জল সংরক্ষণের গুরুত্ব এবং উপায় ~ Bengali Essay on Water Preservation



মানুষের বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য হল জল। জল এর নাম শুনলেই প্রথমেই মনে পরে ‘জলই জীবন’ এই কথাটি,যা একদম সত্যি। জল ছাড়া মানুষ হোক বা প্রাণী কারোরই জীবনধারণ সম্ভব নয়।রোজকার জীবনে নানা কারণে আমাদের জলের উপর নির্ভর করতে হয়।

রোজকার জীবনে হঠাৎ কোনো কারণে একদিন জল না পেলে বোঝা যায় জলের গুরুত্ব ।যেমন উদ্ভিদের বেঁচে থাকতেও জলের অবদান  অনস্বীকার্য তেমনই মানুষের প্রাত্যহিক জীবনে ছোটো ছোটো বিষয়েও জলের উপর নির্ভর করতে হয়।  

water preservation essay in bangla

পৃথিবীতে জল দুই প্রকার হয়, লবনাক্ত জল এবং মিষ্টি জল।সমুদ্রের জলকে ক্ষারযুক্ত এবং লবণাক্ত হওয়ায় একে লবনাক্ত জল বলে।দৈনন্দিন জীবনে প্রচুর ক্ষেত্রেই জলের ব্যবহার দেখা যায়।  

★পানীয় জলের ব্যবহার 

মানুষ খাবার ছাড়া কয়েকদিন বাঁচলেও জল ছাড়া গড়ে তিনদিনের বেশি বাঁচে না। প্রাণীরাও জল ছাড়া বাঁচে না। প্রতিদিন কমের উপর দু লিটার জল খাওয়া প্রয়োজন।শুধু পানীয় জলই নয় গৃহস্থালীর প্রায় সমস্ত কাজেই জলের ব্যবহার হয়।

রান্না হোক বা বাসন মাজা, কাপড় ধোয়া, স্নানের জন্য সর্ব ক্ষেত্রেই জলের ব্যবহার অপরিহার্য।পৃথিবীতে মোট জলের সবচেয়ে বেশি কৃষিক্ষেত্রে ব্যবহার হয়। এছাড়াও শিল্পক্ষেত্রে কারখানায় প্রচুর পরিমাণে জল ব্যবহার হয়।বিভিন্ন প্রকার শক্তি তেমন  তাপবিদ্যুৎ, জলবিদ্যুৎ গুলিতেও শক্তি উৎপাদনে প্রচুর পরিমান জলের প্রয়োজন হয়।

★শরীর সুস্থ রাখতে জলের  প্রয়োজনীয়তা -

★জল অপচয়:

জল গুরুত্বপূর্ণ হলেও আজও অনেক ক্ষেত্রে জলের অপচয় দেখা যায়।বিজ্ঞানীরা অনেক আগে থেকেই জানিয়েছেন মানুষের ব্যবহারযোগ্য জলের উৎস একসময় শেষ হয়ে যেতে পারে। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে মানুষ জলসংকটে ভোগে। সকলের তাই উচিত জলের অপচয় বন্ধ করে জল সংরক্ষণ করা।প্রয়োজন ছাড়া জলের অতিরিক্ত ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। নজর রাখতে হবে যাতে বাড়ি অথবা রাস্তার পানীয় জলের কল খোলা না থাকে। 

বিশ্বে বর্তমানে জল সংকটের পাশাপাশি জলদূষণও গুরুত্বপূর্ণ একটি সমস্যা।জল দূষণের কারণ হিসেবে উল্লেখযোগ্য হল কলকারখানা থেকে বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ  জলে মেশা, বিভিন্ন বর্জ্য জল মেশা এবং আরও নানান কিছু।দূষিত জল ব্যবহারের ফলে জল বাহিত নানা রোগে আক্রান্ত হয় মানুষ।বর্তমান সময়ে বিশ্বজুড়ে জলদূষণ এবং জলের অত্যধিক অপচয়ের ফলে  অনেক দেশেই জলের সংকট দেখা যাচ্ছে।

★শরীর সুস্থ রাখতে জলের  প্রয়োজনীয়তা –  

বর্তমান সময়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হল ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকা বা রাখা।হঠাৎ বেশ খানিকটা ওজন বেড়ে গেলেই চিন্তিত হয়ে পড়েন মহিলা বা পুরুষরা৷ ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা একটি কঠিন চ্যালেঞ্জ।আপনিও যদি ওজন ঠিক রাখতে চান তাহলে প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমানে জল পান করুন। জল কম খেলে শরীরে নানা রোগ হয়, আর পর্যাপ্ত জল খেকে হঠাৎ ওজন বেড়ে যাওয়া বা হঠাৎ হঠাৎ খিদে পাওয়া এসব আর হবে না। জল ক্যালোরি শূন্য হওয়ায়  দেহের মেটাবলিসম বৃদ্ধি পায় এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে।  

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়-  

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্থাৎ ইমিউনিটি পাওয়ার ভালো থাকলে সহজেই যে কোনো রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়, আর ইমিউনিটি পাওয়ার যদি ভালো না হয় তাহলে যে কোনও অসুখও খুব সহজেই  জাকিয়ে বসে। তাই প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ জল পান করা আবশ্যক । 

ত্বক ভালো রাখে-  

ত্বকের যত্ন নিতে অনেকে হাজার রকম ক্রিম ব্যবহার করেন, তবুও ব্রণ, দাগ এসব থেকে রেহাই পান না। সারা দিনে কমপক্ষে ২লিটার জল পান করতে  স্বাস্থ্যের পাশাপাশি তা আপনার ত্বককেও ভালো রাখে। 

যন্ত্রণা থেকে রেহাই পেতে – 

বর্তমান সময়ে ফোন, ককম্পিউটারের সামনে বসে পড়াশোনা বা কাজ করার অনেক বেড়ে গেছে। দীর্ঘদিন  কম্পিউটারের সামনে  বসে কাজ কাজ করতে গিয়ে অনেক সময় হাতে বা পিঠে ব্যাথা হয়। যারা প্রচন্ড কম পরিমাণ জল খান তাদের এই সমস্ত ব্যাথা অনেক বেশি হয়  তাই কাজের ফাকে অবশ্যই জল খান। তাহলে এসব ব্যাথাকে সহজেই আপনি হারাতে পারবেন।


এছাড়াও জল শরীরের তাপমাত্রা ঠিক রাখতে,  হজম ক্ষমতা বাড়াতে,  টক্সিন বের করতে সাহায্য করে। তবে জল খাওয়া কি কারণে জরুরি তা যেমন জানা হল তেমনি ঠিক কোন সময় জল খাওয়া উচিত তাও মাথায় রাখতে হবে।

কোন সময় জল খাওয়া উচিত

কোন সময় জল খাওয়া উচিত

  • সকালে ঘুম থেকে উঠে আগে এক গ্লাস জল খেলে শরীরের  ক্ষতিকর টক্সিন বেরিয়ে যায়।   
  • যখনই কিছু খাবেন অবশ্যই তার আগে এক গ্লাস জল খেয়ে নিন। তাহলে অতিরিক্ত খাওয়ার না খেয়ে নির্দিষ্ট পরিমান খাওয়ারই খাবেন।    
  • যখনই খিদে পাবে এক গ্লাস জল খেয়ে নেবেন তাহলে বোঝা যাবে আসলে সেটা খিদে না তেষ্টা, অনেক সময় তেষ্টা লাগলেও আমরা ভাবি খিদে।  
  • যখন ওয়ার্কআউট করবেন তার আগে এবং পরে ২ গ্লাস জল অবশ্যই খান তাহলে বজায় থাকবে শরীরের ফ্ল‌ুইড ব্যালান্স। 
  • যখনই শরীর ক্লান্ত লাগবে তখন জল খান। শরীরে পর্যাপ্ত জলের অভাবে অনেক সময় ক্লান্তি ভাব আসে৷
  • জলের নানাবিধ উপকারের কথা ভেবে এবং জলের অপরিসীম গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে জল সংকটের মতো পরিস্থিতি যাতে তৈরি না হয় তাই জলের অপচয় বন্ধ করে জল সঞ্চয়ের কথা আমাদের ভাবতে হবে।  
  • দেশজুড়ে জল সংকটের কথা বিবেচনা করে  জলসংরক্ষণ ও সঞ্চয়ের জন্য প্রত্যেককেই খেয়াল রাখতে হবে। 

★ জল সংরক্ষণের উপায় 

অনেকেই বাড়িতে বা ছাদে বাগান করেন, তাদের গাছে জল দেওয়ার জন্য বেশ অনেকটা জল প্রয়োজন হয়। চেষ্টা করুন গাছে সকাল এবং সন্ধ্যায় জল দেওয়ার। কারণ দুপুরের রোদে জল দিলে গাছেদেরও অতিরিক্ত জলের প্রয়োজন হয়। তাই সকাল, সন্ধ্যে জল দিত, এতে জল সঞ্চয় হবে এবং গাছের বৃদ্ধিও ভালো হবে। 

অনেক সময় কোনো কাজে ব্যবহৃত জল খুব ভালোভাবেই অন্য কাজে ব্যবহার করা যায়, যা আমরা ফলে দি, অনেকে বোতলে বা গ্লাসে হাফ জল খেয়ে ফেলে দেন। ফেলে দেওয়া জল দিয়ে যে কোনো জিনিস পরিষ্কার, কিছু ধোয়া বা নানান কাজে ব্যবহার করে সেই জলকে কাজে লাগান, অপচয় করবেন না। 

অনেকেই স্নানের সময় শাওয়ারের ব্যবহার করেন, এতে জল অনেক বেশি খরচ হয়। বালতিতে জল ভরে সেই জল দিয়ে স্নান করলে জলের সাশ্রয় হয়।  বাথটবে স্নান করলেও প্রচুর জল খরচ হয়।  অযথা টয়লেটে  টিস্যু, সিগারেট, বা অন্যান্য বর্জ্যপদার্থ না ফেলে তা ডাস্টবিনে ফেলুন, এতেও অযথা জলের অপচয় বন্ধ হবে। 

যখন বাসন ধোবেন লক্ষ্য রাখবেন যাতে বেসিনের কল খোলা না থাকে। প্রয়োজন মতো জল নিয়ে তা বন্ধ করে দিতে হবে। 

গাড়ি ধোয়ার জন্য হোস পাইপের বদলে যেসব জল  পুনর্ব্যবহারযোগ্য তা ব্যবহার করলে জল অপচয় বন্ধ হবে।  

পাম্প চালানোর সময় তা ভর্তি হওয়ার একটু আগে বন্ধ করুন। অনেকেই জল পড়ে যাওয়ার শব্দ শুনে পাম্প বন্ধ করেন, এতে অনেক জলের অপচয় হয়। 

জলের সমস্ত কল মাঝে মাঝেই ভালো করে চেক করে নেবেন, অনেক সময় জলের লাইনে কোথাও ‘লিক’ থাকলে অযথা জলের অপচয় হয়ে যায়।

জল সংরক্ষণের অন্যতম উপায় হল বৃষ্টির জল সংরক্ষণ। বৃষ্টির জল সংরক্ষণ  করে তা পরিশুদ্ধ করে পুনরায় ব্যবহার করা যায়। 

বৃষ্টির জল পরিশুদ্ধ করলে  তার গুণগত মান ভালো থাকে এবং সেই জল স্নান করার জন্য‌, শৌচালয়ে ব্যবহারের জন্য‌, জামা কাপড় ধোওয়ার জন্য‌,সেচের জন্য‌, পশুপালনের জন্য‌, বাগান পরিচর্যার জন্য ব্যবহার করা যায়। ভূগর্ভস্থ জল,  কর্পোরেশনের সরবরাহ করা জল ছাড়াও জল সংরক্ষণের অন্যতম একটি উৎস হল বৃষ্টির জল সংরক্ষণ। বৃষ্টির জল সংরক্ষণ করলে তা অনেকাংশে বন্যা রোধ করে,  মাটির উপরের স্তরের ক্ষয় কমায়।

Recent Posts