ঝুলন যাত্রা উৎসবের সমস্ত তথ্য ও শুভেচ্ছাবার্তা, All information and greetings on Jhulan Yatra festival in Bengali


গ্রাম বাংলায় শৈশবকালে গাছের শাখা জুড়ে দোলনা বেঁধে দোল খাওয়া সম্পর্কিত দোলনের স্মৃতি অনেকেরই হয়তো মনে আছে। বর্তমানেও শিশুদের বিভিন্ন ধরনের সাজসজ্জা করে সাজিয়ে রাখা দোলনায় এমন দোল খেতে দেখা যায়। রাধা ও কৃষ্ণের শৈশব লীলার এমনই একটি স্মৃতি উন্মোচনকারক উৎসব হল এই ‘ঝুলন’। ঝুলন যাত্রা উৎসব বা ঝুলন পূর্ণিমা হল হিন্দুদের এক গুরুত্বপূর্ণ উৎসব। একাদশী থেকে শুরু করে শ্রাবণী পূর্ণিমা পর্যন্ত চলে এই উৎসবের সমারোহ। তাই ঝুলন পূর্ণিমাকে শ্রাবণী পূর্ণিমাও বলা হয়ে থাকে।

ঝুলন যাত্রা উৎসবের সমস্ত তথ্য ও শুভেচ্ছাবার্তা
Pin it

ঝুলনযাত্রার বিশেষ আকর্ষণ, Special attraction of Jhulan Yatra

রাধা কৃষ্ণের ঝুলন যাত্রায় ভক্তিমূলক গান, নাচ, দোলনা সাজানো, সব মিলিয়ে এটি রাধা ও কৃষ্ণের প্রেমলীলা সম্বন্ধীয় একটি বিশেষ উৎসব। হিন্দুদের এই বিশেষ উৎসবে ভারতের বিভিন্ন অংশের কৃষ্ণ মন্দিরে দেশ-বিদেশ থেকে বহু দর্শনার্থীদের আগমন ঘটে। বিশেষত পশ্চিমবঙ্গের নদীয়ার নবদ্বীপে ঝুলন উৎসব একটি বিশেষ আকর্ষণীয় অনুষ্ঠান। তাছাড়াও ভারতের বৃন্দাবন, মথুরা এবং ইস্কন মন্দিরে মহা সমারোহে এই ঝুলন উৎসব পালন করা হয়। বৃন্দাবনে রাধা ও কৃষ্ণর শৈশব-স্মৃতি, বিশেষ করে তাদের সখা ও সখীদের সাথে দোলনায় দোল খাওয়ার মাধ্যমে রাধাকৃষ্ণের প্রেমলীলাকে কেন্দ্র করেই দ্বাপরযুগে এই ঝুলন যাত্রা উৎসবের সূচনা করা হয়েছিল। বর্তমানে ভারতের বিভিন্ন স্থানের মধ্যে মথুরা, বৃন্দাবন এবং মায়াপুরে উদযাপিত ঝুলন যাত্রা উৎসব সারা বিশ্বে সুখ্যাতি লাভ করেছে।

ঝুলনযাত্রার বিশেষ আকর্ষণ
Pin it

দিদির জন্মদিনে শুভেচ্ছাবার্তা, Good wishes on elder sister’s birthday in Bengali

ঝুলন যাত্রার ইতিহাস, History of Jhulan Yatra

ঝুলন যাত্রার পৌরাণিক উৎস খুঁজে বের করতে গেলে দেখা যায় যে বৃন্দাবনে রাধা এবং কৃষ্ণের প্রেমলীলাকে কেন্দ্র করেই এই ঝুলন উৎসবের সূচনা হয়। হিন্দু পুরাণ অনুসারে বিশ্বাস করা হয় যে শ্রীকৃষ্ণ দ্বাপরযুগে ঈশ্বরের অবতার হিসেবে পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়েছিলেন এবং তিনি নিজের বয়োঃবৃদ্ধির সাথে সাথে বৃন্দাবন তথা নন্দালয়ে নানা রকমের লীলাসাধন করেছিলেন।

কিশোর কৃষ্ণ আর রাধারানীর মাধুর্যপূর্ণ প্রেমের কাহিনী বৃন্দাবনে স্থাপিত হয়েছিল এবং তারই লীলাস্বরূপ বর্তমানের এই ঝুলনযাত্রা পালন করা হয়ে থাকে। ভক্তদের মত অনুযায়ী রাধা ও কৃষ্ণ বৃন্দাবনের কুঞ্জবনে তাদের বিশুদ্ধ প্রেমের আদান প্রদানের মাধ্যমে এই জগতে প্রথম প্রেমের অনুভূতির প্রকাশ ঘটিয়েছিলেন। এই লীলার নানা ধরনের রূপ এই ঝুলন-যাত্রার মাধ্যমে ভক্তকুলের সমক্ষে পরিবেশন করা হয়। দোলনা সাজিয়ে নিয়ে রাধা ও কৃষ্ণের মূর্তি তাতে স্থাপন করা হয় এবং পূর্ব থেকে পশ্চিমদিকে দোলানো হয়।

ঝুলন যাত্রার ইতিহাস
Pin it

এই ক্ষেত্রে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ প্রকৃতির রূপক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত এবং রাধারানী তাঁর পরম ভক্তস্বরূপিনী রূপে পূজিত। পুরাণে শ্রীকৃষ্ণের নিত্য অষ্টপ্রহরের আট রকম লীলার কথা বলা হয়েছে, যার মধ্যে একটি হল দিব্যলীলা এবং এই ঝুলনযাত্রা উৎসব। বাসুদেব শ্রীকৃষ্ণ তাঁর সখী রাধারানী সহ অন্য অষ্টসখীর সাথে একত্রে বৃন্দাবনের কুঞ্জবনে নৃত্য-গীত সহযোগে লীলায় মত্ত হয়েছিলেন এবং রাধার সঙ্গে দোলনায় ঝুলেছিলেন। রাধা কৃষ্ণের এই অষ্টসখীর নামগুলো পুরাণের বর্ণনায় পাওয়া যায় – চিত্রা, চম্পকলতা, বিশাখা, ইন্দুরেখা, তুঙ্গবিদ্যা, ললিতা, সুদেবী এবং রঙ্গদেবী। এই বিশেষ দিনে এক কদম গাছের শাখায় দোলনা বেঁধে নিয়ে সকল সখীরা মিলে রাধা-কৃষ্ণের ঝুলন যাত্রা পালন করেছিলেন, এই রকমই বিশ্বাস করে থাকেন বৈষ্ণবেরা।

কৃষ্ণের ঝুলন যাত্রা
Pin it

শাস্ত্র মতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বারোটি পৃথক যাত্রা আছে,  উল্লেখিত যাত্রাগুলির মধ্যে স্নানযাত্রা, রথযাত্রা, দোলযাত্রা, রাসযাত্রা ইত্যাদি ছাড়াও এই ঝুলনযাত্রার কথা বলা আছে, যা অতি বিখ্যাত এবং এই সকল যাত্রাগুলোকে যাদের একত্রে ‘দ্বাদশযাত্রা’ বলা হয়। তাছাড়াও ঝুলনলীলাকে অনেকে হিন্দোলনলীলাও বলে থাকেন। শাস্ত্র অনুসারে রাধা হলেন কৃষ্ণেরই একটি অংশ, বিশ্বাস অনুযায়ী কৃষ্ণের শরীরের বামভাগ থেকে রাধার জন্ম হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে তিনি ছিলেন কৃষ্ণের পরম ভক্তস্বরূপিণী, কৃষ্ণপ্রেমে তিনি মাতোয়ারা হয়ে গিয়েছিলেন, তাই তিনিই কৃষ্ণের পরম আরাধ্যা দেবী হিসেবে পরিচিত। তাই ভক্তরা মনে করেন যে কৃষ্ণকে পেতে হলে প্রথমে রাধার উপাসনা করা অবশ্যকর্তব্য। রাধার কৃপা যদি থাকে তবে অতি সহজেই কৃষ্ণের সান্নিধ্য লাভ করা যায়।

আবার পুরাণ অনুসারে রাধার শক্তিতেই কৃষ্ণ বলবান, তাই তারা এক ও অভিন্ন বলে ভক্তরা মনে করেন, বৈষ্ণব তত্ত্ব অনুযায়ী একে বলা হয় অদ্বৈত ভেদাভেদ। রাধা ও কৃষ্ণের প্রেমময় মূর্তিকে সুসজ্জিত দোলনায় স্থাপন করার পর মূর্তিযুগলকে ঝোলানোর মাধ্যমেই এই ঝুলন যাত্রার সার্থকতা, দীর্ঘ পাঁচদিন ধরে মন্দিরের অভ্যন্তরে ও চত্বরের দিক নানারকম সাজে সাজানো হয়, প্রেমভক্তি, ভক্তি নামগান, তথা বৃন্দাবনে তাঁদের বিশুদ্ধ প্রেমের বিভিন্ন পর্ব এবং অন্যান্য সমস্ত কিছু ঝুলন-যাত্রার মাধ্যমে ভক্তগণের সামনে পরিবেশন করা হয়।

শ্রীকৃষ্ণের বারোটি পৃথক যাত্রা
Pin it

ঝুলন-যাত্রা সম্পর্কে কোনও রকম ঐতিহাসিক ভিত্তি পাওয়া যায় নি, তবে অনেকে মনে করে থাকেন যে দ্বাপর যুগে পৃথিবীতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এবং রাধার উপস্থিতি ছিল। হিন্দু শাস্ত্র অনুসারে যুগ বিভাজন করার রীতিতে দ্বাপর যুগ হল তৃতীয় যুগ, ফলে ঝুলন যাত্রার সূত্রপাতও সেই সময়েই ঘটেছিল বলে ধরে নেওয়া যায়।

বাংলাদেশের বিজয় দিবস সম্পর্কিত শুভেচ্ছাবার্তা এবং সুন্দর কিছু লাইন, Victory day of Bangladesh Quotes, Greetings, Wishes, Lines in Bengali

ঝুলনের দিন কি কি করা হয়, What is done on Jhulan Yatra

 রাধাকৃষ্ণকে হলুদ রঙের বস্ত্র দিয়ে সাজানো হয়
Pin it

এই বিশেষ দিনটিতে রাধাকৃষ্ণকে হলুদ রঙের বস্ত্র দিয়ে সাজানো হয়। ভক্তদের মধ্যে অনেকেই এই দিন উদযাপন করার জন্য শ্রীকৃষ্ণের মন্দিরে ময়ূরের পালক এবং মুকুট দান করে থাকেন। এই দিনে পুজো করার সময় ঘিয়ের প্রদীপ অবশ্যই জ্বালতে হয়। তারপর পুজো শেষ করে গীতা পাঠ এবং গায়ত্রীমন্ত্র জপ করতে হবে । তাছাড়া রাধাকৃষ্ণের চরণে তুলসীপাতা অর্পণ করা হয়। এই শুভ দিনে দরিদ্রদের উদ্দেশ্যে দান করা উচিত। ভক্তরা বাড়িতে নারায়ণ সেবা দেওয়ার ব্যবস্থা করে থাকেন। সকলে পুজোর সময় হলুদ বস্ত্র পরিধান করেন। বিশ্বাস অনুযায়ী পুজোর স্থানে এক টুকরো চন্দন রাখলে বাড়িতে শুভ শক্তি প্রবেশ করবে।

ঝুলনের দিন কি কি করা হয়
Pin it

বিয়ের শুভেচ্ছা স্ট্যাটাস, Wishes on married life in Bengali language

ঝুলন যাত্রার শুভেচ্ছা বার্তা, Jhulan Yatra greetings and wishes

‘ঝুলন’ শব্দটি মূলত ‘দোলনা’ শব্দটি থেকে এসেছে। তাই রাধা-কৃষ্ণের ভক্তেবৃন্দ এই বিশেষ দিনটিতে দোলনা বিভিন্ন ফুল ও লতাপাতা দিয়ে সাজিয়ে যুগলবিগ্রহ স্থাপন করে মহা সাড়ম্বরে পুজো করেন। শুধু রাধা কৃষ্ণ মন্দির বা নির্দিষ্ট কিছু বনেদিবাড়িতেই নয়, বরং বহু হিন্দু বাড়িতে এই ঝুলন উৎসবের আয়োজন করা হয়। ভক্তরা দোলনার ওপর দেব-দেবীকে বসিয়ে রেখে, চারপাশ নানা ধরনের মাটির পুতুল, ফুল, গাছপালা দিয়ে সুন্দর করে সাজানো হয় ঝুলনের উৎসবে।

ঝুলন যাত্রার শুভেচ্ছা বার্তা
Pin it

ঝুলন যাত্রা মূলত রাধা কৃষ্ণের প্রেমলীলার উপর ভিত্তি করেই উদযাপন করা হয়, কিভাবে কৃষ্ণ প্রেয়সী রাধা ও অন্যান্য গোপীদের সঙ্গে মিলে কুঞ্জবনে রাসলীলা করতেন, পূর্ণিমার রাতে জ্যোৎস্নার আলোয় ফুল দিয়ে সজ্জিত দোলনায় দোল খেয়ে নিয়ে বাঁশির সুরে সকলকে মাতোয়ারা করে দিতেন, এই নিয়েই নানা রকমের দৃশ্য বিভিন্ন স্থানে নাট্যরূপে ভক্তদের সামনে ঝুলনযাত্রার দিন তুলে ধরা হয়। তাছাড়াও এই বিশেষ দিন উপলক্ষে অনেকেই নিজের প্রিয়জনদের শুভেচ্ছা বার্তা পাঠিয়ে থাকেন, তাদের সুবিধার্থে জন্য কিছু শুভেচ্ছা বার্তা নিম্নে উল্লেখ করা হল-

  • ● জীবনে কখনও ব্যর্থ হয়ে পড়লে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের স্মরণাপন্ন হও, সফলতার পথ তিনিই বলে দেবেন।
    সকলকে জানাই ঝুলন যাত্রার শুভেচ্ছা।
  • ● বৃন্দে চললো সঙ্গে লয়ে কানাই
    সেথায় বসে আছে …
    আমার বিনোদিনী রাই।
    সকল ভক্তবৃন্দদের জানাই শ্রীকৃষ্ণের ঝুলন যাত্রার শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন
  • ● কলঙ্ক ও কাজল হয়তো শুধু নারীকেই সাজে । রাধাকৃষ্ণের নামে বৃন্দাবনে যেন আজও প্রেমের বাঁশি বাজে।।
    আপনাদের সকলকে রাধাকৃষ্ণের ঝুলন যাত্রার শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
  • ● শ্রীকৃষ্ণের প্রেম তো সকলেই দেখেছিল ৷ তবে শেষ পর্যন্ত প্রেমের স্বীকৃতিটা রুক্মিণী-ই পেয়েছিল,  কিন্তু কলঙ্কিনী কেন যে শুধু রাধা-ই হয়েছিল!
  • ● প্রাণের দেবতা তুমি এসো হে প্রিয়, দুয়ার দিয়েছি খুলে, নিজের গোয়ালের মাখন দেবো, ময়ূরপঙ্খী বাঁধবো তোমার চুলে ৷
  • ● যে রাধার প্রেমের আখ্যানে জগৎ মুগ্ধ হয়েছিল, সেই রাধাই কলঙ্কিনী নামে নিরুপায় হয়ে কেঁদেছিল। 
  • ● গোপীদের ডাক জুড়েও শুধুই কৃষ্ণ নাম, মন ভোলায় দূরের মোহন বাঁশি, তবে কোথায় আছেন ঘনশাম!
  • ● কৃষ্ণ জগৎ সংসারকে মোহিত করে রাখেন, কিন্তু রাধিকা প্রেমের মাধ্যমে কৃষ্ণকে মোহিত করেন। এজন্যই রাধা কৃষ্ণের পরম ভক্তস্বরূপিনী দেবী।
  • ● কুসুম দোলায় দোলে শ্যাম রাই
    তমাল শাখে দোলা ঝোলে ঝুলনে,
    শ্যামেরই পাশে শ্রীমতী হাসে
    যুগল শশী যেন বৃন্দাবনে
    ~~ ঝুলনযাত্রার পুণ্য লগ্নে   সকল ভক্তবৃন্দ ও শুভানুধ্যায়ীকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা, ভালোবাসা ও অভিনন্দন ।
  • ● দোলে কৃষ্ণ মেঘের ওই সৌদামিনী
    হিন্দোলে দেয় দোল ব্রজগোপীনী
    ~ রাধাকৃষ্ণের অনির্বচনীয় প্রেমময় লীলা বয়ে আনুক আপনার জীবনে ও ভালোবাসার আবেশ ; শুভ হোক ঝুলন যাত্রা 
  • ● দোলে দোদুল দোলে ঝুলনা
    দোলে কৃষ্ণ দোলে ঝুলনা
    দোলে রাই দোলে ঝুলনা,
    দোলে দোদুল নাই তুলনা
    ~প্রেমের দোলা লাগুক আপনার জীবনেও ; শ্রীকৃষ্ণের আশীর্বাদ  থাকুক আপনার ও আপনার পরিবারের সকলের উপর !! শুভ ঝুলন যাত্রা
 প্রাণের দেবতা তুমি এসো হে প্রিয়
Pin it

ঐতিহ্যবাহী  ঝুলনযাত্রা উৎসব সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য এবং শুভেচ্ছাবার্তা পরিবেশন করা হল আজকেরই প্রতিবেদনটিতে। আমাদের আজকের এই পোস্টটি যদি আপনাদের মনোগ্রাহী হয়ে থাকে তবে তা অবশ্যই নিজের বন্ধুমহল, পরিজন এবং সোশ্যাল প্রোফাইলে শেয়ার করে নিতে ভুলবেন না   


Recent Posts