বৃহন্নলা বা হিজড়া বা আক্ষরিক অর্থে যাদের আমরা তৃতীয় লিঙ্গ বলে থাকি তাদের সম্পর্কে যেমন আমাদের মধ্যে কমবেশি রয়ে গেছে একটি নেতিবাচক ধারণা তেমন ই পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে তাদের অবস্থানগত মর্যাদাও খুব একটা বেশী ইতিবাচক নয়।
এতদিন ধরে যাদের নাম শুনলে অনেকেই ভাবতেন তাদের ট্রেনে নেচে, গেয়ে ভিক্ষা করা ছাড়া আর কোন গতি নেই, তারাই আজ সামাজিক প্রতিকূলতার মধ্যে থেকেও সমাজের কাছে রোল মডেল হয়ে উঠছেন।কেরালার প্রথম তৃতীয় লিঙ্গের চিকিত্সক ডাঃ ভি.এস.প্রিয়া তাঁদেরই অন্যতম । তিনিই প্রথম রূপান্তরকামী চিকিৎসক হিসাবে ভারতে স্বীকৃতি পেয়েছেন। পুরুষ হিসাবে জন্ম নিলেও মানসিকভাবে নিজেকে সর্বদা একজন নারী হিসাবেই দেখতেন এবং এ ক্ষেত্রে তাঁর পরিবারের ও পূর্ণ সমর্থন পেয়েছিলেন তিনি । তাই লিঙ্গ পরিবর্তন করতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা বোধ করেননি ।পূর্বে যাঁর নাম ছিল জিনু শশীধরণ; এখন তিনি ডাঃ ভি.এস প্রিয়া।

ছোটবেলা থেকেই তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে এই পরিস্থিতিতে তাঁর স্বাভাবিক ভাবে বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে। জীবনযুদ্ধে থেমে না গিয়ে কীভাবে এই ঝামেলা থেকে বের হওয়া যায় সে সম্পর্কে তিনি গবেষণা করতে শুরু করেন। তাঁর এই কঠিন জীবন যুদ্ধে জয়ী হওয়ার জন্য সর্বাগ্রে সহযোগিতা করেছেন তার মাও বাবা যাঁরা দুজনই স্বাস্থ্য সেবক- সেবিকা। মা-বাবা উভয়েই চাইতেন তাঁদের সন্তান চিকিৎসক হয়ে মানুষের সেবা করুক।
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেরা রসিকতার কিছু অজানা কাহিনী, Rabindranath Tagore’s rosikota r goplo in bangla
- শিউলি ফুল সম্পর্কে বিস্তারিত, Details about Shiuli flower
- পলাশীর যুদ্ধ সম্পর্কে বিস্তারিত, Best details about the Battle of Plassey in Bengali
- পণপ্রথা একটি জাতীয় সমস্যা, Best essay on the Dowry System in Bengali
- অজ্ঞাতবাসে থাকাকালীন এই বিশেষ গাছটিতেই পাণ্ডবেরা লুকিয়ে রেখেছিলেন তাঁদের অস্ত্র সরঞ্জাম!! Pandavas Hid Their Weapons in This Tree
অভিভাবকদের এই চিন্তাধারা ছোট বেলা থেকেই তার মনের উপর এক গভীর প্রভাব ফেলে আর সেই থেকেই সমাজের ক্যুৎসিত মন্তব্যসমূহকে উপেক্ষা করে উচ্চ শিক্ষিত হওয়ার পরিকল্পনা করতে শুরু করে দেন তিনি। সমস্ত নেতিবাচক মন্তব্য উপেক্ষা করে তিনি বৈদ্যরত্নম থেকে বিএএমএস শেষ করেন এবং পরবর্তীকালে মঙ্গলুরু থেকে এমডি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন ।

যখন তিনি পট্টম্বি, কান্নুর ও ত্রিপুনিথুরায় চাকরি করছিলেন সেই সময় থেকেই নিজেকে পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করে দেন ।ত্রিচুর সীতারাম হাসপাতালে যোগদান করার পর তিনি হরমোন চিকিত্সা শুরু করেন। পরবর্তীকালে প্রিয়ার অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয় আর তারপর ভয়েস থেরাপি সহ অনেকগুলি চিকিৎসার প্রয়োজন হয়ে পড়ে । তবে অদম্য ইচ্ছাশক্তির সুবাদে তিনি সব বাধা অতিক্রম করে ওঠেন। বর্তমানে তিনি মানুষের সেবা দানকারী একজন সফল ডাক্তার।স্বপ্ন পূরণ হয়েছে তাঁর মা-বাবাসহ তাঁর নিজেরও।
প্রিয়া সফলভাবে কাটিয়ে উঠেতে পেরেছেন সামাজিক, শারীরিক এবং মানসিক বৈষম্য; আর এভাবেই ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন নিজেকে ডাক্তার হিসাবে প্রতিষ্ঠান করে। নিজের বৃহন্নলার জীবনকে উপেক্ষা করে সকল লাঞ্চনা-গঞ্জনা কে পদদলিত করে প্রথম তৃতীয় লিঙ্গের ডাক্তার হয়ে সমাজের কাছে এক উদাহরণ স্থাপন করেছেন তিনি।