কম্পিউটারের ইতিহাস ~ History of Computer in Bengali



অত্যাধুনিক কম্পিউটারের যুগে ঘরে ঘরে কম্পিউটার এসে গেছে, অনলাইন কাজ থেকে ডাটা এন্ট্রি সবই হচ্ছে কম্পিউটার নামের এই যন্ত্রটির মাধ্যমে, আধুনিক কম্পিউটারের এই চেহারা কিন্তু একদিনে আসেনি,  যুগ যুগ ধরে বিশেষজ্ঞদের পরীক্ষা নিরিক্ষার মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছে এই যন্ত্র।  

computer-history-explained-in-bangla-bongquotes

 কম্পিউটার সৃষ্টির ইতিহাস অনেকেরই অজানা।  কম্পিউটারের জন্ম কিন্তু কিছু বছর আগে নয়,  কয়েক হাজার বছর আগে হয়।  খ্রিষ্টপূর্ব প্রায় তিন হাজার বছর আগে চীন গণনার জন্য ব্যবহৃত হত  এ্যাবাকাস(Abacus)। এই Abacus থেকেই আধুনিক ক্যালকুলেটর তৈরীর ধারণা এসেছে বলে মনে করা হয়। কয়েকটি বিডস অর্থাৎ গোলচাকতির মাধ্যমে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে গণনার কাজ করা হতো। প্রাচীন যুগের Abacus  থেকে কম্পিউটারের প্রথম চিন্তার সূত্রপাত।

Abacus
এ্যাবাকাস(Abacus)

Abacus আবিষ্কারের কয়েক হাজার বছর পর সভ্যতার অগ্রগতির সাথে সাথে ১৬৪৫ খ্রিষ্টাব্দে  ফরাসি বিজ্ঞানী ব্লায়াস প্যাসকেল প্যাসকেলাইন যন্ত্র তৈরী করেন। যা প্রায় Abacus এর মতই কার্যকারী  ছিল,  ১৬৯৪ সালে প্যাসকেলাইন যন্ত্রের উন্নত সংষ্করণ  স্টেপড রেকোনার তৈরী করেন গটফ্রেড উইলহেম ভন লেইবনিজ। 

চার্লস ব্যাবেজ
চার্লস ব্যাবেজ

১৮২১ সালে চার্লস ব্যাবেজ একটি যন্ত্র আবিষ্কার করলেন যেখানে অংকের পাশাপাশি তথ্য নিয়েও কাজ হত, সেই যন্ত্রটির নাম ডিফারেন্স ইঞ্জিন নামে। এই যন্ত্রেরও উন্নত সংস্করণ এনালাইটিক্যাল ইঞ্জিন আবিষ্কার হল কিছুদিন পর, তবে এই যন্ত্র চালানোর জন্য ছিদ্রযুক্ত পাঞ্চকার্ড কেবলমাত্র একবারই ব্যবহার করা যেত৷ এই যন্ত্রে তিনটি অংশ ছিল একটি তথ্য প্রদানের অংশ, একটি ফলাফল প্রদানের অংশ এবং তথ্য সংরক্ষণের অংশ। 

ডিফারেন্স ইঞ্জিন
ডিফারেন্স ইঞ্জিন

আধুনিক কম্পিউটারে থাকা অংশ গুলির সঙ্গে  চার্লস ব্যাবেজের এনালাইটিক্যাল ইঞ্জিনের অংশগুলির মিল আছে। এই কারনেই চার্লস ব্যাবেজকে কম্পিউটারের জনক বলা হয়ে থাকে। 

 ডঃ হারম্যান হলোরিথ ১৮৯০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আদমশুমারী বিভাগে গণনার কাজে সুবিধার জন্য চার্লস ব্যাবেজের যন্ত্রের সাথে যুক্ত করলেন টেবুলেটর নামক একটি যন্ত্র, যাতে ব্যবহার করা যেত কাগজের তৈরী পাঞ্চকার্ড, যাতে টেবুলেটর এর সাহায্যে ছিদ্র করা যেত।  এবং এই যন্ত্রের সাহায্যে আদমশুমারীর যেই কাজ করতে দশ বছর লাগত সেই কাজ তিনি মাত্র তিন বছরেই করে দিলেন। ডঃ হারম্যান এর প্রচেষ্টা সফল হওয়ায় তিনি টেবুলেটিং মেশিন কোম্পানী তৈরী করলেন যা পরবর্তীতে পৃথিবী জুড়ে পরিচিত হয় আইবিএম নামে। 

 প্রথম প্রজন্ম

 ডিজিটাল কম্পিটারের প্রথম প্রজন্ম ধরা হয়  ১৯৪৬ সাল থেকে ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত । 

১৯৪৬ সালে পেনসিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দু’জন অধ্যাপক একটি কম্পিউটার তৈরী করেন যার নাম  ENIAC, তবে প্রথম মেমোরি যুক্ত কম্পিউটার আবিষ্কার হয় ১৯৪৯ সালে , যার নাম  EDSAC (Electronic Delay Storage Automatic Computer)।   Remington Rand  কোম্পানি ১৯৫১ সালে UNIVAC-1 কম্পিউটার তৈরি করে, যেখানে ভেকুয়্যাম টিউব এর ব্যবহার দেখা যায়। ১৯৫৪ সালে জনপ্রিয় IBM-650 কম্পিউটার তৈরি হয়। 

প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটারে যেসব বৈশিষ্ট ছিল সেগুলি হল – 

  • ১. এই কম্পিউটার গুলি আকারে ও আতয়নে বড় ছিল।
  • ২. ভ্যাকুয়াম টিউবের ব্যবহার দেখা যেত। 
  • ৩. এই কম্পিউটারের প্রসেসিং ছিল ধীর গতিসম্পন্ন। 
  • ৪. এই প্রজন্মের কম্পিউটার অত্যধিক দামী ছিল। 
  • ৫. এই মেশিনে তাপ নিয়ন্ত্রেণে প্রয়োজন হত।
  • ৬. বিপুল সংখ্যক তথ্য ধারণ করতে পারত না। তথ্য ধারণক্ষমতা ছিল সীমিত। 
  • ৭. বিদ্যুৎ শক্তির খরচ ছিল অত্যধিক এবং অত্যধিক তাপ উৎপাদনকারী ছিল। 
  • ৮. ইনপুট ও আউটপুটের জন্য ব্যবহার করা হত পাঞ্চ কার্ড ও ম্যাগনেটিক টেপ।
  • ৯. রক্ষণাবেক্ষণ প্রচুর ব্যয়বহুল ছিল। 

প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটারের উদাহরণ হল –  ENIAC, EDSAC, BINAC, UNIVAC-1, MARK, IBM-650 ইত্যাদি।

দ্বিতীয় প্রজন্ম – 

কম্পিউটারের দ্বিতীয় প্রজন্ম হল ১৯৫৮ সাল থেকে ১৯৬৫ সাল, ১৯৫৮ সালে Jack Cent Clear নামক একজন বিজ্ঞানী Integrated Circuit বা IC তৈরী করেন।  দ্বিতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারে ভ্যাকুয়াম টিউবের জায়গায় ব্যবহৃত হত ট্রানজিস্টার। 

দ্বিতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্য

  • ১. এই প্রজন্মের কম্পিউটারে ব্যবহার হত ট্রানজিস্টার ও ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট।
  • ২. প্রথম প্রজন্মের তুলনায় কম্পিউটারের আকৃতি ছোট ছিল। 
  • ৩. চৌম্বকীয় ক্যরস ব্যবহার। 
  • ৪. বিদ্যুৎ খরচ ও অনেক কম হত 
  • ৫. কার্য সম্পাদন গতির, প্রোগামিং ভাষা, ইনপুট ও আউটপুট ডিভাইস উন্নত মানের ছিল। 
  • ৬. টেলিফোন লাইনের মাধ্যমে ডেটা স্থানান্তরের সুবিধা ছিল।
  • ৭. প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটারের তুলনায় দাম কম। 
  • ৮. তাপ নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয়তা এই প্রজন্মের কম্পিউটারেও ছিল। 

উদাহরণঃ IBM-1401, CDC-1604, RCA-501, NCR-304, Honeywell 200, PDP- I ,IBM- 7000IBM-1620, GE 200, IBM-1600  ইত্যাদি।

তৃতীয় প্রজন্ম 

কম্পিউটারের তৃতীয় প্রজন্ম হল ১৯৬৩ সাল থেকে ১৯৭২ সাল। এই প্রজন্মের কম্পিউটারে  (SSI) সার্কিট এবং  (MSI) সার্কিট ব্যবহৃত হওয়ার কারনে এই প্রজন্মের কম্পিউটারকে তৃতীয় জেনারেশন বা Integrated Circuit Computer বলা হয়। 

তৃতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারে বৈশিষ্ট্য

  • ১. দ্বিতীয় প্রজন্মের তুলনায় আকারে আরও ছোট ছিল এই কম্পিউটার। 
  • ২. ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট (IC) এর ব্যাপক প্রচলন দেখা গেল। 
  • ৩. ভিডিও ডিসপ্লে ইউনিট, লাইন প্রিন্টার ইত্যাদি আউটপুট ডিভাইস প্রচলন।
  • ৪. শুরু হল মাউসের ব্যবহার।
  • ৫. এই প্রজন্মের কম্পিউটারের গঠন আরও জটিল হয়।

এই প্রজন্মের কম্পিউটারের উদাহরণ  IBM-370, PDP-8, PDP-2, GE-600, IBM 960,  CDC- 1700 ইত্যাদি।

চতুর্থ প্রজন্ম 

১৯৭৩ সাল থেকে ২০০০ সালকে কম্পিউটারের চতুর্থ প্রজন্ম বলে ধরা হয়।  Large Scale Integration এবং Very Large Scale ‘ Integration মাইক্রোপ্রসেসর এই প্রজন্মের কম্পিউটারে ব্যবহার করা হয়।  উইন্ডােজ, ডস (DOS) অপারেটিং সিস্টেমের ব্যবহার শুরু হয় এই প্রজন্মে।  

চতুর্থ প্রজন্মের কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্য গুলি হল – 

  • ১. মাইক্রোপ্রসেসর এর উদ্ভব ও ব্যবহার শুরু হয় এই প্রজন্মের কম্পিউটারে। 
  • ২. তথ্য সঞ্চয় ক্ষমতা পূর্বের তুলনায় অনেক বেড়ে যায়। 
  • ৩. বিভিন্ন অপারেটিং সিস্টেমের ব্যবহার।
  • ৪. মাইক্রোকম্পিউটারের  প্রচলন বৃদ্ধি পায় এই প্রজন্মের কম্পিউটারে। 
  • ৫. তাপ নিয়ন্ত্রণের কোনো প্রয়োজনীয়তা ছিল না
  • ৬. কম বিদ্যুৎ শক্তি প্রয়োজন হত। 

এই প্রজন্মের কম্পিউটারের উদাহরণ হল – 

IBM-3033, HP-3000, IBM-4341, TRS-40, IBM PC, DEC-10, STAR- 1000,PPR- II, APPLE- II, IBM- 4341

পঞ্চম প্রজন্ম 

২০০১ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত পঞ্চম প্রজন্মে খুব বেশি কিছু পরিবর্তন না হলেও  এই প্রজন্মের কম্পিউটারে প্রসেসর, মেমোরী, তথ্য সঞ্চয় করার ক্ষমতা ইত্যাদি উন্নত মানের হয় চতুর্থ প্রজন্মের তুলনায়।

এই প্রজন্মের কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্যগুলি হল- 

  • ১.  বহু কাজ একসাথে দ্রুত করতে পারে এই প্রজন্মের কম্পিউটার, 
  • ২. প্রসেসরের গতি বৃদ্ধি হয়, 
  • ৩. তাপ নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয়তা নেই এই প্রজন্মের কম্পিউটারে। 
  • ৪. অপারেটিং সিস্টেম উন্নত মানের হয়। 
  • ৫. এই প্রজন্মের কম্পিউটারে নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেটের ব্যবহার সাধারণের মধ্যেও দেখা যায়।  
  • ৬. এই প্রজন্মের কম্পিউটারের দাম পূর্বের চার প্রজন্মের তুলনায় অনেক কম। 

এই প্রজন্মের কম্পিউটারের উদাহরণ হল – DEV VAX-780, Intel iPSC-1, Desktop, Laptop, Notebook, Ultrabook, Chrombook ইত্যাদি।

Recent Posts