সংগীত জগতে অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি নাম কুমার শানু। ১৯৯০ থেকে ২০০০ সালের সেরা গায়ক ছিলেন কুমার শানু, ৯০ এর জনপ্রিয় সব গান মানেই এককথায় জার নাম মনে আসে তিনি হলেন কুমার শানু।
জন্ম – Birth
আমরা যাকে কুমার শানু নামে চিনি তার আসল নাম ছিল কেদারনাথ ভট্টাচার্য।
১৯৫৭ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর তিনি কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। কুমার শানুর পিতা পশুপতি ভট্টাচার্য একজন গায়ক ও সুরকার ছিলেন, তার থেকেই বিকশিত হতে থাকে কুমার শানুর প্রতিভা। তিনি ছেলেকে গান এবং তবলা শেখাতেন।
শিক্ষাজীবন – Education
প্রকাশ্যে সঙ্গীত জগতে আসার পূর্বে কুমার শানু কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাণিজ্যে ডিগ্রী লাভ করেন।
কুমার শানুর কর্মজীবন – Work Life
১৯৮৭ সালে জগজিৎ সিং যিনি সংগীত পরিচালক এবং গায়ক তিনি কুমার শানু কে প্রস্তাব দেন আন্ধিয়া ছবিতে গান করার জন্য, তখন কুমার শানু মুম্বাইতে যান এবং কল্যাণজী আনন্দজী তাকে হিন্দি ছবি ‘যাদুকর’ এ গান গাওয়ার সুযোগ দেন এবং কল্যাণজী আনান্দজীর প্রস্তাবেই তার নাম হয় পরবর্তীকালে কুমার শানু, এরপরে তিনি একে একে সুরকার নওশাদ, রাভিন্দ্র জেইন, হৃদয়নাথ মঙ্গেশকর, কল্যানজী আনান্দজী ও উষা খানের সঙ্গে কাজ করেন।
১৯৯০ সালে বিখ্যাত ‘আশিকি’ ছবিতে তিনি গান করেন। তার গান গুলি ‘এক সানাম চাহিয়ে’, ‘ নাজার কে সামনে’, ‘তু মেরি জিন্দেগি হে’, ‘ধিরে ধিরে সে’, ‘জানে জিগার জানেমান’ শ্রোতাদের মুগ্ধ করে।
তিনি যেসব বিখ্যাত সঙ্গীত পরিচালকদের সাথে কাজ করেছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম আর ডি বর্মন, আনন্দ মিলিন্দ, আনু মালিক, যতীন-ললিত, নাদীম-শ্রবণ, কল্যাণজী আনান্দজী প্রমুখ।
গানের পাশাপাশি তিনি ‘উত্থান’ নামে একটি বলিউড ছবি প্রযোজনা করেন। এছাড়াও রুহুল আমিনের পরিচালনায় কাব্যিক বাংলা ছবি ‘হাসান রাজা’ য় গান গেয়েছেন তিনি।
বিভিন্ন গানের রিয়েলিটি শো তে বিচারকের ভূমিকায় দেখা গেছে কুমার শানু কে।
কুমার শানুর বৈবাহিক জীবন – Marriage Life
বিবাহিত জীবনে অবৈধ সম্পর্কের জেরে প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ হয় ,পরে তিনি দ্বিতীয়বার বিবাহ করেন।
কুমার শানুর প্রথম বিবাহ – Kumar Sanu’s First Marriage
আশির দশকের মাঝামাঝি রিতা ভট্টাচার্যের সঙ্গে তিনি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের তিন পুত্র সন্তান জন্মায়, জেসি, জিকো আর জান। জানা যায় পরে তার সঙ্গে অভিনেত্রী কুণিকা লালা এবং অভিনেত্রী মীনাক্ষী শেষাদ্রির সঙ্গে সম্পর্কের কারণে ১৯৯৪ সালে কুমার শানু ও রিতার বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যায়। কিন্তু সেই সম্পর্ক গুলো দীর্ঘস্থায়ী হয়নি।
কুমার শানুর দ্বিতীয় বিবাহ – Kumar Sanu’s Second Marriage
তিনি দ্বিতীয়বার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন শানু বিকানেরের মেয়ে সলোনির সঙ্গে। কুমার শানু এবং সেলোনির দুই কন্যা সন্তান হয়, শ্যানন এবং আনা।
কুমার শানুর বিতর্ক – Controversies of Kumar Sanu
সংগীত শিল্পী কুমার শানুর সংঙ্গে আশি ও নব্বই দশকের জনপ্রিয় এবং সুন্দরী অভিনেত্রী মিনাক্ষী শেষাদ্রির সাথে নাম জড়ায় , বিবাহিত কুমার শানু অভিনেত্রী মিনাক্ষী শেষাদ্রিকে প্রথম দেখাতেই ভালোবেসে ফেলেছিলেন ,পরিস্থিতি এমন পর্যায় চলে যায় যে স্ত্রীর সংঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ করে মিনাক্ষীকে বিয়ে করতে চান তিনি ।
কুমার শানুর ম্যনেজার এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন মিনাক্ষী শেষাদ্রির সাথে কুমার শানুর সম্পকের কথা , গায়ক নিজেও এই সম্পর্কের কথা অস্বীকার করেননি । তাঁর স্ত্রী রিত ভট্টাচার্য একথা জানতে পারলে তাদের বৈবাহিক জীবনে অশান্তি শুরু হয় এবং তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যায় । তিন বছর মিনাক্ষী শেষাদ্রির সাথে সম্পর্কে থাকার পর তাদের সম্পর্কে ফাটল ধরে ।
ফিল্মফেয়ার
পরপর পাঁচবার কুমার শানু ফিল্মফেয়ার এওয়ার্ড পেয়েছেন।
- ১৯৯০ সালে সঙ্গীত পরিচালক নাদীম শ্রবণের ‘আশিকি’ ছবির’ আব তেরে বিন’ গানটির জন্য তিনি ফিল্মফেয়ার পুরষ্কার পান।
- দ্বিতীয়বার ১৯৯১ সালে সংগীত পরিচালক নদীম শ্রবণের বিখ্যাত ছবি ‘সাজান’ এ মেরা দিলভি কিতনা পাগল হে’ গানটির জন্য ফিল্মফেয়ার এওয়ার্ড জেতেন।
- তৃতীয়বারও সঙ্গীত পরিচালক নদীম শ্রবণের ‘ দিওয়ানা’ ছবির জনপ্রিয় ‘সোচেঙ্গে তুমহে পেয়ার’ গানটির জন্য তৃতীয়বার ১৯৯২ তে ফিল্মফেয়ার এওয়ার্ড পান।
- ১৯৯৩ সালে সঙ্গীত পরিচালক আনু মালিকের ‘বাজিগর’ ছবির ইয়ে কালি কালি আখে গানটির জন্য।
- চতুর্থবার ফিল্মফেয়ার এওয়ার্ড লাভ করেন।
- পঞ্চম বার ১৯৯৪ সালে সঙ্গীত পরিচালক আর ডি বর্মনের বিখ্যাত ১৯৪২ এ লাভ স্টোরি সিনেমার গানের জন্য ফিল্মফেয়ার এওয়ার্ড পান।
পুরস্কার ও সম্মান
গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস এ কুমার শানুর নাম
একদিনে ২৮ টা গান রেকর্ড করার জন্য গিনেস বুকে কুমার শানুর নাম ওঠে।
কুমার শানু পেয়েছেন পদ্মশ্রী
কুমার শানু তার গানের জন্য একাধিক এওয়ার্ড পেয়েছেন। ২০০৯ সালে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে তাকে ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ‘পদ্মশ্রী’ দেওয়া হয়।
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে মহানায়ক উত্তম কুমার লাইফ টাইম অ্যাচিভমেন্ট সম্মান
২০১৪ সালে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে মহানায়ক উত্তম কুমার লাইফ টাইম অ্যাচিভমেন্ট দেওয়া হয় তাকে।
অন্যান্য যেসব পুরস্কার ও সম্মান পেয়েছেন কুমার শানু
২০১৫ সালে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে সঙ্গীত মেলা লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট দেওয়া হয়।
১৯৯৪ সালে তিনি ১৯৪২ এ লাভ স্টোরি সিনেমার ‘ এক লাড়কি কো দেখাতো গানের জন্য স্টার স্ক্রিন এওয়ার্ড পান।
বিখ্যাত কিছু গান
- ১৯৯০ আশিকি সিনেমার “আব তেরে বিন জিলেংগে হাম”, “নাজার কে সামনে জিগারকে পাস”, “ইক সানাম চাহিয়ে”, তু মেরি জিন্দেগি হে, ইয়ে দুনিয়া ভুলা দুংগা
- ১৯৯১ সাজান সিনেমার “মেরা দিল ভি কিতনা পাগল হে”, “জিয়ে তো জিয়ে কেইসে”
- ১৯৯১ দিল হে কে মানতা নেহি সিনেমার “দিল হে কে মানতা নেহি”
- ১৯৯১ সড়ক সিনেমার “তুমহে আপনা বানানে কি কসম”,
- ১৯৯২ দিওয়ানা সিনেমায় “সচেংগে তুমহে পেয়ার”
- ১৯৯২ চমৎকার সিনেমায় “ইস পেয়ার সে মেরি তারাফ না দেখো”,
- ১৯৯৩ বাজিগর সিনেমায় “ইয়ে কালি কালি আখে”, “বাজিগরও বাজিগর”
- ১৯৯৩ হাম হে রাহি পেয়ার কে সিনেমার “ঘুংঘাট কি আড সে”, “কাশ কই লাড়কা”, “ইউহি কাট যায়েগা সাফার”,
- ১৯৯৩ কাবি হা কাবি না সিনেমার “এই কাশ কে হাম”, “আনা মেরে পেয়ার কো না তুম”, “ওহ ত হে আলবেলা”
- ১৯৯৪ ১৯৪২: এ লাভ ষ্টোরি সিনেমার “ইক লেড়কি কো দেখা তো”, “রিম ঝিম রিম ঝিম”, “কুচ না কাহো”, “রুঠ না জানা”
- ১৯৯৪ মে খিলারি তু আনারি সিনেমার “চুরা কে দিল মেরা”,
- ১৯৯৫ দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে যায়েংগে “তুজে দেখা তু” লতা মঙ্গেশকর যতীন-ললিত
- ১৯৯৪ আকেলে হাম আকেলে তুম সিনেমার “দিল মেরা চুরায়া কিও”, “দিল কেহতা হে”
- ১৯৯৬ রাজা হিন্দুস্থানি সিনেমার “পারদেশী পারদেশী (II)”, “পুছো জারা পুছো”,
- ১৯৯৭ ইয়েস বস সিনেমার “ইক দিন আপ”
- ১৯৯৭ পারদেশ “দো দিল মিল রাহে হে”, “মেরি মেহবুবা”
- ১৯৯৭ ভিরাসাত “তারে হে বারাতি”,
- ১৯৯৮ কুচ কুচ হোতা হে সিনেমার “সাজান জী ঘড় আয়ে”, “লাড়কি বারি আনজানি হে”
- ১৯৯৮ দুশমান সিনেমার “পেয়ার কো হো যানে দো”
- ১৯৯৯ হাম দিল দে চুকে সানাম সিনেমার “আখো কি গুস্তাকিয়া”
- ২০০০ কাহো না পেয়ার হে সিনেমার “চান্দ সিতারে”
প্রশ্নোত্তর – FAQ
কুমার শানুর আসল নাম কি ?
কেদারনাথ ভট্টাচার্য
কুমার শানু কোথায় জন্মগ্রহণ করেন ?
কলকাতায়
কুমার শানু কবে জন্মগ্রহণ করেন ?
১৯৫৭ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর
কুমার শানুর পিতার নাম কি ?
পশুপতি ভট্টাচার্য
কুমার শানুর স্ত্রীর নাম কি ?
প্রথম স্ত্রীর নাম রিতা ভট্টাচার্য , কুমার শানু দ্বিতীয়বার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন শানু বিকানেরের মেয়ে সলোনির সঙ্গে