আমাদের দেশ ভারতের উত্তর দিকে হিমালয়ের অবস্থান; দক্ষিণ দিক, পূর্ব এবং পশ্চিম দিকে রয়েছে উত্তাল জলরাশি। বিশাল সমভূমি ও মালভূমির সমাহার সহ রয়েছে মরুভূমিও। ভারতকে বৈচিত্রপূর্ণ দেশের তকমা দিয়েছে ভূপ্রাকৃতিক বৈচিত্র্য।
এই কারণে, ভারত ভ্রমণের জন্য সারা বিশ্বে প্রভূত খ্যাতি অর্জন করেছে। ভ্রমণের মত মজার ব্যাপার হয়তো পৃথিবীতে আর কিছুই নয়। বিশেষ করে শীতকালে ঘুরতে যাওয়ার মজাই আলাদা। মহামারীর শঙ্কা কাটিয়ে মানুষজন আবারও স্বাভাবিক ছন্দে ফিরেছে। শীতের শুরুতেই থাকে বড় দিন আর নতুন বছরের ছুটি। তাই এই সময়ে সকলেরই মন চায় কোথাও একটু ঘুরে আসার।
সুন্দরবন, The Sunderbans
ছোটবেলা থেকেই আমরা পাঠ্যবইতে পেয়েছি সুন্দরবনের নাম। রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের জন্য বঙ্গোপসাগরের পাশে স্থিত সুন্দরবন নামটা শুনলেই মনে পড়ে যায় ম্যানগ্রোভের ঘন জঙ্গলের কথা, যেখানকার জলে থাকে কুমির আর ডাঙায় পাওয়া যায় বাঘ। সুতরাং একসাথে এত কিছুর দেখা পেতে হলে গন্তব্যের মধ্যে সুন্দরবনের নাম রাখতেই হবে। এছাড়াও দেখা পাবেন হরিণ এবং বড় কাঁকড়ারও।
চারধামের ভ্রমণ গাইড, Best details/travel guide about Char Dham in Bengali
ভ্রমণের জন্য আদর্শ সময়
এমনিতে এই স্থানে বছরের যেকোনো সময়ই যাওয়া যায়, তবে ডিসেম্বর এবং জানুয়ারি মাসের সময়কালে বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সি বেশ কম খরচে ভালো ট্যুর প্যাকেজের ব্যবস্থা করে রাখে। তাই আর দেরি না করে এখনই যোগাযোগ করতে পারেন।
সুন্দরবন কিভাবে যাবেন!
বিখ্যাত এই সুন্দরবন কলকাতা থেকে মাত্র ১০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। সুতরাং কলকাতা থেকে গাড়ি করে সুন্দরবন যেতে পারেন, অথবা কিছু পথ ট্রেনে গিয়ে পরে গাড়ির ব্যবস্থা নিতে পারেন।
কোথায় থাকবেন!
থাকা খাওয়ার জন্য সেখানে ছোটো বড় হোটেল পেয়ে যাবেন, তাছাড়াও নৌকায় থাকার মত ব্যবস্থাও করা যায়, তবে খোলা নৌকায় থাকার ব্যাপারটা অনেকের ক্ষেত্রে সমস্যাদায়কও হতে পারে, বিশেষত যাদের মনে বাঘের ভয় বেশি তাদের হোটেলেই থাকার চিন্তা করা উচিত।
হেনরি দ্বীপ, Henly Island
হেনরি নামটি শুনে কেমন একটা বিদেশি জায়গা বলে মনে হয়। তবে এই দ্বীপ কলকাতা থেকে মাত্র ১২৭ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত। বঙ্গোপসাগরের পাশের এই দ্বীপটিতে শীতের সময় গেলে বিভিন্ন ধরনের পরিযায়ী পাখিদের দেখাও পাওয়া যায়। এছাড়া এই দ্বীপের চারপাশেও বিস্তৃত রয়েছে ম্যানগ্রোভ অরণ্য।
গোধূলিতে সূর্যাস্তের রঙিন আভা এই দ্বীপের সৌন্দর্য্য যেন আরো বাড়িয়ে তোলে, যা পর্যটকদের আকর্ষণ করে। এই মনোরম স্থানে যেতে হলে কলকাতার শিয়ালদহ থেকে ট্রেনে করে নামখানা পৌঁছে যেতে হবে, সেখানে থেকে হেনরি দ্বীপে যাওয়ার গাড়ি পাওয়া যায়।
● ভ্রমণের জন্য আদর্শ সময় – অক্টোবর থেকে এপ্রিল মাসে।
● দ্বীপে থাকার জায়গা -হোটেল সি ভিউ, হোটেল আইকন হেরিটেজ।
● হেনরি দ্বীপে খাওয়ার জায়গা – এই দ্বীপের প্রায় সব জায়গাতেই বিভিন্ন রকমের সামুদ্রিক খাবার পেয়ে যাবেন।
ভ্রমণ নিয়ে উক্তি, বানী, স্ট্যাটাস, ক্যাপশন, Best quotes on travelling in Bengali
অট্টহাস সতীপীঠ
বর্ধমান জেলার কেতুগ্রাম স্থিত একটি সতীপীঠ হল এই অট্টহাস সতীপীঠ। বিশ্বাস অনুযায়ী এখানে সতীর নিম্নওষ্ঠ পড়েছিল। প্রথমে এই পীঠকে ওষ্ঠাহাস সতীপীঠ বলা হত, পরে অট্টহাস সতীপীঠ রাখা হয়। এই মন্দিরে প্রথমে উগ্ররূপে দেবীর মূর্তি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। তবে বর্তমানে রয়েছে অষ্টধাতুর নতুন একটি মূর্তি।
তবে পূর্বে যে মূর্তি সেখানে ছিল তার একটি ছবি এই সতীপীঠে রাখা হয়েছে। সেই মূর্তিটি ছিল ভয়ঙ্কর দেখতে। পরবর্তীতে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদে সেই প্রাচীন মূর্তিটি সংরক্ষিত করা হয়। সেই দেবীর দিকে বেশিক্ষণ কেউ তাকিয়ে থাকতে পারতেন না। দেবী এখানে ফুল্লরা নামে পূজিত হন। পাথরের সেই ভয়ঙ্কররূপী মূর্তিটি কে তৈরি করেছিলেন তা আজও অজানা।
অন্যান্য সতীপীঠের মত এখানেও কালভৈরবের মন্দির রয়েছে, যিনি পুজিত হন বিল্লেশ্বর নামে। সতীপীঠের পাশেই বইছে ইশানী নদী। এর কুণ্ডের জল দিয়েই সতীপীঠে পুজো করা হয়। এখানে তন্ত্রসাধনাও করা হয়, পাশাপাশি রয়েছে পঞ্চমুণ্ডীর আসনও।
বিশাল এক মাঠ পার করে এই সতীপীঠে যেতে হত। এককালে মাঠটি পার হওয়ার সময় বেশ দুষ্ট লোকেরা তান্ত্রিকদের কাছে বিক্রি করার জন্য দর্শনার্থীদের কোলে থাকা সন্তানদেরকে চুরি করে নিয়ে যেত। তারপর থেকে সেই মাঠের নাম হয়ে যায় গর্দান মারির মাঠ।
ছত্তিশগড়ের যশপুর, Jashpur in Chhattisgarh
ছত্তিশগড়ের মনপতের কাছেই এই যশপুর অবস্থিত। সবুজ পাহাড় তথা ভরা ঝরনার সৌন্দর্যে ভরপুর যশপুর যাওয়ার পথ। এক কথায় অসম্ভব মনোরম প্রাকৃতিক শোভা দেখতে পাওয়া যায় এই যশপুরের পথে।
এই স্থানের বিশেষ আকর্ষণ হল এশিয়ার বৃহত্তম চার্চ। বিশাল এই চার্চটির নাম কঙ্কপুর চার্চ। তবে অনেকেই এই চার্চের কথা এখনও জানেন না। তাই পর্যটকদের খুব বেশি ভিড় থাকে না এখানে। যারা ভিড় খুব একটা পছন্দ করেন না অথচ বড়দিনের ছুটিতে চার্চ আছে এমন কোনো মনোরম পরিবেশে ঘুরে আসতে চান, এই যশপুর তাদের জন্য আদর্শ একটি জায়গা।
কীভবে যাবেন!
যশপুর যাওয়ার প্ল্যান করলে কলকাতার হাওড়া স্টেশন থেকে অসংখ্য ট্রেন পেয়ে যাবেন। তবে যদি রাতের ট্রেন ধরতে পারেন তাহলে ভোরের দিকেই ঝাড়সুগুড়ায় পৌঁছে যাবেন। তারপর সেখান থেকে গাড়ি নিয়ে যশপুরে চলে যেতে পারেন। গাড়িতে করে যাওয়ার সময় অসংখ্য ঝরনা ও সবুজ পাহাড় আপনার মন ভাল করে দেবে।
কোথায় থাকবেন!
থাকার জায়গার কোনও অভাব নেই যশপুরে। এখানে অসংখ্য রিসর্ট পেয়ে যাবেন। তবে ছত্তিশগড় ট্যুরিজিমের রিসর্টের ব্যবস্থাপনাও অত্যন্ত ভাল।
কোলাঘাট, Kolaghat
পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা থেকে প্রায় ৭৫ কিলোমিটার দূরত্বে পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় কোলাঘাট অবস্থিত। রূপনারায়ণ নদীর কূলে গড়ে ওঠা একটি মনোরম গন্তব্য হল কোলাঘাট শহর। নদীর তীরে অবস্থিত বলে এটি পিকনিকের জন্য আদর্শ স্থান। আর শীতের ছুটিতে অনেকেই পিকনিক করতে পছন্দ করেন। ইংরেজি নববর্ষ তথা ক্রিসমাস এবং অন্যান্য বিভিন্ন ছুটিতে এই জায়গাটিতে লোকজনের ভিড় লেগেই থাকে। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের অন্যতম বৃহত্তম শহর কোলাঘাট শহরটি ইলিশ মাছ এবং বিভিন্ন ফুলের জন্য বিখ্যাত।
● কোলাঘাটের প্রধান আকর্ষণের বিষয়বস্তু – রূপনারায়ন নদীর কূল।
● কোলাঘাট শহরে ভ্রমণের আদর্শ সময় – অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস।
● কোলাঘাট গিয়ে থাকা ও খাওয়ার জায়গা – হোটেল সোনার বাংলা, শের-ই-পাঞ্জাব ধাবা।
শীতের ছুটিতে শীতের রাজ্যেই ভ্রমণ
আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা একটু অন্য ধরনের অ্যাডভেঞ্চরের মধ্য দিয়েই ভ্রমণের আসল আনন্দ খুঁজে পান। যেমন শীতের দিনে শীত প্রধান রাজ্যেই ভ্রমণ করার পরিকল্পনা করেন অনেকেই, সেক্ষেত্রে বড়দিনের অল্প ক’দিনের ছুটিতে ঘুরে আসতে পারেন উত্তর পূর্বের পাহাড়ী রাজ্যে।
সিকিম, Sikkim
উত্তরপূর্ব ভারতের সিকিম রাজ্যটি পাহাড় পর্বতের পাশাপাশি সবুজের পরিপূর্ণ এক মনোরম পরিবেশে ভরা। প্রতিবছরই বহু পর্যটক সেখানে হাওয়া বদল করতে যান। শুধু দেশের মানুষই নয় বরং বিদেশীরাও আসেন এই পাহাড়ী রাজ্যের শোভা উপভোগ করতে। ট্রেনে করে জলপাইগুড়ি পৌঁছে গেলে, সেখান থেকে গাড়ি করে অতিসহজেই পৌঁছে যাবেন সিকিমে। তাছাড়া সেখানে থাকা খাওয়ার জন্য বাজেট অনুযায়ী হোটেলও পেয়ে যাবেন। বাঙ্গালীদের ক্ষেত্রে খাওয়ার ব্যাপারে চিন্তা করার কিছু নেই, কারণ বেশ কিছু বাঙালি হোটেলও রয়েছে সিকিমে। তাই আর দেরি না বড়দিন থেকে নতুন বছরের সময়টা এই অপূর্ব সুন্দর পাহাড়ী রাজ্যের বুকে কাটিয়ে আসুন।
উত্তর সিকিমে কি কি দেখার জায়গা আছে!
সিঙ্গিক, ইয়ুমথাং, লাচুং, কাটাও, জিরো পয়েন্ট, কালা পাত্থার, লাচেন, গুরুদংমার লেক।
পূর্ব সিকিমে কি কি দেখতে পাবেন!
ঋষিখোলা, নাথুলা, আরিতার, ইয়ামথাং ভ্যালি, সাজং, জুলুক, ছাঙ্গু লেক, কুপাপ লেক, গ্যাংটক।
দক্ষিণ সিকিমের কোন কোন জায়গায় যাবেন!
নামচি, রাবাংলা, সিকিপ, সামদ্রূপটসে, বোরং, রিনচেনপং, টেমি টি গার্ডেন, কালুক।
পশ্চিম সিকিমে দর্শনীয় কি কি রয়েছে!
পেলিং, সিংসর ব্রিজ, ভার্সে, গেজিং, উত্তরে, কাঞ্চনজঙ্ঘা ফলস, হি-বারমিওক, ওখড়ে, ইয়াকসাম, রিনচেনপং, খেছিপরি লেক।
- কলকাতার ২১ টি দর্শনীয় স্থান, যেখানে না গেলে বাকি থেকে যায় কলকাতাকে চেনা
- ব্যাঙ্গালোরের সেরা দর্শনীয় স্থানগুলির লিস্ট ~ বাংলাতে ব্যাঙ্গালোর ভ্রমণ গাইড
- ভ্রমণপিপাসুদের জন্যে রইলো হায়দ্রাবাদের সেরা দর্শনীয় স্থানগুলির সম্পর্কে সমস্ত তথ্য
- বিশ্বের অন্যতম ২০ টি দর্শনীয় স্থান
- বাংলাদেশের ১৫ টি সেরা ভ্রমণ স্থান – Best Places to visit in Bangladesh [ Bengali Guide ]
উপসংহার, Conclusion
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় যে ভ্রমণের গন্তব্যগুলি বাঁধা ধরা ছকে আটকে আছে, তাই কিছু অফবিট জায়গায় ঘুরতে যাওয়ার মাধ্যমে আপনারা এই ছক ভেঙে দিতে পারেন। প্রতিবছর বেশিরভাগ মানুষ বাড়িতে খ্রিস্টমাস ট্রি সহ কিছু রং বেরংয়ের লাইট আর চার্চ এ গিয়ে প্রার্থনা সভায় অংশগ্রহণ করে এবং ভালো খাবার খাওয়ার মাধ্যমেই বড়দিন কাটায়।
এবার তাহলে এই দিনগুলো গতানুগতিক ভাবে উদযাপন না করে পরিবার বা বন্ধুদের সাথে একটি বাইরে ঘুরে আসুন। সবুজ পরিবেশের পারিপার্শ্বিক শোভা দর্শন করার জন্য উপরিউক্ত জায়গাগুলি বেশ চমকপ্রদ। তাছাড়া বড়দিন ও নতুন বছরের সময়কার ছুটি বেশি দিনের হয়না। শীতের ছুটি হোক বা অন্য কোনো সময় হাতে যদি খুব অল্প সময় থাকে তবে প্রতিবেদনে উল্লেখিত জায়গাগুলোতে চট করে ঘুরে আসতে পারেন।