ফুল ফুটুক আর নাই ফুটুক, বহু প্রতীক্ষিত বসন্তের প্রথম মাস হল এই ফাগুন মাস । ফাগুনের বন সেজে ওঠে ফুলের সম্ভারে, আনন্দ ও হাসিতে এবং সুরেলা বাঁশিতে।
ফাগুনের হাওয়ায় মন ভেসে যায় সুদূরে। অপরূপা ফাগুনের প্রকৃতির এই অমোঘ টান তাই উপেক্ষা করতে পারিনি লেখক এবং কবিরা, তাঁদের সুনিপুণ লেখনীতে বার বার ধরা পড়েছে ফাগুন দিনের বহু রঙিন রচনা ;কখনও যা কবিতা হয়ে ধরা দিয়েছে আবার কখনো বা গান হয়ে । নিচে উল্লেখ করা হল এমনই কিছু ফাগুনের কবিতা যা রঙিন বসন্তকে আরো রাঙিয়ে তুলবে ।
ফাগুন নিয়ে কবিতা, Faguner kobita in Bangla
- হে কবি! নীরব কেন-ফাল্গুন যে এসেছে ধরায়,
 বসন্তে বরিয়া তুমি লবে না কি তব বন্দনায়?”
 কহিল সে স্নিগ্ধ আঁখি তুলি-
 “দখিন দুয়ার গেছে খুলি?
 বাতাবী নেবুর ফুল ফুটেছে কি? ফুটেছে কি আমের মুকুল?
 দখিনা সমীর তার গন্ধে গন্ধে হয়েছে কি অধীর আকুল?”
- “এখনো দেখনি তুমি?” কহিলাম “কেন কবি আজ
 এমন উন্মনা তুমি? কোথা তব নব পুষ্পসাজ?”
 কহিল সে সুদূরে চাহিয়া-
 “অলখের পাথার বাহিয়া
 তরী তার এসেছে কি? বেজেছে কি আগমনী গান?
 ডেকেছে কি সে আমারে? -শুনি নাই,রাখিনি সন্ধান।”
- কহিলাম “ওগো কবি, রচিয়া লহ না আজও গীতি,
 বসন্ত-বন্দনা তব কণ্ঠে শুনি-এ মোর মিনতি।”
 কহিল সে মৃদু মধুস্বরে-
 “নাই হ’ল, না হোক এবারে-
 আমার গাহিতে গান! বসন্তরে আনিতে ধরিয়া-
 রহেনি,সে ভুলেনি তো, এসেছে তো ফাল্গুন স্মরিয়া।”
- কহিলাম “ওগো কবি, অভিমান করেছ কি তাই?
 যদিও এসেছে তবু তুমি তারে করিলে বৃথাই।”
 কহিল সে পরম হেলায়-
 “বৃথা কেন? ফাগুন বেলায়
 ফুল কি ফোটে নি শাখে? পুষ্পারতি লভে নি কি ঋতুর রাজন?
 মাধবী কুঁড়ির বুকে গন্ধ নাহি? করে নি সে অর্ঘ্য বিরচন?”
- “হোক, তবু বসন্তের প্রতি কেন এই তব তীব্র বিমুখতা?”
 কহিলাম “উপেক্ষায় ঋতুরাজে কেন কবি দাও তুমি ব্যথা?”
 কহিল সে কাছে সরি আসি-
 “কুহেলী উত্তরী তলে মাঘের সন্ন্যাসী-
 গিয়াছে চলিয়া ধীরে পুষ্পশূন্য দিগন্তের পথে
 রিক্ত হস্তে। তাহারেই পড়ে মনে, ভুলিতে পারি না কোন মতে।”
- “স্বপ্নের ভিতরে বুঝি–ফাল্গুনের জ্যোৎস্নার ভিতরে।
 দেখিলাম পলাশের বনে খেলা করে
 হরিণেরা; রূপালি চাঁদের হাত শিশিরে পাতায়;
 বাতাস ঝরিছে ডানা — মুক্তা ঝ’রে যায়
 পল্লবের ফাঁকে ফাঁকে-বনে বনে-হরিণের চোখে;
 হরিণেরা খেলা করে হাওয়া আর মুক্তার আলোকে।
 হীরের প্রদীপ জ্বেলে শেফালিকা বোস যেন হাসে
 হিজল ডালের পিছে অগণন বনের আকাশে,–
 বিলুপ্ত ধূসর কোন পৃথিবীর শেফালিকা, আহা,
 ফাল্গুনের জ্যোৎস্নায় হরিণেরা জানে শুধু তাহা।
 বাতাস ঝাড়িছে ডানা, হীরা ঝরে হরিণের চোখে–
 হরিণেরা খেলা করে হাওয়া আর হীরার আলোকে।
ফাগুনের কবিতা সংক্রান্ত আমাদের আজকের এই পোস্টটি ভালো লেগে থাকলে আশা করি রঙিন বসন্তের বর্ণময় উক্তি সম্পর্কিত আমাদের পোস্টটি ও আপনাদের মনের মতন হবে।
ফাগুনের ভালোবাসার কবিতা, Love poems on Falgun in Bangla
- ফাগুন মানেই প্রেমের প্রতীক- নতুন করে শুরু
 তোমার ছোঁয়ায় শ্রান্তি মেলে, হৃদকম্প দুরুদুরু
 প্রেমের নামে নতুন করে হাতটা ধরো আবার
 তুমি যে হও প্রানের সখা, কোথায় বলো যাবার
- আজি দোল-ফাগুনের দোল লেগেছে
 আমের বউলে দোলন-চাঁপায়।
 মৌমাছিরা পলাশ ফুলের গেলাস ভরে মউ পিয়ে যায়।
 শ্যামল পাতার কোলে কোলে
 আবির-রাঙা কুসুম দোলে,
 দোয়েল শ্যামা লহর তোলে
 কৃষ্ণচূড়ার ফুলেল শাখায়॥
 বন-গোপিনী ফুল ছুঁড়ে ওই
 খেলে হোরি দখিন-বায়ে,
 হলদে পাখি দোদুল দুলে
 সোনাল শাখায় আদুল গায়ে।
 ভাঁট-ফুলের এ নাট-দেউলে
 রঙিন প্রজাপতির দুলে,
 মন ছুটে যায় দূর গোকুলে
 বৃন্দাবনে প্রেম-যমুনায়॥
- পায়ে পায়েল রুমঝুম;
 ফাল্গুনে শুরু হয় গুনগুনানী, ভোমরাটা গায় ঘুম ভাঙানি,
 এক ঝাঁক পাখি এসে ঐকতানে, গান গায় একসাথে ভোর বিহানে।
- “ফাগুন, ফাগুন, ফাগুন এলো
 আগুন জ্বলে রাজপথে,
 দামাল ছেলে পণ করেছে
 হারবো না মা আজ হতে
 ওরা যেই করল হুকুম
 মা বলে আর ডাকতে মানা
 ভাইয়েরা সেই গর্জে ওঠে
 তা হবে না, তা হবে না।
 ঘর ছেড়ে সব ছুটে এলো
 জড়ো হলো এক সাথে
 হায়নারা যে মারলো থাবা
 কাড়লো মায়ের বুকের ধন
 তবুও তো হারল না’ক
 মুয়ের মুখের বুলির মান
 লাল হল রাজ পথের মাটি
 কৃষ্ণচুড়া সেই সাথে।
- কেউ বলে ফাল্গুন
 কেউ বলে পলাশের মাস
 আমি বলি আমার সর্বনাশ,
 কেউ বলে দখিনা
 কেউ বলে মাতাল বাতাস,
 আমি বলি আমার দীর্ঘশ্বাস।।
- ফাগুনেরও মোহনায় মন মাতানো মহুয়ায়
 রঙ্গিনী বিহুর নেশা কোন আকাশে নিয়ে যায়
 ফাগুনেরও মোহনায়
 ও মোর মন হারিয়ে যায়,
 কন্যেরে তোর ভাবনা ঝিলমিলিয়ে যায়রে
 ঝিলমিলিয়ে যায়
 কোন অচেনা দেশের তরে
 তোর সাথে এই তেপান্তরে
 মোর মনের প্রজাপতি নাচি নাচি, ঘুরি ঘুরি,
 উড়ি উড়ি, উড়ে যায়
 মন হারানোর ঠিকানায়
 প্রেম রাঙ্গা মোর কবিতা সুরেরও অন্তরে
 ঝির ঝিরি ঝর্না ধারায় নতুন রঙ ঝরে
 সবুজে সবুজে হৃদয় কেমন করে
 ও মোর দিন উড়িয়া যায়রে,
 দিন উড়িয়া যায়
 কন্যেরে তোর ভাবনা গুনগুনিয়ে যায়রে,গুনগুনিয়ে যায়
 তোর স্বপ্নের ভ্রমরি, মোর প্রেমেরও প্রহরী
 হৃদয়েরও বাগিচাই নাচি নাচি, ঘুরি ঘুরি,
 উড়ি উড়ি, উড়ে যায়
 মন হারানোর ঠিকানায়
ফাগুনের কবিতা সংক্রান্ত আমাদের আজকের এই পোস্টটি ভালো লেগে থাকলে আশা করি শরৎকাল রচনা সম্পর্কিত আমাদের পোস্টটি ও আপনাদের মনের মতন হবে।
ফাগুনের ছন্দ, Best Fagun poetic phrase
- ফাগুন, হাওয়ায় হাওয়ায় করেছি যে দান–
 তোমার হাওয়ায় হাওয়ায় করেছি যে দান–
 আমার আপনহারা প্রাণ আমার বাঁধন-ছেড়া প্রাণ॥
 তোমার অশোকে কিংশুকে
 অলক্ষ্য রঙ লাগল আমার অকারণের সুখে,
 তোমার ঝাউয়ের দোলে
 মর্মরিয়া ওঠে আমার দুঃখরাতের গান॥
 পূর্ণিমাসন্ধ্যায় তোমার রজনীগন্ধায়
 রূপসাগরের পারের পানে উদাসী মন ধায়।
 তোমার প্রজাপতির পাখা
 আমার আকাশ-চাওয়া মুগ্ধ চোখের রঙিন-স্বপন-মাখা।
 তোমার চাঁদের আলোয়
 মিলায় আমার দুঃখসুখের সকল অবসান॥
 ফাল্গুনে বিকশিত
 কাঞ্চন ফুল,
 ডালে ডালে পুঞ্জিত
 আম্রমুকুল।
 চঞ্চল মৌমাছি
 গুঞ্জরি গায়,
 বেণুবনে মর্মরে
 দক্ষিণবায়।
 স্পন্দিত নদীজল
 ঝিলিমিলি করে,
 জ্যোৎস্নার ঝিকিমিকি
 বালুকার চরে।
 নৌকা ডাঙায় বাঁধা,
 কাণ্ডারী জাগে,
 পূর্ণিমারাত্রির
 মত্ততা লাগে।
 খেয়াঘাটে ওঠে গান
 অশ্বথতলে,
 পান্থ বাজায়ে বাঁশি
 আন্মনে চলে।
 ধায় সে বংশীরব
 বহুদূর গাঁয়,
 জনহীন প্রান্তর
 পার হয়ে যায়।
 দূরে কোন্ শয্যায়
 একা কোন্ ছেলে
 বংশীর ধ্বনি শুনে
 ভাবে চোখ মেলে-
 যেন কোন্ যাত্রী সে,
 রাত্রি অগাধ,
 জ্যোৎস্নাসমুদ্রের
 তরী যেন চাঁদ।
 চলে যায় চাঁদে চ’ড়ে
 সারা রাত ধরি,
 মেঘেদের ঘাটে ঘাটে
 ছুঁ’য়ে যায় তরী।
 রাত কাটে, ভোর হয়,
 পাখি জাগে বনে-
 চাঁদের তরণী ঠেকে
 ধরণীর কোণে।
- এই আগুনে হাত রাখো
 আর ফাগুনে মুখ ঢাকো।
 এই নিরাশার ভেলায়
 মিছে জীবনের ছবি আঁকো .
- ওরে ভাই, ফাগুন লেগেছে বনে বনে,
 ডালে ডালে ফুলে ফলে পাতায় পাতায় রে,
 আড়ালে আড়ালে কোণে কোণে।
 ওরে ভাই, ফাগুন লেগেছে বনে বনে।
 রঙে রঙে রঙিল আকাশ,
 গানে গানে নিখিল উদাস।
 যেন চল-চঞ্চল নব পল্লব দল,
 মর্মরে মোর মনে মনে।
 ফাগুন লেগেছে বনে বনে,
 ওরে ভাই, ফাগুন লেগেছে বনে বনে।
 হেরো হেরো অবনীর রঙ্গ,
 গগনের করে তপোভঙ্গ।
 হাসির আঘাতে তার মৌন রহে না আর,
 কেঁপে কেঁপে ওঠে খনে খনে।
 বাতাস ছুটিছে বনময় রে,
 ফুলের না জানে পরিচয় রে।
 তাই বুঝি বারে বারে কুঞ্জের দ্বারে দ্বারে,
 শুধায়ে ফিরিছে জনে জনে।
 ফাগুন লেগেছে বনে বনে,
 ওরে ভাই, ফাগুন লেগেছে বনে বনে।
- ফাগুনের নবীন আনন্দে
 গানখানি গাঁথিলাম ছন্দে॥
 দিল তারে বনবীথি
 কোকিলের কলগীতি,
 ভরি দিল বকুলের গন্ধে॥
 মাধবীর মধুময় মন্ত্র
 রঙে রঙে রাঙালো দিগন্ত।
 বাণী মম নিল তুলি
 পলাশের কলিগুলি,
 বেঁধে দিল তব মণিবন্ধে॥
 ফাগুন বেলায়
 আগুন রাঙা মেলায়।
 রোদ্র জ্বলে মন ভিজে
 একী বিশুদ্ধ নৈস্বর্গীয় অনল
 শিহরিয়া উঠে ধরার অঞ্চল।
- শীতের শেষে আসল ফাগুন 
 দিনগুলি যে হয়েছে আগুন ফাগুনের এই আগুন দিনে
 মন হারিয়ে যায় রঙিন ক্ষণে
 বাসন্তী হাওয়া বইছে চারিদিকে
 ফুল ও দেখি ফুটছে শিমুলবনে
 কোকিল ও দেখি ডাকছে ডালে এই বুঝি বসন্ত এল বলে
- রুক্ষ শীতের শূন্যতা শেষ- প্রান ফিরেছে ধরায়,
 অনুভূতির রঙ্গিন ফেরি সর্বাঙ্গে জড়ায়।
 গুনগুনিয়ে ভ্রমর চলে, মৌমাছিও আছে,
 সরিষা ক্ষেতে মধু পাবে, মুকুল আমের গাছে।
 বউ কথা কও ডাকছে পাখি, কোকিল ধরে গান।
 হিয়ায় আমার বিধলো বুঝি, মদন দেবের বান!
- বাতায়নে বসে আছি সুর বাধি যে মনে,
 সখার আশায় চেয়ে থাকি কুঞ্জ বনের পানে।
 তানপুরাতে আঙ্গুল চলে সুরের ঐকতান,
 দক্ষিণ হাওয়া উদাস করে, বেসুরো সব গান।
 ফাগুন আমায় বিভোর করে, হারাই নিজেকে
 শূন্য হিয়ার আড়ালে তবু হাসি জড়াই মুখে,
 আক্ষেপ আমি এড়াতে নারি; দুপুর বিষন্ন
 ফাগুন মানেই সুখ শুধু নয়- নির্জীব অপরাহ্ন।
- প্রকৃতিতে সুর উঠেছে, ফাগুন এলো দ্বারে;
 বরতে হবে বসন্তরে রাঙা পুষ্প হারে।
 রাজপথ ছেয়ে আছে কৃষ্ণচূড়ার লালে,
 চতুর্দিকে সুবাস ছড়ায় হরেক রকম ফুলে।
 রুদ্র-পলাশ, স্বর্ন-শিমুল, পলাক-জুই এর সাথে;
 রক্ত-কাঞ্চন, ক্যামেলিয়া, ইউক্যালিপটাসও আছে।
 মহুয়া, অশোক, কুসুম, কুরচি সুগন্ধ ছড়ায়;
 দেবদারু আর গামারি ফুলেও মুগ্ধতা মেলায়।
 বৃক্ষ শাখে নব বৃন্ত- ঝরা পাতার শেষ;
 গাছের শাখে রাঙ্গা পাতা দেখতে লাগে বেশ।
- বিশ্ব দুগ্ধ দিবসের বার্তা, World Milk Day Quotes in Bengali
- পূর্ণিমা নিয়ে উক্তি, Quotes about full moon in Bengali
- বিশ্ব শ্রবণ দিবসের ইতিহাস, তাৎপর্য ও বার্তা, World Hearing Day Quotes in Bengali
- অমাবস্যা নিয়ে উক্তি, Quotes about Amavasya in Bengali
- একাদশী নিয়ে উক্তি, Quotes about Ekadashi in Bengali
পরিশেষে, Conclusion
ফাগুনের কথা ও ফাগুনের কবিতা নিয়ে সাজানো আমাদের বিবরণী টি আশা করি দর্শক বন্ধুদের মনোগ্রাহী হতে পেরেছে । এই পরিপ্রেক্ষিতে আপনাদের মূল্যবান মতামত জানালে আমরা নিজেদের আরও সমৃদ্ধ করতে পারব এবং এগিয়ে চলার অনুপ্রেরণা পাব ।

 
 
 
  
 