আমেরিকার একজন বিখ্যাত রাজনীতিবিদ জো বাইডেনের পুরো নাম হল জোসেফ রবিনেট জো বাইডেন জুনিয়র। ২০২০ সালে আমেরিকার রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে নির্বাচিত হন তিনি। ইতিপূর্বে ২০০৯ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন জো বাইডেন। আবার ভাইস প্রেসিডেন্ট হওয়ার পূর্বে ১৯৭৩ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত তিনি ডেলাওয়ারের সিনেটরের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তিনি আমেরিকার ইতিহাসের পঞ্চম কনিষ্ঠতম মার্কিন সিনেটর, অন্যদিকে ডেলাওয়ারের সবচেয়ে দীর্ঘসময় দায়িত্বপালনকারী একজন সিনেটর। তাছাড়াও বাইডেন রাজনীতিতে প্রবেশের পূর্বে অ্যাটর্নি হিসেবে কাজ করেছিলেন।
জো বাইডেনের জন্ম ও শৈশব জীবন, Joe Biden Birth and Childhood Life
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন পেনসেল্ভিনিয়ায় একটি ক্যাথলিক পরিবারে ১৯৪২ সালের ২০ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি ছিলেন ক্যাথরিন ইউজেনিয়া জিন এবং জোসেফ রবিনেট জো দম্পতির জ্যৈষ্ঠ পুত্র। তাঁর বাবা পেশাগত ভাবে ব্যবহৃত গাড়ি কেনা-বেচার ব্যবসা করতেন এবং কোনো কোনো সময় অতিরিক্ত আয়ের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন জায়গায় চুল্লিও পরিষ্কার করতেন।
এক মধ্যবিত্ত পরিবারে বেড়ে ওঠার ফলে জো বাইডেন নিজের ছেলেবেলা থেকেই পরিবারের কাছ থেকে সংকল্প এবং অধ্যবসায়ের মূল্য শিখেছিলেন যা তাঁর জীবনে চলার পথে সহায়ক ছিল। কিন্তু শৈশবকালে দরিদ্রতার কারণে জো বাইডেনকে নিজের নানা-নানীর কাছে চলে যেতে হয়েছিল। ছেলেবেলায় কথা বলতে গেলেই তোতলানোর সমস্যা হয় বাইডেনের, যার ফলে স্কুলে ছেলেমেয়েরা তার এই সমস্যা নিয়ে খুব মজা করত। তিনি যাদের সঙ্গে খেলা করতে যেতেন তারাও তাকে নিয়ে অনেক রসিকতা করত।
শেষ মেশ তোতলামি কাটিয়ে উঠতে কবিতা আবৃত্তি করার অভ্যাস শুরু করেন জো বাইডেন। এইভাবে করে বেশ কিছু সময় পর তাঁর তোতলামি কমে যায়।
জর্জ বুশের বিস্তারিত জীবনী, Best biography of George Bush in Bengali
জো বাইডেনের শিক্ষা জীবন, Joe Biden’s Educational Life
জো বাইডেন একজন মধ্যমানের শিক্ষার্থী ছিলেন। খেলাধুলার প্রতি ঝোঁক ছিল বেশি। তিনি ক্লেমন্টের আর্কমিয়ার একাডেমিতে পড়াশোনা করেছিলেন এবং তিনি ১৯৬১ সাল পর্যন্ত সেখানে পড়াশোনা করেন। তবে স্কুলজীবনে খেলাধুলার দিক থেকে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন বাইডেন, তিনি একজন প্রতিভাবান ফুটবল খেলোয়াড়ও ছিলেন।
দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার গুণাবলি ছোটবেলা থেকেই তাঁর মধ্যে গড়ে উঠেছিল। হাইস্কুল পর্যায়েও নিজের ক্লাসে লিডার ছিলেন বাইডেন। স্কুলজীবন শেষে ডেলওয়ার ইউনিভার্সিটিতে ইতিহাস ও রাস্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে স্নাতক স্তরে পড়াশোনা করেন তিনি। পরে সিরাকিউজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৮ সালে আইন বিষয়ে পড়াশুনা শেষ করেন।
ফ্র্যাংকলিন রুজভেল্টের জীবনী, Best Biography of Franklin Roosevelt in Bengali
জো বাইডেনের ব্যক্তিগত জীবন, Joe Biden’s Personal Life
সিরাকিউজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করার সময় এক বসন্তের ছুটি কাটিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেরার পথে সিরাকিউজেরই নিলিয়া হান্টার নামক এক ছাত্রীর সঙ্গে বাইডেনের পরিচয় হয়। সেই প্রথম দর্শনেই প্রেম। পরবর্তীতে ১৯৬৬ সালে নিলিয়ার সঙ্গে জো এর বিয়ে হয়। এই দম্পতির ঘরে তিন সন্তানের জন্ম হয়, যাদের নাম রাখা হয়েছিল বিউ বাইডেন, রবার্ট হান্টার এবং নাওমি ক্রিস্টিনা।
দুর্ভাগ্যবশত নিলিয়া হান্টার ভয়াভয় এর সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান, তাঁর মেয়ে নাওমিরও দুর্ঘটনায় প্রাণ বিয়োগ ঘটে। পরবর্তীতে ২০১৫ সালে বড় ছেলে বিউ বাইডেন মস্তিষ্কের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। বাইডেন নিলিয়াকে হারানোর ১ বছর পর, ১৯৭৩ সালে জিল ট্রেসি জ্যাকবকে বিয়ে করেছিলেন।
জন এফ. কেনেডির জীবনী, Best Biography of John F. Kennedy in Bengali
জো বাইডেনের কর্মজীবনের বিভিন্ন অভিজ্ঞতা, Joe Biden’s Career Experiences
জন বাইডেন আইন নিয়ে পড়াশুনা করার পর, আইন সংক্রান্ত কাজ কর্মগুলোকে নিজের পেশা হিসেবে গ্রহণ করার জন্য ডেলাওয়ারে ফিরে আসেন এবং সেখানকার এক আইন সংস্থায় অনুশীলন শুরু করেন। পাশাপাশি ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সদস্য হিসেবে রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি। পরবর্তীতে ১৯৭০ সালে নিউ ক্যাসেল কাউন্টি কাউন্সিলে নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। ১৯৭২ সালে, মাত্র ২৯ বছর বয়সে যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট নির্বাচনে ডেলাওয়ারের প্রতিনিধি হিসেবে অংশগ্রহণ করেছিলেন জো বাইডেন।
সেই নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রতিনিধি জে কালেব বগসের বিপক্ষে জয় লাভ করেন তিনি। বাইডেন পঞ্চম-কনিষ্ঠতম মার্কিন সিনেটর হিসেবে আমেরিকার ইতিহাসে বিখ্যাত। স্ত্রী ও সন্তানরা একটি বিধ্বংসী দুর্ঘটনার শিকার হওয়ায় প্রচুর সম্ভাবনাময় এই তরুন নেতার জীবনে ভয়াবহ আঘাত নেমে আসে। শোকাহত হওয়া সত্ত্বেও ১৯৭৩ সালের ৫ জানুয়ারি সিনেটর হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন তিনি। এর পরের কিছু বছর ধরে বাইডেন নিজেকে কঠোর পরিশ্রমী এবং একজন উচ্চাকাঙ্ক্ষী রাজনীতিবিদ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
আমেরিকার সিনেটর হিসাবে বেশ কয়েকটি স্বরাষ্ট্র এবং পররাষ্ট্র নীতিমালা প্রণয়ন করেন তিনি এবং এইভাবেই পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক সিনেটের শীর্ষস্থানীয় বিশেষজ্ঞদের মধ্যে একজন হিসাবে বাইডেন বেশ প্রশংসিত হয়ে ওঠেন। সিনেটের বৈদেশিক সম্পর্ক কমিটির দীর্ঘদিনের সদস্য ছিলেন বাইডেন এবং পরবর্তীতে এর চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন।
এছাড়াও ক্রিমিনাল জাস্টিস এবং মাদক নিয়ন্ত্রণ নীতি সম্পর্কিত বিষয়ে বাইডেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন, সেক্ষেত্রে তিনি বিচার বিভাগের কমিটিতে নিজ দায়িত্ব সুষ্টু ভাবে পালন করেন এবং ১৯৮৭ থেকে ১৯৯৫ সাল অবধি উক্ত কমিটির সভাপতিত্ব করেন। অন্যদিকে আইনত পেশার দিক থেকে তিনি সহিংস অপরাধ নিয়ন্ত্রণ এবং আইন প্রয়োগকারী আইন তথা নারী নির্যাতন আইনপাস করার প্রচেষ্টারও নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
ইলন মাস্কের জীবনী, Best ever biography of Elon Musk in Bengali
সম্মাননা, Awards and Recognition
বিভিন্ন অভিজ্ঞতা এবং প্রশংসনীয় কার্যকলাপের দরুন জো বাইডেন বেশ কিছু সম্মানসূচক মেডেল ও পুরস্কার পেয়েছিলেন।
● জো বাইডেন পাব্লিক এফেয়ার্সে অবদান রাখার জন্য ২০০৫ সালে, সিরাকিউজের সর্বোচ্চ পুরষ্কার ‘জর্জ আরেন্টস পাইওনিয়ার মেডেল’ পেয়েছিলেন।
● বাইডেন কসোভার স্বাধীনতা যুদ্ধে বিশেষ অবদান রেখেছিলেন, যার জন্য কসোভার কাছ থেকে ১৯৯০ সালে ‘দ্য গোল্ডেন এওয়ার্ড অব ফ্রিডম’ পুরষ্কার লাভ করেন তিনি।
জো বাইডেনের প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচন, Joe Biden’s presidential election
রাজনীতির সাথে দীর্ঘসময় যোগাযোগ থাকার পর, ১৯৮৮ সালে জো বাইডেন ডেমোক্রেটিক প্রেসিডেনশিয়াল নির্বাচনে যোগদান করেও ব্যর্থ হয়েছিলেন। পরবর্তীতে এই ঘটনার দুই দশক পর ২০০৭ সালে তিনি রাষ্ট্রপতির প্রার্থিতা ঘোষণা করেন। কিন্তু উক্ত বছরও তিনি তেমন একটা সমর্থন পান নি ফলে নির্বাচন থেকে সরে আসেন।
সেই সময় বাইডেনের সাথে ডেমোক্র্যাটিক প্রেসিডেন্টের মনোনীত প্রার্থী বারাক ওবামার সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। বাইডেনের বহু বছরের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা থাকার কারণে ওবামা তাঁকে বেশ শ্রদ্ধা করতেন। সেই কারণেই হয়তো বারাক ওবামা ২০০৮ সালে হওয়া রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বাইডেনকে নিজের সহকর্মী হিসেবে বেছে নেন এবং পরবর্তীতে তাঁকে ভাইস প্রেসিডেন্টের পদে নিয়োগ করেন। ২০০৯ সালের ২০ শে জানুয়ারি বাইডেন ৪৭ তম ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন।
ইতিপূর্বে সিনেটর হিসেবে রাজনীতিতে দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা থাকার সুবাদে তিনি বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার প্রেক্ষিতে আমেরিকান অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করার কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন।
উন্নয়নমূলক বিভিন্ন কাজ করার কারণে তাঁর জনপ্রিয়তা অনেকটা বেড়ে উঠেছিল। এর ফলে পরবর্তীতে ২০১২ সালের নির্বাচনে খুব সহজেই দ্বিতীয়বারের মতো ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হন তিনি। অন্যদিকে বারাক ওবামাও ফের প্রেসিডেন্ট পদে জয়ী হন এবং এই দ্বিতীয় মেয়াদে তিনি বাইডেনকে গান ভায়োলেন্স টাস্ক ফোর্সের প্রধান হিসেবে মনোনীত করেছিলেন।
২০২০ সালের ১৮ ই আগস্ট ডেমোক্র্যাটিক ন্যাশনাল কনভেনশনে দাপ্তরিকভাবে ২০২০ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য বাইডেন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী হিসেবে মনোনীত হন। ২০২০ সালের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক দলের প্রার্থী জো বাইডেন ৭ কোটি ২১ লাখ ৫৭ হাজারেরও বেশি ভোট পেয়ে সর্বোচ্চ ভোটারপ্রিয়তার স্বাক্ষর রেখেছিলেন। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট পদে ক্ষমতাসীন ডোনাল্ড ট্রাম্পকে পরাজিত করার পর ২০২১ সালের ২০ জানুয়ারি ৪৬তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন জো বাইডেন।
- স্বামী বিবেকানন্দের জীবনী ও বাণী সমূহ | Swami Vivekananda biography and Quotes in Bangla
- হুমায়ূন আহমেদ এর জীবনী ~ Biography of Humayun Ahmed in Bengali
- বীরাঙ্গনা মাতঙ্গিনী হাজরার জীবনী
- সত্যেন্দ্রনাথ বসুর জীবনী ~ Biography of Satyendra Nath Bose in Bengali
- শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের জীবনী ~ Biography of Shirshendu Mukhopadhyay
উপসংহার, Conclusion
জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পূর্বেই বহুল জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নতির ঘটানোর জন্য তাঁর প্রশংসনীয় উদ্যোগ এবং ভূমিকা রয়েছে, যার ফলে খুব সহজেই প্রেসিডেন্ট হিসেবে জয়লাভ করেন তিনি। রাজনীতির সাথে বহুকাল ধরে যুক্ত থাকার ফলে বিভিন্ন কাজ থেকে তাঁর অভিজ্ঞতাও বৃদ্ধি পেয়েছিল, ফলে দেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার দায়িত্ব তিনি যথাযথভাবেই পালন করতে সক্ষম ছিলেন।
Frequently Asked Questions:
আমেরিকার একজন বিখ্যাত রাজনীতিবিদ হলেন জো বাইডেন।
১৯৪২ সালের ২০ নভেম্বর।
২০২১ সালের ২০ জানুয়ারি।
জোসেফ রবিনেট জো বাইডেন।
৪৬ তম প্রেসিডেন্ট।