অধ্যবসায়ের গুরুত্ব সেরা রচনা, Importance of perseverance best essay in Bengali


সকলের জীবনেই অধ্যবসায়ের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। ছোটো থেকে বড় হতে হতে আমরা বহু বিষয়ের ক্ষেত্রে আগ্রহী হয়ে থাকি, আবার সেগুলোর মধ্যে এমনও কিছু বিষয় থাকে যা নিয়ে আমাদের একাগ্রতা তথা দৃঢ় মনোভাব রাখতে হয়। বিশেষ করে ছাত্রছাত্রীদের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে কোনো বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করতে গিয়ে যদি তাদের মনে সেই বিষয়ে জানার অবিরাম চেষ্টা না থাকে, তবে হয়তো তা নিয়ে সঠিকভাবে জ্ঞান অর্জন করা সম্ভব হয় না। একটা কথা সকলের মনে রাখা উচিত যে অধ্যবসায় হল সফলতার চাবিকাঠি। কবিতার ভাষায় অধ্যবসায়ের গুরুত্ব প্রকাশ করতে গিয়ে বলতে হয় –

অধ্যবসায়ের গুরুত্ব সেরা রচনা

” শ্রম অনুপাতে হয় উন্নতি সাধন, যে চায় উন্নতি, করে রাত্রি জাগরণ।যে জন চায় মুক্তা, ডুবে সিন্ধুজলে, তবে তো রতন লাভ ভাগ্যে তার ফলে। যতন বিনা চাহে রতন যেই জন, অসম্ভব আশা তার বিফল জীবন। “

সফলতা অর্জনে অধ্যবসায়ের গুরুত্ব, Importance of perseverance in achieving success

জীবনের যেকোনো ক্ষেত্রে সফলতা অর্জনের ক্ষেত্রে অধ্যবসায় হল প্রথম এবং অনিবার্য শর্ত। কোনো ব্যক্তি যদি সফলতা অর্জনের ক্ষেত্রে একাগ্র না হয় তবে তার এগিয়ে হওয়ার পথে আসা সকল বাধা বিপত্তি সহজে পেরিয়ে যেতে পারে না। একটি উন্নত জীবন এবং টেকসই সমাজব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য  অধ্যবসায়ের কোনো বিকল্প নেই।

ব্যক্তি জীবন বা জাতীয় জীবনের কোনো ক্ষেত্রেই অধ্যবসায় ছাড়া সফলতা আসবে না। কোন ব্যক্তির সহজাত ক্ষমতা, নান রকম গুণাবলী এবং সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটানোর মধ্য দিয়ে ব্যক্তিকে এক পরিপূর্ণ জীবনের অধিকারী করে তোলার ক্ষেত্রে অধ্যবসায়ের গুরুত্ব অপরিসীম। তাছাড়া বিশ্বায়নের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দক্ষ হতে, দেশের যোগ্য এবং মানসম্পন্ন একজন নাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠার ক্ষেত্রেও অধ্যবসায় সহায়কের ভূমিকা পালন করে। 

সফলতা অর্জনে অধ্যবসায়ের গুরুত্ব

সবার শিক্ষা সর্বশিক্ষা অভিযান, Know about Education for all campaign in Bengali

অধ্যবসায়ের মাধ্যমে সফলতা অর্জন, Achieving success through persistence

কথায় আছে, কিছু করতে গিয়ে অকৃতকার্য হওয়ার মাধ্যমেই কৃতকার্য হওয়ার দ্বার উন্মুক্ত হয়, অর্থাৎ যে কোনো কাজ শুরু করলে তাতে সফলতা বা ব্যর্থতা দু’টিই পাওয়া যেতে পারে। নিজের জীবনে করা সকল কাজে বেশিরভাগ মানুষই প্রথমবারে সফল হয় না, তবে অনেকে আবার সফল হয়েও যায়।

অনেক সময় দেখা যায় যে কোনো কোনো কাজের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ব্যক্তি প্রথমবার, দ্বিতীয়, এমনকি তৃতীয় বারেও সফলতা লাভ করতে পারে নি, এবং একেই নিজের ব্যর্থতা মেনে নিয়ে হতাশ হয়ে পড়ে, কিন্তু এসব চিন্তা না করে আবার চেষ্টা করার চিন্তা করাই সঠিক, এভাবে থেমে থাকলে চলবে না, বরং ধৈর্য এবং নিষ্ঠা সহকারে সফলতা লাভ না করা পর্যন্ত চেষ্টা করে যাওয়া উচিত,  একেই বলে হয় অধ্যবসায়। তাই কবি বলেছেন- ” পারিব না এ কথাটি বলিও না আর, একবার না পারিলে দেখ শতবার। “

অধ্যবসায়ের মাধ্যমে সফলতা অর্জন

মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষাদান, Best essay on Education through mother tongue in Bengali

প্রতিভার পরিচিতি পেতে অধ্যবসায়ের গুরুত্ব, Importance of persistence to identify talent

আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা প্রতিভাকেই সফলতার কারণ হিসেবে চিহ্নিত করে থাকেন, যা বলতে গেলে তাদের ভুল; এর কারণ হল কোনো প্রতিভাবান ব্যক্তি যদি নিজের প্রতিভা নিয়ে ঘরের মধ্যে চুপচাপ বসে থাকে, তবে সে কখনই পরিচিতি পাবে না। কিন্তু একই ব্যক্তি যদি অধ্যবসায়ের মাধ্যমে নিজের প্রতিভা বিকশিত করে জনসমক্ষে তুলে ধরে তবেই সে  ব্যক্তি প্রতিভা বিকাশের আরো বড় সুযোগ পাবে। তাই বলা যায় যে আত্মপ্রতিষ্ঠার জন্য অধ্যবসায় প্রয়োজন।

যারা অধ্যবসায়ী হয় তারা নিজেকে নিয়ে ধীরে ধীরে আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে আর এই আত্মবিশ্বাসী ব্যক্তির স্বাভাবিক প্রবণতা হয় সৎ এবং মহিমান্বিত। এভাবেই সে সফলতার দিকে এগিয়ে যায়। এই জগতে যুগ যুগ ধরে যত বড় শিল্পী, সাহিত্যিক, বৈজ্ঞানিক, সেনানায়ক, ধর্মপ্রবর্তক ছিলেন, তাঁদের মধ্যে সকলেই ছিলেন অধ্যবসায়ী। তাই ইতিহাসের প্রতিটা পাতায় তাদের রয়েছে দৃষ্টান্ত। বলাই বাহুল্য যে, অধ্যবসায়ের গুণেই মানুষ বড় হয়, জীবনের পথে সকল অসাধ্য সাধন করতে সক্ষম হয়। 

প্রতিভার পরিচিতি পেতে অধ্যবসায়ের গুরুত্ব

বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থে দেখা যায় যে অধ্যবসায়কে গুণীদের একটি চারিত্রিক গুণ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। মেধা, বিশ্বাস, সুযোগ এই সব কিছু মিলিয়ে চূড়ান্ত সার্থকতা পাওয়া যায় না, যদি না এগুলোর যথার্থ প্রয়োগ করার জন্য অধ্যবসায়কে মুখ্য গুরুত্ব দেওয়া হয়। একমাত্র অধ্যবসায়ী ব্যক্তির পক্ষেই জীবন সংগ্রামে সকল বাধাবিঘ্ন অতিক্রম করে জয়ী হওয়া সম্ভবপর। নিজেকে সত্যিকার সফল মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে তথা দেশ, জাতি এবং বৃহত্তর মানবসমাজের জন্যে অবদান রাখতে হলে অধ্যবসায়কে গুরুত্ব দিতে হবে, কারণ এই ক্ষেত্রে অধ্যবসায়ের কোনো বিকল্প নেই।

নিরক্ষরতা দূরীকরণে ছাত্র সমাজ, Students and Eradication of illiteracy in Bengali

ছাত্রজীবনে অধ্যবসায়ের গুরুত্ব, Importance of perseverance in student life

যেকোনো ছাত্রের জীবনে অধ্যবসায় সর্বক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অধ্যয়ন তথা অধ্যবসায়ের মধ্যে এক আত্মিক মিল আছে। ছাত্রজীবনে থাকাকালীন অধ্যবসায়কে যদি সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয় তবে নৈরাজ্য এবং নিরাশার মধ্যেও আশার আলো জ্বলে উঠবে, আর একইভাবে অধ্যবসায়ের সঙ্গে যদি ছাত্রের মেধার যোগ ঘটে যায়, তবে সেই ছাত্রের সফলতা অর্জনের পথ আরো সুগম হয়ে যায়। বহু মেধাবী বিদ্যার্থী আছে যাদের মধ্যে শুধু মাত্র অলসতা এবং অমনোযোগী ভাব থাকার কারণে তারা জীবনে সফলতা পায় না। এভাবেই ঘটছে মেধার চরম অবমাননা। ব্যক্তিজীবনে সহ, দেশ এবং জাতির সকলের জন্যেও এই অবমাননা বিশেষভাবে ক্ষতিকর।

ছাত্রজীবনে অধ্যবসায়ের গুরুত্ব

শরীরচর্চা সেরা রচনা, Best essay on physical exercise in Bengali

অধ্যবসায়ের বৈশিষ্ট্য, Traits of persistence

সময়ের সাথে এগিয়ে চলে জীবন, জীবনের সাথে চলতে থাকে কর্ম, তবে এই কর্ম এবং অধ্যবসায় একই বিনিসুতোর মালায় গাঁথা থাকে। একটি বাদ দিলে অন্যটিকে কল্পনা করা সম্ভব না। এই পৃথিবীতে যে কোনোও কাজ করতে গেলেই সফলতা এবং নিষ্ফলতা দুটোর সম্মুখীন হতে হয়। আমরা সকলেই জানি যে অধ্যবসায় হল সফলতার চাবিকাঠি।

অধ্যবসায় না থাকলে মানবজীবনের উন্নতি আশা করা আমাদের কল্পনা মাত্র। মানুষ নিজের জীবনকে সাজিয়ে রাখতে চায়, সফল জীবন পেতে চায়, কিন্তু চলার পথে উপলব্ধি করা যায় যে জীবনের পথ এতো সহজ নয়। সব কাজ সহজে সমাধান করা যায় না। আবার বিভিন্ন কাজের ক্ষেত্রে প্রথমবারে সফলতা আসে না। সফল হওয়ার জন্য বার বার চেষ্টা করে যেতে হয়।

একাগ্রভাবে চেষ্টা করে গেলে এক না এক সময় সাফল্য আসবে।  কোনো কাজে যদি সফলতা অর্জন করতে হয় তবে ধৈর্য এবং সহিষ্ণুতার মাধ্যমে নিরবচ্ছিন্ন চেষ্টা করে যাওয়ার নামই হল অধ্যবসায়। সাধারণভাবে বলতে গেলে অধ্যবসায় হল কতিপয় গুণের সমষ্টি। চেষ্টা, আন্তরিকতা, উদ্যোগ, পরিশ্রম, ধৈর্য ইত্যাদি গুণের সমন্বয় সাধন ঘটলেই অধ্যবসায় পরিপূর্ণতা লাভ করে। 

অধ্যবসায়ের বৈশিষ্ট্য

উপসংহার, Conclusion

যুগ যুগ ধরে অধ্যবসায়ের মধ্য দিয়েই বিশ্ব বিখ্যাত ব্যক্তিগণ নিজের জীবনে সফলতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন। তাই বলা যায় যে, নিজের জীবনে সাফল্য লাভ করার মাধ্যমে জাতিকে গৌরবান্বিত করার জন্য অধ্যবসায়ের কোনো বিকল্প নেই। মনে মনে নির্দিষ্ট করে রাখা লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য প্রাণান্ত চেষ্টা থাকলেই  কোনো পিছুটান, নিন্দা বা অন্য কোনো নেতিবাচক কিছু দ্বারা সেই অধ্যবসায়ী ব্যক্তি প্রভাবিত হবেন না, কেবল নিজের লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাবেন।

মনে রাখতে হবে, ব্যর্থতাই হল যেকোনো ব্যক্তির জীবনের সাফল্যের সোপান। যদি থাকে দৃঢ় মনোবল ও উদ্যম, তবেই সকল প্রতিকূলতা এবং ব্যর্থতার মধ্য দিয়েও আশার আলো খুঁজে পাওয়া যায়। এই মনোবলই একজন উদ্যম ব্যক্তিকে অধ্যবসায়ী হিসেবে গড়ে তোলে, আর এই অধ্যবসায়ীই একসময়-না-একসময় সাফল্যকে নিজের হাতের মুঠোয় ছিনিয়ে আনে। এসব কারণেই মানুষের জীবনে অধ্যবসায়ের গুরুত্ব অপরিসীম। প্রত্যেকটি মানুষের এই বিশেষ গুণের অধিকারী হওয়া উচিত। তবেই যেকোনো মানুষ নিজের ব্যক্তিগত জীবনে, জাতীয় জীবনে, কিংবা বিশ্বসভায় আরও বেশি অবদান রাখতে সক্ষম হতে পারবে।

Recent Posts