বাংলায় চলচ্চিত্রের সূচনা ১৮৯০ সাল নাগাদ। সে সময় বায়োস্কোপ দেখানো হতো কলকাতার থিয়েটারে। প্রথম বাংলা ফিচার ফিল্ম ‘বিল্বমঙ্গল’(১৯১৯),প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য বাংলা ছবি ‘দেনা পাওনা’ ১৯৩১ সালের ৩০ ডিসেম্বর মুক্তি পায়। কলকাতার চিত্রা সিনেমা হলে প্রথম প্রদর্শিত হয় সিনেমাটি।
বাংলা সিনেমার জগতে ১৯৫২-১৯৭৫ সালকে স্বর্ণযুগ বলা যায়। ভারতীয় চলচ্চিত্রের ইতিহাসে পুরনো দিনের বাংলা সিনেমার গুরুত্ব অপরিসীম। সিনেমার মাধ্যমে সেই সময়কার রাজনৈতিক সামাজিক অবস্থা, মানুষের জীবনযাত্রা, জীবন প্রণালী ফুটে ওঠে।
বাংলা পুরনো দিনের সিনেম আজও মানুষের হৃদয় জুড়ে বর্তমান। তাই প্রায় সময়ই আমরা আমাদের বাবা ঠাকুমার মুখে শুনি আমাদের সময়কার সিনেমা ছিল মনে দাগ কাটার মতো। একই সিনেমা বার বার দেখলেও পুরনো হতো না, সেইরকম সিনেমা এখন আর দেখি না।
List of Top 15 Classic Bengali Movies
বাংলা সিনেমার জগতে অজস্র ক্লাসিক সিনেমা আছে যা না দেখলে অনেক কিছু মিস হয়ে যায়, তৎকালীন এমন কিছু সিনেমা যা দেখলে বাংলা সিনেমার প্রতি ভালোবাসা জন্মাতে বাধ্য, তেমন কিছু বাংলা ক্লাসিক সিনেমা হল-
- পথের পাঁচালী
- কাবুলিওয়ালা
- পরশ পাথর
- ঘরে বাইরে
- সাড়ে চুয়াত্তর
- দীপ জ্বেলে যাই
- সপ্তপদী
- হীরক রাজার দেশে
- মেঘে ঢাকা তারা
- গুপী গাইন বাঘা বাইন
- জলসাঘর
- পদ্মা নদীর মাঝি
- তিন কন্যা
- অপুর সংসার
- সোনার কেল্লা
পথের পাঁচালী
১৯৫৫ সালে সত্যজিৎ রায় পরিচালিত অসামান্য বাংলা চলচ্চিত্র ‘পথের পাঁচালী’ মুক্তি পায়। এই চলচ্চিত্রটি বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পথের পাঁচালী’ উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত। বিংশ শতাব্দীর বিশের দশকে নিশ্চিন্তপুর নামক এক প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে অপু এবং তার পরিবারের জীবন চিত্র ফুটে উঠেছে এই চলচ্চিত্র। সিনেমাটি ১৯৫৫ সালে বাংলা চলচ্চিত্রের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করে,১৯৫৬ সালে শ্রেষ্ঠ মানবিক দলিল ওসি আইসি পুরস্কারসহ একাধিক পুরস্কার লাভ করে।এই সিনেমায় অভিনয় করেন কানু বন্দোপাধ্যায়, করুণা বন্দোপাধ্যায়, সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায়, উমা দাশগুপ্ত, চুনিবালা দেবী,রেবা দেবী, তুলসী চক্রবর্তী প্রমুখ।
কাবুলিওয়ালা
১৯৫৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত তপন সিংহ পরিচালিত ‘কাবুলিওয়ালা’ চলচ্চিত্রটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ। এই চলচ্চিত্রটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গল্প অবলম্বনে নির্মিত। প্রধান চরিত্রে দেখা যায় ছবি বিশ্বাস, ঐন্দ্রিলা ঠাকুর, রাধামোহন ভট্টাচার্যকে।
পরশ পাথর
রাজশেখর বসুর ছোটগল্প ‘পরশপাথর’ অবলম্বনে সত্যজিৎ রায়ের প্রথম হাসি, যাদু ও পরাবাস্তবের সংমিশ্রণে তৈরি এই সিনেমাটি ১৯৫৮ সালে সিনেমাটি মুক্তি পায়। এই সিনেমায় অভিনয় করেছেন তুলসী চক্রবর্তী, রানিবালা দেবী, কালী বন্দোপাধ্যায়, মনি শ্রীমানি, জহর রায়, প্রমূখ। নীতি শিক্ষা ও গভীর সমাজপতির মেলবন্ধন লক্ষ্য করা যায় এই চলচ্চিত্রে, যা আজও বাঙালির মনে বিরাজমান।
ঘরে বাইরে
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপন্যাস অবলম্বনে বাঙালি চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায় পরিচালিত ঘরেবাইরে ছবিটি ১৯৮৪ সালে মুক্তি পায়। এই ছবিতে অভিনয় করেছেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায়, জেনিফার কাপুর, স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত। নারী মনের জটিল মনস্তত্ত্ব, নারী মুক্তি, স্বদেশী আন্দোলনের পটভূমিতে সমাজের পরিবর্তিত রূপ প্রভৃতি সুনিপুণভাবে চিত্রায়িত হয়েছে এই চলচ্চিত্রটিতে।
সাড়ে চুয়াত্তর
নির্মল দের পরিচালনায় নির্মিত সাড়ে চুয়াত্তর একটি কমেডি চলচ্চিত্র। ১৯৫৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এই ছবিতে অভিনয় করেছেন উত্তম কুমার, সুচিত্রা সেন, তুলসী চক্রবর্তী মলিনা দেবী প্রমূখ।
দীপ জ্বেলে যাই
অসিত সেনের পরিচালনায় ১৯৫৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সামাজিক নাট্য ধর্মী চলচ্চিত্র ‘দ্বীপ জ্বেলে যাই ‘ আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের ছোটগল্প অবলম্বনে এই সিনেমাটি নির্মিত। এই চলচ্চিত্রটিতে মুখ্য ভূমিকায় যাদের দেখা যায় তারা হলেন অনিল চট্টোপাধ্যায়, সুচিত্রা সেন, বসন্ত চৌধুরী।
সপ্তপদী
তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাহিনী অবলম্বনে নির্মিত ‘সপ্তপদী’ সিনেমাটি মুক্তি পায় ১৯৬১ সালে। জনপ্রিয় এই সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন উত্তম কুমার, সুচিত্রা সেন, তরুণ কুমার, ছবি বিশ্বাস প্রমুখ। এই সিনেমাটির পরিচালক অজয় কর। লাভ স্টোরি কেন্দ্রিক এই ছবির জনপ্রিয় গান ‘এই পথ যদি না শেষ হয়’ বাংলা সিনেমার সেরা গান গুলোর মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় গান।
হীরক রাজার দেশে
সত্যজিৎ রায় পরিচালিত রূপকাশ্রিত জনপ্রিয় চলচ্চিত্র ‘হীরক রাজার দেশে’। একমাত্র শিক্ষক চরিত্রটি ছাড়া সকলে ছড়ার মাধ্যমে সংলাপ বলেছে এই সিনেমায়। ছবিটি মুক্তি ১৯৮০ সালে। এই সিনেমায় মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন তপন চট্টোপাধ্যায়, রবি ঘোষ, উৎপল দত্ত, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, সন্তোষ মুখোপাধ্যায় প্রমুখ।
মেঘে ঢাকা তারা
ঋত্বিক ঘটক পরিচালিত ‘মেঘে ঢাকা তারা’ মুক্তি পায় ১৯৬০ সালে। শক্তিপদ রাজগুরু মূল কাহিনী অবলম্বনে চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য লেখেন মৃনাল সেন। ভারত-পাকিস্তান বিভাজন এর প্রেক্ষাপটে নির্মিত এই সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন সুপ্রিয়া চৌধুরী, অনিল চট্টোপাধ্যায়, নিরঞ্জন রায়, গীতা দে, বিজন ভট্টাচার্য, প্রমুখ। ঋত্বিক ঘটকের সবচেয়ে বেশি পরিচিত ও আলোচিত সিনেমা মেঘে ঢাকা তারা। সাইট অ্যান্ড সাউন্ড চলচ্চিত্রবিষয়ক মাসিক সাময়িকীতে সর্বকালের সেরা চলচ্চিত্রের তালিকায় ২৩১ নম্বরে স্থান পায় এই চলচ্চিত্রটি।
গুপী গাইন বাঘা বাইন
সাহিত্যিক উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী রূপকথা অবলম্বনে সত্যজিৎ রায় নির্মিত ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’ ছবিটি মুক্তি পায় ১৯৬৮ সালে। ছোটদের সিনেমা ভাবা হলেও তার আড়ালে সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থা সম্পর্কে অনেক ভাবনা ব্যক্ত হয়েছে এই সিনেমায়। গুপি ও বাঘা দুজনে ‘হাজার ভুতের রাজার’ তিন বর পেয়ে শান্তি প্রচারে উদ্যত হয়। এই সিনেমার গানগুলি এবং সাড়ে ছয় মিনিটের ভুতের নৃত্যের দৃশ্য অভিভূত করে সকল বয়সের মানুষকে। অভিনয়ের মাধ্যমে চরিত্রগুলোকে ফুটিয়ে তুলেছেন তপেন চট্টোপাধ্যায়, রবি ঘোষ, সন্তোষ দত্ত, জহর রায় হরীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ।
জলসাঘর
পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের চতুর্থ চলচ্চিত্র ‘জলসাঘর’ মুক্তি পায় ১৯৫৮ সালে। তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাহিনী অবলম্বনে নির্মিত ছবিটির শুটিং হয় নিমতিতা রাজবাড়ীতে। জমিদার বিশ্বম্ভর বাবুর পতনের কাহিনী এই ছবির মূল বিষয়বস্তু। এই সিনেমায় অভিনয় করেছেন ছবি বিশ্বাস, পদ্মা দেবী, পিনাকী সেনগুপ্ত, গঙ্গাপদ বসু, কালী সরকার, বিসমিল্লা খান প্রমূখ। জলসাঘর কে এক অনন্য মাত্রা দান করেছিল ছবি বিশ্বাস এর অভিনয়।
পদ্মা নদীর মাঝি
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পদ্মা নদীর মাঝি’ উপন্যাস অবলম্বনে গৌতম ঘোষ পদ্মা নদীর মাঝি চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেন। ছবিটি মুক্তি পায় ১৯৯৩ সালে। বাংলা ভাষায় নির্মিত বাংলাদেশ এবং ভারতের যৌথভাবে নির্মিত চলচ্চিত্র ‘পদ্মানদীর মাঝি’ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে সম্মানিত। এই সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন রাইসুল ইসলাম আসাদ, চম্পা, উৎপল দত্ত, রূপা গঙ্গোপাধ্যায়, রবি ঘোষ প্রমুখ।
তিন কন্যা
রবীন্দ্রনাথের তিনটি ছোটগল্পের সংকলন নিয়ে সত্যজিৎ রায় পরিচালিত এই চলচ্চিত্রটি ১৯৬১ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১০০ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে মুক্তি পায়। তিনটি গল্পেই প্রধান তিনটি নারী চরিত্র। প্রথম অধ্যায় টি ‘পোস্টমাস্টার’ দ্বিতীয় অধ্যায়টি ‘মনিহারা’ এবং তৃতীয় অধ্যায়টি ‘সমাপ্তি’, বয়সের দিক থেকেও এই তিনটি নারী চরিত্র আলাদা পর্যায়ের প্রথমে কিশোরী, তারপর বিবাহিতা, এবং শেষে ষোড়শী। প্রধান কুশীলবরা ছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, অপর্ণা সেন, অনিল চট্টোপাধ্যায়, গীতা দে, পার্বতী ঘোষ, কালী বন্দ্যোপাধ্যায় সন্তোষ দত্ত, চন্দনা ব্যানার্জি,খনা রায়চৌধুরী প্রমূখ।
অপুর সংসার
সত্যজিৎ রায় পরিচালিত অপুর সংসার চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায় ১৯৫৯ সালে। অপু ট্রিলজির শেষ পর্ব এটি। বিখ্যাত এই চলচ্চিত্রটি বহু পুরস্কার লাভ করেছিল, ১৯৫৯ সালে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পায় এই সিনেমাটি। ১৯৬০ সালে লন্ডন চলচ্চিত্র উৎসবে ব্রিটিশ ফিল্ম ইন্সটিটিউট পুরস্কার লাভ করে। এই সিনেমায় অভিনয় করেছেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, শর্মিলা ঠাকুর, অলক চক্রবর্তী, স্বপন মুখার্জি প্রমূখ।
সোনার কেল্লা
সত্যজিৎ রায় ‘সোনার কেল্লা’ উপন্যাসটি রচনা করেন ১৯৭১ সালে আর তারই পরিচালনায় সোনার কেল্লা রহস্য রোমাঞ্চ চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায় ১৯৭৪ সালে। এক জাতিস্মর শিশুর অপহরন কে কেন্দ্র করে ছবির কাহিনী। সেই শিশুকে উদ্ধার করতে ফেলুদা এবং তার সহকর্মীদের আবির্ভাব হয়। সিনেমাটিতে অভিনয় করেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, সন্তোষ দত্ত, সিদ্ধার্থ চট্টোপাধ্যায়, কুশল চক্রবর্তী, শৈলেন মুখার্জী, কামু মুখার্জী। বহু পুরস্কার লাভ করেছে এই চলচ্চিত্রটি।
Recommended Read,
Latest Movies of Dev
IMDB Bangla