উইলিয়াম জেফারসন ক্লিনটন, বিল ক্লিনটন নামেই সমধিক পরিচিত। তিনি একজন সুপরিচিত আমেরিকান রাজনীতিবিদ। বিল ১৯৯৩ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত সর্বোচ্চ সরকারি পদে কর্মরত ছিলেন।
৩০ বছর বয়সকালে তিনি আরকানসাসের অ্যাটর্নি জেনারেল নির্বাচিত হন। পরে ৩২ বছর বয়সকালে বিচারমন্ত্রী হিসেবে ১১ বছরের জন্য দায়িত্ব পালন করেন। তিনি রাজ্যের ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ গভর্নর ছিলেন। এসব ছাড়াও বিল ক্লিনটন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪২ তম রাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন।
বিল ক্লিনটনের প্রারম্ভিক জীবন, Bill Clinton’s Early Life
তৃতীয় ক্লিনটন উইলিয়াম জেফারসন ব্লিথ ১৯৪৬ সালের ১৯ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আরকানসাসের হোপ শহরে জুলিয়া চেস্টার হাসপাতালে জন্ম হয় তাঁর। ব্লিথ উইলিয়াম জেফারসন ব্লিথ জুনিয়র এবং ভার্জিনিয়া ডেল ক্যাসিডির সন্তান। ক্লিনটনের পিতা পেশাগত ভাবে একজন ভ্রমণ বিক্রয়কর্মী ছিলেন। দুর্ভাগ্যবশত তাঁর জন্মের তিন মাস পূর্বে এক অটোমোবাইল দুর্ঘটনায় জেফারসনের প্রাণ বিয়োগ ঘটে।
এই দম্পতি ১৯৪৩ সালের ৪ সেপ্টেম্বর, বিয়ে করেছিলেন। তবে, যদিও এই বিবাহ পরবর্তী সময়ে বহুবিবাহ হিসাবে প্রমাণিত হয়েছিল। এর কারণ হল, জেফারসন তখনও তাঁর তৃতীয় স্ত্রীর সাথে বিবাহিত ছিলেন। ভার্জিনিয়া পুত্র বিলের জন্ম হওয়ার পরপরই নার্সিং অধ্যয়নের জন্য নিউ অরলিন্সে চলে যান। বিলকে তাঁর নানা-নানীর কাছে হোপে রেখে যান।
নানা-নানী একটি ছোট মুদি দোকানের মালিক ছিলেন। ১৯৫০ সালে বিলের মা নার্সিং স্কুল থেকে ফিরে এসে রজার ক্লিনটন সিনিয়রকে বিবাহ করেন। পরবর্তী সময়ে ১৯৫০ সালে পরিবারটি হট স্প্রিংসে চলে আসে।
বারাক ওবামার জীবনী, Best Biography of Barack Obama in Bengali
বিল ক্লিনটনের শিক্ষাজীবন, Bill Clinton’s educational career
হট স্প্রিংসে থাকাকালীন সময়ে ক্লিনটন সেন্ট জন’স ক্যাথলিক এলিমেন্টারি স্কুল, র্যাম্বল এলিমেন্টারি স্কুল এবং হট স্প্রিংস হাই স্কুলে পড়াশোনা করেছিলেন।, স্কুল জীবনে তিনি একজন সক্রিয় ছাত্র নেতা, আগ্রহী পাঠক এবং সঙ্গীতজ্ঞ ছিলেন।
১৯৬১ সালে, ক্লিনটন হট স্প্রিংস চ্যাপ্টার অফ দ্য অর্ডার অফ ডিমোলে-এর সদস্য হন, এটি ফ্রিম্যাসনরির সাথে যুক্ত একটি যুব গোষ্ঠী ছিল, কিন্তু তিনি কখনই ফ্রিম্যাসন হননি। স্কুল জীবন শেষ করে বিল ক্লিনটন জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন।
সেখান থেকে আন্তর্জাতিক বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। পরবর্তীতে ইংল্যান্ডে চলে যান। সেইখানে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি কলেজে কিছু দিন পড়াশুনা করেন। পরে আইন বিষয় নিয়ে পড়ার জন্য আমেরিকার ইয়েল ল’ স্কুলে চলে আসেন। শৈশবে বিলের স্বপ্ন ছিল ডাক্তার হওয়ার। কিন্তু ওয়াশিংটনে একবার যুবকদের এক অনুষ্ঠানে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কেনেডির সঙ্গে তাঁর দেখা হয়। এর পর থেকেই তিনি রাজনীতিতে আসার ব্যাপারে মনস্থির করেন।
মার্কিন রাষ্ট্রপতি জো বাইডেনের জীবনী, Best Biography of President Joe Biden in Bengali
বিল ক্লিনটনের প্রেসিডেন্সির আগেকার কেরিয়ার, Bill Clinton’s Pre-Presidency Career
কর্মজীবনের প্রথম দিকে ১৯৭৪ সালে, ক্লিনটন একজন আইন প্রফেসর হিসেবে কর্মরত ছিলেন। পরবর্তী সময়ে হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভের জন্য দৌড়ে তিনি পরাজিত হন।
১৯৭৪ সালে কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের নির্বাচনে অংশ নেন তিনি। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে সেখানে হেরে যান। অনির্বাচিত হয়ে ১৯৭৬ সালে বিল অ্যারকোনিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেলের দায়িত্ব ছেড়ে দেন। ১৯৭৮ সালে তিনি আরকানসাসের গভর্নর পদে বহাল হন। ১৯৮৩ সালে তিনি গভর্নর হিসেবে নির্বাচিত হন। বিল রাষ্ট্রের সর্বকনিষ্ঠ গভর্নর ছিলেন।
জর্জ বুশের বিস্তারিত জীবনী, Best biography of George Bush in Bengali
বিল ক্লিনটনের রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচন, Bill Clinton’s election to the presidency
বিল ক্লিনটন ১৯৯২ সালে, রাষ্ট্রপতি পদের জন্য ডেমোক্রেটিক প্রার্থী হিসেবে মনোনীত হন।
প্রকৃতপক্ষে, প্রেসিডেন্সিয়ালের পক্ষে তিনটি পার্টির মধ্যে দ্বন্দ্ব ছিল, যার মধ্যে রস পেরোট ১৮.৯% ভোট পেয়েছিলেন এবং প্রেসিডেন্ট বুশ ৩৭% ভোট পান, অন্যদিকে বিল ক্লিনটন ৪৩% ভোট পেয়ে জয়ী হন। অত্যন্ত দক্ষতার সাথে রিপাবলিকানদের সমঝোতার মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনা করতেন বিল ক্লিনটন। এর ফলস্বরূপ ১৯৯৬ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে পুনরায় প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হন তিনি।
১৯৯৮ সালে প্রতিনিধি পরিষদ যৌন হয়রানির অভিযোগে ক্লিনটনকে অভিসংশিত করার প্রস্তাব করে। কিন্তু সিনেট অনুমোদন না দেওয়ায় সেই যাত্রায় বেঁচে যান তিনি। প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্লিনটনের সবচেয়ে বড় সফলতা হচ্ছে আমেরিকার ভঙ্গুর অর্থনীতির পুনরুদ্ধার। তাঁর নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্রের ভঙ্গুর অর্থনীতি অল্প দিনের মধ্যেই আবারও চাঙ্গা হয়ে উঠেছিল।
তাছাড়া আমেরিকায় বেকারত্বের হার বিল পদে থাকাকালীন অবস্থায় তখনকার সময়ে কয়েক দশকে সর্বনিম্ন। বিদেশনীতির ক্ষেত্রেও বিলের ভূমিকা প্রশংসনীয় ছিল। ১৯৯৩ সালে তাঁর মধ্যস্থতায় ফিলিস্তিন এবং ইসরাইলের মধ্যে ঐতিহাসিক ‘অসলো শান্তি চুক্তি’ স্বাক্ষরিত হয়েছিল, যা পরবর্তীতে ফিলিস্তিন সংকট নিরসনে ভূমিকা রেখেছিল।
এছাড়াও তিনি ঐতিহাসিক ‘ডেটন চুক্তি’র মধ্য দিয়ে বসনিয়া সংকট নিরসন এবং সার্বিয়া দ্বারা কসভোর আলবেনিয়দের জাতিগত নিধন বন্ধেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন।
ফ্র্যাংকলিন রুজভেল্টের জীবনী, Best Biography of Franklin Roosevelt in Bengali
বিল ক্লিনটনের প্রেসিডেন্ট পদ থেকে অবসর প্রাপ্তি, Retirement from Presidency
বিল ক্লিনটন ২০০১ সালে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন। এরপর নিজের প্রতিষ্ঠিত ক্লিনটন ফাউন্ডেশনের দ্বারা বিভিন্ন মানব কল্যাণ মূলক কাজে জড়িয়ে পড়েন তিনি। বিলের প্রচেষ্টায় জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার গবেষণা খাতে ক্লিনটন ফাউন্ডেশন বিনিয়োগ করেছিল। ২০১০ সালের ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর হাইতির পুনর্গঠনের কাজে ক্লিনটন ফাউন্ডেশন এগিয়ে এসেছিল।
বিল ক্লিনটনের ব্যক্তিগত জীবন, Personal life of Bill Clinton
ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করার সময় হিলারি রোধামের সাথে বিল ক্লিনটনের দেখা হয়। ১৯৭৫ সালে তারা দুজন বিয়ে করেন। পরবর্তীতে বেশ কিছু সময়ের জন্য এই তরুণ দম্পতি ফয়েটেভিল বিশ্ববিদ্যালয়ে একসাথে শিক্ষকতার কাজ করেছিলেন।
পরবর্তী সময়ে ২০০১ সাল থেকে ২০০৯ সাল অবধি হিলারি নিউ ইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের সিনেটর হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তাদের এক কন্যা সন্তান রয়েছে, যার নাম হচ্ছে চেলসিয়া ক্লিনটন।
ইলন মাস্কের জীবনী, Best ever biography of Elon Musk in Bengali
বিল ক্লিনটনের শারীরিক অসুস্থতা, Bill Clinton’s physical ailment
২০০৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিল ক্লিনটন অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। হার্টের প্রচণ্ড ব্যথা হওয়ার কারণে তাঁকে নিউ ইয়র্কের একটি ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। এই সমস্যার নিরসনের জন্য ক্লিনটন স্টেন্ট সার্জারি করিয়েছেন। উক্ত অস্ত্রোপচারের পর, তিনি নিরামিষভোজী খাদ্যতালিকা অনুসরণ করতে শুরু করেন। পরবর্তী সময়ে, ক্লিনটন প্রেসকে বলেছিলেন যে তাঁর বিশ্বাস যে নিরামিষ আহারই তাঁর জীবন রক্ষা করেছিল।
বিল ক্লিনটনের লেখা বই, Books written by Bill Clinton
ক্লিনটনের লেখা প্রথম বই হল ‘বিটউইন হোপ অ্যান্ড হিস্টোরি’। উক্ত বই ১৯৯৬ সালে প্রকাশিত হয়েছিল। রাষ্ট্রপতি পদ থেকে অবসরের পর তিনি ফের লেখালেখি শুরু করে দেন। ২০০৪ সালে ‘মাই লাইফ’ নামক তাঁর আত্মজীবনী প্রকাশিত হয়। বইটি সর্বাধিক বিক্রিত আত্মজীবনী সমূহের মধ্যে একটি ছিল। ২০১৮ সালে জেমস পেটারসনের সহযোগে লেখা ‘দ্য প্রেসিডেন্ট ইস মিসিং’ নামক বই প্রকাশিত হয়। এই বইটি বহুল আলোচিত একটি বই।
বিল ক্লিনটনের পুরস্কার প্রাপ্তি, Recognition and awards
বিল ক্লিনটন কর্মজীবন তথা রাজনৈতিক জীবনের নানা কার্যকলাপের দরুন বহু পুরস্কার লাভ করেছিলেন।
● 1998 – অর্ডার অফ গুড হোপ, প্রথম শ্রেণী (দক্ষিণ আফ্রিকা)
● 1998 – সাদা সিংহের আদেশ, একটি শৃঙ্খলে প্রথম শ্রেণী (চেক প্রজাতন্ত্র)
● 1999 – তুর্কি প্রজাতন্ত্রের আদেশ
● 1999 – এলিস আইল্যান্ড মেডেল অফ অনার
● 2001 – প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পদক “অসামান্য সিভিল সার্ভিসের জন্য”
● 2005 – সেরা কথোপকথন অ্যালবামের জন্য গ্র্যামি পুরস্কার – “মাই লাইফ”
● 2006 – জর্জ ডব্লিউ বুশের সাথে ফিলাডেলফিয়া মেডেল অফ ফ্রিডম
● 2006 – লোগোহু গ্র্যান্ড কমপেনিয়ান ডিগ্রির অর্ডার (পাপুয়া নিউ গিনি)
● 2006 – মেরির ভূমির ক্রস অর্ডার, প্রথম ডিগ্রী (এস্তোনিয়া)
● 2008 – রুয়ান্ডায় ক্লিনিকের নেটওয়ার্ক স্থাপনের জন্য TED পুরস্কার
● 2010 – পিপল ফর দ্য এথিকাল ট্রিটমেন্ট অফ এনিমলস নামে নির্বাচিত হয়েছেন ক্লিনটন পার্সন অফ দ্য ইয়ার
● ২০১১ – ন্যাশনাল অর্ডার অফ অনার এবং মেরিট অফ দ্য নাইট গ্র্যান্ড ক্রস ইন গোল্ড (হাইতি)
● 2013 – ডিস্টিঙ্কশন সহ প্রেসিডেন্ট পদক (ইসরায়েল)
● 2013 – সেন্ট জর্জ (জর্জিয়া) এর নাম অনুসারে বিজয়ের আদেশ
● 2013 – স্বাধীনতা পদক
- স্বামী বিবেকানন্দের জীবনী ও বাণী সমূহ | Swami Vivekananda biography and Quotes in Bangla
- হুমায়ূন আহমেদ এর জীবনী ~ Biography of Humayun Ahmed in Bengali
- বীরাঙ্গনা মাতঙ্গিনী হাজরার জীবনী
- সত্যেন্দ্রনাথ বসুর জীবনী ~ Biography of Satyendra Nath Bose in Bengali
- শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের জীবনী ~ Biography of Shirshendu Mukhopadhyay
উপসংহার, Conclusion
বিল ক্লিনটন নিজের রাজনৈতিক জীবনে বহু উত্থান পতনের সম্মুখীন হয়েছেন। তাও দক্ষতার সাথে নিজের সকল দায়িত্ব পালন করেছিলেন। প্রেসিডেন্টের পদে নির্বাচিত হওয়ার পর বহু উন্নয়ন মূলক কাজে এগিয়ে এসেছিলেন তিনি, এমনকি অবসর নেওয়ার পরেও বহু সমাজ কল্যাণমূলক কাজ করেন তিনি।
Frequently asked questions :
উইলিয়াম জেফারসন ক্লিনটন, বিল ক্লিনটন নামেই সমধিক পরিচিত। তিনি একজন সুপরিচিত আমেরিকান রাজনীতিবিদ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪২ তম রাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন।
১৯৪৬ সালের ১৯ আগস্ট।
প্রথম মেয়াদ ১৯৯২ সালে শুরু হয়, দ্বিতীয় মেয়াদ ১৯৯৬ সালে শুরু হয়।
২০০১ সালে।