ইভটিজিং সম্পর্কে বিস্তারিত, Best details about Eve teasing in Bengali


প্রায়শই আমাদের চোখে পড়ে যে রাস্তার পাশে এক গোষ্ঠী ছেলে দাঁড়িয়ে থাকে যারা তাদের সামনে দিকে হেঁটে যাওয়া মেয়েদের উপর আজে বাজে মন্তব্য করে তাদেরকে উত্যক্ত করার চেষ্টা করে।

বিশ্বের এমন হয়তো কোনো জায়গা নেই যেখানে এই ধরনের নোংরামি নেই। এক ধরনের ছেলে থাকে যারা এই সব করে আনন্দ পায়, কিন্তু এইভাবে যে তারা ক্রমশ সমাজের অবনতি ঘটিয়ে চলেছে সেটা হয়তো বুঝতে পারে না। আজ এই প্রতিবেদনে আমরা ইভটিজিং সম্পর্কে আলোচনা করবো এবং এর প্রতিকার কিভাবে সম্ভব তা তুলে ধরার চেষ্টা করবো।

ইভটিজিং সম্পর্কে বিস্তারিত

ইভটিজিং কি? What is Eve teasing?

কোন ছেলে রাস্তায়, স্কুল-কলেজে অথবা যে কোন অলি গলিতে যদি কোন মেয়ে হেঁটে যাচ্ছে দেখে মুখ দিয়ে শিষ দেওয়া, মেয়েটির খুব খারাপ লাগার মত বা অস্বস্তিকর এমন কোনো বাজে মন্তব্য করে, অথবা মেয়েটিকে নিয়ে বন্ধুদের সাথে হাসি ঠাট্টা করে তবে তাকে ইভটিজিং বলা হয়; এক কথায় এভাবে কোনো মেয়েকে উক্ত্যক্ত করার নামই হল ইভটিজিং।

এইসব অসভ্যতা আজকের সময়ে নিজের পরিধি বিস্তার করেছে। এখনকার সময়ে শুধু অযাচিত ভাবে মেয়েদের শরীরে হাত দেয়া, গায়ের ওপরে এসে পড়াই নয় বরং অপহরণ করে ধর্ষণ করাও বর্তমানে এই সংজ্ঞার আওতায় এসে পড়েছে। এসব কারণে সমাজে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হচ্ছে এবং মানুষ বাইরে বের হতে আর সুরক্ষিত বোধ করে না।

কালবৈশাখী রচনা, The best essay on Northwester or Kalbaisakhi in Bengali

ইভটিজিং কি?

ইভটিজিং কি কি কারণে হয়? Causes behind Eve teasing

 ইভটিজিং হওয়ার কারণ হিসেবে বেশিরভাগ মানুষের মত এটাই থাকে যে মেয়েদের চাল চলন সঠিক নয়। কিন্তু সঠিক ভাবে খুঁজলে দেখা যায় যে এক্ষেত্রে মেয়েরা যে দোষী তা না, বরং বেশ কিছু ক্ষেত্রে ছেলে এবং মেয়েদের উভয় পক্ষেরই দোষ থাকে। 

ইভটিজিং এর ক্ষেত্রে সাধারণত যেসব কারণ থাকে :-

বয়স : সাধারণত দেখা যায় যে ১৫ থেকে ২১ বছর বয়সের ছেলেদের মধ্যে মেয়েদের পেছনে লাগার প্রবণতা থাকে। তারা মেয়েদেরকে দেখলে টিপ্পনি কাটতে মজা পায়, যে কোন ভাবে তাদেরকে উত্যক্ত করতে পারলেই যেন তারা খুশী হয়। আবার এই বয়সের অনেক মেয়েরাও আছে যারা ছেলেদের কে দেখলে কটু মন্তব্য করে বা অসভ্যতা করে।

পরিবেশ– পরিস্থিতি : গ্রামঞ্চলের তুলনায় শহরের পরিবেশ একটু বেশি খোলামেলা। তাই  ইভটিজিং গ্রামের ছেলে মেয়েদের মধ্যে শহরের তুলনায় কম দেখা যায়। গ্রামে আধুনিকতার অভাব থাকে এবং বেশিরভাগ মানুষ শালীনতার সাথে চলাফেরা করে, যার ফলে এধরনের ঘটনা তেমন একটা দেখা যায় না। অন্যদিকে শহরের ছেলেমেয়েরা আধুনিকতা বেশি পছন্দ করে, যার প্রভাবে তারা বিপরীত লিঙ্গকে আকৃষ্ট করতে যেন উঠে পড়ে লেগে যায়, এইভাবেই নানা ধরনের অবাধ্য কার্যকলাপের কারণে তারা ইভটিজিংয়ের শিকার হচ্ছে বেশী।

ছেলে মেয়েদের বাজে আড্ডা : ছেলেদের ক্ষেত্রে অধিকাংশ সময় ২/৩জন ছেলে একসাথ হলে তার পাশ দিয়ে একজন মেয়ে বাজে মন্তব্য শোনা ব্যতিত হেঁটে যেতে পারাটা কষ্ট সাধ্য।

সঠিক গাইড লাইনের অভাব : বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় যে যেসব ছেলেমেয়েরা ছোট বয়স থেকে মা বাবার আদর স্নেহ তথা পারিবারিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত থেকেছে তারাই এই সব অকাজে বেশি লিপ্ত হয়। অনেকের ক্ষেত্রে এমনও হয় যে তাদের বাবা-মায়েরা কাজ কর্ম তথা চাকুরীর পিছনে দৌঁড়াতে গিয়ে নিজের ছেলেমেয়েদের ব্যাপারে খোঁজ খবর রাখার সময় পান না। এভাবেই তাদের অজান্তে সন্তান বিপথে চলতে থাকে।

মোবাইল ফোন : “মোবাইল ফোনই কাল।” কথাটি আমাদের মায়ের মুখে আমরা হয়তো অনেক বার শুনেছি। এই ক্ষেত্রে দেখতে গেলে কথাটা নেহাত ভুল নয়, কারণ মোবাইল ফোনের অবাধ ব্যবহার করার মধ্য দিয়েও ছেলেরা মেয়েদেরকে বেশি জ্বালাতন করার সুযোগ পায়। আজকাল নির্দিষ্ট বয়সের পূর্বেই হাতে মোবাইল এসে যায়, তাই মোবাইলের সঠিক ব্যবহার না করে ছেলে মেয়েদের কাছে   মোবাইলের অপব্যবহারই একমাত্র কাজ হয়ে দাঁড়ায়।

ইভটিজিং কি কি কারণে হয়?

অত্যাধুনিক জামাকাপড় পরিধান : ইভটিজিং নিয়ে অনেকেরই একটা মতামত রয়েছে যে আজকালের মেয়েরা অতি আধুনিক হয়ে গায়ের সাথে লেগে থাকা জামা পরিধান করে যা স্বাভাবিক ভাবে যেকোনো ছেলেকে সেই মেয়ের প্রতি আকর্ষণ করে, যার ফলে ওইসব মেয়েরা ইভটিজিং এর শিকার হয়। কিন্তু এমনও দেখা যায় যে সালোয়ার কামিজ বা বুরখা পরে রাখা মেয়েরাও ইভটিজিংয়ের শিকার হচ্ছে। তাই বলা যায় যে শুধু জামাকাপড় নয় বরং কিছু মানুষের মানসিকতাও খারাপ থাকে যার কারণে এইসব সমস্যা দেখা যায়।

ছেলে মেয়েদের নিয়ন্ত্রণহীন চলাফেরা : অনেকের মতে ছেলেরা মেয়েদের ইভটিজিং করার পেছনে মেয়েরাই দায়ী, কারণ তারাই নাকি ছেলেদের আগ্রহী করে তোলে। আমাদের দেশের মোট ধর্ম ভীরু স্থানে যদি একটা মেয়ে হাতাকাটা জামা, ছোট ছোট জামা পরে থাকে, বা এমন কোনো কাপড় পরে যাতে তাদের শরীরের বেশিরভাগ অংশ ছেলেদের চোখে সদৃশ করে তোলে, তবে একটা ছেলে সে ব্যপার নিয়ে অবশ্যই কুমন্তব্য করবে বলেই ধারণা রাখেন বেশিরভাগ মানুষ।

তাদের মতানুসারে মেয়েটা যদি শালীনতা বজায় রাখতো তবে কোনও ছেলে তাকে উত্যক্ত করার সুযোগ পেত না। তবে এটাও অস্বীকার করার নয় হে কিছু বখাটে ছেলে থাকে যারা যেকোনো মেয়েকেই উত্যক্ত করার জন্য তৈরি থাকে, সেই মেয়ে যতই শালীনতা বজায় রাখুক না কেনো।

গ্রীষ্মের দুপুর সেরা রচনা, Best essay on summer afternoon in Bengali

ইভটিজিং কিভাবে প্রতিরোধ করা যায়, How to prevent eve teasing

ইভটিজিং নিঃসন্দেহে সমাজকে অবনতির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। তাই সকলকে সম্মিলিতভাবে এর প্রতিবাদ করা উচিত। রাস্তায় হেঁটে যাওয়ার সময় এমন কিছু দেখে তা অনেকেই এড়িয়ে যায়, এমনটা না করে বাধা দেওয়া শ্রেয়, তা না হলে ছেলেমেয়েরা এসব প্রশ্রয় পায় এবং ধীরে ধীরে বিভিন্ন ভাবে সমস্যা সৃষ্টি হয়। তাই সমাজ থেকে এই সমস্যা মুছে দিতে হলে ইভটিজিংয়ের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

ইভটিজিং কিভাবে প্রতিরোধ করা যায় জেনে নিন :

বিদ্যালয় তথা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ক্লাসরুমে ইভটিজিং এর বিষয়ে আলোচনা করা উচিত এবং এর নেতিবাচক দিক তুলে ধরার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সচেতন করে তুলতে হবে। সমাজে ইভটিজিং এর প্রভাব সম্পর্কে ছাত্রছাত্রীদের অবগত করতে হবে।

● গণমাধ্যমগুলোতে ইভটিজিং এ উৎসাহিত করার মতো কোনো বিজ্ঞাপন, এই ধরনের কোনো বক্তব্য, নাটক ইত্যাদির প্রচার বন্ধ করার কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত, কারণ আজকের যুবসমাজে গণমাধ্যমের প্রভূত প্রভাব পরিলক্ষিত হয়।

● পথে ঘাটে টহল দিতে থাকা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে এই বিষয়ে আরও সচেতন এবং কার্যকর হতে হবে।

ইভটিজিং কিভাবে প্রতিরোধ করা যায়

● ইভটিজিংয়ের কোনো ঘটনা ঘটে থাকলে ভুক্তভোগী এবং তার পরিবারকে অবহেলার চোখে বা দেখে সবাইকে তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। একটা কথা অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে আজ যেটা ওদের সাথে হচ্ছে কাল আপনার পরিবারের কারও সাথেও এমন ঘটতে পারে। তাই আজই প্রতিবাদ করা উচিত।

● অঞ্চল ভিত্তিক তথা জাতীয় পর্যায়ে ইভটিজিং প্রতিরোধ করার উদ্দেশ্যে একটি সক্রিয় কমিটি গঠন করে বিভিন্ন সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা উচিত। সমাজের সকল ব্যক্তিকে এইবিষয়ে সচেতন করে তুলতে পারলে সকলে মিলে সমস্যা সমাধান সহজ হয়ে যায়।

উপসংহার, Conclusion

সাধারণত উঠতি বয়সের যুবক-যুবতী বা স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীরাই বেশী পরিমাণে ইভটিজিং এর শিকার হচ্ছে। পরিবারের থেকে পাওয়া সঠিক শিক্ষা এবং সামাজিক সচেতনতা সমাজ থেকে এই সমস্যা কে নির্মূল করতে পারবে।

 ইভটিজিং এর শিকার

তাছাড়া ছেলে মেয়েদেরকেও নিজের মন থেকে কুচিন্তা তথা খারাপ মানসিকতা মুছে ফেলতে হবে, তবেই সুন্দর ও শৃঙ্খলাবদ্ধ সমাজ গঠন সম্ভব।

Recent Posts