খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা, Best composition on the necessity of sports in Bengali 


ভূমিকা, Introduction 

বহু প্রাচীন একটি প্রবাদে বলা আছে যে, ” সুস্থ দেহেই সুস্থ মনের বাস “, আর সুস্থ সবল থাকার খুব ভালো একটি পদ্ধতি হল খেলাধুলা। মানবসভ্যতার ক্রম বিবর্তনের সাথে বিভিন্ন দেশে যুগ যুগান্তর ধরে খেলাধুলার নানা রূপান্তর ঘটেছে। বিভিন্ন রকমের খেলাধুলাই আমাদেরকে অটুট স্বাস্থ্যের অধিকারী করে তোলে এবং জীবনে জয় এনে দেয়। তাই স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন, “দুর্বল মস্তিষ্ক কিছু করতে পারেনা। আমাদেরকে ইহা পরিবর্তন করে সবল মস্তিষ্ক হিসেবে তৈরি করতে হবে। তোমরা সবল হও, গীতাপাঠ অপেক্ষা ফুটবল খেলিলে তোমরা স্বর্গের সমীপবর্তী হবে।”

খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা

খেলাধূলার উদ্ভব কবে হয়? When did sports originate?

মনীষীদের ধারণা অনুযায়ী, আজ থেকে প্রায় ৬ হাজার বছর পূর্বে প্রাচীন ইরাকে প্রথম কুস্তি খেলার উদ্ভব ঘটেছিল। এছাড়াও সেই সময়েই ছিল মুষ্টি যুদ্ধ, অসি যুদ্ধ, দৌড়-ঝাঁপ প্রভৃতি খেলার প্রচলন।

মানুষের শরীরকে সুস্থ এবং সবল রাখার জন্যই মূলত এই সকল খেলাধূলার উদ্ভব ঘটে। খ্রিষ্টপূর্ব তিন হাজার বছর পূর্বে মিশরে প্রচলন ঘটে শিকার খেলার এবং খ্রিষ্টপূর্ব দুই হাজার বছর আগে প্রথম প্রচলন ঘটে হকি খেলার। খেলাধূলাকে সেকালে শরীর সুগঠিত করার একটি ব্যায়াম হিসেবে ধরা হত। তবে খ্রিষ্টপূর্ব ২৫০ বছর পূর্বে মল্লযুদ্ধের একটি প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয় রোমে। এরও আগে প্রাচীন গ্রিসে সূচনা ঘটেছিল অলিম্পিক খেলার। খেলাধুলার সূচনাকাল সেই সময়কেই ধরা হয়।

খেলাধূলার উদ্ভব

সাহিত্য পাঠের প্রয়োজনীয়তা, Know about the Necessity to study literature in Bengali

খেলাধুলার প্রকার ভেদ, Different types of sports

খেলার ধরণ অনুযায়ী একে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। একটি হল ইনডোর গেমস, যেমন – ব্যায়াম, টেবিল টেনিস ইত্যাদি, অর্থাৎ যা ঘরের ভেতরে থেকে করা যায়; আর অপরটি হল আউটডোর গেমস, যেমন – ফুটবল, ক্রিকেট ইত্যাদি, অর্থাৎ যা বাইরে বা মাঠে গিয়ে খেলতে হয়। আজকাল প্রায় সকল স্থানেই খেলাধুলার একজন শিক্ষক প্রত্যেকটি বিদ্যালয়ে থাকেন। তিনি ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে নিয়মিত খেলাধুলার আগ্রহকে বাড়িয়ে তোলেন।

খেলাধুলার প্রকার ভেদ

ছাত্রজীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য, Responsibilities and duties of student life in Bengali

খেলাধুলার গুরুত্ব, Importance of sports

শিক্ষা হল জীবিকা অর্জনের নিছক একটি শর্ত মাত্র, এমনটাই মনে করেন অনেকে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে শিক্ষা হল দেশ তথা সমগ্র জাতির অগ্রগতির গুরুত্বপুর্ণ একটি ভিত্তি, পাশাপাশি এটি মানুষের প্রতিভা বিকাশের ক্ষেত্রও বটে। দেহ ও মনের এক সুশৃঙ্খল সামঞ্জস্যবিধানের মধ্য দিয়েই যথার্থ শিক্ষা অর্জিত হয়।

সেক্ষেত্রে বলা যায় যে, খেলাধুলার আনন্দস্পর্শে আমাদের দেহ ও মন হয়ে ওঠে সজীব ও প্রাণময়। তাছাড়া সকলের জীবনেই খেলাধুলার গুরুত্ব অসীম। বিশেষ করে ছাত্রজীবনে থাকাকালীন সময়ে খেলাধুলার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। সেই কথা মাথায় রেখেই বেশ কিছু কাল ধরে স্কুল কলেজের পাঠক্রমে শারীরশিক্ষা অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

খেলাধুলার গুরুত্ব

খেলাধুলা শিক্ষার্থীদের বিনয়ী হতে এবং সর্বোপরি এক শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবনযাপন করার শিক্ষা দেয়। বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থার সাথে খেলাধুলার নিবিড় যোগসাধন হল ক্রীড়াক্ষেত্র যা ছাত্রছাত্রীদের দৈনন্দিন জীবনের একঘেয়েমিকে সতেজ করে তোলে। সবুজ প্রকৃতির উন্মুক্ত প্রান্তরে, খোলা নীল আকাশের নীচে, মুক্ত বাতাসের মধ্যে থেকে খেলাধুলা করার মজাই আলাদা হয়। বিশেষ করে বর্তমানের মোবাইল গেমগুলোর মধ্যে যে ক্ষতিকর প্রভাব থাকে তার থেকে প্রকৃতি বুকে খেলাধুলা করা স্বাস্থের পক্ষে উপযোগী।

বাঙালীর উৎসব নিয়ে সেরা রচনা, Best composition on Bengali festivals in Bengali

খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বিস্তারিত, Details about necessity of sports 

আমরা জানি যে মানব জীবনের ক্ষেত্রে একে অপরের সহযোগিতার মূল্য দাম দিয়ে বিচার করা যায় না।। সাফল্য এবং অসাফল্য, জয় ও পরাজয় উভয়কেই সমানভাবে গ্রহণ করে নেবার যে মহৎ শিক্ষা আমরা খেলাধুলা থেকে অর্জন করি তার কোন বিকল্প হয় না কারণ কেবলমাত্র খেলাধুলার মধ্য থেকেই মানুষ যেটা শিখতে পারে তা হল এক  প্রকৃত খেলোয়াড় সুলভ মনোবৃত্তি বা  ” স্পোর্টসম্যান স্পিরিট” । এই শুভ সত্তা, ছাত্র জীবনে জাগ্রত হলে সেটি ভবিষ্যতে তাকে অনেকখানি পথ সফলভাবে অগ্রসর হতে  সাহায্য করবে তার ভবিষ্যৎ জীবনে। খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে জেনে নিন :

খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বিস্তারিত

১. শরীরচর্চার পদ্ধতি হিসেবে খেলাধুলাঃ

এক আদর্শ ছাত্রের প্রধান কর্তব্য হিসেবে যেমন পড়াশোনা তেমনিই খেলাধূলাও। তাছাড়া খেলাধুলার মাধ্যমে শরীরচর্চা করলে পেশিগুলিও সবল থাকে, পাশাপাশি মনে আনন্দও পাওয়া যায়।

২. চরিত্র বিকাশে ও শৃঙ্খলাবোধের জাগরণে খেলাধুলা :

নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তির চরিত্র গঠনের ক্ষেত্রে খেলাধুলার ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে। মানুষের চরিত্রে দৃঢ়তা আসে খেলাধুলার মাধ্যমে। যেকোনো ব্যক্তির খেলাধুলা করতে হলে ধৈর্য ও সংযম উভয়েরই প্রয়োজন হয়, তাই যারা নিয়মিত খেলাধুলা করে থাকে তাদের ব্যক্তিগত জীবনে এবং চরিত্রের মধ্যেও এই দুটি বিষয়ের ছাপ পড়ে।

অন্যদিকে খেলাধুলা ব্যক্তির মনে সহমর্মিতা তথা সহানুভূতি বোধেরও জন্ম দেয়। নিয়মিত খেলাধুলার মাধ্যমে নির্দিষ্ট ব্যক্তির চরিত্রে আত্মবিশ্বাস, অধ্যবসায় ও দৃঢ় প্রত্যয়ের মত মানসিক কিছু গুণাবলীগুলোও যুক্ত হয়। এছাড়াও খেলাধুলা আমাদের মধ্যে নেতৃত্ব দেওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলে। যেকোনো দেশ তথা জাতির উন্নতির ক্ষেত্রে  মুখ্য শর্তই হল শৃঙ্খলাবোধ, আর ক্রীড়াক্ষেত্রই হচ্ছে এই শৃঙ্খলাবোধের কেন্দ্র, একটি উন্নত ব্যক্তি চরিত্র গঠনের মাধ্যমেই উন্নত সমাজ ও উন্নত দেশ গঠন করা সম্ভব।

৩. সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে খেলাধুলার ভূমিকা:

‘Health is wealth’ অর্থাৎ স্বাস্থ্যই সম্পদ। যে ব্যক্তির স্বাস্থ্যবান দেহ থাকে সে সুখ সম্পদের অধিকারী হয়, আর স্বাস্থ্য যদি বিকশিত না হয় তবে কোনো কর্মই সুন্দর তথা সাফল্যমণ্ডিত হয়ে ওঠে না। এই হিসেবে স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে গেলে খেলাধুলা করা একান্ত প্রয়োজনীয়।  

সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে খেলাধুলার ভূমিকা:

৪. মানসিক বিকাশে খেলাধুলার গুরুত্ব :

কোনো শিশুর মানসিক বিকাশ ঘটার পথে খেলাধুলা খুবই সহায়ক যা তাকে স্বতঃস্ফূর্ত করে তোলে। খেলাধুলার মধ্য দিয়ে একটি শিশু যে আনন্দময় পরিবেশে বড়ো হয় তা তাকে প্রাণবন্ত এবং আনন্দমুখর করে তোলে, যার ফলস্বরূপ শিশুটির মানসিক বিকাশ সহজ তথা সাবলীল হয়। 

একটি ঐতিহাসিক স্থান ভ্রমণের অভিজ্ঞতা রচনা, A Visit to a Historical Place – Paragraph in Bengali [ PDF ]  

 ৫. সম্প্রীতির বন্ধন তৈরিতে খেলাধুলা গুরুত্ব:

বিভিন্ন ধরনের খেলার মাধ্যমে মানুষের মধ্যে এক সম্প্রীতির বন্ধন তৈরি হয়। খেলার মধ্য দিয়ে সৃষ্টি হয় পরস্পরের প্রতি আস্থা, নিজের প্রতি তথা সঙ্গীদের প্রতি বিশ্বাস খেলার মাঠে পরস্পরের মধ্যে এক সুন্দর সম্পর্ক তৈরি করে। 

৬. বিশ্বভ্রাতৃত্ববোধ সৃষ্টিতে খেলাধুলার ভূমিকা:

সুদীর্ঘ অতীতকাল থেকেই এক দেশের সঙ্গে অন্য এক দেশের সুসম্পর্ক এবং বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরির ক্ষেত্রে খেলাধুলা এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়েও বলা যায় যে বিশ্বভ্রাতৃত্ব সৃষ্টির ক্ষেত্রে খেলাধুলা হল কার্যকর একটি মাধ্যম।

বিশ্বভ্রাতৃত্ববোধ সৃষ্টিতে খেলাধুলার ভূমিকা:

৭. খেলাধুলার মধ্য দিয়ে সাংস্কৃতিক বিনিময়: 

আমরা অনেকেই ক্রিকেট বা ফুটবলের মত খেলা দেখে থাকি যেখানে ভিন্ন দেশের জাতীয় দলের মধ্যে খেলা আয়োজিত হয়, অনেক ক্ষেত্রে এইসব খেলার মাঠ পুরো বিশ্বকেই এক জায়গায় নিয়ে আসে। এই সময় বিভিন্ন দেশের মানুষের মধ্যে এক সুন্দর মেলবন্ধন তৈরি হয় এবং তাদের মধ্যে সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান ঘটে। 

খেলাধুলার মধ্য দিয়ে সাংস্কৃতিক বিনিময়: 

৮. শিষ্টাচার ও সংযমের শিক্ষা :

খেলাধুলা আমাদের শিষ্টাচার এবং সংযমের শিক্ষা দেয়, পাশাপাশি চারিত্রিকভাবে সুদৃঢ় করে তোলে। খেলাধুলার মাধ্যমে যেকোনো ব্যক্তি বলিষ্ঠ, একাগ্র, সহিষ্ণু হয়ে ওঠে। খেলার মধ্যে হার-জিত মানুষকে নিজের ব্যক্তিগত জীবনের ওঠাপড়ার পরিস্থিতিকে মেনে নিতে শেখায়। তাই বলা যায় যে, ক্রীড়াক্ষেত্র মানুষের জীবনে এগিয়ে চলার মানসিকতা গঠনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।

বাংলার ঋতুবৈচিত্র্য, Seasonal diversity of Bengal, Best details in Bengali

অতিরিক্ত খেলাধুলা করার কুফলগুলো কি ?The disadvantages of doing extra sports

বাড়ির বড়দের থেকে আমরা প্রায়ই শুনে থাকি যে, অতিরিক্ত কোনো কিছুই কখনও ভালো হয় না। একইভাবে অতিরিক্ত খেলাধুলাও অনেক সময় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। বিভিন্ন সময় দেখা যায় যে শিক্ষার্থীরা তাদের পড়াশুনা ফেলে রেখে শুধুমাত্র খেলাধুলার দিকেই মগ্ন হয়ে পড়ে, এই করে তাদের শিক্ষাজীবন ব্যহত হয়ে পড়ে। তাছাড়া অতিরিক্ত খেলার ফলে অনেকটা সময়, অর্থ এবং শ্রমেরও অপচয় হয়।

উপসংহার, Conclusion 

আমাদের শরীর এবং মন পরিপূর্ণভাবে উজ্জীবিত করার কাজে খেলাধুলা হল অন্যতম একটি বিষয়। খেলাধুলা যেমন আমাদেরকে নির্মল আনন্দ দান করে, ঠিক তেমনি আমাদের জীবনকেও উপভোগ্য করে তোলে। তবে আজকাল খেলাধুলা একজন ব্যক্তিকে নাম, খ্যাতি, অর্থ, যশ এনে দিতে সক্ষম।

আমাদের শরীর এবং মন পরিপূর্ণভাবে উজ্জীবিত করার কাজে খেলাধুলা হল অন্যতম একটি বিষয়।

এটি আমাদেরকে বন্ধুত্বপূর্ণ এবং ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করে রাখে। মানুষের মধ্যে থাকা পারস্পরিক তিক্ততা দূর করে দিয়ে মনে এক প্রশান্তি এনে দেয়। সেজন্যই দিনের পর দিন পৃথিবীব্যাপী খেলাধুলার ব্যাপক প্রচলন এবং বিস্তৃতি পরিলক্ষিত হচ্ছে।

Recent Posts