বিভিন্ন কাজে অনেক দেশের মানুষ ভারতে প্রতি বছর এসে থাকেন, ১৩০ কোটির এই দেশে ভাষা ও সংস্কৃতির এক অপূর্ব নিশান । যেমন বিখ্যাত কবি বলে গেছেন “বিবিধের মাঝে দেখো মিলন মহান”, ভারতবর্ষে এলে আপনার সময়টা দারুন কাটতে বাধ্য কারণ এতো রকমের মানুষ এবং সংস্কৃতি রয়েছে হিন্দুস্তানের আনাচে কানাচে যে তা বলতে গেলে একটা পুরো বই লেখা হয়ে যাবে।
এই পোস্টটিতে আমরা কিছু এমন টিপস দিয়েছি যা আপনার মাথায় থাকলে ভারতে কাটানো সময়টি আরও নিরাপদ ও সুখকর হয়ে উঠবে। পড়েনিন এবং আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করে দিন ভালো লাগলে ।
১. ভারতের সংস্কৃতির জন্য নিজেকে প্রস্তুত করুন
আপনি যখন প্রথম ভারতে পৌঁছবেন তখন আপনি ভারতীয় সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হবেন, আপনার দেশের থেকে তা ভিন্নধরনের,তাই প্রস্তুত থাকুন। ধর্মীয় মতবিভেদ, সংস্কার জনিত মতপার্থক্যের মধ্যে যাবেন না, এতে আপনারই ক্ষতি হবে ।
বাংলাদেশের ১৫ টি সেরা ভ্রমণ স্থান
২. প্রয়োজনীয় ট্যাবলেটগুলি নিয়ে আসুন
ভারত ভ্রমণকারীদের একটি সাধারণ অভিজ্ঞতা হল ব্যাকটেরিয়ার সমস্যা। আপনার শরীরে ভারতের জল এবং খাবারের মধ্যে থাকা বিভিন্ন ব্যাকটিরিয়ার ফলে হতে পারে পেটের সমস্যা। এই জন্য আপনার প্রয়োজনীয় ওষুধগুলি সঙ্গে রাখুন।
এরকমই কিছু ওষুধের লিস্ট নিচে দিলাম যেগুলো সঙ্গে রাখা অবশ্যই দরকার,
- এসিডিটির ওষুধ
- প্রেসারের ওষুধ
- মাথা যন্ত্রণার ওষুধ
- বমির ট্যাবলেট
- পেট খারাপ বা গ্যাস এর জন্যে ট্যাবলেট
৩. ছোট শহরগুলিও ঘোরার পরিকল্পনা রাখুম
দিল্লী ও মুম্বইয়ের মতো ভারতের বড় শহরগুলি আকর্ষণীয় ঠিকই তবে শহরের বাইরে গিয়ে ভারতের কয়েকটি ছোট গ্রামে ঘুরে দেখতে পারেন। সেখানকার জীবনযাত্রা, আবহাওয়া, জলবায়ু ভালো লাগবে আপনার এবং আপনি ভারতীয় সংস্কৃতির আলাদা ধারণা পাবেন।
হায়দরাবাদ এর সেরা ঘোরার জায়গাগুলির লিস্ট
৪. মন্দিরে প্রবেশের আগে জুতো খুলে যাবেন
ভারতে মন্দির প্রবেশের আগে আপনাকে জুতো খুলে ফেলতে বলবে। মন্দির থেকে জুতা চুরি হয়ে যাওয়ার বিষয়ে যদি আপনি উদ্বিগ্ন হন তাহলে সেগুলি আপনার ব্যাকপ্যাকে রাখতে পারেন বা মন্দির পরিচারককে নজর রাখার জন্য কিছু টাকা দিতে পারেন।
৫. আপনার ফোনের জন্য একটি সিম কার্ড কিনবেন
ভারত ভ্রমণ করার সময় আপনার ফোনটি যদি আপনি ব্যবহার করতে পারেন তাহলে অনেক জিনিস আপনার কাছে সহজ হয়ে যাবে। আপনি গুগল ম্যাপে দিকনির্দেশ অনুসন্ধান করতে পারবেন, কোনও রেস্তোঁরায় যাওয়ার আগে তার রিভিউগুলি দেখতে পারবেন, ভ্রমণ ওয়েবসাইটগুলি কেমন তা সার্চ করে জানতে পারবেন। তাই আপনি যখন ভারতে পৌঁছবেন তখন আপনার ফোনের জন্য ডেটা সহ একটি সিম কার্ড নেবেন।
ভারতে লোকাল সিম কার্ড পাওয়া মুশকিল হতে পারে, তাই সর্বোত্তম বিকল্প হল আন্তর্জাতিক সিম কার্ড কেনা।
৬. ধর্মীয়স্থানে প্রতারনার ফাঁদে পা দেবেন না
মন্দির এবং মসজিদগুলিতে অনেকসময় আপনাকে অনুদান দেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হতে পারে। আপনার কপালে একটি লাল বিন্দু লাগিয়ে বা আপনার কব্জির চারপাশে একটি সুতো জড়িয়ে আপনার থেকে অর্থ চাইতে পারে। বিদেশি পর্যটকদের কাছ থেকে অর্থ উপার্জনের এক উপায় হল এটি, তাই এই ধরনের প্রতারনার ফাঁদে পা দেবেন না।
কলকাতায় বেড়ানোর সেরা জায়গাগুলির লিস্ট
৭. প্রয়োজনে স্থানীয় ফার্মেসীর সহায়তা নিতে পারেন
কিছু ভ্রমণকারীরা অসুস্থ হলে সমস্যাটি উপেক্ষা করেন ভাবেন এমনি সুস্থ হয়ে উঠবেন।
ভারতের ফার্মাসিতে গেলে আপনি দেখতে পাবেন তারা বন্ধুত্বপূর্ণ। আপনি প্রায়শই কোনও প্রেসক্রিপশন ছাড়াই অ্যান্টিবায়োটিক বা আপনার প্রয়োজন মতো কোনও ওষুধ নিতে পারবেন।
৮. দরদামের দিকটি মনে রাখবেন
ভারতে শপিংয় করার সময় বিক্রেতা আপনাকে অতিরিক্ত মূল্য বলতেই পারে, তাকে সেই দাম না দিয়ে দরদাম করুন। বিক্রেতা যদি দাম কমাতে রাজি না হয় তাহলে সেখান থেকে চলে যান, প্রায় সময়েই তারা আবার ডেকে নেয়।
ব্যাঙ্গালোরের দর্শনীয় স্থানগুলি
৯. পিকপকেট হওয়ার থেকে সাবধানে থাকুন
কোনও ব্যস্ত সর্বজনীন স্থানে রয়েছেন, আপনার ব্যক্তিগত জিনিসপত্র নিরাপদে রাখবেন। আপনার ওয়ালেট, পাসপোর্ট বা ফোনটি আপনার পিছনের পকেটে নিয়ে যাবেন না এটি আপনার সামনের পকেটে বা জিপ দেওয়া ব্যাগে সাবধানে রাখবেন। দামি গহনা বা আনুষাঙ্গিক পরবেন না।
১০. হ্যান্ড স্যানিটাইজার এবং টয়লেট পেপার নিয়ে যাবেন
এগুলি আপনার সাথে সবসময় রাখবেন কারণ পাবলিক ওয়াশরুমগুলিতে এগুলি খুব কমই পাওয়া যায়। তার সাথে সাথে বিভিন্ন ধরণের রোগ যা শুধুমাত্র হাইজেনজনিত কারণে হতে পারে সেগুলি থেকেও সুরক্ষিত থাকবেন
১১. ভ্রমণের সময় নিরামিষ খাবার বেশি গ্রহন করবেন
ভারতে নিরামিষ খাবারগুলি স্বাস্থ্যকর, তাজা এবং সুস্বাদু হয়। কারন আমিষ খাবার খেলে অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকবে । যদিও আমরা আগেই বললাম যে এসিডিটির বা অন্যান কমন রোগের ওষুধ নিজের কাছে সবসময় রাখবেন ।
১২. গাড়ির ভাড়া যাচাই করে নিন
অনেক সময় হোটেলে বা গন্তব্যে যাওয়ার নিয়ে যাওয়ার জন্য ট্যাক্সি ড্রাইভারটি আপনাকে হোটেলে ঘুরিয়ে নিয়ে যাবেন বেশি ভাড়া নেওয়ার জন্য। বা আপনাকে অন্য ঠিকানায় নিয়ে যাবে। তাই সবসময় যেখানে যাবেন সেখানকার সঠিক ঠিকানা এবং ফোন নম্বর রাখবেন, এবং গাড়ি ভাড়া আগে ঠিক করে নেবেন।
১৩. জাল টিকিট নেওয়া থেকে সাবধান
দিল্লি এবং মুম্বইয়ের মতো বড় শহরগুলিতে আপনি পর্যটকদের ট্রেনের টিকিট বিক্রি করে এমন অফিস দেখতে পাবেন। তারা আপনাকে জাল ট্রেনের টিকিট বিক্রি করে আপনাকে বোকা বানানোর চেষ্টা করতে পারে , তাই টিকিট কেনার আগে অনলাইনে সংস্থাটি সম্পর্কে সন্ধান করে বৈধ কিনা তা দেখে টিকিট কাটবেন।
১৪. হাতে সময় নিয়ে বেরোবেন
আপনি যার জন্য অপেক্ষা করছেন সে হয়তো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি সময় নিতে পারে, বা আপনি কোথাও যাবেন ভাবছেন হাতে সময় নিয়ে বেরোবেন কারন ট্রাফিক জ্যাম এর কারনে অনেক বেশি সময় লাগে গন্তব্যে পৌঁছাতে। অপেক্ষা করার সময় সঙ্গে একটি ভাল রাখুন, সেটা পড়তে পারবেন।
বিশ্বের অন্যতম ২০ টি দর্শনীয় স্থান
১৫. স্নেহ প্রকাশ্য প্রদর্শন এড়ান
আপনি যদি আপনার সঙ্গীর সাথে ভারতে বেড়াতে আসেন তবে জনসমক্ষে আলিঙ্গন, চুম্বন থেকে বিরত থাকবেন। ভালবাসার প্রকাশ্য প্রদর্শনগুলি ভারতীয় সংস্কৃতিতে অনুপযুক্ত।
পাবলিক ডিসপ্লে অফ এফেকশন (PDA) এর জন্যে আপনাকে ফাইন দিলেও দিতে হতে পারে কিছু কিছু রাজ্যে , সেইজন্যে আমি আপনাকে বলবো যতটা সম্ভব এই জিনিসগুলি এড়িয়ে যাবেন।
১৬. হাত দিয়ে খাওয়ার খাওয়া শিখবেন
ভারতের বেশিরভাগ জায়গায় চামচ ব্যবহার করা হয় না। হাত দিয়েই খাওয়া হয়, আপনার ডান হাত দিয়ে খাবেন।
খাবার আগে অবশ্যই হাত ধোবেন বা জল না থাকলে স্যানিটাইজার ব্যবহার করবেন।
১৭. বোতলজাত জল ক্রয় করার আগে দেখে নিন
দুর্ভাগ্যক্রমে কিছু কিছু দোকানদার ট্যাপ জলের কল থেকে জল ভরে বোতলজাত জল বিক্রি করবেন। এগুলো খেলে অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে সেই জন্য, নিশ্চিত হয়ে নিন যে আপনি যে বোতলটি ক্রয় করছেন তাতে প্লাস্টিকের সিল আছে কিনা, যদি সিল ভাঙ্গা থাকে তাহলে তা কিনবেন না।
বিপিএ ফ্রি বোতল করি করুন ভ্রমণের সময়ে
১৮. ভ্রমন বীমা ভুলবেন না
ভ্রমণের বীমা ছাড়া আপনার ভ্রমণ করা উচিত নয়, আপনি অসুস্থ বা আহত হলে, আপনার প্রয়োজনীয় কোনও চিকিত্সা আপনার বীমা দ্বারা পরিশোধিত হবে। কিছু বীমা পলিসি আপনাকে চুরি, হারিয়ে যাওয়া লাগেজ, এমন অন্য কোনও কারণে কভার করবে। তাই অবশ্যই ভ্রমণ বিমা করিয়ে রাখুন।
১৯. ফুটপাতের পথে হাঁটার সময় সাবধানতা অবলম্বন করুন
ভারতের বেশিরভাগ রাস্তায় ফুটপাতে হাটার সময় সাবধানে গাড়ির থেকে সরে হাটবেন এবং রাস্তার মধ্যে বড় গর্ত, ধারালো জিনিস ইত্যাদি বিষয়ে সচেতন হয়ে হাটবেন।
ফুটপাথে হাঁটার আরেকটি সুবিধা হলো আপনি নিজের সময়মতো নিজের গতি অনুযায়ী যেতে পারেন যেখানে আপনি মেইনরোড দিয়ে হাঁটাচলা করলে সবসময় অন্যান্য গাড়ির থেকে সতর্ক হয়ে তাড়াহুড়ো করতে হয়।
২০. সময় নিয়ে ভ্রমণ করুন
একসাথ অনেক জায়গা অল্পসময়ে ভ্রমনের পরিকল্পনা না করে এক একটি স্থান একটু বেশি সময় নিয়ে ভ্রমন করুন। ভালোভাবে ঘুরতে পারবেন এবং সেই স্থানের নানা তথ্য অভিজ্ঞতালব্ধ হবে।
আসা করি এই পোস্টটি থেকে আপনারা উপকৃত হয়েছেন, ভালো লাগলে প্লিজ আমাদের পোস্টটি সকলের সাথে শেয়ার করে দিন আর পারলে আমাদের ফেইসবুক ও ইনস্টাগ্রাম পেজগুলি ফলো করে নিন ।