে উঠবে, নিজেকে বিশুদ্ধ সত্তা, চেতনা এবং আনন্দ হিসাবে স্বীকৃতি দেবে।”
  • “প্রতিটি জিনিস তার নিজস্ব প্রকৃতির দিকে অগ্রসর হতে থাকে। আমি সবসময় সুখ কামনা করি যা আমার আসল প্রকৃতি। আমার স্বভাব কখনোই আমার কাছে বোঝা নয়। সুখ আমার কাছে কখনই বোঝা নয়, যেখানে দুঃখ হয়।”
  • “ইন্দ্রিয় এবং মনকে নিয়ন্ত্রণ করুন এবং হৃদয়ের মধ্যে উপস্থিত ভগবানকে দেখুন।”
  • “অহম ব্রহ্মাস্মি” (আমি ব্রহ্ম, সর্বত্র একই অভিজ্ঞান।)
  • “যে ব্যক্তি নিজের আত্মা ও ব্রহ্মের মধ্যে কোন পার্থক্য দেখেনা, সে অনন্ত সুখ লাভ করে।”
  • “শান্তি আসে শুধুমাত্র মন ও হৃদয়ের বিশুদ্ধতায়।”
  • “নাম-রূপের জড়তার মধ্যে বিভ্রান্ত হয়ে মানুষ তার আসল প্রকৃতি ভুলে যায়।”
  • “বিশ্বের সঙ্গত ও উপকারিতা বোঝার জন্য যে ব্যক্তি মনের মাঝে নিখুঁত শান্তি প্রয়োগ করে, সে ব্যক্তি সমস্ত ভয়কে দূর করতে সক্ষম।”
  • “জীবন মায়ার একটি ভ্রম, যা নিত্য পরিবর্তনশীল, কিন্তু আত্মা চিরস্থায়ী, অবিনশ্বর।”
  • “মানবের প্রকৃত উদ্দেশ্য হল আত্মজ্ঞান লাভ করা”
  • “এই দুনিয়া ক্ষণস্থায়ী, তা অস্থায়ী, স্থায়ী কেবল ব্রহ্ম।”
  • “শান্তম্ শিবম্ আদ্বৈতম্”
  • “যে ব্যক্তি নিজেকে বুঝতে পারে, সে জীবনে সার্থক।”
  • “শরীর একদিন শেষ হয়ে যাবে, কিন্তু আত্মা চিরকাল অমর।”
  • “শক্তিশালী হও, তোমার লক্ষ্য থেকে এক মুহূর্তের জন্যও বিচলিত হইয়ো না।”
  • “বিশ্বের সমস্ত বেদনা আর ক্লেশের মূল হল অজ্ঞতা, সেই অজ্ঞতাকে জয় করলেই তুমি শান্তি ও মুক্তি লাভ করবে।”
  • আদি শঙ্করাচার্য পুরো দেশে সনাতন ধর্ম পুনরুজ্জীবনের চেষ্টা করেছিলেন। তিনি অদ্বৈত বেদান্তের পুনঃপ্রচার করেছিলেন, যেটি আগে ‘পুরুষবেদ’ নামে পরিচিত ছিল। এই দর্শন বলে ব্রাহ্মণের সঙ্গে আত্মার কোন পার্থক্য নেই। সর্বোত্তম শক্তিই আমাদের পরিচালনা করে। বিদ্যার মাধম্যেই মোক্ষলাভ করা যায়। তিনি মাত্র ৩২ বছর বয়সেই মারা গিয়েছিলেন। আজও তাঁর দর্শন ও শিক্ষা অনেক মানুষকে অনুপ্রাণিত করে। 
  • তিনি যখন সন্ন্যাস নিতে চাইছিলেন তখন তাঁর মা তাঁকে অনুমতি দিচ্ছিলেন না। কিন্তু তিনি আশ্চর্যভাবে মায়ের অনুমতি আদায় করেছিলেন। একদিন তিনি পূর্ণা নদীতে স্নান করছিলেন আর সেইসময় তাঁর পা একটি কুমির কামড়ে ধরেছিল। তখন তিনি তাঁর মাকে বলেছিলেন তাকে সন্ন্যাস গ্রহণ করবার অনুমতি দিতে নাহলে সেই কুমির তাঁর পা ছাড়বেনা। তাঁর মা ছেলের প্রাণ বাঁচাতেই তাঁকে সন্ন্যাস গ্রহণের অনুমতি দিয়ে দেয়। এরপর শোনা যায় সেই নদীতে আর কোনোদিন কুমিরকে দেখা যায়নি।
আদি শঙ্করাচার্যের উক্তি 18
Pin it
আদি শঙ্করাচার্যের উক্তি 19
Pin it
আদি শঙ্করাচার্যের উক্তি 20
Pin it
আদি শঙ্করাচার্যের উক্তি 21
Pin it
আদি শঙ্করাচার্যের উক্তি 22
Pin it
আদি শঙ্করাচার্যের উক্তি 23
Pin it
আদি শঙ্করাচার্যের উক্তি 24
Pin it

পরিশেষে

শঙ্করাচার্য ভারতের চারটি কোণে চারটি মঠ প্রতিষ্ঠা করেন: শ্রীশংকরাচার্য মঠ (শ্রীদেবী মঠ) , পুরী (উত্তর মঠ), দ্বারকাতে (পশ্চিম মঠ), এবং বেদান্ত মঠ (দক্ষিণ মঠ)। এই মঠগুলো এখনো ভারতের আধ্যাত্মিক কেন্দ্র হিসেবে কাজ করছে।শঙ্করাচার্য মায়ার ধারণাকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ মনে করতেন।

তিনি বলেছিলেন, যে যা কিছুই আমাদের দৃষ্টিতে বাস্তব মনে হয় তা আসলে মায়া, অর্থাৎ ভ্রম বা জাল। আসল বাস্তবতা ব্রহ্মের একত্ব।আশা করছি আমাদের এই প্রতিবেদনটি আপনাদের পছন্দ হবে । যদি পছন্দ হয় তাহলে এই পোস্টটি আপনি আপনাদের বন্ধু, আত্মীয় স্বজন ও চেনা পরিচিতদের সঙ্গে শেয়ার করে নিতে পারেন।


Recent Posts