আজকের সময়ে প্রায় সকল মানুষই মোবাইল ফোন ব্যবহার করছেন। বলতে গেলে মোবাইল মানুষের জীবনের নিত্যদিনের চলার সাথী হয়ে উঠেছে। এখনকার সময়ে মানুষ মোবাইলের উপর এতটাই নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে যে এই যন্ত্রটি ছাড়া সকলেই প্রায় অচল হয়ে পড়ে।
পাঁচ মিনিটের জন্য কোনো মোবাইল ব্যবহারকারীর কাছ থেকে তার মোবাইল ফোন নিয়ে নেওয়া হলেই তাদের প্রাণটা যেন কেমন উসখুস করে। তবে এই মোবাইল ব্যবহারের বেশ কিছু ভালো দিক এবং কিছু ক্ষতিকর দিকও রয়েছে। আজকের এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে আমরা এইসব বিষয়কেই তুলে ধরার চেষ্টা করবো।
মোবাইল ফোনের কিছু ভালো দিক, Advantages of mobile phones
মোবাইল ব্যবহারের বহু ভালো দিক আছে, আমাদের কাজ কর্ম অনেকটা সহজ করে দেয় এই মোবাইল। যেমন দূরের কারোর সাথে যোগাযোগ রাখা, অনলাইনে কিছু কেনাকাটা করা, ডিজিটাল বই পড়া, সঠিক লোকেশন এর সহায়তায় নিজের খুশি মত কোনো গন্তব্যে পৌঁছানো, এই সব কিছু মোবাইলের সাহায্যে করে নেওয়া যায়। এক কথায় বলতে গেলে মোবাইল হল বিজ্ঞানের তৈরি এক আশ্চর্যজনক আবিষ্কার। মোবাইল ফোন ব্যবহারের ভালো দিকগুলো নিম্নরূপ :
কম্পিউটার শিক্ষার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা, What is the Importance of computer education in Bengali
যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার
আমরা জানি যে মোবাইল সাধারণত দূরে থাকা আত্মীয় পরিজনের সাথে যোগাযোগ রাখার জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ফোনে নেটওয়ার্ক এবং ব্যালেন্স থাকা অবধি নির্দিষ্ট নাম্বারে ফোন করে পরিচিত ব্যক্তিদের সাথে কথাবার্তা বলা যেতে পারে। পাশাপাশি আরেকটি বিশেষ সুবিধা হল মোবাইলকে আমরা নিজের সাথে বা পকেটে ভরে যখন ইচ্ছে যেখানে সেখানে নিয়ে যেতে পারি।
সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে যোগাযোগ
বর্তমান যুগ ডিজিটাল যুগ নামে পরিচিত, আর এই ডিজিটাল যুগে সোশ্যাল মিডিয়া হল এমন এক প্লাটফর্ম যেখান থেকে বিভিন্ন ধরনের তথ্য পাওয়া যায়। দেশ বিদেশের বিভিন্ন খবরের শিরোনাম থেকে শুরু করে নতুন মুক্তি পাওয়া সিনেমা, পুরোনো গান, নতুন গান, ভিডিও, স্ট্যাটাস ইত্যাদি সবকিছুই সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখতে পাওয়া যায়, যা আমাদের মনোরঞ্জন করে থাকে।
এর সাথে সাথে বহু মানুষ বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেদের অ্যাকাউন্ট বানিয়ে নিয়ে পরিবার এবং বন্ধুদের সাথে মেসেজের মাধ্যমে বা ভিডিও কলের সাহায্যে কথোপকথন করতে সক্ষম হয়, তাছাড়াও পছন্দের গান বা বিভিন্ন ছবি পাঠানোর ক্ষেত্রেও এটি সহায়ক, এক কথায় সমস্ত কিছু করা যায় মোবাইলের মাধ্যমে। আর এইসব কিছুই খুব কম সময়ের মধ্যে কয়েকটা সুইচ টিপে খুব সহজভাবে করে নেওয়া সম্ভব হয়।
ব্যবসা ক্ষেত্রে সাফল্য নিয়ে আসে
নতুন কোনো ব্যবসা শুরু করতে হলে আপনি মোবাইলের ব্যবহারের মাধ্যমে নিজের ব্যবসার অ্যাডভার্টাইজমেন্ট করতে পারেন, তাছাড়াও আপনার ক্লায়েন্টদের সাথে ফোনে বা ভিডিও কল এর মাধ্যমে যোগাযোগ করতে পারেন, বাড়িতে বসে বসেই অনলাইনে বিভিন্ন জরুরী মিটিং পর্যন্তও সম্পন্ন করে নিতে পারবেন। পাশাপাশি ইমেইল এর সাহায্যে জরুরী তথ্য অনেকের কাছে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব। এমনকি মোবাইল এক দেশ থেকে অন্য দেশের ক্লায়েন্টদের সাথেও Deal করার ক্ষেত্রে অনেকটা সহায়তা করে।
কেনাকাটা করার জন্য উপযুক্ত গেজেট
আজকাল মানুষ বিভিন্ন কাজ নিয়ে এতটাই ব্যস্ত হয়ে পড়েছে যে বাজারে গিয়ে কেনাকাটা করাটাও তাদের পক্ষে অনেক সময় সম্ভব হয়ে ওঠেনা। তবে তা নিয়ে চিন্তার কোনো কারণ নেই যদি আপনার কাছে একটি মোবাইল থাকে। মোবাইল ব্যবহার করে আপনি খুব সহজেই অনলাইনে বিভিন্ন জিনিস কেনাকাটা করতে পারেন এবং নিজের বাড়ির সঠিক ঠিকানা দিয়ে সেই জিনিসগুলি আনিয়ে নিতে পারবেন। আবার কোথাও বাজারে গিয়ে বাড়ির লোকজনকে ছবি পাঠিয়েও সঠিকভাবে কেনাকাটা করা সম্ভব। এসবের মাধ্যমে অনেকটা সময়ও সঞ্চয় করা যায়।
গন্তব্যের ঠিকানা খুঁজে বের করা
কোনো হাসপাতাল বা নতুন স্কুলে ভর্তি হতে চাইলে গুগল সার্চ বা ম্যাপের মাধ্যমে যে কোন ঠিকানা অতি সহজেই খুঁজে বের করা যায়। পাশাপাশি সেই জায়গাটির বিভিন্ন ছবি ও তথ্য আমাদেরকে ওই জায়গাটিতে পৌঁছতে অনেকটা সাহায্য করে। একই ভাবে যেকোনো নতুন জায়গাতে ভ্রমণ করতে যাওয়ার পূর্বে সেখানকার টার্মস এবং কন্ডিশনগুলির ব্যাপারে জেনে নিয়ে সেই মতো প্রস্তুতি নেওয়া যায়। তাছাড়া কোথাও রাস্তা হারিয়ে গেলে মোবাইলের লোকেশন ট্র্যাক করে সঠিক জায়গায় পৌঁছে যাওয়া যায়। এক কথায় আজকের দিনে যে কেউ একটি মোবাইল ফোন ব্যবহার করার মাধ্যমে যে কোনও কাজ করে নিতে পারেন।
মনোরঞ্জনের ক্ষেত্রে মোবাইল
মোবাইলের মাধ্যমে আমরা খবর পড়া, গান শোনা ইত্যাদি থেকে শুরু করে সিনেমা দেখা, সিরিয়ালের প্রতিটি পর্ব দেখা সহ বিভিন্ন ভিডিও অর্থাৎ প্রায় সব কিছুই দেখতে দেখতে সময় কাটাতে পারি।
এর সাথে সাথে বিভিন্ন ভিডিও প্ল্যাটফর্ম এ নিজের পছন্দ মত গানে ভিডিও তৈরি করে সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার করে বহু মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পারেন অর্থাৎ মনোরঞ্জনের জন্য এখন আর আপনার বাড়িতে আলাদা করে কোনো টিভি বা রেডিও রাখার প্রয়োজন পড়বে না, একটা মোবাইল থাকাই যথেষ্ট।
আধুনিক শিক্ষায় ইন্টারনেট, Best use of Internet in Modern education in Bengali
মোবাইল ব্যবহারের ক্ষতিকর প্রভাব, Disadvantages of using mobile phones
মোবাইল ফোন ব্যবহারের যেমন ভালো দিক রয়েছে, তেমনই খারাপ দিকও রয়েছে। মোবাইল ফোনের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে আমাদের মধ্যে অনেকেই অবগত, তাও প্রয়োজনে বা অপ্রয়োজনে মোবাইলের ব্যবহার করতে আমরা কখনোই পিছ পা হই না। কোনো কাজ না থাকলেই মোবাইল নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করাটা যেন একটা অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে। মোবাইল ব্যবহারের ক্ষতিকর প্রভাব নিম্নরূপ :
স্বাস্থ্যের ক্ষতি
মোবাইল ফোনের ব্যবহার করার প্রভাব স্বরূপ বিভিন্ন ধরনের রোগ হতে পারে। এমনও দেখা গেছে যে মোবাইলের নিত্য ব্যবহারে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, মস্তিষ্কে টিউমার জনিত সমস্যা, শিশুদের মধ্যে ক্যান্সার, ঘুম হতে বঞ্চনা, হঠাৎ করে মস্তিষ্কের কোষগুলি অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেতে শুরু করে, এই সমস্ত রোগগুলি মোবাইল ব্যবহার করার কারণে হতে পারে।
সময় নষ্ট হয়
বহু মোবাইল ব্যবহারকারীরা মোবাইল ব্যবহার করেই দিনের বেশিরভাগ সময় কাটিয়ে দেয়। এইভাবে তাদের সময় সম্পর্কে কোনো গুরুত্ব থাকেনা। ছাত্র-ছাত্রীরা গেম এবং বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশনের ব্যবহারের মাধ্যমে ১০ থেকে ১৪ ঘণ্টা ধরে মোবাইল ব্যবহার করতে থাকে, ফলে তাদের পড়াশুনার ক্ষেত্রে অনেকটা সময় নষ্ট হয়ে যায়।
অনেকের এতটুকু জ্ঞান থাকে না যে এতটা সময়ে তারা অন্য যে জরুরী কাজগুলো সম্পন্ন করতে পারতো তা না করে মোবাইল ব্যবহার করে তারা সময়ের অপব্যবহার করছে, এখন থেকেই এরূপ সময় নষ্ট বন্ধ না করলে ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যৎ খারাপ হতে পারে।
নিরক্ষরতা দূরীকরণে ছাত্র সমাজ, Students and Eradication of illiteracy in Bengali
মোবাইল ফোন অতিরিক্ত ব্যবহার করার ফল, Excessive use of mobile phone and its effects
মোবাইল ফোন অতিরিক্ত পরিমাণে ব্যবহারের ফলাফল খুবই খারাপ। মোবাইল ফোন মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার করার কারণে মানব মস্তিষ্কে কু-প্রভাব পড়ে, এর থেকে বিভিন্ন ধরনের রোগ ব্যাধি দেখা দেয়, এমনকি টিউমারও হতে পারে।
অন্যদিকে শিশুরা বেশি মোবাইল ব্যবহার করার ফলে তাদের চোখের সমস্যা দেখা দিতে পারে, মস্তিষ্কের বিকাশ বাধাপ্রাপ্ত হয়, এমনকি তাদের ব্লাড ক্যান্সার জনিত সমস্যায় দেখা দিতে পারে। তাছাড়া অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহারের কারণে রাতের ঘুম নষ্ট হয় ফলে শরীরের ক্ষতি হয়। অনেকেই হয়তো লক্ষ্য করে থাকনেন যে অনেকক্ষণ ধরে একভাবে মোবাইল দেখতে থাকার পর মাথা ধরে যায় এবং খুব ক্লান্ত বোধ হয়।
- জীবন গঠন এবং চরিত্র সেরা রচনা, Best essay on Development of life and character in Bengali
- বাংলাদেশের যানজট সমস্যা, Traffic congestion problem of Bangladesh best article in Bengali
- ইভটিজিং সম্পর্কে বিস্তারিত, Best details about Eve teasing in Bengali
- সাইবার অপরাধ বা সাইবার ক্রাইম, Best write-up on Cyber crime in Bengali
- অধ্যবসায়ের গুরুত্ব সেরা রচনা, Importance of perseverance best essay in Bengali
উপসংহার, Conclusion
মোবাইল আমাদের নিত্য সঙ্গী, কিন্তু আমাদের এর ব্যবহার সম্পর্কে সচেতন থাকা উচিত।
প্রয়োজন অনুসারে অবশ্যই এর ব্যবহার করা যায় কিন্তু অপ্রয়োজনে মোবাইলের অতিরিক্ত ব্যবহার থেকে আমাদের সকলকেই বিরত থাকা উচিত। এমনটা না করলে নিজেই নিজের ক্ষতি ডেকে আনা হবে।