মহারাষ্ট্রের এক আশ্চর্য উল্কা সরোবর, লোনার হ্রদ, যেখানে এক রাতে জল হয়ে যায় গোলাপি


ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যের বুলাধনা জেলার একটি রহস্যময় সরোবর যার নাম লোনার। এটি লোনার গর্ত নামেও বহুল পরিচিত।লোনার সরোবর হল মহারাষ্ট্রের অন্যতম এক অমীমাংসিত গোপন রহস্য।এটি একটি লবনাক্ত ক্ষারযুক্ত হ্রদ।এটিকে ভারতের অন্যতম জাতীয় ভূ-ঐতিহ্য স্মৃতিস্তম্ভ হিসেবে বিবেচনা করা হয় । লোনার কথাটির নামকরণ করা হয় দৈত্য,লোনাসুরা’র নামে। লোনার হ্রদ প্লাইস্টোসিন কালে সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করা হয়।পূর্বে এই সরোবর টিকে আগ্নেয় হ্রদ বলে মনে করা হত।

লোনা সরোবরের সৃষ্টির ইতিহাস একটু ভিন্ন স্বাদের । গবেষণা এবং পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে অবগত হওয়া গেছে যে আজ থেকে ৩৫,০০০ – ৫০,০০০ হাজার বছর আগে দুই মিলিয়ন টন ওজন সমৃদ্ধ একটি উল্কা ৯০,০০০ হাজার কিঃমিঃ প্রতি ঘন্টা বেগে এখানে আছড়ে পড়েছিল। এই ব্যাপক আঘাতের ফলে ১৫০ মিটার অর্থাৎ ৫০০ ফিট গভীর একটা গর্তের সৃষ্টি হয়,যা রূপদান করে আজকের এই লোনার হ্রদ টিকে।এই অভিনব হ্রদের গড় ব্যাস প্রায় ১,৮৩০ মিটার বা ৬,০০০ফুট।

এই গর্তের পরিধি বা Rim পার্শ্ববর্তী ভূ-পৃষ্ঠে অপেক্ষা প্রায় ২০ মিটার অর্থাৎ ৬৫ফুট উপরে উঠে গেছে।এই হ্রদের উল্লেখ আমাদের ঐতিহ্যবাহী পুরান গ্রন্থ যথা স্কন্দ পুরান,পদ্মা পুরান এবং আবুল ফজল রচিত আইন -ই আকবরী গ্রন্থে ও দেখতে পাওয়া যায় । ১৮২৩ খ্রিস্টাব্দে জে.ই. আলেকজান্ডার এই হ্রদটি আবিষ্কার করেছিলেন।লোনার হ্রদ হল পৃথিবীর মধ্যে তৃতীয় বৃহত্তম হ্রদ এবং একটি মাত্র হ্রদ যা ব্যাসল্ট পাথরে উপরে পতিত অত্যাধিক গতি সম্পন্ন উল্কার আঘাতে সৃষ্টি হয়েছে ।

এই হ্রদের জলে লবণ এবং সোডার সংমিশ্রনের নমুনা পাওয়া গেছে।এই হ্রদের জল সমুদ্রের জলের থেকেও ছয়গুন অধিক লবনাক্ত। এই অভিনব উল্কা হ্রদ এর বিষয় নিয়ে নাসা বিজ্ঞানীদের সাথে ভারতের ভূতাত্ত্বিক জরিপ দল একসাথে গবেষণারত। মানুষের মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে যে কিভাবে এই হ্রদের জল একই সাথে লবনাক্ত এবং ক্ষারীয় হল? গবেষণা করে দেখা গেছে এই হ্রদের জলে এমন কিছু ব্যকটেরীয়া ও মাইক্রো অরগানিজম বাস করে যা সারা বিশ্বে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর এবং ঠিক এই কারণ বশতই এই সরোবরের জলের রং সবুজ । তবে এই সরোবরটির জলের রঙ মাঝে মাঝে স্বচ্ছ নীলাভ হয়ে ওঠে।

মাঝে এই হ্রদের জলের রং গোলাপি হয়ে গেছিলো, পুনে ভিত্তিক একটি ইনস্টিটিউট দ্বারা পরিচালিত একটি তদন্ত অনুযায়ী, লবণপ্রিয় ‘হ্যালোয়ারচিয়া’ জীবাণুর উপস্থিতির কারণে এটি হয়েছিল।

লোনার হ্রদের আশেপাশে এমন কিছু দুষ্প্রাপ্য শিলাও পাওয়া যায় যা অবাক করা ;যেমন মাস্কেলিনাইট। এই ম্যাস্কেলিনাইট প্রাকৃতিকভাবে ঘটে যাওয়া গ্লাসের একটি ধরন যা অত্যন্ত উচ্চ-বেগের প্রভাবের দ্বারা গঠিত হয়ে থাকে।বিজ্ঞানীরা এ ও মনে করেন যে এই হ্রদের গঠনগত ধরন এবং বৈশিষ্ট্যের সাথে চাঁদ ও মঙ্গলের বুকের ওপর অবস্থিত অনেক খাদের সাদৃশ্য পাওয়া আছে ।

Recent Posts