কম্পিউটার কিভাবে কাজ করে, কম্পিউটার কি কি কাজে ব্যবহার করা হয়? Know about the Importance of computer in Bengali


গণনাযন্ত্র বা সংগনক অথবা কম্পিউটার হল এমন এক যন্ত্র যা সুনির্দিষ্ট একটি নির্দেশ অনুসরণ করার মাধ্যমে গাণিতিক গণনা সংক্রান্ত সকল কাজ খুব দ্রুত সম্পন্ন করতে পারে। 

কম্পিউটার কিভাবে কাজ করে, কম্পিউটার কি কি কাজে ব্যবহার করা হয়?

কম্পিউটার শব্দটির উদ্ভব, what is meant by the term computer ?

এই কম্পিউটার শব্দটি “কম্পিউট” নামক একটি গ্রিক শব্দ থেকে উদ্ভুত। Compute শব্দটির অর্থ হচ্ছে হিসাব বা গণনা করা এবং কম্পিউটার শব্দের অর্থ হল গণনাকারী যন্ত্র। কিন্তু বর্তমানে কম্পিউটারকে আর শুধু গণনাকারী যন্ত্র বলা যায় না, কারণ এখনকার কম্পিউটার এমন এক যন্ত্র যা বিভিন্ন তথ্য গ্রহণ করে নিয়ে বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সে সব বিশ্লেষণ এবং উপস্থাপন করে থাকে। এই বিষয়ে সকলেই জ্ঞাত যে প্রাচীন সভ্যতার বিকাশ এবং বর্তমান সময়ে তার দ্রুত অগ্রগতির মূলে গণিত এবং কম্পিউটারের প্রবল প্রভাব রয়েছে। 

কম্পিউটার শব্দটির উদ্ভব

কিউই ফল কি, কিউই ফলের উপকারিতা, kiwifruit benefits in Bengali  

প্রথম কম্পিউটার, The first computer 

 পৃথিবীর প্রথম কম্পিউটারের নাম হল ENIAC (Electronic Numerical Integrator and Computer) । এটিই ছিল প্রথম প্রোগ্রাম নিয়ে কাজ করার জন্য ডিজিটাল কম্পিউটার। এরপর থেকেই মূলত কম্পিউটারের প্রজন্ম শুরু হয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গ ও পূর্ব পাকিস্তানে ব্যবহৃত প্রথম কম্পিউটার ছিল IBM (International Business Machines) কোম্পানির ১৬২০ সিরিজের একটি মেইনফ্রেম কম্পিউটার। তৎকালীন সময়ে উক্ত যন্ত্রটির প্রধান ব্যবহার ছিল কোনো জটিল গবেষণার কাজে বিভিন্ন গাণিতিক হিসাব সম্পন্ন করা। এটিই ছিল দক্ষিণ এশিয়ায় ব্যবহৃত প্রথম কম্পিউটার।

প্রথম কম্পিউটার

শিক্ষাবিদ আবদুল্লাহ আল-মুতীর জীবনী, Biography of Abdullah-Al-Muti in Bengali

 কম্পিউটারের  ইতিহাস, History of computer

কম্পিউটার তৈরির প্রথম ধারণা দিয়েছিলেন বিজ্ঞানী । তবে কম্পিউটার বিজ্ঞানের সঠিক সূচনা হয়েছিল অ্যালান টুরিং এর তাত্ত্বিক এবং ব্যবহারিক গবেষণার মাধ্যমে। বিশ শতকের মধ্যভাগের সময় থেকে আধুনিক কম্পিউটারের বিকাশ ঘটতে শুরু করেছিল। পরবর্তী সময়ে, ১৯৭১ সালে মাইক্রোপ্রসেসর উদ্ভাবনের পর থেকে মাইক্রোকম্পিউটারের দ্রুত বিকাশ ঘটতে শুরু করে। এরপর বাজারে প্রচলিত হতে শুরু করে বিভিন্ন প্রকৃতি এবং ভিন্ন আকারের কম মূল্যের অনেক রকম পার্সোনাল কম্পিউটার বা PC

সেই সঙ্গেই উদ্ভাবিত হয়েছিল বিভিন্ন রকম অপারেটিং সিস্টেম ও প্রোগ্রামের ভাষা তথা অগণিত ব্যবহারিক প্যাকেজ প্রোগ্রাম। এরই পাশাপাশি ব্যাপকভাবে বিস্তৃতি ঘটেছে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক এবং ইন্টারনেটের, তাছাড়াও রয়েছে সংশ্লিষ্ট সেবা এবং পরিষেবার। এতটা উন্নতির পর থেকেই কম্পিউটার শিক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত এবং সম্প্রসারিত হয়েছে অসংখ্য প্রাতিষ্ঠানিক বা অপ্রাতিষ্ঠানিক কম্পিউটার শিক্ষা তথা গবেষণার প্রতিষ্ঠান। সাম্প্রতিক কালে কম্পিউটার এবং তথ্য প্রযুক্তি বা আইটি (IT) ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বিরাট একটি অংশ দখল করেছে এবং বিভিন্ন কর্মসংস্থান অনেকাংশেই কম্পিউটার নির্ভর হয়ে পড়েছে।

কম্পিউটারের  ইতিহাস

কম্পিউটারের প্রয়োগ, Application of computer system

বর্তমানে কম্পিউটারের প্রচুর ব্যবহার রয়েছে। ঘরের ব্যক্তিগত কিছু কাজ থেকে শুরু করে নানা ব্যবসায়িক, বৈজ্ঞানিক ইত্যাদি বহু ক্ষেত্রে এর অপরিসীম ব্যবহার হচ্ছে। সর্বোপরি যোগাযোগ ক্ষেত্রে কম্পিউটারের ব্যবহার অনন্য বিপ্লব ঘটিয়েছে। চিকিৎসা এবং মানবকল্যাণের দিক থেকেও এটি এক অনন্য সঙ্গী হয়ে উঠেছে। এক কথায় বলতে গেলে কম্পিউটার হল এমন এক যন্ত্র যা প্রায় সকল রকম কাজ করতে সক্ষম। 

সমস্যা সমাধানের উদ্দেশ্যে কম্পিউটার ব্যবহারকারী কর্তৃক তৈরি প্রোগ্রাম যন্ত্রটি গ্রহণ করে নিয়ে মেমোরিতে সংরক্ষণ করে রাখে এবং পরবর্তীতে ব্যবহারকারীর নির্দেশ অনুযায়ী কম্পিউটার প্রোগ্রাম নির্বাহ করে থাকে। কম্পিউটারের অনিবার্য অঙ্গ হিসেবে ব্যবহৃত কী-বোর্ড, মাউস, জয়স্টিক, ডিস্ক ইত্যাদির মাধ্যমে কম্পিউটার বিভিন্ন তথ্য গ্রহণ করে নেয় এবং প্রসেসর এর সাহায্যে ডেটা প্রসেস করে। এরপর নির্দেশ অনুযায়ী মনিটর, প্রিন্টার এবং ডিস্ক ইত্যাদির মাধ্যমে কম্পিউটার তথ্য সংক্রান্ত ফলাফল প্রকাশ করে থাকে।

কম্পিউটারের প্রয়োগ

পি.এইচ.ডি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য, Detailed information about Ph.D in Bengali

কমপিউটারের বিবিধ ব্যবহার, Computer and it’s varied uses 

মানুষ নিজের কাজের উন্নয়নের জন্য কম্পিউটারকে বিভিন্ন ভাবে কাজে লাগায়। তাই দিনের পর দিন কম্পিউটারের ব্যবহার ক্রমশ বেড়েই চলছে।

কমপিউটারের বিবিধ ব্যবহার

GIS এ কম্পিউটার : GIS প্রযুক্তির ক্ষেত্রে কম্পিউটার ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এই প্রযুক্তিতে কম্পিউটারের সহায়তায় পৃথিবীর মানচিত্রে বিভিন্ন রকম তথ্য যুক্ত করা হয়।

শিক্ষাক্ষেত্রে কম্পিউটারের বিভিন্ন ব্যবহার: বর্তমান মাল্টিমিডিয়া প্রযুক্তির মাধ্যমে কোনো শ্রেণিতে পাঠদানের ক্ষেত্রে বা শিক্ষাযোগ্য নতুন কিছু যোগ করার ক্ষেত্রে কম্পিউটারের ব্যবহার রয়েছে। এছাড়াও কোনো নথি তৈরি করে সংরক্ষণ করা বা পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের ক্ষেত্রে মাইক্রোসফট এক্সেল ব্যবহৃত হয়। এসব কিছু ছাড়াও আজকাল শিক্ষা প্রদানের ক্ষেত্রেও কম্পিউটারের ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যদিকে আজকালকার বিভিন্ন প্রবেশিকা পরীক্ষা এবং কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি সংক্রান্ত সব কাজে কম্পিউটার ছাড়া আর কল্পনা করা সম্ভব নয়।

শিক্ষাক্ষেত্রে কম্পিউটারের বিভিন্ন ব্যবহার

অফিস ব্যাবস্থাপনা: অফিসের বিভিন্ন কাজ যেমন তথ্য জমা রাখা, ইমেইল, কোনো কিছু এসাইনমেন্ট সম্পর্কে ডিজিটাল ভাবে উপস্থাপনা করার ক্ষেত্রেও কম্পিউটারের ব্যবহার রয়েছে, অর্থাৎ বিভিন্ন ধরনের জটিল ও রুটিন মাফিক কাজ যথা কর্মচারীদের ব্যক্তিগত তথ্য থেকে শুরু করে অফিসের বিভিন্ন ডকুমেন্ট তৈরি করা, সেগুলো সংরক্ষণ করে রাখা, অফিসের নানান সিদ্ধান্ত সমূহ বিভিন্ন বিভাগে প্রেরণ করা এবং পুনরায় সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য অন্যান্য বিভাগ সমূহের মতামত বিশ্লেষণ করতে কম্পিউটার ব্যবহৃত হয়।

অফিস ব্যাবস্থাপনা

শিল্প ক্ষেত্রে : আজকাল বিভিন্ন শিল্প ক্ষেত্রের কাজ সম্পর্কিত ছক তৈরির মাধ্যম হিসেবেও কম্পিউটারের ব্যবহার করা হয়। তাছাড়া বর্তমান সময়ে কম্পিউটারের সাহায্যে থ্রিডি প্রিন্টিং এর আবির্ভাব ঘটেছে। কম্পিউটারের মাধ্যমে এই পদ্ধতির ব্যবহারে শিল্প-সামগ্রী খুব কম সময়ে বেশি পরিমাণে পণ্য উৎপাদন করার ক্ষেত্রে বিশেষ ভাবে সাহায্য করে।

চিকিৎসা ক্ষেত্রে: আধুনিক চিকিৎসার ধ্যান-ধারণা এবং প্রযুক্তি উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে কম্পিউটারের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। চিকিৎসাক্ষেত্রে নতুন সব পদ্ধতি এবং রোগ নির্ণয়ের নতুন যন্ত্রপাতিগুলো কম্পিউটারের দৌলতে আবিষ্কৃত হয়। এছাড়াও কম্পিউটারের সহায়তায় জটিল সব রোগ নির্ণয় করা সম্ভব হয়েছে এই আধুনিক যুগে। অন্যদিকে কম্পিউটারের মধ্য দিয়েই এইসব মহামারি জনিত রোগের ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার বা অন্য পরজীবীর সন্ধান লাভ করতে সক্ষম হয়েছেন চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা। কম্পিউটারের দৌলতে রাত দিন রোগের কারণ এবং জীবাণুর সন্ধান তথা রোগ নিরাময়ের প্রক্রিয়া সন্ধান করে চলছেন চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা।

গবেষণা : পদার্থ, রসায়ন, গণিত, পরিসংখ্যান গবেষণায়ও কম্পিউটার ব্যবহৃত হয়। বিজ্ঞানের কঠিন, জটিল ও দীর্ঘসূত্র ও তথ্যের সূক্ষ্ম বিশ্লেষণ ও হিসাব-নিকাশ নিভূলভাবে সম্পূর্ণ করে থাকে এই কম্পিউটার, কারণ কম্পিউটারের কোন ক্লান্তি নেই। সে অনায়াসে ঘন্টার পর ঘন্টা কাজ করে যেতে পারে।

গবেষণা

সংবাদপত্র টেলি কমিউনিকেশনের কাজে : কম্পিউটারের মাধ্যমে খুব কম সময়ে সংবাদপত্র প্রকাশের বিভিন্ন কাজ করা সম্ভব। কম্পিউটার নেটওয়ার্ক-এর সহায়তায় একটি দেশের প্রত্যেকটি শহর থেকে একই সময় একাধিক সংবাদপত্র বের করা হচ্ছে। এছাড়াও ইন্টারনেটের ব্যবহারের মাধ্যমে বিশ্বের যে কোনও গ্রাহক সংবাদপত্র কম্পিউটারের পর্দায় খবর পড়ে নিতে পারে অথবা কেউ কেউ প্রিন্টারের মাধ্যমে প্রিন্ট করে নিজের সুবিধামত ব্যবহার করতে পারে নিচ্ছে। এছাড়াও টেলিফোন এবং কম্পিউটারের মধ্যে সংযোগ তৈরি করে অতি দ্রুত একটি সংবাদ পৃথিবীর এক স্থান থেকে অন্যস্থানে পাঠানো সম্ভব হয়েছে।

ব্যাংকিং জগতে: বর্তমানের এই আধুনিক উন্নত বিশ্বে প্রত্যেকটি ব্যাংক কম্পিউটার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, সকল চেকের হিসাব, ক্রেডিট ও ডেবিটের হিসাবও কম্পিউটার দ্বারা করা হয় থাকে। এতে করে গ্রাহকদের চেক জমা দিয়ে অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকার বিরক্তি দূর হচ্ছে।

ব্যাংকিং জগতে

অর্থবাজারে : অর্থবাজারে বা বিভিন্ন ব্যবসায়িক জগতের সব মালপত্রের হিসাব ও জমা খরচের হিসাব, তথা লাভ এবং ক্ষতির হিসাব থেকে বেতন ও বোনাস বা ওভারটাইমের হিসাব, এছাড়াও কর্মীদের স্যালারির হিসাব, ব্যাংক একাউন্টে টাকা তোলা ও জমা অথবা লেন দেন ইত্যাদি সকল কাজে কম্পিউটার ব্যবহৃত হয়। তাছাড়াও ব্যবসায়ীদের জন্য বিভিন্ন শেয়ারের দামের ওঠানামা বোঝার ক্ষেত্রেও কম্পিউটারের ব্যবহার রয়েছে।

অর্থবাজারে

আবহাওয়ার পূর্বাভাস গণনা: পৃথিবীর বিজ্ঞানীরা যে সব কৃত্রিম উপগ্রহ বা স্যাটেলাইট মহাকাশে প্রেরণ করে থাকেন তা নিয়ন্ত্রিত রাখা হয় সুপার কম্পিউটারের মাধ্যমে। সেই সকল সুপার কম্পিউটার ব্যবহারে ভূপৃষ্ঠের কৃত্রিম উপগ্রহগুলি নিয়ন্ত্রণ করার পাশাপাশি স্যাটেলাইট থেকে মহাকাশের তথ্য সংগ্রহ করে সেগুলি বিশ্লেষণ করে নিয়ে যথেষ্ট নির্ভুলভাবে বিভিন্ন স্থানে আবহাওয়ার পূর্বাভাস সম্পর্কে জানা যায়।

উপরিউক্ত ক্ষেত্রগুলো ছাড়াও বিশ্বের প্রায় সকল ক্ষেত্রেই এই কম্পিউটারের ব্যবহার রয়েছে, যেমন সামরিক ক্ষেত্রে, ডিজাইনের কাজে, মুদ্রণ শিল্পে, কৃষি ক্ষেত্রে, সকল ক্ষেত্রেই কম্পিউটারের অবদান অপরিসীম।

কম্পিউটারের অবদান অপরিসীম

পরিশেষে, To conclude

এক কথায় বলা যায় কম্পিউটারের অবদানের শেষ নেই প্রচুর ব্যবহার রয়েছে। নিজের ঘরের কাজ থেকে শুরু করে ব্যবসায়িক বিভিন্ন কাজ, বৈজ্ঞানিক ক্ষেত্রের কাজ ইত্যাদি নানা ক্ষেত্রে এর অপরিসীম ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। আধুনিক যুগে মানবকল্যাণের প্রায় সব কাজেই এটি এক অনন্য সঙ্গী, কারণ কম্পিউটার হল এমন এক যন্ত্র যা প্রতিনিয়ত অক্লান্তভাবে কাজ করে যেতে সক্ষম।

Recent Posts