আমরা সবাই সৌন্দর্য পছন্দ করি, সব সময় সুস্থ থাকতে এবং নিজেদের সুন্দর রাখতেই পছন্দ করি আমরা। কিন্তু বর্তমান সময়ে রোজকার ব্যস্ততার মাঝে নিজেদের জন্য সেভাবে যত্ন নেওয়া হয় না আমাদের। কখনো বেশি পরিশ্রমের ফলে নিজেদের খাওয়া-দাওয়ায় নিয়ম মেনে হয় না, আবার কখনো কম পরিশ্রমের ফলে ওজন বেড়ে যায়।
রোগ হবার সহজ উপায়
অনেক সময় দেখা যায় পছন্দের ড্রেসটা পড়তে গিয়ে সেটা আর হচ্ছে না, হঠাৎই মাথায় আসে ওজন কমাতে হবে। শুরু হয় ডায়েটিং আর জিম, কিছুদিন পরে আবার হঠাৎ করে সেসব ভুলে শুরু হয় বাইরে খাওয়া-দাওয়া, পার্টি, তারপর আবার ওজন বেড়ে যায়, আমরা হাল ছেড়ে দিই। কিন্তু কিছু নিয়ম মেনে চললে সহজেই রোগা থাকা যায়,বাঁচা যায় স্থুলতার হাত থেকে। এমন কিছু উপায় হল –
- খালি পেটে না থাকা
আমরা অনেকেই অনেকক্ষণ কিছু না খেয়ে খালিপেটে কাজ করতে থাকি, খুব খিদে পেলে তখন কিছু খাই, দীর্ঘক্ষণ খালি পেটে থাকা স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকারক। তাই কিছুক্ষণ পর পর নিয়ম মেনে কিছু না কিছু খেতে হবে, খাবার কম খেলেই যে রোগা হবার সম্ভব এটা কিন্তু একদমই ঠিক কথা নয়।
- গ্রিন টি
অতিরিক্ত টক্সিন শরীর থেকে বের করতে গ্রিন টি খুবই ভালো। দিনে অন্তত দুই থেকে তিনবার গ্রিন টি পান করতে হবে, শরীরের মেদ কমাতে সাহায্য করে গ্রিন টি। এছাড়াও সকালে ঘুম থেকে উঠে গরম জলের মধ্যে মধু এবং লেবু মিশিয়ে খাওয়া ভীষণ ভালো।
- মেথিজল পান
গ্রিন টি ছাড়াও খালি পেটে মেথি ভেজানো জল রোগা হওয়ার অন্যতম উপায় মেথি ভেজানো জল শরীর থেকে টক্সিন বের করতে সাহায্য করে।
- প্রচুর পরিমাণে জল খেতে হবে
ঘুম থেকে উঠেই জল খান। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং শরীর সুস্থ রাখতে প্রচুর পরিমাণে জল খেতে হবে, জল শরীর থেকে ক্ষতিকর টক্সিন বের করে দেয়। দিনে অন্তত ৮ থেকে ১০ গ্লাস জল খেতে হবে।
- চিনিকে বলুন না
চিনিতে প্রচুর পরিমাণ ক্যালোরি থাকে। তাই চায়ে, রান্নায় চিনি এড়িয়ে চলুন।চা, কফি বা খাবারে চিনির পরিবর্তে ব্যবহার করতে পারেন মধু।
- ডিনার তাড়াতাড়ি করুন
ডিনার চেষ্টা করুন যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি করার, খাবার খাওয়ার সাথে সাথেই ঘুমোতে যাওয়া বা হাটা একেবারেই উচিত নয়, তাই ঘুমোতে যাবার কমপক্ষে দুই ঘণ্টা আগে সেরে ফেলতে হবে ডিনার।
- অ্যালকোহল বর্জন করতে হবে
বিহারে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি থাকে তাই স্থূলতা কমাতে বর্জন করুন বিয়ার এবং ওয়াইন।
- দিনে ঘুমাবেন না
রাতে আটঘন্টা ঘুম জরুরি। বেশি রাত করে ঘুমাবেন না, রাতে তাড়াতাড়ি শুয়ে সকালে ওঠা অভ্যাস করতে হবে। দিনের বেলায় ভাত ঘুম একেবারেই চলবে না।
- হাঁটটে হবে
প্রতিদিন সময় বার করে ব্যায়াম করতে হবে, দৈনিক কমপক্ষে ২০ থেকে৩০ মিনিট, এক্ষেত্রে সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি হলো হাঁটা। সকালে বা বিকেলে প্রতিদিন 30 মিনিট করে হাঁটলে ওজন কমবে।
- সকালে উঠেই ব্রেকফাস্ট
অনেকেই রাতে দেরিতে ঘুমানোর কারণে সকালে দেরিতে ওঠেন, যার ফলে সময় মত ব্রেকফাস্ট করেন না, বা ব্রেকফাস্ট বাদ দিয়ে দেন যা ওজন বাড়িয়ে দিতে সহায়ক। সকালে ব্রেকফাস্ট এ ওটস, ফলের রস, ফল খাওয়া যেতে পারে, রোগা হতে কখনোই নিজের ইচ্ছেমত খাওয়া কমিয়ে দেবেন না।
- স্বাস্থ্যকর খাবার খাবেন
দিনে অন্তত চার থেকে পাঁচবার খেতে হবে। সব সময় চেষ্টা করবেন স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার, অতিরিক্ত ভাজাভুজি এড়িয়ে চলতে হবে। রোজ ফল খেতে হবে। বাদ দিতে হবে সস, প্রতিদিন একই সময়ে খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। বিস্কুটের ক্ষেত্রে অবশ্যই ডায়েট বিস্কুট খেতে পারেন। তবে ফাস্টফুড, মিষ্টি এড়িয়ে চলতে হবে।
- বেশি মসলাযুক্ত খাবার খাওয়া যাবেনা
কম মসলা, কম তেলে রান্না খেতে হবে। সালাদ খাবারে যুক্ত করতে হবে। সকালে ভারি ব্রেকফাস্ট, ভারি লাঞ্চ এবং ডিনার হালকা রাখার চেষ্টা করবেন। ভাজা খাবার তেল থেকে তুলে টিস্যু মুড়িয়ে নিন, অতিরিক্ত তেল শুষে নেবে টিস্যু।
- চিবিয়ে খাবার খেতে হবে
ধীরে ধীরে চিবিয়ে খেলে খাবার দ্রুত হজম হয়। ফলে তা পাচন পক্রিয়াতে সহায়তা করে। রোগা হতে চাইলে অবশ্যই খাবার সময় ধীরে ধীরে চিবিয়ে খাবার খেতে হবে।
- ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত খাবার
খাবারের ক্ষেত্রে প্রোটিন জাতীয় খাদ্য, ফল, সবজি ,দানাশস্য খেতে হবে ।ব্রাউন রাইস, ব্রাউন ব্রেড, পপকন ইত্যাদি রোজকার ডায়েটে যোগ করা যেতেই পারে।
- কোলড্রিংস বর্জন
বিশেষত গরমকালে বাইরে বেরোলেই তেষ্টা মেটাতে আমরা প্যাকেটজাত পানীয় খেয়ে ফেলি। এগুলোতে চিনির পরিমাণ বেশি থাকে যা শরীরের ক্ষতি করে। তাই প্যাকেটজাত পানীয় বর্জন করতে হবে।
- প্রক্রিয়াজাত খাদ্য এড়িয়ে চলুন
আমরা অনেক সময় পুষ্টির কথা নয় স্বাদের কথা ভাবি। কিন্তু ওজন কমাতে গেলে ও শরীরকে সুস্থ রাখতে গেলে প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। তবে সপ্তাহে একদিন অল্প একটু ব্যাতিক্রম করা যেতে পারে।
- এক্সারসাইজ
ওজন কমানোর ক্ষেত্রে এক্সারসাইজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ডায়েটের পাশাপাশি শরীর চর্চাও দরকার সমানভাবে, এর ফলে পেশি এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সক্রিয় হবে। নিয়মিত কিছুক্ষণ যোগা করা দরকার, স্ট্রেসপূর্ন জীবনে ওজন কমিয়ে শরীর সুস্থ রাখায় ব্যায়াম এর পাশাপাশি মেডিটেশনও তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
স্থূলতা বিভিন্ন সমস্যার কারণ
স্থূলতা থেকে সৃষ্টি হয় বিভিন্ন রোগ। তাই হঠাৎ স্থূলতা বেড়ে গেলে সচেতন হতে হবে, তবে অনেক সময় বিভিন্ন ওষুধের থেকে বা হরমোনের কারণে ওজন বেড়ে যায়। স্থূলতার কারণে মানসিক অবসাদে ভোগেন অনেকে। গবেষকরা বলছেন স্থূলতার কারনে বিভিন্ন সময় হেনস্তার শিকার হতে হয়। যার ফলে তাদের মনে জন্ম নেয় অবসাদ। তবে স্থূলতা কমাতে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে, আর তার জন্য প্রথমেই জাঙ্কফুডের প্রলোভন থেকে এবং অতিরিক্ত মদ্যপান থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখতে হবে।
ওজন কমাবার উপায়
রোগা হতে চাইলে সর্বপ্রথম একটি খাবারের তালিকা তৈরি করে নিতে হবে। সেখানে কি কি খাওয়া যাবে এবং কি কি খাওয়া বারণ তা লিখে নিতে হবে। পাশাপাশি নির্দিষ্ট সময় ধরে শরীরচর্চা করতে হবে। সারা দিনে তিন থেকে চার লিটার জল, অন্ততপক্ষে ৮ ঘন্টা ঘুম এবং দীর্ঘক্ষণ না খেয়ে থাকার অভ্যাস পরিবর্তন করতে হবে। এছাড়াও কিছু ঘরোয়া টোটকা রয়েছে যা ওজন কমাতে সাহায্য করে। যেমন ঘর মুছলে ওজন কমে, ওজন কমাতে রসুন খুব উপকারী। তাই মাঝে মাঝে খালি পেটে এক কোয়া রসুন খাওয়া শুরু করুন। এছাড়াও গানের তালে নাচ করুন।
রোজ হাঁটার উপকারিতা, শরীর ভালো রাখতে রোজ হাঁটুন
মন খুলে হাসুন, আনন্দে থাকুন। রোগ কমবে শরীর সুস্থ থাকবে।