ওপেনহেইমার এর জীবনী ও বিখ্যাত উক্তি সমূহ, Best Biography and quotes of Robert J Oppenheimer in Bengali


জুলিয়াস রবার্ট ওপেনহেইমার আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের তাত্ত্বিক পদার্থবিদ ও বিজ্ঞান সম্পর্কীয় প্রশাসক ছিলেন। তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পারমাণবিক বোমার বিকাশের এক অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব ছিলেন । ইদানিং সময়কার অন্যতম চরচিত নাম হলেন জুলিয়াস রবার্ট ওপেনহেইমার। এই প্রতিবেদনে ওপেনহাইমার এর জীবন সম্পর্কিত বিস্ময়কর কিছু তথ্য ও তার বিখ্যাত কিছু উক্তি তুলে ধরা হবে।

ওপেনহেইমার এর জীবনী ও বিখ্যাত উক্তি সমূহ

এক নজরে ওপেনহাইমার, Oppenheimer at a glance

বিশিষ্ট এই ব্যক্তিত্ব যখন লস এলামোজ ন্যাশনাল ল্যাবরেটরিতে পরিচালক হিসেবে কর্মরত অবস্থায় ছিলেন অর্থাৎ ১৯৪৩ থেকে ১৯৪৫ সালের মধ্যে তিনি  আণবিক বোমার উন্নয়নার্থে কাজ করেছিলেন। এনরিকো ফার্মি র  পাশাপাশিতাকে  ওপেনহীমার কে ও আণবিক বোমার জনকরূপে আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে। এছাড়াও তিনি বার্কলে এলাকায় অবস্থিত ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ছিলেন। জুলিয়াস রবার্ট ওপেনহেইমার  ১৯৪৭ থেকে ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত প্রিন্সটনের ইনস্টিটিউট অব অ্যাডভান্সড স্টাডির পরিচালকের দায়িত্ব ও সুনিপুণভাবে পালন করেন। তবে পরবর্তীকালে নিরাপত্তা বিষয়ক শুনানীতে ওপেনহেইমার এর বিরুদ্ধে মার্কিন সরকারের অভিযোগ উত্থাপিত হলে যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের পরামর্শকের দায়িত্ব থেকে তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়।
সরকারের এ  হেন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে এবং রাজনৈতিক এবং নৈতিকতাকে বিজ্ঞানের সাথে সম্পৃক্ত করার বিরুদ্ধে  সরকারকে নিন্দাজ্ঞাপন করা হয়।

https://bongquotes.com/best-biography-of-homi-j-bhabha-in-bengali/

এক নজরে ওপেনহাইমার

জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবন, Birth and early life

রবার্ট ওপেনহাইমার ২২ এপ্রিল, ১৯০৪ সালে নিউ ইয়র্ক সিটিতে জন্মগ্রহণ করেন। জার্মান অভিবাসী পিতা জুলিয়াস ওপেনহেইমার ১৮৮৮ সালে নিউইয়র্ক সিটিতে পদার্পণ করেন এবং পর্যায়ক্রমে টেক্সটাইল শিল্পে আমদানী রফতানীর ব্যবসা শুরু করেন যেখানে তিনি   সাফল্যের মুখ দেখেছিলেন। ওপেন হাইমার মা এলা ফ্রাইডম্যান ছিলেন একজন চিত্রকর। । রবার্ট হেইমারের অনুজ ভ্রাতা  ফ্রাঙ্ক ওপেনহেইমার ও পরবর্তীকালে পদার্থবিদ হিসেবে খ্যাতি পেয়েছিলেন।

শিক্ষা জীবন, Education

ওপেনহাইমার নিউ ইয়র্ক সিটির এথিক্যাল কালচার সোসাইটি স্কুলে পড়াশোনা করেন এবং পরে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে যান, যেখানে তিনি বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষ করে পদার্থবিদ্যা এবং রসায়নে দক্ষতা অর্জন করেন।
রবার্ট ওপেনহীমার হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক-পূর্ব শ্রেণীতে যখন অধ্যয়ন  করছিলেন তখন তিনি ল্যাটিন, গ্রীক, পদার্থবিদ্যা, রসায়ন প্রভৃতি বিষয়ে পারদর্শী হয়ে উঠেন। ১৯২৫ স্নাতক ডিগ্রি লাভ করার পর গবেষণা কর্মের জন্য ইংল্যান্ডের মাটিতে পা রাখেনা। 

পরবর্তীকালে ওপেন হাইমার ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাভেন্ডিস ল্যাবরেটরিতে লর্ড আর্নেস্ট রাদারফোর্ডের তত্ত্বাবধানে থেকে আণবিক গঠন বিষয়ে গবেষণা চালান এবং সৌভাগ্যক্রমে তিনি পারমাণবিক গবেষণার উন্নয়নে ব্রিটিশ বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায়ের সাথে মতবিনিময়ের সুযোগ পান। তিনি ম্যাক্স বর্নের ছত্রচ্ছায়াও তিনি অধ্যাপনা করেন। 

১৯২৭ সালে রবার্ট ওপেন হাইমার ডক্টরেট ডিগ্রী অর্জন করেন। পরবর্তী পর্যায়ে প্রতিথযশা এই ব্যক্তিত্ব ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে  অধ্যাপনা করেন। ১৯৩০ এর দশক জুড়ে, তিনি তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানে বিশেষ করে কোয়ান্টাম মেকানিক্স এবং কোয়ান্টাম ফিল্ড তত্ত্বের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছিলেন। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পদার্থবিদদের একটি সম্প্রদায়কে একত্রিত করতে এবং সমর্থন করার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন

https://bongquotes.com/best-biography-of-vikram-sarabhai-in-bengali/

শিক্ষা জীবন

ওপেন হাইমার এর মাতৃবিয়োগ, Oppenheimer’s mother’ death

১৯৩১ সালে রবার্ট  ওপেন হাইমারের মা মাতা মারা যান যার ফলে তিনি বাবার কাছাকাছি ছিলেন ও নিয়মিতভাবে ক্যালিফোর্নিয়া ভ্রমণ করতেন।১৯৩৭ সালে পিতৃ বিয়োগ হলে  তিনি ও তার ভাই ফ্রাঙ্ক $৩৯২,৬০২ মার্কিন ডলার উত্তরাধিকারীসূত্রে প্রাপ্ত হন। ওপেন হাইমার নিজের সমূদয় অংশ ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক শিক্ষার্থীদের বৃত্তির জন্য একটি দলিল সম্পাদন করেন।

রাজনৈতিক জীবন, political life

১৯২০-এর দশকে ওপেনহেইমার  বৈশ্বিক বিষয়াবলী থেকে দূরে সরে যান। তিনি ১৯৩৬ সালের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পূর্ব পর্যন্ত কোন ভোটাধিকার প্রয়োগ করেননি তবে ১৯৩৪ সালের পরবর্তী কালে তিনি রাজনীতি এবং আন্তর্জাতিক বিষয়াবলীতে দৃষ্টি  নিক্ষেপ করেন। তিনি  নিজ বেতনের তিন শতাংশ পরিমাণ সমমানের বার্ষিক $১০০ ডলার অর্থ নাজি জার্মানি থেকে চলে আসা জার্মান পদার্থবিদদের  সহায়তার জন্যে প্রদান করেছিলেন। পরবর্তীকালে অর্থাৎ ১৯৩৪ সালে ওয়েস্ট কোস্ট ওয়াটারফ্রন্ট স্ট্রাইকে তিনি  ছাত্র মিছিলে অংশ নেন।

তবে জার্মানিতে অ্যাডলফ হিটলারের উত্থানের পরপরই তিনি রাজনীতিতে আগ্রহান্বিত হন। ১৯৩৬ সালে স্পেনের গৃহযুদ্ধের সময়  তিনি সমাজতান্ত্রিক ছাত্রদের দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবান্বিত হয়েছিলেন। ১৯৩৭ সালে  তিনি ফ্যাসিবাদ বিরোধী সংগঠনে যুক্ত হন। জোসেফ স্টালিনের নিয়ন্ত্রণাধীন রুশ বৈজ্ঞানিকগণ তার সদস্যপদ কেড়ে নিলে তিনি আর কখনো সংগঠনে যুক্ত হননি।

https://bongquotes.com/best-quotes-on-belittling-people-in-bengali/

রাজনৈতিক জীবন,

ম্যানহাটন প্রকল্প, Manhattan Project

১৯৩৯ সালে নাজি জার্মানি কর্তৃক পোল্যান্ড দখল করা হলে বিশ্বখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন এবং লিও জিলার্ড মার্কিন সরকারকে  এই বলে সতর্কবার্তা পাঠান যে যদি নাজিরা পারমাণবিক বোমা তৈরী করে তাহলে তা সমগ্র মানবজাতির জন্য ব্যাপক  ধ্বংসের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। এ হেন পরিপ্রেক্ষিতে ওপেনহেইমার প্রকৃতিপ্রদত্ত ইউরেনিয়াম থেকে ইউরেনিয়াম-২৩৫ পৃথকীকরণের প্রক্রিয়া নিয়ে কাজ করতে শুরু করেন।১৯৪২ সালের আগস্ট মাসে মার্কিন সামরিক বাহিনী ব্রিটিশ এবং মার্কিন পদার্থবিদদের একত্রিত করে পারমাণবিক শক্তির সন্ধানে সংস্থা গঠনের প্রচেষ্টা চালায় যেটি কিনা পরবর্তীকালে  বিখ্যাত ম্যানহাটন প্রকল্প নামে পরিচিতি পেয়েছিল। এর কর্মপন্থা নির্ধারণের গুরুদায়িত্ব দেয়া হয়। ওপেনহেইমারকে। তাকে এই প্রকল্প গঠন এবং ল্যাবরেটরির প্রশাসকরূপে মনোনীত করা হয়েছিল।

ওপেনহেইমারের নেতৃত্বে, বিজ্ঞানী এবং প্রকৌশলীরা সফলভাবে প্রথম পারমাণবিক বোমার নকশা ও নির্মাণ করেছিলেন। নিউ মেক্সিকো মরুভূমিতে সংঘটিত ট্রিনিটি পরীক্ষায় ১৯৪৫ সালের ১৬ জুলাই বোমাটি পরীক্ষা করা হয়েছিল। জার্মানির আত্মসমর্পণের  বিজ্ঞানীদের যৌথ প্রচেষ্টায় নিউ মেক্সিকো অঙ্গরাজ্যের আমোগোর্ডো এলাকায় প্রথম আণবিক বোমার পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। একই বছরের অক্টোবর মাসে ওপেনহেইমার তার পদ থেকে ইস্তফা দেন।

ম্যানহাটন প্রকল্প

পারমাণবিক বোমা ও ওপেন হাইমার, Atomic bomb and Oppenheimer

পারমাণবিক বোমার বিকাশ ওপেনহাইমারের উপর গভীর প্রভাব ফেলেছিল। বোমার শক্তি এবং এর ধ্বংসাত্মক সম্ভাবনা প্রত্যক্ষ করার পর, তিনি বিখ্যাতভাবে ভগবদ্গীতা উদ্ধৃত করে বলেছেন, “এখন আমি মৃত্যু, বিশ্বের ধ্বংসকারী।” ১৯৪৭ সালে তিনি ইনস্টিটিউট ফর অ্যাডভান্সড স্টাডি’র প্রধান হন। ১৯৪৭ থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত পারমাণবিক শক্তি কমিশনের সাধারণ পরামর্শক কমিটির সভাপতির  ও দায়িত্ব পালন করেন।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর, ওপেনহাইমার আমেরিকান বিজ্ঞানের একজন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব হয়ে ওঠেন। তিনি নিউ জার্সির প্রিন্সটনে ইনস্টিটিউট ফর অ্যাডভান্সড স্টাডির পরিচালক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি পারমাণবিক অস্ত্রের আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রণের পক্ষেও একজন উকিল ছিলেন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এনজি কমিশন গঠনে ভূমিকা পালন করেছিলেন।

https://bongquotes.com/best-quotes-on-dont-give-up-in-bengali/

পারমাণবিক বোমা ও ওপেন হাইমার

নিরাপত্তা শুনানি, Security related issues

দুর্ভাগ্যবশত, স্নায়ুযুদ্ধের শুরুর বছরগুলিতে, ওপেনহেইমারের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং সমিতিগুলি নিরাপত্তা ছাড়পত্রের সমস্যাগুলির দিকে পরিচালিত করেছিল এবং তিনি একটি নিরাপত্তা ঝুঁকি হওয়ার অভিযোগের সম্মুখীন হন। ২১ ডিসেম্বর, ১৯৫৩ সালে প্রকাশিত মার্কিন সামরিক নিরাপত্তাবিষয়ক প্রতিবেদনে তার বিরুদ্ধে অগ্রহণযোগ্যতা এবং অতীতে কমিউনিস্টদের সাথে সম্পৃক্ততার অভিযোগ উঠে।

এছাড়াও, সোভিয়েত গুপ্তরচদের সাথে সম্পর্ক বজায় ও হাইড্রোজেন বোমা নির্মাণে বাঁধার কথা তুলে ধরা হয়। নিরাপত্তা শুনানীতে স্পষ্টভাবে অভিযুক্ত করা যায়নি। কিন্তু, সামরিক নিরাপত্তা বিষয়ে তার অংশগ্রহণে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা হয়। এরফলে তার সাথে পারমাণবিক শক্তি কমিশনের পরামর্শক পদের চুক্তিনামা বাতিল করা হয়। ম্যানহাটন প্রকল্পে কর্মরত ৪৯৩ জন বিজ্ঞানী একযোগে স্বাক্ষর সহকারে তাদের প্রতিবাদ লিপি প্রেরণ করে।
এটি শেষ পর্যন্ত 1954 সালে তার নিরাপত্তা ছাড়পত্র প্রত্যাহারের দিকে পরিচালিত করে। যদিও তিনি বৈজ্ঞানিক কাজে জড়িত ছিলেন, নিরাপত্তা ছাড়পত্র হারানো তার কর্মজীবনের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য ধাক্কা ছিল।
আমেরিকার বিজ্ঞানীদের সংগঠন দ্রুততার সাথে তার সাহায্যে এগিয়ে আসে এবং এ বিচারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সমাবেশ ঘটায়। ফলে রবার্ট ওপেনহেইমার বিশ্বব্যাপী বিজ্ঞানীদের প্রতীকিতে পরিণত হন। জীবনের বাকী দিনগুলোয় তিনি বিজ্ঞান এবং সমাজের মধ্যকার সম্পর্ক নির্ণয়ের লক্ষ্যে কাজ করে যান।
২০ মে, ২০০৯ তারিখে উড্রো উইলসন ইনস্টিটিউটে একটি সেমিনারে কেজিবি’র সংগ্রহশালা থেকে ভাসিলিয়েভের নোটবইয়ের উপর ব্যাপক বিশ্লেষণ করা হয় এবং সেই তথ্য অনুসারে ব্যক্ত হয়  যে ওপেনহেইমার কখনো সোভিয়েত ইউনিয়নে তথ্য পাচারের সাথে জড়িত ছিলেন না। ওপেনহেইমার যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেননি বরং ম্যানহাটন প্রকল্প থেকে অনেক লোককে সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রতি সহানুভূতিপূর্ণ আচরণের জন্যে বের করে দিয়েছেন তিনি।

ওপেনহাইমারের ব্যক্তিগত জীবন, Personal life

১৯৪০ সালে ওপেনহেইমার ২৯ বছর বয়সী কিটি হেরিসনের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হোন। ওপেনহেইমার ছিলেন কিটির চতুর্থ স্বামী। কিটি ছিলেন কমিউনিস্ট পার্টির একজন সাবেক সদস্য। বিবাহের সাত মাস পর তাঁদের প্রথম সন্তান পিটারের জন্ম হয়।

https://bongquotes.com/best-biography-of-renouned-author-sanjib-chattopadhyay-in-bengali/

ওপেনহাইমারের ব্যক্তিগত জীবন

সম্মাননা, Recognition

পরবর্তী বছরগুলিতে, ওপেনহেইমারের খ্যাতি ধীরে ধীরে উন্নত হয় এবং তিনি তার বৈজ্ঞানিক অবদানের জন্য অনেক সম্মান ও পুরস্কার পান।  ১৯৬৩ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট লিন্ডন বি. জনসন ওপেনহেইমারকে আণবিক শক্তি কমিশনের প্রদেয় এনরিকো ফার্মি পুরস্কার প্রদান করেন। তবে ওপেন হাইমার কোন নির্দিষ্ট  একটি বিষয়ে দীর্ঘদিন সম্পৃক্ত থাকেননি যার ফলে তিনি নোবেল পুরস্কারের যোগ্যতা অর্জন করেননি। তার কৃষ্ণ গহ্বর সম্পর্কীয় তত্ত্বটিও জ্যোতির্বিদ্যায় ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছে। ৬৭০৮৫ ওপেনহেইমার নামীয় একটি তারাকে তার সম্মানে নামাঙ্কিত করা হয়।

ওপেন হাইমারের বৈজ্ঞানিক অবদান এক ঝলকে, Oppenheimer’s contribution in science at a glance

~জে রবার্ট ওপেনহেইমার পারমাণবিক বিজ্ঞানের উন্নয়নে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পারমাণবিক বোমা তৈরিতে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করেছিলেন। তার কিছু গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক অবদানের মধ্যে রয়েছে:

ম্যানহাটন প্রজেক্ট লিডারশিপ: প্রকল্পের প্রধান হিসেবে, ওপেনহাইমার প্রথম পারমাণবিক বোমার নকশা ও নির্মাণের জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী এবং অন্যান্য বিশেষজ্ঞদের একটি দলকে নেতৃত্ব দেন।

লস আলামোস ল্যাবরেটরি: ওপেনহেইমারের নির্দেশনায়, লস আলামোস ন্যাশনাল ল্যাবরেটরি নিউ মেক্সিকোতে ম্যানহাটন প্রকল্পের প্রাথমিক গবেষণা ও উন্নয়ন সাইট হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। লস আলামোস পারমাণবিক বোমার নকশা, সমাবেশ এবং পরীক্ষার কেন্দ্র হয়ে ওঠে।

ইমপ্লোশন পদ্ধতি: একটি পারমাণবিক বোমা তৈরির ক্ষেত্রে প্রধান চ্যালেঞ্জগুলির মধ্যে একটি ছিল একটি শৃঙ্খল বিক্রিয়াকে ট্রিগার করার জন্য বিচ্ছিন্ন পদার্থের (এই ক্ষেত্রে, সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম বা প্লুটোনিয়াম) একটি গুরুত্বপূর্ণ ভর অর্জন করা। ওপেনহাইমার এবং তার দল ইমপ্লোশন পদ্ধতি তৈরি করেছিল, যা পারমাণবিক বিস্ফোরণের জন্য প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ ভর তৈরি করতে প্রচলিত বিস্ফোরক ব্যবহার করে প্লুটোনিয়ামের একটি সাবক্রিটিকাল গোলককে সংকুচিত করে।

ট্রিনিটি টেস্ট: ওপেনহাইমার ট্রিনিটি পরীক্ষায় ১৬ জুলাই, ১৯৪৫-এ প্রথম পারমাণবিক বোমার সফল পরীক্ষা তত্ত্বাবধান করেন। পরীক্ষাটি নিউ মেক্সিকো মরুভূমিতে হয়েছিল এবং ইমপ্লোশন ডিজাইনের কার্যকারিতা এবং পারমাণবিক অস্ত্রের সম্ভাব্যতা নিশ্চিত করেছে।

হিরোশিমা এবং নাগাসাকি: ম্যানহাটন প্রকল্পের অংশ হিসাবে নির্মিত পারমাণবিক বোমাগুলি ১৯৪৫ সালের আগস্টে জাপানের হিরোশিমা এবং নাগাসাকিতে ফেলে দেওয়া হয়েছিল, যার ফলে জাপান আত্মসমর্পণ করে এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি ঘটায়। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং ইতিহাসের গতিপথের জন্য বোমা হামলার গভীর এবং দূরবর্তী পরিণতি ছিল।

পোস্টওয়ার অ্যাডভোকেসি: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে, ওপেনহেইমার পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার এবং পারমাণবিক অস্ত্রের আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রণের পক্ষে সমর্থন করেছিলেন। তিনি পারমাণবিক বিস্তার রোধ এবং পারমাণবিক শক্তির ক্ষেত্রে দেশগুলির মধ্যে সহযোগিতার প্রচারের গুরুত্বে বিশ্বাস করতেন।

https://bongquotes.com/best-quotes-on-expat-life-or-expatriate-in-bengali/

ওপেন হাইমার এর জীবানাবাসন, Oppenheimer’s death

১৯৬৬ সালে রবার্ট ওপেনহাইমার ইনস্টিটিউট ফর স্টাডি থেকে অবসর নেন। এর পরের বছরই গলার ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দেহাবসান ঘটে এই প্রথিতযশা বৈজ্ঞানিকের।

ওপেনহাইমারের বিখ্যাত উক্তি সমূহ, Famous quotes of Oppenheimer in Bengali

  • কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে অর্জুনকে তাঁর কর্তব্য সম্পর্কে ওয়াকিবহাল করান সারথি কৃষ্ণ। অর্জুনকে বিশ্বরূপ দর্শন করান তিনি। বোঝান, আমি সৃষ্টি ও ধ্বংস। এর পর কর্তব্য পালনে আর পিছে হটেননি অর্জুন।’
  • আমি মৃত্যু হয়ে এসেছি
  • এখন আমি মৃত্যুর কারণ হতে পারি, বিশ্বকে ধ্বংস করে দিতে পারি।
  • আশাবাদী মনে করেন যে এটি সম্ভাব্য সমস্ত বিশ্বের সেরা। হতাশাবাদী ভয় করে যে এটি সত্য
  • দুর্নিবার আবিষ্কারের নেশা যখন বিশ্বকে পেয়ে বসে অগ্র-পশ্চাৎ বিবেচনা করার সময় তখন থাকে না। একজন বিজ্ঞানীর সাধ্য কী যে সে তা রুখে!
  • অবশ্যই যুদ্ধ কর এবং খুন কর।”
  • যুদ্ধে, বনে, পাহাড়ের ঘাটে, 
    অন্ধকার মহাসমুদ্রে, বর্শা আর তীর-ধনুকের মাঝে, 
    নিদ্রায়, বিভ্রান্তিতে, লজ্জার গভীরে, 
    সৎকর্মগুলো মানুষ তাকে রক্ষা করার আগে করেছে”( “In battle, in the forest, at the precipice in the mountains,
    On the dark great sea, in the midst of javelins and arrows,
    In sleep, in confusion, in the depths of shame,
    The good deeds a man has done before defend him ”)
  • যে  মানুষ যার ভুল সংশোধন করতে দশ বছর সময় নেয় তিনি প্রকৃত একজন মানুষ
  • আমার শৈশব আমাকে এই সত্যের জন্য প্রস্তুত করেনি যে পৃথিবী নিষ্ঠুর এবং তিক্ত জিনিসে পূর্ণ।
  • অনুসন্ধানের স্বাধীনতায় কোনো বাধা থাকতে হবে না। বিজ্ঞানে গোঁড়ামির কোনো স্থান নেই। বিজ্ঞানী স্বাধীন, এবং কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে, কোন দাবি সন্দেহ করতে, কোন প্রমাণ খুঁজতে, কোন ত্রুটি সংশোধন করতে স্বাধীন হতে হবে।
  • এই বিশ্বের মানুষকে একত্রিত হতে হবে নতুবা তারা ধ্বংস হয়ে যাবে।
  • রাস্তায় এমন কিছু শিশু আছে যারা আমার পদার্থবিদ্যার শীর্ষস্থানীয় কিছু সমস্যার সমাধান করতে পারে, কারণ তাদের সংবেদনশীল উপলব্ধির মোড রয়েছে যা আমি অনেক আগেই হারিয়ে ফেলেছি
  • এটি একটি গভীর এবং অতি বাস্তব সত্য যে বিজ্ঞানের গভীর জিনিসগুলি পাওয়া যায় না এই কারণে যে সেগুলি দরকারী ছিলো : সেগুলি পাওয়া যায় কারণ সেগুলি খুঁজে পাওয়া সম্ভব ছিল।
  • বিজ্ঞান সব কিছু নয়, কিন্তু বিজ্ঞান অনেক সুন্দর।
  • নতুন সত্যের অন্বেষণের জন্য আলাদা প্রেক্ষাপটে বিকশিত দুটি কৌশল, দুই ধরণের ধারণাকে একে অপরের সংস্পর্শে আনার ফলপ্রসূতার উদাহরণে বিজ্ঞানের ইতিহাস সমৃদ্ধ।
  • পরমাণু বোমা যদি যুদ্ধরত বিশ্বের অস্ত্রাগারে বা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত দেশগুলির অস্ত্রাগারে নতুন অস্ত্র হিসাবে যুক্ত করা হয়, তবে এমন সময় আসবে যখন মানবজাতি লস অ্যালামোস এবং হিরোশিমার নামকে অভিশাপ দেবে।
  • আমার বন্ধুদের চেয়ে পদার্থবিদ্যা বেশি দরকার
  • বিজ্ঞানের মানুষ এবং কর্মের মানুষ উভয়ই সর্বদা রহস্যের প্রান্তে থাকে, এটিকে ঘিরে থাকে
  • বিজ্ঞানীরা অপরাধী নন। আমাদের কাজ মানবজাতির বসবাসের অবস্থার পরিবর্তন করেছে, কিন্তু এই পরিবর্তনগুলির সদ্ব্যবহার করতে সরকারের সমস্যা হয় , বিজ্ঞানীদের নয়।
  • পারমাণবিক বোমা ভবিষ্যতের যুদ্ধের সম্ভাবনাকে অসহনীয় করে তুলেছিল।
ওপেনহাইমারের বিখ্যাত উক্তি সমূহ

উপসংহার, Conclusion

বৈজ্ঞানিক হিসেবে ওপেনহেইমার তার ছাত্র এবং সহকর্মীদের কাছে প্রথিতযশা গবেষক হিসেবে স্মরণীয় হয়ে রয়েছেন। শিক্ষকতা পেশায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তিনি আধুনিক তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যার প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে রয়েছেন। তিনি একজন উজ্জ্বল পদার্থবিদ এবং একজন জটিল ব্যক্তিত্ব হিসেবে স্মরণীয় হয়ে আছেন যিনি পারমাণবিক বোমা নিয়ে তার কাজের মাধ্যমে ইতিহাসের গতিপথ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। 

Recent Posts