দুর্গাপূজা নিয়ে সেরা কিছু কবিতা, Best Bengali poems about Durga Puja



দুর্গাপূজা বাঙালিদের মধ্যে শারদীয়া উৎসব নামে পরিচিত। বাঙালিরা সারাবছর ধরে এই একটি উৎসবের অপেক্ষায় পথ চেয়ে থাকে।

প্রতিবছর আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষে প্রতিপদ তিথি থেকে দশমী পর্যন্ত পালিত হয় বাঙালির জনপ্রিয় উৎসব দুর্গাপূজা।হিন্দুশাস্ত্রে ‘দুর্গা’ শব্দটিকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলা হয়েছে—

দুর্গাপূজা নিয়ে সেরা কিছু কবিতা

দৈত্যনাশার্থবচনো দকারঃ পরিকীর্তিতঃ।উকারো বিঘ্ননাশস্য বাচকো বেদসম্মত।।রেফো রোগঘ্নবচনো গশ্চ পাপঘ্নবাচকঃ।ভয়শত্রুঘ্নবচনশ্চাকারঃ পরিকীর্তিত।।’

এর অর্থ দাঁড়ায়, দৈত্য, বিঘ্ন, রোগ, পাপ ও শত্রুর হাত থেকে যিনি রক্ষা করেন, তিনিই দুর্গা।

দূর্গা মায়ের আরাধনার সময় আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠ থেকে দশম দিন পর্যন্ত। এই নির্দিষ্ট সময়ে শারদীয়া দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়।

বছরের পর বছর এই সময়ে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়, যা নিয়ে বাঙালিদের মধ্যে উৎসবমুখর আমেজ বিরাজ করে। আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা দুর্গাপূজা নিয়ে রচিত কিছু কবিতা তুলে ধরবো।

দুর্গাপূজা নিয়ে লেখা কবিতা, Poem written on Durga Puja

দুর্গাপূজা এমন এক উৎসব যেখানে ধনী-দরিদ্র, জাতি ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল ভেদাভেদ দূরে সরিয়ে রেখে সবাই মিলেমিশে একসাথে পরমানন্দে সামিল হয়। তাই হয়তো এই পুজো নিয়ে বাঙালিদের মধ্যে এত উৎসাহ উদ্দীপনা দেখা যায়।

দুর্গাপূজা নিয়ে বহু বাঙালি কবি লিখেছেন বিভিন্ন কবিতা। আজ আপনাদের সামনে আমরা দুর্গাপূজা নিয়ে লেখা কিছু সুন্দর কবিতা তুলে ধরবো। 

আমার দুর্গোৎসব (বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়)

জয় জয় জয় জয় জয়দাত্রি।
জয় জয় জয় বঙ্গজগদ্ধাত্রি।
জয় জয় জয় সুখদে অন্নদে ।
জয় জয় জয় বরদে শৰ্ম্মদে।
জয় জয় জয় শুভে শুভঙ্করি।
জয় জয় জয় শান্তি ক্ষেমঙ্করি।
দ্বেষকদলনি, সন্তানপালিনি।
জয় জয় দুর্গে দুর্গতিনাশিনি।
জয় জয় লক্ষ্মি বারীন্দ্ৰবালিকে।
জয় জয় কমলাকান্তপালিকে ।
জয় জয় ভক্তিশক্তিদায়িকে।
পাপতাপভয়শােকনাশিকে।
মৃদুল গম্ভীর ধীর ভাবিকে।
জয় মা কালি করালি অম্বিকে।
জয় হিমালয়নগবালিকে।
অতুলিত পূর্ণচন্দ্রভালিকে।
শুভে শোভনে সৰ্বার্থসাধিকে।
জয় জয় শান্তি শক্তি কালিকে।
জয় মা কমলাকান্তপালিকে।
নমােহস্তু তে দেবি বরপ্রদে শুভে।
নমােহস্তু তে কামচরে সদা ধ্রুবে।
ব্ৰহ্মাণী রুদ্রাণি ভূতভব্যে যশস্বিনি।
ত্রাহি মাং সর্বদুঃখেভ্যো দানবানাং ভয়ঙ্করি।
নমােহস্তু তে জগন্নাথে জনানি নমােহস্তু তে।
প্রিয়দান্তে জগন্মাতঃ শৈলপুত্রি বসুন্ধারে ।
ত্রায়স্ব মাং বিশালাক্ষি ভক্তানামাত্তি নাশিনি।
নমামি শিরসা দেবীং বন্ধনােহস্তু বিমােচিতঃ

আমার দুর্গোৎসব (বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়)

দুর্গাপূজা নিয়ে সেরা কিছু কবিতা সংক্রান্ত আমাদের আজকের এই পোস্টটি ভালো লেগে থাকলে আশা করি কলকাতার সেরা ৫৫ টি দুর্গা পূজার তালিকা ও বিবরণী ২০২৩ সম্পর্কিত আমাদের পোস্টটি ও আপনাদের মনের মতন হবে।

আগমনী (প্রেমেন্দ্র মিত্র)

বর্ষা করে যাব, যাব,
শীত এখনও দূর,
এরই মধ্যে মিঠে কিন্তু
হয়েছে রােদ্দুর!
মেঘগুলাে সব দূর আকাশে
পারছে না ঠিক বুঝতে,
ঝরবে, নাকি যাবে উড়ে
অন্য কোথাও খুঁজতে!
থেকে থেকে তাই কি শুনি
বুক-কাপানাে ডাক?
হাঁকটা যতই হােক না জবর
মধ্যে ফাঁকির ফাক!
আকাশ বাতাস আনমনা আজ
শুনে এ কোন ধ্বনি,
চিরনতুন হয়েও অচিন
এ কার আগমনী।

আগমনী (প্রেমেন্দ্র মিত্র)

আগমনী (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)

সুধীরে নিশার আঁধার ভেদিয়া
ফুটিল প্রভাততারা।
হেথা হোথা হতে পাখিরা গাহিল
ঢালিয়া সুধার ধারা।
মৃদুল প্রভাতসমীর পরশে
কমল নয়ন খুলিল হরষে,
হিমালয় শিরে অমল আভায়
শোভিল ধবল তুষারজটা।
খুলি গেল ধীরে পূরবদ্বার,
ঝরিল কনককিরণধার,
শিখরে শিখরে জ্বলিয়া উঠিল,
রবির বিমল কিরণছটা।
গিরিগ্রাম আজি কিসের তরে,
উঠেছে নাচিয়া হরষভরে,
অচল গিরিও হয়েছে যেমন
অধীর পাগল-পারা।
তটিনী চলেছে নাচিয়া ছুটিয়া,
কলরব উঠে আকাশে ফুটিয়া ,
ঝর ঝর ঝর করিয়া ধ্বনি
ঝরিছে নিঝরধারা।
তুলিয়া কুসুম গাঁথিয়া মালা,
চলিয়াছে গিরিবাসিনী বালা,
অধর ভরিয়া সুখের হাসিতে
মাতিয়া সুখের গানে।
মুখে একটিও নাহিকো বাণী
শবদচকিতা মেনকারানী
তৃষিত নয়নে আকুল হৃদয়ে,
চাহিয়া পথের পানে।
আজ মেনকার আদরিণী উমা
আসিবে বরষ-পরে।
তাইতে আজিকে হরষের ধ্বনি
উঠিয়াছে ঘরে ঘরে।
অধীর হৃদয়ে রানী আসে যায়,
কভু বা প্রাসাদশিখরে দাঁড়ায়,
কভু বসে ওঠে, বাহিরেতে ছোটে
এখনো উমা মা এলনা কেন?
হাসি হাসি মুখে পুরবাসীগণে
অধীরে হাসিয়া ভূধরভবনে,
“কই উমা কই’ বলে “উমা কই’,
তিলেক বেয়াজ সহে না যেন!
বরষের পরে আসিবেন উমা
রানীর নয়নতারা ,
ছেলেবেলাকার সহচরী যত
হরষে পাগল-পারা।
ভাবিছে সকলে আজিকে উমায়
দেখিবে নয়ন ভ’রে,
আজিকে আবার সাজাব তাহায়
বালিকা উমাটি ক’রে।
তেমনি মৃণালবলয়-যুগলে,
তেমনি চিকন-চিকন বাকলে,
তেমনি করিয়া পরাব গলায়
বনফুল তুলি গাঁথিয়া মালা।
তেমনি করিয়া পরায়ে বেশ
তেমনি করিয়া এলায়ে কেশ,
জননীর কাছে বলিব গিয়ে
“এই নে মা তোর তাপসী বালা’।
লাজ-হাসি-মাখা মেয়ের মুখ
হেরি উথলিবে মায়ের সুখ,
হরষে জননী নয়নের জলে
চুমিবে উমার সে মুখখানি।
হরষে ভূধর অধীর-পারা
হরষে ছুটিবে তটিনীধারা,
হরষে নিঝর উঠিবে উছসি,
উঠিবে উছসি মেনকারানী।
কোথা তবে তোরা পুরবাসী মেয়ে
যেথা যে আছিস আয় তোরা ধেয়ে
বনে বনে বনে ফিরিবি বালা,
তুলিবি কুসুম, গাঁথিবি মালা,
পরাবি উমার বিনোদ গলে।
তারকা-খচিত গগন-মাঝে
শারদ চাঁদিমা যেমন সাজে
তেমনি শারদা অবনী শশী
শোভিবে কেমন অবনীতলে!
ওই বুঝি উমা, ওই বুঝি আসে,
দেখো চেয়ে গিরিরানী!
আলুলিত কেশ, এলোথেলো বেশ,
হাসি-হাসি মুখখানি।
বালিকারা সব আসিল ছুটিয়া
দাঁড়াল উমারে ঘিরি।
শিথিল চিকুরে অমল মালিকা
পরাইয়া দিল ধীরি।
হাসিয়া হাসিয়া কহিল সবাই
উমার চিবুক ধ’রে,
“বলি গো স্বজনী, বিদেশে বিজনে
আছিলি কেমন করে?
আমরা তো সখি সারাটি বরষ
রহিয়াছি পথ চেয়ে —
কবে আসিবেক আমাদের সেই
মেনকারানীর মেয়ে!
এই নে, সজনী, ফুলের ভূষণ
এই নে, মৃণাল বালা,
হাসিমুখখানি কেমন সাজিবে
পরিলে কুসুম-মালা।’
কেহ বা কহিল,”এবার স্বজনি,
দিব না তোমায় ছেড়ে
ভিখারি ভবের সরবস ধন
আমরা লইব কেড়ে।
বলো তো স্বজনী, এ কেমন ধারা
এয়েছ বরষ-পরে,
কেমনে নিদিয়া রহিবে কেবল
তিনটি দিনের তরে।’
কেহ বা কহিল,”বলো দেখি,সখী,
মনে পড়ে ছেলেবেলা?
সকলে মিলিয়া এ গিরিভবনে
কত-না করেছি খেলা!
সেই মনে পড়ে যেদিন স্বজনী
গেলে তপোবন-মাঝে–
নয়নের জলে আমরা সকলে
সাজানু তাপসী-সাজে।
কোমল শরীরে বাকল পরিয়া
এলায়ে নিবিড় কেশ
লভিবারে পতি মনের মতন
কত-না সহিলে ক্লেশ।
ছেলেবেলাকার সখীদের সব
এখনো তো মনে আছে,
ভয় হয় বড়ো পতির সোহাগে
ভুলিস তাদের পাছে!’
কত কী কহিয়া হরষে বিষাদে
চলিল আলয়-মুখে,
কাঁদিয়া বালিকা পড়িল ঝাঁপায়ে
আকুল মায়ের বুকে।
হাসিয়া কাঁদিয়া কহিল রানী,
চুমিয়া উমার অধরখানি,
“আয় মা জননি আয় মা কোলে,
আজ বরষের পরে।
দুখিনী মাতার নয়নের জল
তুই যদি, মা গো, না মুছাবি বল্‌
তবে উমা আর ,কে আছে আমার
এ শূন্য আঁধার ঘরে?
সারাটি বরষ যে দুখে গিয়াছে
কী হবে শুনে সে ব্যথা,
বল্‌ দেখি, উমা, পতির ঘরের
সকল কুশল-কথা।’
এত বলি রানী হরষে আদরে
উমারে কোলেতে লয়ে,
হরষের ধারা বরষি নয়নে
পশিল গিরি-আলয়ে।
আজিকে গিরির প্রাসাদে কুটিরে
উঠিল হরষ-ধ্বনি,
কত দিন পরে মেনকা-মহিষী
পেয়েছে নয়নমণি!

আগমনী (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)

দুর্গাপূজা নিয়ে সেরা কিছু কবিতা সংক্রান্ত আমাদের আজকের এই পোস্টটি ভালো লেগে থাকলে আশা করি দুর্গা ষষ্ঠীর শুভেচ্ছা বার্তা সম্পর্কিত আমাদের পোস্টটি ও আপনাদের মনের মতন হবে।

রক্তাম্বরধারিণী মা – কাজী নজরুল ইসলাম

রক্তাম্বর পর মা এবার
জ্বলে পুড়ে যাক শ্বেত বসন।
দেখি ঐ করে সাজে মা কেমন
বাজে তরবারি ঝনন-ঝন।
সিঁথির সিঁদুর মুছে ফেল মা গো
জ্বাল সেথা জ্বাল কাল্-চিতা।
তোমার খড়গ-রক্ত হউক
স্রষ্টার বুকে লাল ফিতা।
এলোকেশে তব দুলুক ঝন্‌ঝা
কাল-বৈশাখী ভীম তুফান,
চরণ-আঘাতে উদ্গারে যেন
আহত বিশ্ব রক্ত-বান।
নিশ্বাসে তব পেঁজা-তুলো সম
উড়ে যাক মা গো এই ভুবন,
অ-সুরে নাশিতে হউক বিষ্ণু
চক্র মা তোর হেম-কাঁকন।
টুটি টপে মারো অত্যাচারে মা,
গল-হার হোক নীল ফাঁসি,
নয়নে তোমার ধূমকেতু-জ্বালা
উঠুক সরোষে উদ্ভাসি।
হাসো খলখল, দাও করতালি,
বলো হর হর শঙ্কর!
আজ হতে মা গো অসহায় সম
ক্ষীণ ক্রন্দন সম্বর।
মেখলা ছিঁড়িয়া চাবুক করো মা,
সে চাবুক করো নভ-তড়িৎ,
জালিমের বুক বেয়ে খুন ঝরে
লালে-লাল হোক শ্বেত হরিৎ।
নিদ্রিত শিবে লাথি মারো আজ,
ভাঙো মা ভোলার ভাঙ-নেশা,
পিয়াও এবার অ-শিব গরল
নীলের সঙ্গে লাল মেশা।
দেখা মা আবার দনুজ-দলনী
অশিব-নাশিনী চণ্ডি রূপ;
দেখাও মা ঐ কল্যাণ-করই
আনিতে পারে কি বিনাশ-স্তূপ।
শ্বেত শতদল-বাসিনী নয় আজ
রক্তাম্বরধারিণী মা,
ধ্বংসের বুকে হাসুক মা তোর
সৃষ্টির নব পূর্ণিমা।

রক্তাম্বরধারিণী মা - কাজী নজরুল ইসলাম

আনন্দময়ীর আগমনে – কাজী নজরুল ইসলাম

আর কতকাল থাকবি বেটি মাটির ঢেলার মূর্তি-আড়াল?
স্বর্গ যে আজ জয় করেছে অত্যাচারী শক্তি চাঁড়াল।
দেবশিশুদের মারছে চাবুক, বীর যুবাদের দিচ্ছে ফাঁসি,
ভূ-ভারত আজ কসাইখানা, আসবি কখন সর্বনাশী?
দেব-সেনা আজ টানছে ঘানি তেপান্তরের দ্বীপান্তরে,
রণাঙ্গনে নামবে কে আর, তুই না এলে কৃপাণ ধরে?
বিষ্ণু নিজে বন্দি আজি ছয়-বছরি ফন্দি-কারায়,
চক্র তাহার চরকা বুঝি ভণ্ড-হাতে শক্তি হারায়!
মহেশ্বর আজ সিন্ধুতীরে যোগাসনে মগ্ন ধ্যানে,
অরবিন্দ চিত্ত তাহার ফুটবে কখন কে সে জানে!
সদ্য অসুর-গ্রাসচ্যুত ব্রহ্মা-চিত্তরঞ্জনে, হায়,
কমণ্ডলুর শান্তি-বারি সিঞ্চি যেন চাঁদ নদীয়ায়।
শান্তি শুনে তিক্ত এ-মন কাঁদছে আরো ক্ষিপ্ত রবে,
মরার দেশের মড়া-শান্তি সে তো আছেই, কাজ কি তবে?
শান্তি কোথায়? শান্তি কোথায় কেউ জানি না
মাগো তোর এ দনুজ-দলন সংহারিণী মূর্তি বিনা!
দেবত্তারা আর জ্যোতিহারা, ধ্রুব তাঁদের যায় না জানা,
কেউ বা দেব-অন্ধ মাগো, কেউ বা ভয়ে দিনে কানা।
সুরেন্দ্র আজ মন্ত্রণা দেন দানব-রাজার অত্যাচারে,
পুরু বা হৈতে দেশেরি শীশে দুগাল বেলে ৩রাঁয় তলম,
টিকটিকি হয়, বিষ্ঠা কি নাই- ছি ছি এদের খাদ্য ক্ষুধার।
আজ দানবের রঙমহলে তেত্রিশ কোটি খোজা গোলাম
লাথি খায় আর চ্যাঁচায় শুধু, ‘দোহাই হুজুর, মলাম মলাম।’
মাদিগুলোর আদি দোষ এ অহিংসা-বোল নাকি-নাকি,
খাঁড়ায় কেটে কর্ মা বিনাশ নপুংসকের প্রেমের ফাঁকি!
হান্ তরবার, আন্ মা সমর, অমর হবার মন্ত্র শেখা,
মাদিগুলোয় কর্ মা পুরুষ, রক্ত দে মা, রক্ত দেখা!
লক্ষ্মী-সরস্বতীকে তোর আয় মা রেখে কমল-বনে,
বুদ্ধিবুড়ো সিদ্ধাদাতা গণেশ-টনেশ চাই না রণে।
ঘোমটা-পরা কলা বৌ-এর গলা ধরে দাও করে দূর,
ঐ বুঝি দেব-সেনাপতি, ময়ুর-চড়া জামাই ঠাকুর?
দূর করে দে, দূর করে দে এ সব বালাই সর্বনাশী,
চাই নাকো ঐ ভাং-খাওয়া শিব, নেক দিয়ে তায় গঙ্গামাসি!
তুই একা আয় পাল্লি বেটি তাথৈ তাথৈ নৃত্য করে,
রক্ত তৃষায় ‘ম্যয় ভূখা হু-র কাদন-কেতন কণ্ঠে ধরে।
ম্যয় ভূখা হুঁ’র রক্তক্ষেপী ছিন্নমস্তা আয় মা কালী,
গুরুর বাগে শিব-সেনা তোর হুস্কারে ঐ ‘জয় আকালী!’
এখনো তোর মাটির গড়া মৃন্ময়ী ঐ মূর্তি হেরি
দু’চোখ পুরে জল আসে মা, আর কতকাল করবি দেরি?
মহিষাসুর বধ করে তুই ভেবেছিলি রইবি সুখে,
পারিসনি তা, ত্রেতা যুগর টল্ল আসন রামের দুখে।
আর এলিনে রুদ্রাণী তুই, জানিনে কেউ ডাকল কি না,
রাজপুতনায় বাজল হঠাৎ ‘ম্যয় ভূখা হুঁ’-র রক্তবীণা।
বৃথাই গেল সিরাজ, টিপু, মীর কাসিমের প্রাণ-বলিদান,
চণ্ডি! নিলি যোগমায়া-রূপ, বলল সবাই বিধির বিধান।
হঠাৎ কখন উঠল খেপে বিদ্রোহিণী ঝান্সি-রানি,
খ্যাপা মেয়ের অভিমানেও এলি নে তুই মা ভবানী।
এমনি করে ফাকি দিয়ে আর কতকাল নিবি পূজা?
পাষাণ বাপের পাষাণ মেয়ে, আয় মা এবার দশভূজা।
বছর বছর এ-অভিনয় অপমান তোর, পূজা নয় এ,
কি দিস্ আশিস কোটি ছেলের প্রণাম চুরির বিনিময়ে।
অনেক পাঁঠা-মোষ খেয়েছিস্, রাক্ষসী তোর যায়নি ক্ষুধা;
আয় পাষাণী, এবার নিবি আপন ছেলের রক্ত-সুধা!
দুর্বলদের বলি দিয়ে ভীরুর এ হীন শক্তি-পূজা।
দূর করে দে, বল্ মা, ছেলের রক্ত মাগে মা দশভুজা।
সেইদিন হবে জননী তোর সত্যিকারের আগমনী,
বাজবে বোধন-বাজনা, সেদিন গাইব নব জাগরণী।
“ময় ভূখা হুঁ”-মায়ি’ বলে আয় এবার আনন্দময়ী,
কৈলাস হতে গিরি-রানীর মা-দুলালি কন্যা অয়ি!
আয় উমা আনন্দময়ী!

পূজার সাজ – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

আশ্বিনের মাঝামাঝি উঠিল বাজনা বাজি,
পূজার সময় এল কাছে।
মধু বিধু দুই ভাই ছুটাছুটি করে তাই,
আনন্দে দু-হাত তুলি নাচে।
পিতা বসি ছিল দ্বারে, দুজনে শুধালো তারে,
‘কী পোশাক আনিয়াছ কিনে।’
পিতা কহে, ‘আছে আছে তোদের মায়ের কাছে, দেখিতে পাইবি ঠিক দিনে।’
সবুর সহে না আর- জননীরে বার বার কহে,
‘মা গো, ধরি তোর পায়ে, বাবা আমাদের তরে কী কিনে এনেছে ঘরে
একবার দে না মা, দেখায়ে।’
ব্যস্ত দেখি হাসিয়া মা দুখানি ছিটের জামা
দেখাইল করিয়া আদর।
মধু কহে, ‘আর নেই?’ মা কহিল, ‘আছে এই
একজোড়া ধুতি ও চাদর।’
রাগিয়া আগুন ছেলে, কাপড় ধুলায় ফেলে
কাঁদিয়া কহিল, ‘চাহি না মা,
রায়বাবুদের গুপি পেয়েছে জরির টুপি,
ফুলকাটা সাটিনের জামা।’
মা কহিল, ‘মধু, ছি ছি, কেন কাঁদ মিছামিছি,
গরিব যে তোমাদের বাপ।
এবার হয় নি ধান, কত গেছে লোকসান,
পেয়েছেন কত দুঃখতাপ।
তবু দেখো বহু ক্লেশে তোমাদের ভালোবেসে
সাধ্যমত এনেছেন কিনে।
সে জিনিস অনাদরে ফেলিলি ধূলির ‘পরে-
এই শিক্ষা হল এতদিনে।’
বিধু বলে, ‘এ কাপড় পছন্দ হয়েছে মোর,
এই জামা পরাস আমারে।’
মধু শুনে আরো রেগে ঘর ছেড়ে দ্রুতবেগে
গেল রায়বাবুদের দ্বারে।
সেথা মেলা লোক জড়ো, রায়বাবু ব্যস্ত বড়ো;
দালান সাজাতে গেছে রাত।
মধু যবে এক কোণে দাঁড়াইল ম্লান মনে
চোখে তাঁর পড়িল হঠাৎ।
কাছে ডাকি স্নেহভরে কহেন করুণ স্বরে
তারে দুই বাহুতে বাঁধিয়া,
‘কী রে মধু, হয়েছে কী। তোরে যে শুক্রো দেখি।’
শুনি মধু উঠিল কাঁদিয়া,
কহিল, ‘আমার তরে বাবা আনিয়াছে ঘরে
শুধু এক ছিটের কাপড়।’
শুনি রায়মহাশয় হাসিয়া মধুরে কয়,
‘সেজন্য ভাবনা কিবা তোর।’
ছেলেরে ডাকিয়া চুপি কহিলেন, ‘ওরে গুপি,
তোর জামা দে তুই মধুকে।
গুপির সে জামা পেয়ে মধু ঘরে যায় ধেয়ে
হাসি আর নাহি ধরে মুখে।
বুক ফুলাইয়া চলে- সবারে ডাকিয়া বলে,
‘দেখো কাকা! দেখো চেয়ে মামা!
ওই আমাদের বিধু ছিট পরিয়াছে শুধু,
মোর গায়ে সাটিনের জামা।’
মা শুনি কহেন আসি লাজে অশ্রুজলে ভাসি
কপালে করিয়া করাঘাত,
‘হই দুঃখী হই দীন কাহারো রাখি না ঋণ,
কারো কাছে পাতি নাই হাত।
তুমি আমাদেরই ছেলে ভিক্ষা লয়ে অবহেলে
অহংকার কর ধেয়ে ধেয়ে!
ছেঁড়া ধুতি আপনার ঢের বেশি দাম তার
ভিক্ষা-করা সাটিনের চেয়ে।
আয় বিধু, আয় বুকে, চুমো খাই চাঁদমুখে,
তোর সাজ সব চেয়ে ভালো।
দরিদ্র ছেলের দেহে দরিদ্র বাপের স্নেহে
ছিটের জামাটি করে আলো।’

পূজার সাজ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

দুর্গোৎসব নিয়ে লেখা কিছু সুন্দর কবিতা, Some beautiful poems written on Durga Puja :

দুর্গাপূজা নিয়ে সেরা কিছু কবিতা সংক্রান্ত আমাদের আজকের এই পোস্টটি ভালো লেগে থাকলে আশা করি দুর্গাপূজা নিয়ে অজানা তথ্য সম্পর্কিত আমাদের পোস্টটি ও আপনাদের মনের মতন হবে।

মা দুর্গাকে আহ্বান- সৌম্যকান্তি চক্রবর্তী

দেবী তোমার আগমনের ..
প্রস্তুতি তাই ,
মহেশ তোমায় দিলেন বিদায় ..
মহিষাসুরের নিধন করে ,
চলেই এসো পিত্রালয় …
দেবী তুমি আসবে বলে
শিশিরবিন্দু ঘাসে ,
মাঠে মাঠে শোভা বাড়ায় ,
শুভ্রবরণ কাশে …
দেবী তোমার আগমনে …
খুশি সবার মন ,
মহালয়ার প্রতীক্ষাতে
মগ্ন ত্রিভূবন !
মা দুর্গা দশভূজা …
আসবে সপরিবারে !
ছুটির দিনে দেখব তোমায়
মণ্ডপে বারে বারে !
তোমার অরূপ রূপের
মহিমা করব অবলোকন …
বলপ্রদায়িনী মা গো আমায়
অভয় করো নিবেদন !
মহিষাসুরের সমাপন করে …
করেছ তমসা দূর !
আনন্দে মাতে এই ধরাধাম
বাজে আগমনী সুর !

মা দুর্গাকে আহ্বান- সৌম্যকান্তি চক্রবর্তী

মা দুর্গা – সৌম্যকান্তি চক্রবর্তী

নরম ঘাসে ভোরের শিশিরাঘাতে ,
মেঘেদের ঐ ভেলা ভেসে যাওয়া প্রাতে ;
আকাশ বাতাস হয় যেন সুরভিত ,
মধুর হাসির মা আমার আসছেন তো !
শিউলি ফুলের গন্ধে আকুল মন ,
আগমনী সুর কানে ভেসে আসে ঐ ;
শঙ্খ কাঁসর ঢাকের শব্দ পাই ,
সপরিবারে মা আসছেন কই ?
মা তুমি এলেই মনটা ভরে যায় ,
তোমার দিকে তাকিয়ে শুধু থাকি ;
তুমি এলেই ভাবতে থাকি শুধু ,
আনন্দের আর কটা দিনই বাকি ?

শারদীয়া –শুভ দাশগুপ্ত

গেরুয়া নদীর পাড় ঘেষে সেই ছোট্ট আমার গ্রাম
ছেলেবেলার ছেলেখেলার সেই আনন্দধাম।
আকাশ ছিল সুনীল উদার রোদ্দুরে টান টান,
গেরুয়া নদীর পাড় ঘেষে সেই ছোট্ট আমার গ্রাম
গেরুয়া নদীর পাড় ঘেষে সেই গ্রামের শেষ পাড়া,
নবীন কাকার কুমোর বাড়ি, ঠাকুর হত গড়া।
সাত পাড়াতে বেজায় খ্যাতি, নবীন তালেবর,
নবীন কাকার হাতের ঠাকুর অপূর্ব সুন্দর।
এক এক বছর এক এক রকম ঠাকুর তৈরি হতো,
সেসব ঠাকুর দেখতে মানুষ বেজায় ভিড় জমাতো।
স্কুল পালানো দুপুর ছিলো, ছিলো সঙ্গী সাথী,
চোখ জুড়ানো মূর্তি দেখতে ভীষণ মাতামাতি।
শারদীয়ার দিন গড়াতো শিউলি গন্ধে দুলে,
রোজই যেতাম ঠাকুর গড়া দেখতে সদলবলে।
নবীন কাকা গরিব মানুষ, সদাই হাসিমুখে,
নিবিষ্ট মন, ব্যস্ত জীবন, আপন ভোলা সুখে।
হাতের ছোঁয়ায় তৈরি হতো লক্ষ্মী, গণেশ, পেঁচা,
দূর গাঁয়ে তার ছোট্ট বাড়ি, ঠাকুর গড়েই বাঁচা।
সে বছর কি হলো বলি, শোনো দিয়ে মন,
বন্যা হলো ভীষণরকম ভাসলো যে জীবন।
কত মানুষ ঘর হারালো, প্রাণ হারালো কত,
গোটা গ্রামের বুকটি জুড়ে হাজার আঘাত ক্ষত।
ধানের জমি পাটের ক্ষেতে জল থৈ থৈ বান,
সর্বনাশের কান্না ঘেরা হাজার নিঃস্ব প্রাণ।
বর্ষা শেষে বন্যা গেল, জাগলো শারদ আলো,
নীল আকাশে পুজোর ছুটি দিব্যি ডাক পাঠালো।
কাশফুলেরা উঠল দুলে, শিউলি ঝরা দিন,
পুজো আসছে রোদ্দুরে তাই বাজলো খুশির বীণ।
নবীন কাকার টালির ঘরে হচ্ছে ঠাকুর গড়া,
গেরুয়া নদীর পাড় ঘেঁষে গ্রাম জাগলো খুশির সাড়া।
আমরা যত কচিকাঁচা, আবার জড়ো হয়ে,
ঠাকুর দেখতে গেলাম ছুটে মাঠ ঘাট পেরিয়ে।
সেবার মাত্র গুটিকয়েক ঠাকুর টালির ঘরে,
পুজোর আয়োজন তো সেবার নমোনমো করে।
তারই মধ্যে একটি ঠাকুর টালির চালের কোনে,
নবীন কাকা ভাঙেন, গড়েন নিত্য আপন মনে।
অন্য ঠাকুর দেখতে চাইলে বাধা দিতেন না,
ওই ঠাকুরটি দেখতে চাইলে না শুধু না।
কৌতূহলে দিন গড়ালো পুজো এলো কাছে,
মহালয়ার দিন টি এলো পুজোর খুশির সাজে।
আমরা কয়জন রাত থাকতে উঠেছি ঘুম ছেড়ে,
পুবের আকাশ মলিন, আলো ধীরে উঠছে বেড়ে।
অন্ধকারে চুপিসারে গুটিগুটি পায়ে,
আমরা হাজির নবীন কাকার ঘরের কিনারায়।
চুপ্টি করে দরজা ঠেলে ভিতরে গিয়ে,
দেখি কাকা চোখ আঁকছেন সমস্ত মন দিয়ে।
চোখ আঁকা যেই সাঙ্গ হল, নিথর নবীন কাকা,
অঝোর ধারে কেঁদেই চলেন দুহাতে মুখ ঢাকা।
কাঁদছে শিল্পী, নিরব বিশ্ব, কুপির আলো ঘরে,
নবীন কাকার পাষাণ হৃদয় কান্না হয়ে ঝরে।
রাত ফুরোনো ভোরের আকাশ, কৃপণ অল্প আলো,
মুখ দেখলাম সেই ঠাকুরের, প্রাণ জুড়িয়ে গেল।
কিন্তু একি? এ মুখ তো নয় দুর্গা বা পার্বতী?
এ যেন এক ঘরের মেয়ে, চেনা জানা অতি।
নবীন কাকার সামনে গিয়ে কি হয়েছে বলি,
কেঁদে বলেন নবীন কাকা সবই জলাঞ্জলি।
শ্রাবণ মাসে বন্যা হলো, গেল অনেক কিছু,
মারণব্যাধি এলো তখন বানের পিছু পিছু।
ভাদ্র মাসের পূর্ণিমাতে সেই ব্যধি যে ধরল,
মেয়ে আমার অনেক কষ্টে যন্ত্রনাতে মরল।
ঠাকুর গড়ি, দু হাত আমার অবশ হয়ে আসে,
সব প্রতিমার মুখ জুড়ে ওই মেয়ের মুখটি ভাসে।
দ্যাখ্ না তোরা, দ্যাখ্ না সবাই, চোখ আঁকা শেষ হলো,
দ্যাখ্ না এইতো মেয়ে আমার হাসছে ঝলোমলো।
কোথায় গেলি মা রে আমার? কোথায় তোকে পাই?
মূর্তি গড়ে খুঁজি তোকে মূর্তিতে তুই নাই।
ষষ্ঠী এলে বোধন, দেবীর প্রাণ প্রতিষ্ঠা হবে,
জাগবে ঠাকুর, কিন্তু আমার মেয়ে ফিরবে কবে?
কেউ কি কোন মন্ত্র জানো মৃন্ময়ী এই মেয়ে,
বাবার চোখের জল মোছাতে উঠবে হেসে গেয়ে?
আমরা অবাক! মহালয়ায় ভোরের শিউলি ঝরে,
কি নিদারুণ ঠাকুর পুজো নবীন কাকার ঘরে!

শরৎ ও শারদীয়া – কনক বিশ্বাস

ও শরৎ তোমার রুপ দেখিলে
প্রান যে ভরে যায়,
ভোরের বেলার রাঙা আলো
ছড়িয়ে দিলে আমার আঙিনায়।
শিউলি ফুলের গন্ধে যে মন
মউ মউ করে –
শুভ্র সতেজ কাশের বনে
মন যে আমার টানে।
আকাশ ভরা নীল মেঘেরা
নৌকা বেয়ে যায়,
মন উড়ে যায় ছোট্ট বেলার
শাপলা ফোটা গায়।
মন্দিরেতে শঙ্খ বাজে
মায়ের আগমনে,
শরৎ সকাল ফুটবে আলো
মহালয়ার গানে।
ঘরে ঘরে নাড়ু সন্দেশ
পিঠে পুলির ধুম,
মা আসবে আনন্দে তাই
নেইতো চোখে ঘুম।
আতশবাজি রঙ্গিন আলোয়
ঝলমল যে করে,
মন্ডপেতে উলুধ্বনি মায়েরে বরনে।
শরৎকালে শারদীয় পূজার আয়োজনে,
সিদুঁর খেলা ধূপচি নাচ মন যে পাগল করে।
সবাই মিলে পালন করে এই দূর্গা উৎসব,
ধনী গরীব ছোট বড় দৃঢ় হয় সব বন্ধন।
এসো মোরা সবাই গাই মায়েরই জয়গান,
শারদীয় আনন্দ যেন কখনও হয়না ম্লান।

দুর্গা দুর্গতিনাশিনী – অরুণ মন্ডল

হে মা দুর্গা শত সহস্র বরষ পরে
আবার বাজিছে রণভেরী পৃথ্বীপরে।
দিকে দিকে অসুরেরা জেগে উঠিছে
পুনর্বার ধ্বংসের যুদ্ধে সাজিছে।
লক্ষ জনপদ পদতলে করিছে পিষ্ট
বক্ষ কাঁপে হেরি অসংখ্য অনাসৃষ্ট।
উন্মত্ত উন্মাদনায় ধর্মকে করছে খুন
গাইছে অসুরেরা মিথ্যার রামধুন।
সত্যের পূজারিকে করছে আঘাত
নিজ স্বার্থে করে ভুল পথে প্রতিবাদ।
হিন্দু সেজে হিন্দুর ঘটায় রক্তপাত
এরা কোন ধর্মের কারবারি,কু-জাত?
আকাশ জুড়ে কালো মেঘের ঘনঘটা
চাঁদ-সূর্য ভীত,গাত্রে,শিহরে কাঁটা।
মানবের সুখ-শান্তি হারিয়ে গেছে
অশুভ আতঙ্ক ধ্বনি চারিদিকে।
তোমার সৃষ্টি বুঝি বিপন্ন আবার
অহরহ হুঙ্কার কতিপয় দানবের –
তোমার পূজার আয়োজন ধ্বংসী বার,
তাই স্মরণ তব মহা সংগ্রামে পুনর্বার ।
সব অসুরের দম্ভ চূর্ণ করে-
রক্ষা করো মানব জগতে রে।
রক্ত বীজাসুরের করহ দলন
দূর্গতি – নাশিনী মা তুমি মঙ্গল মন।

দুর্গা দুর্গতিনাশিনী - অরুণ মন্ডল

দুর্গাপূজা নিয়ে সেরা কিছু কবিতা সংক্রান্ত আমাদের আজকের এই পোস্টটি ভালো লেগে থাকলে আশা করি শুভ শারদীয়ার ছবি, উক্তি, এসএমএস সম্পর্কিত আমাদের পোস্টটি ও আপনাদের মনের মতন হবে।

দুর্গাপুজো নিয়ে কিছু ছড়া, Some Rhymes on Durga Puja :

দুর্গাপূজো

অসুর যতো আনন্দে আজ
হাসছে রে
বৈরী হাওয়ায় কেমন করে
ভাসছে রে।
আজ আকাশে মেঘ জমেছে
বড্ড কালো
দাও জ্বালিয়ে মাগো তুমি
সকল আলো।
অনাচারি দমন করো
খড়গ হাতে
যাকনা চলে ভয় ও ভীতি
আঁধার রাতে।
হাসি খুশি দাও ভরিয়ে
সকল প্রাণে
একই সুরে মিলুক সবে
আজকে গানে।

দুর্গাপূজো

পূজোর স্মৃতি

সেই সে দিনে কখনও যে
যায়না ফেরা আর
সোহাগ মাখা বাবার বকুন
আদর খানি মার।
একই রঙের কাপড় জামা
জড়িয়ে দিয়ে গায়
মণ্ডপেতে ঘুরে ফিরে
সময় যেতো হায়।
চুলের ফিতা পায়ের জুতা
এক যে হওয়া চাই
হারিয়ে গেলো সেদিন কোথা
আরকি ফিরে পাই!
পূজো এলে স্মৃতির ঘরে
মনটা চলে যায়
ভুলতে আমি চাই না যে তা
থাক সে মনের ছায়।

মাগো

অসুর বিনাশী মাগো
তুমি দশভূজা
বিল্বপত্র ফুলে
করি যশ পূজা।
দূর হোক অনাচার
আগমনী সুরে
শান্তির বারিধারা
থাক মন জুড়ে।
দুখিজনা হাসে যেন
মাকে পেয়ে তাই
তোমার মহিমা আজ
সবে মিলে গাই।
মাগো তুমি ধরা ধামে
এসো বারে বার,
বুকে নিও টেনে তারে
সুখ নাই যার।

মাগো

দেখবি যদি আয়

শরৎ এলো মন রাঙাতে
রূপের ছবি গাঁয়
নীল সাদারই চাদরখানি
গায় জড়াবি আয়।
বাংলা মায়ের মিষ্টি হাসি
রোদের লুকোচুরি
দু’চোখ ভরে দেখবি ওরে
ইচ্ছে মতো ঘুরি।
সবুজ মাঠে হেমন্তেই
আসছে ভেসে সুর
মনযে তোরই হারিয়ে যাবে
ভাবের সমুদ্দুর।
এমন দিনে আসছে রে মা
দেখবি যদি আয়
অঞ্জলীতে ভরিয়ে দিবি
সময় চলে যায়।

অকালবোধন

দুর্গা মায়ের অকালবোধন
হয় শরতে,
অসুরবিনাশ যাক ঘটে যাক
সব পরতে।
সকল সুরের মূর্ছনাতে
পৃথিবী হোক ভালোবাসায়
আলো-আশায় আনন্দলোক।
দুর্গা মায়ের অঞ্জলিতে সৃষ্টি যত,
সবার ভালো কাম্য থাকে অবিরত।

মা এসেছেন

মা এসেছেন মা এসেছেন
রঙিন শাড়ি পরে
মা এসেছেন ভিন্নরূপে
হাওয়ার ঘোড়া চড়ে।
রঙিন সাজে মন্দিরে আজ
বাজছে কাসর ঢোল
তাকধিনাধিন বাদ্য বাজে
আনন্দ উতরোল।
যাক ধুয়ে আজ সকল কালো
আলোয় হাসুক ধরা
শান্তি সুখে দিনটা কাটুক
ধন ধান্যে ভরা।
টাকডুমাডুম টাকডুমাডুম
রোদের ঝিকিমিকি
ঢোলের তালে জোছনা ঝরায়
মা হেসেছেন ঠিকি।

মা এসেছেন

শেষ কথা, Conclusion :

আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা দুর্গাপূজা নিয়ে সেরা কিছু কবিতা আপনাদের সামনে তুলে ধরেছি। আমাদের এই পোস্ট যদি আপনাদের মনোগ্রাহী হয় তবে পরিবার পরিজন তথা বন্ধুদের সাথে প্রতিবেদনটি অবশ্যই শেয়ার করবেন।

Recent Posts