জীবন গঠন এবং চরিত্র সেরা রচনা, Best essay on Development of life and character in Bengali 


আমাদের জীবন প্রবহমান নদীর মত হয়, সময়ের সাথে ক্রমশ এগিয়ে চলে, কোনো কিছুর জন্যই থেমে যায় না। জন্মগ্রহণ করার পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত দীর্ঘ পথ ধরে আমরা ক্রমাগত বয়ে চলেছি। পৃথিবীর সকলেই চায় সুখী জীবন। আমাদের জীবনে অর্থ, মান-সম্মান, প্রতিপত্তি সহ সমানভাবে জরুরী বিষয় হল সুখ।

জীবনের এগিয়ে হওয়ার পথে আসা সকল বাধা বিপত্তি কাটিয়ে যাওয়ার মধ্যেই লুকিয়ে থাকে সুখ সমৃদ্ধির উৎস, আর সুখের সন্ধান আমাদের নিজেকেই করতে হয়। তাই জীবন গঠনের ক্ষেত্রে নিজস্ব কার্যকলাপের ভূমিকা সর্বোপরি। আমাদের চরিত্রই আমাদের কার্যকলাপের ধরণ নির্ধারিত করে এবং এই কার্যকলাপ আমাদের জীবনে বয়ে চলার পথ প্রদর্শন করে।

জীবন গঠন এবং চরিত্র সেরা রচনা

জীবন ও চরিত্র এর মধ্যে সম্পর্ক, Relation between life and character

মানব জীবনের একমাত্র লক্ষ্য তথা উদ্দেশ্য হওয়া উচিত চরিত্রের সুঠাম গঠন। এজন্যই ছাত্রজীবন থেকে এর অনুশীলন শুরু করতে হয়। সঠিক চরিত্রের অধিকারী মানুষ সর্বদা সত্য ও ন্যায়ের পথ বেছে নেয়। বলাই বাহুল্য যে চরিত্র গঠন হোক কিংবা জীবন গঠন, দুটো পরস্পরের সাথে সম্পর্কযুক্ত এবং উভয়ের ক্ষেত্রেই বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষালাভের গুরুত্ব অপরিসীম। তবে আরো বিভিন্ন বিষয় রয়েছে যা জীবন তথা চরিত্র গঠনে সহায়ক, সেদিকেও সকলকে নজর দিতে হবে।

চরিত্র গঠনের পালা শিক্ষাজীবনেই শুরু হয়ে যায়। প্রাতিষ্ঠানিক এবং পারিবারিক শিক্ষা আমাদের চরিত্র গঠনের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু তবুও অনেক মানুষ বিপথে চলে যায়, কখনো অভাবের তাড়নায়, কখনও বা সঙ্গদোষে। কিন্তু নিজেকে একজন ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়ার মধ্যেই থাকে জীবনের স্বার্থকতা।

এটা অবশ্যই মনে রাখা উচিত যে একজন সুচরিত্রবান ব্যক্তি সকলের কাছে সম্মানীয়, আর এই সম্মান প্রদর্শন করতে গিয়ে অনেকেই আপনার বিপদের দিনে আপনাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন, যার পরিপ্রেক্ষিতে আপনি জীবনের বাধা বিপত্তি সহজে কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হন। 

জীবন ও চরিত্র এর মধ্যে সম্পর্ক

বাংলাদেশের যানজট সমস্যা, Traffic congestion problem of Bangladesh best article in Bengali

জীবনকে সুন্দরভাবে গড়ে তোলার উপায়, Ways to make life beautiful

জীবন গঠনের ক্ষেত্রে আমাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণ করা খুব জরুরী। বেশ কিছু বিষয় রয়েছে যেদিকে একটু নজর দিলেই আমরা নিজের জীবন সুন্দরভাবে কাটাতে পারি। সেগুলি হল :

জীবনকে সুন্দরভাবে গড়ে তোলার উপায়

জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে আনন্দময় করে তোলার চেষ্টা করতে হবে। পুরনো কোনো স্মৃতি যেন আমাদের আজ কে নষ্ট না করে দেয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। এইভাবেই আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারি।কোনো কিছু নিয়ে মনে আফসোস রেখে এগিয়ে চলা কষ্টকর, তাই আগে থেকেই নিজের সকল দায়িত্ব পালন করার দিকে সচেতন থাকা উচিত।

যেকোনো কাজ আনন্দের সঙ্গে করতে হবে। কোনো কাজ করার আগে এটা ভাবা উচিত না যে এই কাজ আপনার দ্বারা হবে না, বরং এমন ভাবে চিন্তা করুন যে একটা নতুন কিছু করার সুযোগ পেয়েছেন। উৎসাহের সাথে কাজ করলে অবশ্যই আনন্দ পাওয়া যায়।

পরিচিত হোক বা অপরিচিত, প্রতিটি মানুষের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করা উচিত। জীবনে কখন যে কোন মানুষটিকে আপনার প্রয়োজন পড়বে তা আগে থেকে বলা যায় না। তাই কখনই কারও সঙ্গে খারাপ আচরণ করা অথবা কাউকে খারাপ কথা বলা ঠিক নয়।

নিজের পরিবারের মানুষের সাথে সময় কাটানো উচিত। বর্তমানের ব্যস্ত জীবনে আমরা সবাই কিছু না কিছু নিয়ে ব্যস্ত থাকি।

নিজের পরিবারের মানুষের সাথে সময় কাটানো উচিত

সকলেই বিভিন্ন ভাবে, ভিন্ন ভিন্ন পথে সফলতার শীর্ষে ওঠার জন্য ছুটে যাচ্ছি। কিন্তু এই সব করতে গিয়ে আমরা নিজেদের পরিবারের লোকজনের সাথে সময় কাটাতে ভুলে যাই। তাদের মনের অবস্থা বোঝার কথা ভুলে গিয়ে নিজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে থেকে যাই।তাই জীবনকে সুন্দরভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে নিজের বাবা-মা এবং নিজের ছেলেমেয়ে সহ পরিবারের সকলের সাথে সময় কাটান। মাঝে মাঝে বন্ধুদের সাথেও আড্ডা দেওয়া উচিত। এতে কর্মজীবনের ক্লান্তি হ্রাস পায়।

অধ্যবসায়ের গুরুত্ব সেরা রচনা, Importance of perseverance best essay in Bengali

সময়ের কাজ সময়েই করে নেওয়া উচিত। তবে অনেক সময় এমনটা হয়ে ওঠেনা, তাও চেষ্টা করে যেতে হবে যেন আমরা সময়ের কাজ সময়ে করি, কারণ দীর্ঘসূত্রতা আমাদের অলস করে তোলে, আর এই অলসতাই আমাদেরকে করে তোলে কর্মহীন।

আমরা সকলেই জানি কর্মহীন জীবন কখনোই সুখের নয়, তাই সময়ের সদ্ব্যবহার করা উচিত।কোনো কিছু নিয়ে হতাশ হয়ে পড়বেন না। জীবনের কোন এক পর্যায়ে হয়তো আপনি সফল হয়েছেন, আবার কোনো একটি পর্যায়ে গিয়ে আপনি ব্যর্থও হতে পারেন।

জীবনে চড়াই উতরাই তো লেগেই থাকে। আবার অনেকসময় এমনও হয় যে আপনি যাই পদক্ষেপ নিচ্ছেন তাতেই ব্যর্থ হচ্ছেন, তবুও হতাশ হবেন না, বরং চেষ্টা চালিয়ে যান।এই ব্যর্থতা নিয়ে নিজের অন্তরে হতাশার সৃষ্টি করবেন না, হতাশা আপনার এগিয়ে যাওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।

দঢ় মানসিকতা নিয়ে কাজ করুন। আমরা নিজেরাই পারি নিজের জীবন গঠন করতে এবং জীবনকে দিনের পর দিন আরো সফল ও সুন্দর করতে। আমাদের জীবনের প্রতিটা পর্যায় হয়তো মসৃণ হবে না, কিন্তু তাই বলে ভয় পেলেও চলবে না, বরং এরজন্য চাই দৃঢ় মানসিকতা। তবেই সব কাজ ভালোভাবে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে করা যায়।

দঢ় মানসিকতা নিয়ে কাজ করুন

যেকোনো পরিস্থিতিতে ক্রোধের বশবর্তী না হওয়ার চেষ্টা করতে হবে। আপনি হয়তো কোনো মানুষের সাথে ভালোভাবে কথা বলছেন তবে কোনো সময় অন্য ব্যক্তির থেকে একই ব্যবহার আশা করবেন না।

এটা সবসময় সম্ভব হয় না। পৃথিবীতে ভালো, খারাপ দুই ধরণের মানুষ আছে, এজন্যই সবার ব্যবহার একরকম হয় না। তবে আপনার নিজের দিক থেকে এই চেষ্টা রাখতে হবে যে কেউ যদি আপনার সাথে খারাপ ভাবে বা কথার মাধ্যমে কোনো আঘাত দেয় তাহলে এ নিয়ে অযথা রাগ করবেন না।

আপনার সাথে কে ভালো বা কে খারাপ ব্যবহার করেছে তা নিয়ে ভাবতে যাবেন না। এছাড়া কারও খারাপ ব্যবহার নিয়ে মনে রাগ পুষে রাখবেন না, এতে আপনি অজান্তেই নিজের ক্ষতি করছেন। তাই জীবনটি সুন্দর করে গড়ে তুলতে গিয়ে মনে কখনো রাগ, হিংসা, অহংকারকে আশ্রয় না দেওয়াই ভালো।

মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষাদান, Best essay on Education through mother tongue in Bengali

নিজের মধ্যে একাগ্রতা এবং মনসংযম রাখতে হবে। প্রত্যেক মানুষেরই জীবনের কোনো লক্ষ্য থাকে। কেউ ডাক্তার হতে চায়, কেউবা ইঞ্জিনিয়ার, আবার কেউ অন্য কোনো সম্মানীয় পেশার সাথে যুক্ত হতে চায়। তবে নিজ অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌছাতে তথা জীবনে সফলতা লাভ করার জন্য চাই একাগ্রতা।কোনো কাজ করতে গিয়ে আমরা যত বেশি একাগ্র হই সেই কাজে তত তাড়াতাড়ি সফলতা আসে। আপনার মন যদি স্থির না থাকে তবে কোনো কাজই সুষ্ঠু ভাবে হয় না। 

মাঝে মাঝে ভ্রমণ করা ভালো। কর্মব্যস্ত জীবন থেকে মাঝে মধ্যে কিছুটা সময়ের জন্য হলেও বিরতি নিন।আপনার মানসিক অবসাদ, ক্লান্তি দূর করার জন্য এমন বিরতির দরকার হয়। এই ছুটিগুলিতে ঘরে বসে আরাম করার চেয়ে ভ্রমণে নিবেশ করা উচিত যা পরবর্তী সময়ে আবার কাজ শুরু করার ক্ষেত্রে তরতাজা মন নিয়ে সঠিকভাবে মনোনিবেশ করতে সাহায্য করবে।

মাঝে মাঝে ভ্রমণ করা ভালো

ভ্রমণ আমাদের মধ্যে মানসিক শান্তি প্রদান করে এবং নতুন উৎসাহ প্রদান করে। তাছাড়া ভ্রমণে গেলে আমরা বহু মানুষের সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পাই, ভিন্ন স্থানের ভিন্ন মানসিকতার সম্মুখীন হই যা আমাদের চরিত্র বিকাশের ক্ষেত্রেও সহায়তা করে।

বিভিন্ন সামাজিক কাজের সাথে নিজেকে যুক্ত রাখা উচিত। সামাজিক কাজের সাথে নিজেকে যুক্ত রাখলে একদিকে আপনার পরিচিতি বৃদ্ধি পায়, বহু সৎ মানুষদের সাথে পরিচয় ঘটে।

অন্যদিকে আপনার মধ্যে উদারমনষ্কতা বৃদ্ধি পাবে, যা সকলের জীবনে থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের মন যত সংকীর্ণ থাকবে মানসিক সৌন্দর্য ততই নষ্ট হয়। তাই জীবনকে সুন্দর ভাবে গড়ে তুলতে হলে মনকে সুন্দর করতে হবে। 

উপসংহার, Conclusion 

নিজেদের কৃতকর্মের দ্বারাই মানুষ সমাজের ভালবাসা, শ্রদ্ধা, সম্মান অর্জন করে। একজন মানুষ নিজের সঠিক চরিত্র গঠনের ভিত্তিতে নিজের জীবনে তথা পারিপার্শ্বিক সকল অন্ধকার কে মুছে দিতে সক্ষম। আবার আমাদের সমাজে এমনও মানুষ আছে যারা চারিত্রিক দিক থেকে খুব দুর্বল হয়।

সঠিক চরিত্র গঠনের ভিত্তিতে নিজের জীবনে তথা পারিপার্শ্বিক সকল অন্ধকার কে মুছে দিতে সক্ষম।

এদের চরিত্রের নির্দিষ্ট সম্মানজনক কোন বৈশিষ্ট্য থাকে না, তাছাড়া এরা শুরু থেকেই ন্যায় এর পথ কখনই অনুসরণ করে না, ফলে তাদের জীবনের প্রতিটা মুহূর্ত সমস্যায় পরিপূর্ণ থাকে। তাই নিজের উপর আস্থা রেখে সঠিক পথ বেছে নিয়ে নিজের জীবন গড়ে তুলতে হবে, তবেই নিজের তথা দেশের উন্নতি সম্ভব।

Recent Posts