পৌরাণিক রীতি এবং বিশ্বাস অনুসারে, বিঘ্নহরতা শ্রী গণেশ ভাদ্রপদ শুক্লা চতুর্থীর দিন জন্মগ্রহণ করেন আর তাই এই বিশেষ দিনটিতে, “গণেশ চতুর্থী’ বা ‘বিনায়ক চতুর্থী’ পালন করা হয়। হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী , ভক্তদের মনবাঞ্ছা পূর্ণ করার উদ্দেশ্য নিয়েই শিব-পার্বতীর পুত্র মর্তে অবর্তীণ হন। হর-পার্বতী -পুত্র গজানন অর্থাৎ গণেশ হলেন বুদ্ধি, সমৃদ্ধি ও সৌভাগ্যের সর্বোচ্চ দেবতা। Happy Ganesh Chaturthi quotes, captions and wish messages, greetings are here.
সকল দেবতার মধ্যে তাই সিদ্ধিদাতা গণেশকেই প্রথম উপাসক হিসাবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। গণেশ পুজোকে বাদ দিয়ে কোনও পুজোই সম্পূর্ণ হয় না বা সম্পন্ন করা যায় না ।প্রতি বছর সমগ্র দেশজুড়ে মহা ধুমধামের সাথে পালন করা হয় পার্বতী নন্দন গণেশের পুজো। সিদ্ধিদাতা গণেশের জন্মোৎসব রূপে পালিত হয় এই উৎসব।
গণেশ চতুর্থী উপলক্ষ্যে শুভেচ্ছাবার্তা
ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনে নানা বিপত্তি থেকে মুক্তি পেতে ভক্তরা সিদ্ধিদাতার পুজো করে থাকেন। গণেশ চতুর্থীর শুভ দিনটিতে জনসাধারণ গণেশকে তাদের বাড়িতে নিয়ে আসে। এই পূজা দুর্গা পুজোর মতোই দশদিন ধরে চলে এবং দশদিনব্যাপী গণেশোৎসবের সমাপ্তি হয় অনন্ত চতুর্দশীর দিন। গণেশ চতুর্থীর একাদশতম দিনে শ্রী গণেশ কে আড়ম্বরপূর্ণভাবে বিসর্জন দেওয়া হয়।যেকোনো মঙ্গলময় কাজের সূত্রপাত ঘটে গণেশ পুজোর সাথেই।
সময় ও নির্ঘণ্ট ~ Ganesh Puja Timings & Schedule
‘ভাদ্রপদ শুক্লপক্ষ চতুর্থী মধ্যাহ্নব্যাপিনী পূর্বাবিদ্ধ’ – এই পূজার সর্বাধিক প্রশস্ত সময়। চতুর্থী তিথি যদি দুই দিনে পড়ে তাহলে পূর্বদিনে পূজা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। যদিও বা দ্বিতীয় দিন মধ্যাহ্নের সম্পূর্ণ সময়ে চতুর্থী বিদ্যমান থাকে এবং পূর্বদিন মধ্যাহ্নে এক ঘটিকার (২৪ মিনিট) জন্যও যদি চতুর্থীর তিথি থেকে থাকে তবে পূর্বদিনেই গণেশ পূজা হয়।
গণেশের আরাধনার জন্য যে যে সামগ্রী গুলি প্রয়োজনীয় তা হল- লাল ফুল, দূর্বা ঘাস, মোদক, নারকেল, লাল চন্দন, ধুনো ও ধূপ। ফুলের মধ্যে লাল জবা কিংবা গোলাপের মালা ব্যবহার করা হয়ে থাকে। দূর্বার মালাও গণেশ আরাধনার ক্ষেত্রে উপযুক্ত । তাছাড়া গণপতি বাপ্পার প্রিয় লাড্ডু, মোদক, নারকেল নাড়ু পান-সুপুরি প্রসাদের জন্য অগ্রগণ্য ।
গণেশ চতুর্থীর শুভেচ্ছাবার্তা নিয়ে উক্তি সংক্রান্ত আমাদের আজকের এই পোস্টটি ভালো লেগে থাকলে আশা করি দুর্গাপূজা – বাংলা রচনা সম্পর্কিত আমাদের পোস্টটি ও আপনাদের মনের মতন হবে।
উদ্ভব ~ কিভাবে গনেশ চতুর্থী শুরু হলো ~ How Ganesh Chaturthi Started explained in Bangla
স্বতন্ত্র এবং পৃথক দেবতা রূপে গণেশের উদ্ভব খ্রিষ্টীয় চতুর্থ ও পঞ্চম শতাব্দীতে গুপ্তযুগে হয়েছিল। তবে একাধিক বৈদিক ও প্রাক-বৈদিক উৎস থেকেও গণেশের উল্লেখ পাওয়া গেছে এবং দেবতা হিসেবে তাঁর জনপ্রিয়তা অতি দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং নবম শতাব্দীতে পঞ্চ প্রধান স্মার্ত দেবতার অন্যতম রূপ হিসেবে বিবেচিত এবং মান্য হন সিদ্ধিদাতা গণেশ।
এই সময়কালে গণেশকে সর্বোচ্চ দেবতা হিসেবে স্বীকার করা হয় এবং গাণপত্য সম্প্রদায়ের উদ্ভব ঘটে। গণেশ সম্বন্ধীয় প্রধান ধর্মগ্রন্থগুলি হল গণেশ পুরাণ, মুদগল পুরাণ, ও গণপতি অথর্বশীর্ষ। আধুনিক কালে পেশোয়া যুগের পরে মহারাষ্ট্রের পুনে শহরে বারোয়ারি গণেশপুজোর সূত্রপাত ঘটেছিল যেখানে খুব অল্পসংখ্যক লোকজন অংশগ্রহণ করে।
পরবর্তীকালে লোকমান্য তিলকের সংবাদপত্ৰ ‘কেশরী’তে ১৮৯৩ সালে এই উদ্যোগের অতি প্ৰশংসা করে গণেশ উৎসবের খবর ছেপে প্রকাশ করা হয় ৷ মূলত মুম্বইতে লোকমান্য তিলকের উদ্যোগেই বাৰ্ষিক বারোয়ারি উৎসবে পরিণত হয় গণেশ চতুর্থী । এখনকার দিনে মুম্বইতে গণেশ চতুর্থীতে যে গ্রহণযোগ্যতা এবং জনপ্রিয়তা দেখা যায় তার রূপদান করেছিলেন লোকমান তিলক মহাশয় নিজেই।
গণেশ চতুর্থীর শুভেচ্ছাবার্তা নিয়ে উক্তি সংক্রান্ত আমাদের আজকের এই পোস্টটি ভালো লেগে থাকলে আশা করি গুরু পূর্ণিমার শুভেচ্ছা সম্পর্কিত আমাদের পোস্টটি ও আপনাদের মনের মতন হবে।
গণেশের বিভিন্ন নাম এবং রূপ ~ Different names and roops of Ganesh described in Bengali
হর-পার্বতীর সন্তান গণেশের রূপ বিভিন্ন শাস্ত্রগ্রন্থে বিভিন্ন ধরনের ; তবে সব ক্ষেত্রেই তিনি গজমুণ্ড মনুষ্যাকার দেবতা। গণেশের বাহন মূষিক বা ইঁদুর; আবার কোনও কোনও স্থলে সিংহ। গণেশকে মনে করা হয় সর্ববিঘ্নহন্তা ।
তিনি মূলত প্রারম্ভের দেবতা, বিঘ্নের দেবতা । তিনি শিল্পকলা ও বিজ্ঞানের পৃষ্ঠপোষক, এবং মহাবল, মেধা ও বুদ্ধির দেবতা হিসেবেও সুপ্রসিদ্ধ। কোনো কিছু লেখার সময় তাঁকে অক্ষরের পৃষ্ঠপোষকরূপে আবাহন করার রীতি প্রচলিত আছে।
একাধিক পৌরাণিক সূত্র থেকে আমরা তাঁর জন্ম, কীর্তিকলাপ ও মূর্তিতত্ত্বের ব্যাখ্যা পেয়ে থাকি। গণেশের নানা রূপের মধ্যে জটামুকুট, ত্রিনয়ন, নাগ উপবীত প্রভৃতি লক্ষণ হল শিবের চিহ্ন; পরশুরামের সঙ্গে যুদ্ধের সময়কালে কুঠারের আঘাতে একটা দাঁত হারিয়ে গণেশের নাম হয় ‘একদন্ত’। ৷গণেশের গায়ের বর্ণ লাল, তাই এই রং তাঁর বিশেষ প্রিয় বলে বিভিন্ন উপাখ্যানে বর্ণনা করা হয়ে থাকে।
গণেশের অন্যান্য নামগুলি হল গণপতি, বিনায়ক, মহাগণপতি, বিরিগণপতি, শক্তিগণপতি, বিদ্যাগণপতি, হরিদ্রাগণপতি, উচ্ছিষ্টগণপতি, লক্ষ্মীবিনায়ক, হেরম্ব, বক্রতুণ্ড, একদন্ত, মহোদর, গজানন, লম্বোদর, বিকট ও বিঘ্নরাজ। দুর্গা(অম্বিকা) এবং চামুণ্ডা, এই দুজনে গণেশকে পালন করেছিলেন বলে তাঁকে ‘দ্বৈমাতুর’ নামেও অভিহিত করা হয়ে থাকে।
গণেশ চতুর্থীর শুভেচ্ছাবার্তা নিয়ে উক্তি সংক্রান্ত আমাদের আজকের এই পোস্টটি ভালো লেগে থাকলে আশা করি রথযাত্রা সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য সম্পর্কিত আমাদের পোস্টটি ও আপনাদের মনের মতন হবে।
নানান নামে গণেশ চতুর্থী
গজানন গণেশ হিন্দুদের বুদ্ধি, সমৃদ্ধি ও সৌভাগ্যের সর্বোচ্চ দেবতা হিসেবে চিহ্নিত।সংস্কৃত, কন্নড়, তামিল ও তেলুগু ভাষায় এই উৎসব বিনায়ক চতুর্থী বা বিনায়ক চবিথি নামেও জানা যায় । কোঙ্কণি ভাষায় গণেশ চতুর্থীর নাম চবথ ;অপরদিকে নেপালি ভাষায় এই উৎসবকে বলা হয় চথা ।
গণেশ পূজা ভারতের প্রায় সর্ব স্থানেই অনুষ্ঠিত হলেও এই উৎসব মূলত মহারাষ্ট্র, গোয়া, গুজরাত, কর্ণাটক, তামিলনাড়ু ও অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যে বিশেষ উৎসাহ এবং উদ্দীপনা সহকারে পালন করা হয়। ভারতের বাইরে নেপালে ও এই উৎসব মহাসমারোহে পালিত হয় এবং শ্রীলঙ্কায় তামিল হিন্দুরাও এই উৎসবের অায়োজন করে থাকেন।
মহেশ্বর ও দেবী পার্বতীর দ্বিতীয় পুত্র গণেশের আরাধনা তাই হিন্দুদের অন্যান্য পুজোগুলির মধ্যে অন্যতম সর্বাধিক জনপ্রিয় একটি উত্সব।
গণেশ চতুর্থীর শুভেচ্ছাবার্তা নিয়ে উক্তি সংক্রান্ত আমাদের আজকের এই পোস্টটি ভালো লেগে থাকলে আশা করি বাঙালীর উৎসব নিয়ে সেরা রচনা সম্পর্কিত আমাদের পোস্টটি ও আপনাদের মনের মতন হবে।
গণেশ চতুর্থী উপলক্ষ্যে শুভেচ্ছাবার্তা ~ Bengali Quotes, Wishes and Messages for Happy Ganesh Chaturthi or Vinayak Puja
- “শ্রী গণেশ আপনার ও আপনার পরিবারের সকলের সমৃদ্ধি এবং আনন্দের প্রাচুর্যে অভিষিক্ত করে আশীর্বাদ করুন।”~~ গণেশ চতুর্থী উপলক্ষ্যে সকলকে জানাই হার্দিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা।
- বন্দ দেব গজানন বিঘ্ন বিনাশন।
নমঃ প্রভু মহাকায় মহেশ নন্দন।।
~~~গণেশ চতুর্থীর পূণ্য লগ্নে সকলকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। গণপতি বাপ্পা আপনাদের সকলের মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করুন; সুখ শান্তি ও সমৃদ্ধিতে ভরিয়ে তুলুক আপনার পরিবার!! - সর্ববিঘ্ন নাশ হয় তোমার শরণে।
অগ্রেতে তোমার পূজা করিনু যতনে।।
নমো নমো লম্বোদর নমঃ গণপতি।
মাতা যার আদ্যাশক্তি দেবী ভগবতী।।
~~~গণেশ চতুর্থীর পুণ্যতিথিতে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি যেন পৃথিবী বিপদমুক্ত হয় ; সুখ শান্তি ও সমৃদ্ধি যেন বিরাজ করে প্রতি ঘরে ঘরে ! - একদন্তং মহাকায়ং লম্বোদর গজাননম।
বিঘ্নবিনাশকং দেবং হেরম্বং পনমাম্যহম।।
~~গণেশ চতুর্থী উপলক্ষ্যে সকলকে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন ও হার্দিক শুভকামনা। - সর্বদেব গণনায় অগ্রে যার স্থান।
বিধি-বিষ্ণু মহেশ্বর আর দেবগণ।।
ত্রিনয়নী তারার বন্দিনু শ্রীচরণ।
বেদমাতা সরস্বতীর লইনু শরণ।।
~~~শ্রী গণেশের আশীর্বাদে আলোকিত হোক আপনার ঘর ; সফলতা কড়া নাড়ুক আপনার ঘরে ,আনন্দে ভরে উঠুক আপনার সংসার !!! - “সিদ্ধিদাতা তুমি দেব শাস্ত্রের বচন তোমার চরণে প্রভু লইনু স্মরণ”
তবু নাম লয় যে বা ভক্তিপূর্ণ মনে বিপদ থাকে না তার কভু ত্রিভুবনে “
~~গণেশ চতুর্থীর এই পবিত্র দিনটিতে সিদ্ধিদাতা গণেশের কাছে আশীর্বাদ প্রার্থনা করি যেন তিনি পৃথিবীকে রোগমুক্ত করেন ; সকলের যেন মঙ্গল সাধন হয়। ॥শুভ গণেশ চতুর্থী ॥ - ভগবান শ্রী সিদ্ধিবিনায়ক গণেশ সকলকে জ্ঞান, সমৃদ্ধি ও সৌভাগ্যের আশীর্বাদ প্রদান করুক এই কামনা সর্বান্তকরণে করি !! গণেশ চতুর্থীর প্রীতি ,শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা !!!
- বক্রতুন্ড মহাকায় সূর্যকোটি সমঃপ্রভ। নির্বিঘ্নম্ কুরুমেদৈব সর্বকার্যেষু সর্বদা~~~~
সিদ্ধিদাতা গণেশ আপনার সমস্ত বাধা , বিপত্তি দূর করুন এবং আপনার সকল কাজে যেন সফলতা আসে। প্রার্থনা করি যেন এই উৎসবের মধ্যে দিয়ে আমাদের দেশ শান্তি, সম্প্রীতি ও সমৃদ্ধিতে ভরে উঠুক।’ গণেশ চতুর্থীর আন্তরিক শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা !!! - “অগ্রেতে তোমার পূজা করিনু যতনে।। নমো নমো লম্বোদর নমঃ গণপতি।”
~~~গণেশ চতুর্থীর শুভকামনা রইলো বিশ্ববাসীর শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনায় !!! - ‘গণপতি বাপ্পা মোরিয়া, মঙ্গলমূৰ্তি মোরিয়া’ ~ সিদ্ধিদাতা গণেশ আপনার জীবনের সকল অভাব দূর করুন, সকল সংকট মোচন করুন । শান্তি বিরাজ করুক আপনার সংসারে প্রতিনিয়ত। ॥শুভ গণেশ চতুর্থী ॥
সমস্ত শুভ কাজের শুরু শ্রী গণেশের নাম নিয়ে করলে তা সফল হয়; গণেশ চতুর্থী উপলক্ষ্যে প্রিয়জনকে পাঠানো শুভেচ্ছাবার্তায় আশা করি দিনটির মাহাত্ম্য আরও প্রবলভাবে প্রকট হবে এবং আপনার জীবন সমৃদ্ধ এবং আরও সুখময় হয়ে উঠবে।
॥ওঁ গাং গণেশায় নমঃ॥
গণেশ চতুর্থীর শুভেচ্ছাবার্তা নিয়ে উক্তি সংক্রান্ত আমাদের আজকের এই পোস্টটি ভালো লেগে থাকলে আশা করি ঝুলন যাত্রা উৎসবের সমস্ত তথ্য ও শুভেচ্ছাবার্তা সম্পর্কিত আমাদের পোস্টটি ও আপনাদের মনের মতন হবে।
পরিশেষে, Conclusion
গণেশ চতুর্থীর শুভেচ্ছাবার্তা নিয়ে উক্তি সংক্রান্ত আজকের এই পোষ্টটি আপনাদের পছন্দ হলে আশা করব আপনারা আপনাদের বন্ধু মহলে, পরিজনকেও সোশ্যাল মিডিয়াতে পোস্টটি শেয়ার করে নেবেন।