ভীষ্মের উপদেশমূলক বাণী, Famous motivational sayings of Bhisma in Bengali



পিতামহ ভীষ্ম মহাভারতের এক অতি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। মহাভারতের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র ধৃতরাষ্ট্র, দুর্যোধন, কৃষ্ণ, অর্জুন ও যুধিষ্ঠিরকে তিনি বেশ কিছু ধর্ম-অধর্মের বাণী শুনিয়েছিলেন। অন্যদিকে শরশয্যায় শায়িত থাকাকালীন পিতামহ ভীষ্ম সকলকে রাজনীতি, নীতি, জীবন ও ধর্মের উপদেশ দিয়ে যান।

ভীষ্মের উপদেশমূলক বাণী

আমাদের আজকের এই পোস্টটিতে আমরা ভীষ্মের উপদেশেরমূলক বাণী তুলে ধরব। বর্তমান সময়ে বেশিরভাগ মানুষ সামাজিক মাধ্যমেই বিভিন্ন বিষয় নিয়ে নিজের মনোভাব তুলে ধরার চেষ্টা করে, তাই আপনাদের মধ্যে যারা এই বিষয় নিয়ে স্ট্যাটাস, ক্যাপশন, উক্তি, ছন্দ ইত্যাদি খোঁজ করে থাকেন তারা এই পোস্টে থাকা লেখাগুলো খুব সহজেই সংগ্রহ করে নিতে পারবেন। আশা করছি এই উক্তিগুলো পাঠকদের পছন্দ মতন হবে এবং বিভিন্ন সময়ে ব্যবহার করার যোগ্য হবে।

ভীষ্মের বিখ্যাত বাণী, Best sayings by Bhisma in bangla

  • পিতামহ ভীষ্ম বলেছিলেন “অন্যের ভালো লাগে এমন কথা বল। অন্যকে আঘাত দিয়ে কোনো খারাপ কথা বলা, অন্যের নিন্দা করা, কটূ বচন বলা, এ সব ত্যাগ করাই শ্রেয়। অন্যের অপমান করা, অহংকার ও দম্ভ, এটি অবগুণ।”
  • পিতামহ ভীষ্ম যখন শরশয্যায় শুয়ে আছেন তখন তিনি শ্রীকৃষ্ণকে প্রশ্ন করলেন, তার এই দশার কারণ কী? ভীষ্ম বললেন,“ হে বাসুদেব আমি জানি সকলকেই তাঁর নিজের কৃতকর্মের ফল অবশ্যই একদিন না একদিন ভোগ করতেই হয়। কিন্তু, আমি কী পাপ করেছিলাম যে, এই জন্মে শরশয্যায় থেকে এত বড় শাস্তি এত কষ্ট আমাকে ভোগ করতে হচ্ছে?”
  • ত্যাগ ছাড়া কখনো কোনো কিছু লাভ করা যায় না, পরম আদর্শের সিদ্ধি হয় না, ব্যক্তি ভয়মুক্ত হতে পারে না। তাই ত্যাগের সাহায্যে একজন ব্যক্তি সমস্ত ধরনের সুখ লাভ করতে পারে।
  • দু’ধরনের মানুষ সুখ ভোগ করে থাকে। এক হল, যে সবচেয়ে বেশি বোকা ও দ্বিতীয় হল, যারা বুদ্ধির প্রকাশে তত্ত্বকে দেখে নিয়েছে। যারা এই দুইয়ের মাঝখানে রয়েছেন, তারা দুঃখী হয়ে থাকেন।
  • যে পুরুষের নিজের ভবিষ্যতের ওপর অধিকার আছে, যারা সময় অনুযায়ী তৎক্ষণাৎ বিচার করতে পারে সেই পুরুষই সুখ লাভ করে। আলস্য ব্যক্তিকে ধ্বংস করে দেয়।
  • “তোমরা অনুমতি দাও আমি দেহত্যাগ করি। তোমরা কখনো সত্যকে পরিত্যাগ না করে। সত্যের তুল্য আর কোন শক্তি নেই।”
  • সনাতন কালে যখনই কেউ স্ত্রীর অপমান করেছে, তাঁদের বিনাশ অবশ্যই হয়েছে। ভীষ্মের মত অনুসারে, যে ঘরে স্ত্রী প্রসন্ন থাকে, সে ঘরে লক্ষ্মীর বাস হয়। যে বাড়িতে স্ত্রীর সম্মান হয় না, তাকে কষ্ট দেওয়া হয়, সেখান থেকে লক্ষ্মী-সহ অন্য দেবী-দেবতাও চলে যান। এর পরিপ্রেক্ষিতেই ভীষ্ম যুধিষ্ঠিরকে বলেন যে, স্ত্রীর প্রথম সুখ তাঁর সম্মান।
  • “আমার কাছে গান্ধারী (ধৃতরাষ্ট্রের স্ত্রী) সন্তানেরা আর কুন্তি ও মাদ্রীর (পাণ্ডুর দুই স্ত্রী) সন্তানেরা সমান প্রিয়।”       
  • “আমি নারদ মুনির কাছে শুনেছি, অর্জুন পূর্ববদেব নর এবং ভগবান বাসুদেব পূর্ববদেব নারায়ণ। একমাত্র আত্মা নর ও নারায়ণ হিসাবে দ্বিধাকৃত হয়েছে। দেবগণ, অসুরগণ এবং মানবগণ তাদেরকে পরাজিত করতে সক্ষম হয় না।”
  •  শরশয্যায় শায়িত ভীষ্ম, যুধিষ্ঠিরকে বলেন যে, নদী তীব্রগতিতে সমুদ্র পর্যন্ত পৌঁছলে বড় বড় গাছকেও নিজের সঙ্গে নিয়ে যায়। সমুদ্র একদা নদীকে জিজ্ঞেস করে যে, তোমার জল প্রবাহ এত তীব্র ও শক্তিশালী কেন, যে সেটি বড়সড় গাছকেও নিজের সঙ্গে ভাসিয়ে নিয়ে যায় এবং ছোট ঘাস, কোমল বেল ও নরম চারাগাছকে নিয়ে যেতে পারে না? নদী বলে, যখন আমার জলের স্রোত আসে, তখন বেল, ঘাস, চারাগাছ নিজে থেকেই ঝুঁকে যায়। কিন্তু নিজের কঠোর স্বভাবের কারণে বড় গাছ এমন করতে পারে না, তাই আমার প্রবাহ তাকে উৎপাটিত করে ফেলে।
  • শয্যাশায়ী অবস্থায় ভীষ্ম কৃষ্ণকে লক্ষ্য করে বললেন, “আমার দেহত্যাগের সময় সামনে উপস্থিত। আমার যেন স্বর্গপ্রাপ্তি ঘটে।”
  • . মহাভারতের যুদ্ধের আগে কৃষ্ণ সন্ধির প্রস্তাব নিয়ে হস্তিনাপুর এলে ভীষ্ম দুর্যোধনকে বলেন, “যেখানে কৃষ্ণ, সেখানেই ধর্ম। সেই পক্ষই জয় লাভ করবে। তাই পুত্র দুর্যোধন! কৃষ্ণের সাহায্যে পাণ্ডবদের সঙ্গে সন্ধি করে নাও। সন্ধির ভালো সুযোগ পেয়েছ তুমি। ব্যক্তিকে সর্বদা ধর্মের পক্ষে থাকা উচিত।”
  • শরশয্যায় শুয়ে শুয়ে ভীষ্ম স্বর্গের কথা ভাবতে লাগলেন। তখন আকাশ থেকে দেবতারা বললেন, “হে মহাবীর! সূর্যদেব এখনো আকাশের দক্ষিণভাগে রয়েছেন। এই সময় কোনো মহাপুরুষের মৃত্যুর জন্য উপযুক্ত নয়। আপনি কি এমনসময় দেহত্যাগ করবেন?”

ভীষ্মের উপদেশমূলক সংক্রান্ত আমাদের আজকের এই পোস্টটি ভালো লেগে থাকলে আশা করি পবিত্র কুরআনে বর্ণিত উপদেশ বাণী সম্পর্কিত আমাদের পোস্টটি ও আপনাদের মনের মতন হবে।

ভীষ্মের বিখ্যাত বাণী

ভীষ্মের উপদেশমূলক উক্তি, Best advice of Bhisma from Mahabharat 

  • ভীষ্ম ধৃতরাষ্ট্রকেও উদ্দেশ করে উপদেশ দিলেন। “ সূক্ষ্ম দেবশাস্ত্র ও ধর্ম তোমার অবিদিত না। সুতরাং শোক পরিত্যাগ করা অবশ্যই কর্তব্য। ধর্মানুসারে পাণ্ডবগণ তোমার পুত্রের মত। ধর্মপরায়ণ হয়ে পাণ্ডবগণকে প্রতিপালন করো। যুধিষ্ঠির সর্বদা তোমার আজ্ঞানুবর্তী হয়ে থাকবে। তোমার পুত্ররা লোভী, ঈর্ষাকাতর ও দুরাত্মা ছিল। তাদের জন্য দুঃখ করো না।”
  • কৃষ্ণের মতো ভীষ্মও বলেছিলেন যে, পরিবর্তনই সংসারের অটল নিয়ম এবং সকলকে তা স্বীকার করতেই হয়, কারণ একে পাল্টানো যায় না।
  • পিতামহ ভীষ্ম বলেছিলেন যে, এক জন শাসককে নিজের পুত্র ও প্রজার মধ্যে কোনও ভেদাভেদ করা উচিত নয়। এমন শাসন অটল ও প্রজাকে সমৃদ্ধি প্রদান করে।
  • ভীষ্ম বলেছিলেন, শাসনক্ষমতা সুখ ভোগ করার জন্য নয়, বরং কঠিন পরিশ্রম করে সমাজের কল্যাণ করার জন্য।
  • ক্রোধ থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য ক্ষমা করতে শিখতে হবে।
  • আত্ম অনুশীলনের ফলে যথার্থ জ্ঞান অর্জন করা যায় ।
  • অপ্রত্যাশিত সঙ্গ পরিহার করে অর্থ বাঁচানো যায় ।
  • সহনশীলতার দ্বারা বাসনাসমূহ এবং বিদ্বেষকে জয় করা যায় ।
  • নিয়ন্ত্রিত আহারের দ্বারা রোগের উপদ্রব থেকে মুক্তি পাওয়া যায় ।
  • অবৈধ বাসনাসমূহ থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করার প্রবণতা ত্যাগ করতে হবে ।
  • আধ্যাত্মিক অনুশীলনের দ্বারা ঘুমকে জয় করা যায় ।
  • শৌর্যের দ্বারা ভয় পরিহার করা যায় ।
  • তথ্য নির্ধারণের মাধ্যমে মিথ্যা তর্ক জয় করা যায় ।
  • গাম্ভীর্য ও মৌনতার দ্বারা বাচালতা দূর করা যায় ।
  • যোগ অনুশীলনের দ্বারা ক্ষুধা ও তৃষ্ণা জয় করা যায় ।

ভীষ্মের উপদেশমূলক সংক্রান্ত আমাদের আজকের এই পোস্টটি ভালো লেগে থাকলে আশা করি রাবণের উপদেশ/রাবণকে নিয়ে উক্তি সম্পর্কিত আমাদের পোস্টটি ও আপনাদের মনের মতন হবে।

ভীষ্মের উপদেশমূলক উক্তি

ভীষ্মের চিরস্মরণীয় বাণী, Unforgettable lines of Bhisma 

  • ভোরে শয্যা ত্যাগ করার দ্বারা বিহ্বলতা জয় করা যায়।
  • জগতের অনিত্যতার সম্বন্ধে জ্ঞান আহরণের ফলে বিষয়-তৃষ্ণা নিবারণ করা যায় ।
  • আত্ম-সংযমের দ্বারা মিথ্যা আশা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় ।
  • ক্রোধ করো না ।
  • মিথ্যা কথা বলার অভ্যাস পরিহার কর ।
  • সম্পদ সর্বদা সমভাবে বন্টন করবে ।
  • ক্ষমা করতে শেখো ।
  • কখনো কারোর প্রতি শত্রুভাবাপন্ন হবে না ।
  • চরিত্রের পরীক্ষা তখনই হয় যখন অপরিচিত কারোর সংস্পর্শে আসা যায়।
  • দেহে ও মনে শুদ্ধ হবে ।
  • কেবল বিবাহিত পত্নীর দ্বারাই সন্তান উৎপাদন করবে ।
  • সরল হতে শিখবে ।
  • সর্বদা আশ্রিত এবং অধীনস্থদের যত্নের সহিত পালন করবে ।       
  • সব যোদ্ধারা তিরবিদ্ধ ভীষ্মের কাছে গিয়ে নিজেদের বর্ম ও অস্ত্র-শস্ত্র ত্যাগ করে, নতমুখে হাত জোড় করে দাঁড়ালেন, তখন ভীষ্ম তাঁদের দেখে বললেন, “হে মহাবীরগণ! তোমাদের মঙ্গল হোক। তোমাদের দেখে আমি খুব খুশি হলাম। দেখ, এভাবে শুয়ে আমার মাথা ঝুলে পড়ছে। আমাকে বালিশ দাও।”
ভীষ্মের চিরস্মরণীয় বাণী

শেষ কথা, Conclusion 

আমরা চেষ্টা করেছি আজকের এই পোস্ট দ্বারা ভীষ্মের উপদেশেরমূলক বাণী আপনাদের কাছে তুলে ধরার। আশা করি আজকের এই পোস্ট ভালো লেগেছে। এই পোস্টটি যদি আপনাদের মনোগ্রাহী হয়ে থাকে, তাহলে অবশ্যই আপনার আত্মীয়পরিজন ও বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে নিতে পারেন। এরূপ আরো পোস্ট পাওয়ার জন্য নজর রাখুন আমাদের এই ওয়েবসাইটে।

Recent Posts