পিতামাতার প্রতি সন্তানের কর্তব্য, Know about Duties of children towards parents in Bengali


শিশু অবস্থায় থাকাকালীন আমাদের ভরণ পোষণ করা থেকে শুরু করে সময়ের সাথে সাথে আমাদের শিক্ষা দান করা সহ যাবতীয় সকল চাহিদা যথাসাধ্য পূরণ করার প্রচেষ্টায় পিতা মাতার জীবন কেটে যায়। সন্তানের জন্মের পর থেকে তারা যেন নিজের জীবন সন্তানের প্রতি সকল কর্তব্য পালনের দিকেই উৎসর্গ করে দেন। তাই বড় হওয়ার পর সন্তানেরও কর্তব্য নিজের মাতা পিতার সঠিক যত্ন নেওয়া এবং তাদের প্রতি নিজের সকল কর্তব্য নিষ্ঠা সহকারে পালন করা। 

পিতামাতার প্রতি সন্তানের কর্তব্য

সন্তানের প্রতি মাতা পিতার সহানুভূতি, Parental sympathy for children

 জন্মদাতা মাতা পিতার কাছে তাদের সন্তানের চেয়ে বড় কিছু নেই। সন্তানের প্রতি ভালোবাসা তাদের বেঁচে থাকার সম্বল স্বরূপ। মায়ের দেহের বিন্দু বিন্দু রক্তই মাতৃগর্ভে এক সময় আমাদের অস্তিত্বের একমাত্র অবলম্বন ছিল। তারপর ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর আমাদের মাতাপিতাই আমাদের একান্ত আপনজন তথা মঙ্গলকামী হয়ে পড়েন।

সন্তানের মঙ্গল কামনায় মাতাপিতা সর্বদাই তটস্থ থাকেন। শিক্ষা-দীক্ষা দান করে, কাজে-কর্মে নিজের সন্তানকে একজন আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলাই হল প্রতিটি পিতা- মাতার আরাধ্য বিষয়। সন্তানের মঙ্গলার্থে হয়তো এমন কোন কাজ নেই যা মাতাপিতা করতে চান না।

এমনকি অনেক সময় মা-বাবা নিজে না খেতে পারলেও সন্তানকে খাওয়ানোর ব্যবস্থা করেন, নিজে সারা বছর এক জোড়া কাপড় পরেও সন্তানের নতুন পোশাকের ব্যবস্থা করেন। নিজের সন্তানের মুখে একটু হাসি ফুটলেই তাঁদের মুখেও হাসি ফোটে ওঠে। মাতাপিতা সন্তানের জন্য উৎকণ্ঠায় বিনিদ্র রাত্রি যাপনও করেন। কখনও সন্তান অসুস্থ বোধ করলে দুশ্চিন্তায় মা-বাবার চোখের ঘুম উড়ে যায়। সন্তানের কোনও অমঙ্গল হলে মাতা-পিতার বেদনার যেন শেষ থাকে না।

সন্তানের প্রতি মাতা পিতার সহানুভূতি

আবার কিছু ক্ষেত্রে এমনও দেখা হয় যে বিপথগামী বা অবাধ্য হয়ে যাওয়া সন্তানের জন্যও তাদের মা-বাবার সহানুভূতি এবং ভালবাসা কখনই কম হয়ে যায় না। কারও সন্তান প্রতিবন্ধী জন্ম নিলেও মাতাপিতা তাকে কখনো কম স্নেহ করেন না, বরং তাদের মনের ভালোবাসা তার প্রতি আরো বেশি থাকে এবং যত্ন করার দিকে কোনো কমতি রাখেন না। যেকোনো সন্তানের জীবনে পিতামাতার অবদান অনস্বীকার্য। নিজের জীবনে পিতা-মাতার অসীম অবদান পরিমাপ করা হয়তো কোনো সন্তানের পক্ষেই সম্ভব নয়। তাই একজন সন্তানের জীবনে তার মাতাপিতার এইরূপ প্রভাবের পরিপ্রেক্ষিতে সন্তানের কর্তব্যও সীমাহীন হয়ে ওঠে।

শিক্ষাবিস্তারে গণমাধ্যমের ভূমিকা, Role of mass media in Education in Bengali

কর্তব্যের ধরন, Types of Responsibility

বিভিন্ন শাস্ত্রে বলা আছে, “পিতা-মাতার সাথে সৌজন্যমূলক আচরণ করবে।”

রামায়ণে রাম পিতৃসত্ব পালনের উদ্দেশ্যে চৌদ্দ বছর বনবাস যাপন করেন, ভীমসেন মাতার আজ্ঞা পালন করতে গিয়ে রাক্ষসের মুখে যেতেও কোনো দ্বিধা বোধ করেন নি। শাস্ত্রে বলা আছে যে বিদ্বান এবং ভক্তিমান নয় এমন সন্তান জন্মের কোনো প্রয়োজন নেই। তাছাড়া পিতা-মাতা যখন বৃদ্ধাবস্থায় এসে পড়েন, যখন তারা নিজে নিজে চলা ফেরার দিক থেকে অনেকটা অক্ষম হয়ে পড়েন, তখন তাঁদের চলা ফেরার ক্ষেত্রে সহায়তা করা, তাদের কোনো রোগ ব্যাধি দেখা দিলে সন্তানের উচিত তাদের সেবা-যত্ন করা।

সন্তানেরা যখন বড় হয়ে যায় এবং কর্মজীবনে প্রবেশ করে, তখন নিজের মাতাপিতার ভরণপোষণের দায়িত্ব তার কাঁধে এসে পড়ে। মা-বাবার বয়স বেড়ে যায় এবং তারা প্রৌঢ়ত্বে বা বার্ধক্যে পৌঁছে যান তাই নিজের কর্মজীবন থেকে তাদের অবসর নিতে হয়। এমন অবস্থায় অনেকেই নিজের সন্তানের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন।

এই অবস্থায় নিজের অভিভাবকদের সকল রকম সুখের ব্যবস্থা করাই সন্তানের কর্তব্য। বলতে গেলে, শৈশবে যখন আমরা অসহায় ছিলাম, সেই মুহূর্তে আমাদের মাতা পিতা যেমনভাবে আমাদের একান্ত অবলম্বন হয়ে উঠেছিলেন ঠিক তেমনভাবেই তাদের বৃদ্ধাবস্থায় আমাদেরকেই তাদের পাশে থাকতে হবে, তাদের অবলম্বন হয়ে ওঠার দায়িত্ব প্রত্যেকটি সন্তানের ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক।

কর্তব্যের ধরন

মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষাদান, Best essay on Education through mother tongue in Bengali

পিতা-মাতার সকল প্রত্যাশা পূরণ করার প্রচেষ্টা, Efforts to fulfill all expectations of parents

সন্তানের জন্মের পর থেকে তাদের বেড়ে ওঠা, তাদের যথাযথ লালন-পালন, তথা তাদেরকে ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা, এসব কিছু ঘিরেই হয় পিতা-মাতার জগৎ। সকল বাবা-মায়ের একটাই প্রত্যাশা থাকে, ‘আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে’। তাই বলা যায় যে, সন্তানের সুপ্রতিষ্ঠিত হয়ে ওঠার পেছনে মা বাবার নিরলস সাধনা এক বিরাট ভূমিকা পালন করে থাকে।

পিতা-মাতার সকল প্রত্যাশা পূরণ করার প্রচেষ্টা

তারা সবসময় চান যেন তাদের ছেলেমেয়েরা সুসন্তান হিসেবে সমাজে মাথা উঁচু করে দাঁড়ায় এবং সব রকম অন্যায় অবিচার ও মিথ্যাকে প্রতিহত করে নিজের ক্ষমতা অর্জন করতে সক্ষম হোক। এই সকল প্রত্যাশা পূরণ করার মধ্য দিয়ে মাতা পিতার প্রতি নিজের কর্তব্য পালন করা উচিত।

শিক্ষাবিস্তারে গণমাধ্যমের ভূমিকা, Role of mass media in Education in Bengali

পিতা মাতার অনুগত থাকা এবং তাদের সন্তুষ্ট রাখা, To obey parents and keep them satisfied

যে কোনো পরিস্থিতিতে পিতামাতার প্রতি সন্তানের অনুগত থাকতে হবে। কোনো কারণে তাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করা অথবা বিরক্ত হওয়া উচিত না। সন্তান শিক্ষা দীক্ষা বা চাকরির দিক থেকে যত বড় মাপের মানুষই হয়ে যাক না কেনো, নিজের বাবা-মার কাছে সে শুধুমাত্র তাদের সন্তান হিসেবেই থাকে, জীবনের পথে তার প্রাপ্তি নিয়ে মা বাবা গর্বিত বোধ করেন, তবে তাদের মনে এই ভয় থেকে যায় যে ছেলে মেয়ে উন্নতির শিখরে পৌঁছে তাদেরকে না ভুলে যায়।

বাবা-মা সাধ্যমতো সন্তানদেরকে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য প্রদান করার চেষ্টা করেন। তবে কখনও কিছু একটা দিতে গিয়ে ব্যর্থ হলেই তাদের প্রতি অনেকেই ভ্রুক্ষেপ করে, যা একদম উচিত না, কারণ সন্তানদের থেকে তারা সর্বদাই বিনয়ী আচরণ আশা করে থাকেন। আমাদের একটা কথা অনুভব করা উচিত পিতামাতা সন্তানের সর্বোত্তম বন্ধু হিসাবে সর্বদা তাদের পাশে থাকে, তাই তাদেরকে শান্তিতে এবং চিন্তামুক্ত রাখা সন্তানের আবশ্যক কর্তব্য।

পিতা মাতার অনুগত থাকা এবং তাদের সন্তুষ্ট রাখা

ছাত্রজীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য, Responsibilities and duties of student life in Bengali

পিতামাতার আদর্শ এবং সম্মান বজায় রাখার চেষ্টা করা, Trying to uphold the ideals and respect of parents

মা বাবা নিজের ছেলে মেয়েকে বড় করে তোলার ক্ষেত্রে যতটা সম্ভব ভালো শিক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করে এবং চরিত্রবান হিসেবে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য বিভিন্ন ন্যায়নীতি অনুসরণ করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। প্রত্যেক সন্তানেরই তাদের পিতামাতার থেকে পাওয়া আদর্শ এবং ন্যায়নীতি অনুসরণ করে চলা উচিত। সন্তানদের এমন কোনো কাজ কখনও করা উচিত নয় যাতে সমাজে তাদের অভিভাবকদের মান সম্মান ক্ষুন্ন হয়। সন্তানের প্রতি পিতামাতার ভালোবাসা এতটাই গভীর হয় যে সন্তান কখনও বিপথগামী হয়ে পড়লেও তারা তাকে দূরে সরিয়ে দিতে পারে না। কিন্তু তাদের মনে এই নিয়ে অনেক দুঃখ থাকে, তাই সব সময় তাদের আদেশ-নিষেধ মেনে চলা জরুরী। 

নিরক্ষরতা দূরীকরণে ছাত্র সমাজ, Students and Eradication of illiteracy in Bengali

পিতামাতার প্রতি সদাচরণ, Good behavior towards parents

সন্তানের প্রতি পিতা মাতার মন সর্বদা নম্র থাকে, তাই সন্তানদেরকে তাদের সাথে সব সময় সদাচরণ করা উচিত। পিতা মাতার সাথে সর্বদা কোমল কণ্ঠে এবং মার্জিত ভাষায় কথা বলতে হবে। ছেলে মেয়ে বড় হয়ে গেলে অনেক সময় বাইরে চাকরি করতে গিয়ে অথবা অন্য বিভিন্ন কারণে মা বাবার সাথে সম্পর্কে দূরত্ব এসে যায়, কিন্তু আমাদের মাথায় থাকা উচিত যে কোনও অবস্থাতেই যেন পিতামাতার সাথে সম্পর্ক ছেদ না পড়ে।

সন্তান জন্ম নেওয়ার পর থেকে পিতা মাতাই তার ভরণ-পোষণ এবং লালন পালনের ব্যবস্থা করে। বলাই বাহুল্য সন্তানের সাথে পিতামাতার রক্তের তথা নাড়ীর বন্ধন। এই বন্ধনকে কখনোই বিপথগামীতা এবং অবাধ্যতার দ্বারা তুচ্ছ বা তাচ্ছিল্য করা সন্তানের উচিত কাজ বলে গণ্য করা হয় না।

পিতামাতার প্রতি সদাচরণ

উপসংহার, Conclusion

যে সন্তানেরা মাতাপিতার সেবা করার সুযোগ পান তাদের জীবন ধন্য। আজকালের সন্তানদের মাতাপিতার প্রতি বিরাগী হতে দেখা যায়; সমাজে এমন কুপুত্রেরও অভাব হয় না যারা মাতাপিতাকে ঘৃণার চক্ষে দেখে। কিন্তু আমাদের এটা সর্বদা স্মরণে রাখা উচিত যে, সৃষ্টিকর্তার আনুগত্য স্বীকার করার পরই নিজের মা বাবার প্রতি নিজের সকল দায়িত্ব কর্তব্য পালন পৃথিবীর সব ধর্মে স্বীকৃত। তাই কোনভাবেই নিজের মাতাপিতাকে কষ্ট দেওয়া উচিত না, কারণ মাতাপিতার প্রতি শ্রদ্ধা ও কর্তব্য পালন করার মধ্যেই রয়েছে মানসিক শান্তি লাভের উপায়।

Recent Posts