কুরআন ইসলাম ধর্মের পবিত্র গ্রন্থ, যা মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে শেষ নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর ওপর অবতীর্ণ হয়েছে। এটি মূলত আরবি ভাষায় নাজিল হয় এবং ২৩ বছর ধরে ধাপে ধাপে নবী (সা.)-এর কাছে পৌঁছানো হয়। কুরআনকে বিশ্ববাসীর জন্য জীবনযাপনের পূর্ণাঙ্গ দিকনির্দেশনা হিসেবে গণ্য করা হয়।
কুরআনে মোট ১১৪টি সূরা এবং ৬,২৩৬টি আয়াত রয়েছে। এর সূরাগুলোকে মক্কী ও মাদানী দুই ভাগে বিভক্ত করা হয়। মক্কী সূরাগুলোতে প্রধানত তাওহীদ, নবুয়ত ও পরকাল সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে, আর মাদানী সূরাগুলোতে ইসলামী আইন, সমাজব্যবস্থা ও নৈতিকতা বিষয়ে নির্দেশনা রয়েছে।
কুরআনের সু নির্বাচিত কিছু উক্তি, Selected quotes of Quran
- “বল, তিনিই আল্লাহ, একক। আল্লাহ অমুখাপেক্ষী। তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কেউ তাঁকে জন্ম দেয়নি। আর তাঁর সমতুল্য কেউ নেই।” — (সুরা ইখলাস: ১-৪)
- “আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, তিনি চিরঞ্জীব, সমগ্র সৃষ্টি জগতের ধারক।” — (সুরা বাকারা: ২৫৫ – আয়াতুল কুরসি)
- “তিনিই প্রথম এবং তিনিই সর্বশেষ; তিনিই প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য, এবং তিনি সর্ববিষয়ে সর্বজ্ঞ।” — (সুরা হাদিদ: ৩)
- “আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর মালিকানা একমাত্র আল্লাহরই। তিনি জীবন দান করেন এবং মৃত্যু ঘটান। আর আল্লাহ ছাড়া তোমাদের কোনো অভিভাবক ও সাহায্যকারী নেই।” — (সুরা তাওবা: ১১৬)
- “তিনিই আকাশ ও পৃথিবী ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন এবং এরপর আরশের উপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। তিনি জানেন যা প্রবেশ করে ভূমিতে এবং যা তা থেকে নির্গত হয়, যা আকাশ থেকে নেমে আসে এবং যা তাতে উঠে যায়। আর তিনি তোমাদের সাথে আছেন যেখানে থাকো না কেন। আর তোমরা যা করো, আল্লাহ তা দেখেন।” — (সুরা হাদিদ: ৪)
- “আল্লাহ সর্বশক্তিমান, পরাক্রমশালী।” — (সুরা আল-হাশর: ২৩)
- “তিনিই আল্লাহ, যিনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। তিনি রাজাধিরাজ, পরম পবিত্র, শান্তি ও নিরাপত্তাদাতা, বিশ্বনিয়ন্ত্রক, পরাক্রমশালী, সর্বোচ্চ মহিমান্বিত। আল্লাহ পবিত্র সব কিছু থেকে, যা তারা তাঁর সাথে শরিক করে।” — (সুরা আল-হাশর: ২৩)
- “আল্লাহর জন্যই সর্বোত্তম নামসমূহ রয়েছে, সুতরাং তাঁকে সে নামেই ডাকো এবং যারা তাঁর নাম বিকৃত করে, তাদের পরিত্যাগ করো। তারা তাদের কৃতকর্মের জন্য শাস্তি পাবে।” — (সুরা আল-আ’রাফ: ১৮০)
- “যা কিছু আকাশ ও পৃথিবীতে রয়েছে, সবই আল্লাহর জন্য সিজদা করে, ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায়।” — (সুরা রা’দ: ১৫)
- “তিনিই সূর্যকে আলোময় করেছেন এবং চন্দ্রকে জ্যোতির্ময় করেছেন, এবং তাঁর অবস্থান নির্ধারণ করেছেন, যাতে তোমরা বছর গণনা ও সময় নির্ধারণ করতে পারো। আল্লাহ এসব যথাযথভাবে সৃষ্টি করেছেন। তিনি জ্ঞানী জাতির জন্য তাঁর আয়াত বিশদভাবে ব্যাখ্যা করেন।” — (সুরা ইউনুস: ৫)
- “তিনিই তোমাদের অন্তরে যা আছে তা জানেন এবং তোমরা যা প্রকাশ করো ও যা গোপন করো, সবই তিনি জানেন।” — (সুরা তাগাবুন: ৪)
- “তোমাদের প্রতিপালক বলেছেন: আমাকেই ডাক, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব।” — (সুরা গাফির: ৬০)
- “তোমরা যদি প্রকাশ্যে কথা বলো, তবে তা গোপন রাখলেও তিনি জানেন। নিশ্চয়ই তিনি অন্তর্যামী।” — (সুরা মুলক: ১৩)
- “যখন আমার বান্দারা তোমার কাছে আমার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করে, তখন (বল) আমি তো কাছেই আছি। প্রার্থনাকারী যখন আমাকে ডাকে, আমি তার ডাকে সাড়া দিই।” — (সুরা বাকারা: ১৮৬)
- “নিশ্চয়ই আমার রব দয়াময় ও মহাজ্ঞানী।” — (সুরা ইউসুফ: ১০০)
- “তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না, নিশ্চয়ই আল্লাহ সব পাপ ক্ষমা করেন।” — (সুরা যুমার: ৫৩)
- “তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ না হলে তোমরা কেউই পবিত্র হতে পারতে না। কিন্তু আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পবিত্র করেন।” — (সুরা নুর: ২১)
- “আর নিশ্চয়ই আমি মানুষের প্রতি আমার অনুগ্রহ অনবরত বর্ষণ করি, কিন্তু অধিকাংশ মানুষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না।” — (সুরা নামল: ৭৩)
- “আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রতি অত্যন্ত দয়ালু ও পরম দয়ালু।” — (সুরা হজ্জ: ৬৫)
- “আল্লাহ যাকে ইচ্ছা অফুরন্ত রিজিক দেন এবং যাকে ইচ্ছা নির্দিষ্ট পরিমাণে দেন।” — (সুরা রা’দ: ২৬)
- “তিনিই আল্লাহ, যিনি ব্যতীত অন্য কোন উপাস্য নেই, তিনি জীবিত, চিরস্থায়ী, তন্দ্রা বা নিদ্রা তাঁকে স্পর্শ করে না।” (সূরা আল-বাকারা ২:২৫৫)
- নিশ্চয়ই আমি আল্লাহ, আমি ছাড়া আর কোন উপাস্য নেই। অতএব, তুমি আমারই ইবাদত কর এবং আমার স্মরণে সালাত কায়েম কর।” (সূরা ত্বোহা ২০:১৪)
- তিনিই প্রথম এবং তিনিই শেষ, তিনিই প্রকাশ্য ও গোপন বিষয়সমূহের জ্ঞাতা। তিনি সবকিছুর সম্যক পরিজ্ঞাতা।” (সূরা আল-হাদীদ ৫৭:৩)
- আসমানসমূহ ও জমিনের রাজত্ব আল্লাহরই জন্য। তিনি যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন।” (সূরা আশ-শূরা ৪২:৪৯)
- তারা কি আল্লাহর সৃষ্টি লক্ষ্য করেনি, কেমন করে তিনি সৃষ্টি করেন? আর আল্লাহর সৃষ্টি পরিবর্তন করার শক্তি কারও নেই।” (সূরা আর-রূম ৩০:৩০)
কুরান -এর বিশেষ কিছু উক্তি সংক্রান্ত আমাদের আজকের এই পোস্টটি ভালো লেগে থাকলে আশা করি ৩০০+ ঈদ মোবারক শুভেচ্ছাবাণী সম্পর্কিত আমাদের এই পোস্টটি ও আপনার মনের মতন হবে।
কুরআনে বর্ণিত বিশেষ বাণী, Quran er baani
- “তোমাদের মধ্যে যে উত্তম, সে হলো সেই ব্যক্তি যে নীতিবান ও পরহেজগার।” (সূরা আল-হুজরাত ৪৯:১৩)
- “তোমরা মন্দ কাজের প্রতিবাদ কর এবং ন্যায়ের পথে আহ্বান জানাও।” (সূরা আলে-ইমরান ৩:১১০)
- “নিশ্চয়ই আল্লাহ সুবিচার করতে এবং সদাচরণ করতে ও আত্মীয়-স্বজনকে সাহায্য করতে আদেশ করেন।” (সূরা আন-নাহল ১৬:৯০)
- “তোমরা মানুষের সাথে সদ্ব্যবহার কর যেমনভাবে আল্লাহ তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন।” (সূরা আল-বাকারা ২:৮৩)
- “তোমরা দুনিয়ার জীবনকে ভালোবাসো, কিন্তু পরকালই উত্তম ও স্থায়ী।” (সূরা আল-আ’লা ৮৭:১৬-১৭)
- “নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন।” (সূরা আল-বাকারা ২:১৫৩)
- “আল্লাহ তোমাদের এমন বোঝা বহন করাবেন না যা তোমরা সহ্য করতে পারবে না।” (সূরা আল-বাকারা ২:২৮৬)
- “নিশ্চয়ই কষ্টের পরেই সহজি আসে।” (সূরা আল-ইনশিরাহ ৯৪:৬)
- “তোমরা যদি কৃতজ্ঞ হও, তবে আমি তোমাদের আরও দেব।” (সূরা ইব্রাহিম ১৪:৭)
- “তোমরা আশা করো না যে, প্রতিটি ব্যাপার তোমাদের ইচ্ছামতো ঘটবে।” (সূরা আন-নিসা ৪:৩২)
- “আল্লাহ সেইসব লোকদের ভালোবাসেন যারা সত্যবাদী ও ন্যায়পরায়ণ।” (সূরা আল-মায়িদাহ ৫:৪২)
- “সত্য গ্রহণ কর এবং মিথ্যা পরিহার কর।” (সূরা আল-হজ্জ ২২:৩০)
- “তোমরা অন্যদের ধন-সম্পদ অন্যায়ভাবে ভোগ করো না।” (সূরা আল-বাকারা ২:১৮৮)
- “যে ব্যক্তি তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে, সে প্রকৃত পরহেজগার।” (সূরা আল-মায়িদাহ ৫:১)
- “আল্লাহ কখনো কোন সম্প্রদায়ের অবস্থা পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা নিজেরা নিজেদের পরিবর্তন করে।” (সূরা আর-রাদ ১৩:১১)
- “এই দুনিয়ার জীবন হলো শুধুমাত্র একটি মোহময় খেলা, আর প্রকৃত জীবন পরকালীন জীবন।” (সূরা আল-আনকাবুত ২৯:৬৪)
- “যে ব্যক্তি নেক কাজ করে, সে তার প্রতিদান পাবে এবং অন্যায় কাজ করলে তার শাস্তি ভোগ করবে।” (সূরা আল-জালজালা ৯৯:৭-৮)
- “যারা ঈমান আনে এবং নেক কাজ করে, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাতের উদ্যান।” (সূরা আল-বাইয়্যিনা ৯৮:৭-৮)
- “যারা অন্যায় করে, তারা অবশ্যই কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হবে।” (সূরা আল-মায়িদাহ ৫:৩৩)
কুরান -এর বিশেষ কিছু উক্তি সংক্রান্ত আমাদের আজকের এই পোস্টটি ভালো লেগে থাকলে আশা করি সেরা ইসলামিক উক্তি সম্পর্কিত আমাদের এই পোস্টটি ও আপনার মনের মতন হবে।
কুরআনে বর্ণিত বিশেষ জ্ঞান, Best sayings from Quran
- “তোমাদের প্রতিটি আত্মাকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে, এবং তোমাদের কর্মের পুরস্কার তোমাদেরকে কিয়ামতের দিন প্রদান করা হবে।” (সূরা আলে-ইমরান ৩:১৮৫)
- “হে আমার প্রতিপালক! তুমি আমাকে ক্ষমা কর, আমার পিতামাতাকে এবং সমস্ত মুমিনদেরও, যেদিন হিসাব-নিকাশ হবে।” (সূরা ইবরাহিম ১৪:৪১)
- “আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না।” (সূরা আজ-জুমার ৩৯:৫৩)
- “যে ব্যক্তি তওবা করে এবং ভালো কাজ করে, আল্লাহ তার পাপ মোচন করেন।” (সূরা আল-ফুরকান ২৫:৭০)
- “হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে সঠিক পথে পরিচালিত কর।” (সূরা আল-ফাতিহা ১:৬)
- “তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব।” (সূরা গাফির ৪০:৬০)
- “শান্তিই হলো জান্নাতবাসীদের প্রতিদান।” (সূরা ইউনুস ১০:২৫)
- “নিশ্চয়ই ঈমানদাররা একে অপরের ভাই।” (সূরা আল-হুজরাত ৪৯:১০)
- “হে মানুষ! তোমরা একে অপরকে দয়া ও ক্ষমার সাথে দেখো।” (সূরা আন-নুর ২৪:২২)
- “যে ব্যক্তি দয়া করে, আল্লাহও তার প্রতি দয়া করেন।” (সূরা আর-রহমান ৫৫:১৩)
- “দুষ্টের সাথে দুষ্টের ব্যবহার করো না, বরং ভালো দিয়ে তার প্রতিদান দাও।” (সূরা আল-মুমিনুন ২৩:৯৬)
- “জ্ঞান অর্জন কর, কারণ জ্ঞানই পথ দেখায়।” (সূরা ত্বোহা ২০:১১৪)
- “আল্লাহ যাকে ইচ্ছা জ্ঞান দেন, এবং জ্ঞানপ্রাপ্তরা মহা কল্যাণ অর্জন করে।” (সূরা আল-বাকারা ২:২৬৯)
- “তোমরা চিন্তা করো এবং উপলব্ধি করো।” (সূরা আল-হাশর ৫৯:২১)
- “যারা আল্লাহর পথে জ্ঞান অন্বেষণ করে, তাদের জন্য রয়েছে উত্তম পুরস্কার।” (সূরা আল-ফাতির ৩৫:২৮)
- “আল্লাহ সুবিচার করতে বলেন এবং অবিচার থেকে বিরত থাকতে বলেন।” (সূরা আন-নাহল ১৬:৯০)
- বাবাকে নিয়ে ক্যাপশন, Captions for father in Bengali
- ভাই নিয়ে ক্যাপশন, Captions about brother in Bengali
- নতুন ক্যাপশন বাংলা, New captions in Bengali
- অপেক্ষা নিয়ে ক্যাপশন, Opekkha niye caption in Bangla
- বৌ কে নিয়ে সেরা ক্যাপশন, Bou ke niye sera caption bangla
পরিশেষে
কুরআন শুধুমাত্র ধর্মীয় গ্রন্থ নয়, এটি মানবজাতির জন্য জীবনযাপনের একটি পূর্ণাঙ্গ সংবিধান। এতে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও আধ্যাত্মিক জীবনের দিকনির্দেশনা রয়েছে। কুরআন শিক্ষা দেয় ন্যায়বিচার, করুণা, সহনশীলতা ও মানবিকতার। এটি মুসলিমদের নামাজ, রোজা, হজ, যাকাতসহ দৈনন্দিন ইবাদত ও জীবনযাত্রার পথনির্দেশনা প্রদান করে।