কিউই ফল কি, কিউই ফলের উপকারিতা, kiwifruit benefits in Bengali  


সুস্বাদু এবং একটি অতি জনপ্রিয় ফল কিউই যার গুণাগুণ অপরিসীম। কিউই  মূলত একটি ডিম্বাকৃতির ফল যাকে “চাইনিজ গুজবেরি”ও বলা হয়ে থাকে। বৈজ্ঞানিক নাম অ্যাক্টিনিডিয়া ডেলিসিওসা, কিউই  অ্যাক্টিনিডিয়াসিয়াই পরিবারের অন্তর্গত একটি ছোট  জাতের ফুলের গাছ ।

কিউই ফল কি, কিউই ফলের উপকারিতা

কিউই ফলের চাষ, Cultivation of kiwi fruit

আদিকালে চিনের উত্তর মধ্য এবং পূর্ব অংশে কিউই র চাষ হতো।পরবর্তীকালে নিউজিল্যান্ডে বাণিজ্যিকভাবে এই ফলটির চাষ শুরু হয় এবং পর্যায়ক্রমে এটি নিউজিল্যান্ডের জাতীয় ফল হিসেবে স্বীকৃতি পায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কালে এই ফলটি মার্কিন এবং ব্রিটিশ সেনাদের মধ্যেও বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল।
কিউই দেখতে কিছুটা অদ্ভুত রকমের; ফলটির বাহ্যিক রঙ সোনালি, বাদামি ও ভিতরকার রং সবুজ। খোসা, শাঁসালো অংশ এবং বীজ সমেত এই সুস্বাদু এবং পুষ্টি সমৃদ্ধ ক্ষুদ্র   ফলটির  সবকিছুই খাওয়া যায়। এটি মূলত চীন দেশের ফল হলেও এশিয়া  ও অস্ট্রেলিয়া মহাদেশে এই ফলটির চাষ বেশি হয়ে থাকে। সম্প্রতিকালে এই ফলের চাষাবাদ বহুল পরিমাণে বেড়েছে। ইতালি, ফ্রান্স ,মালয়েশিয়া, ইরান ও চিলিতে প্রচুর পরিমাণে এই ফলটির উৎপাদন হয়।  গ্রীষ্মপ্রধান দেশেই এই ফলটি ভালো জন্মায় তবে শীতপ্রধান অঞ্চলে  ও কিছু মাঝারি ধরনের কিউই দেখতে পাওয়া যায়। ভারতবর্ষের মধ্যে হিমাচল প্রদেশ ,উত্তরপ্রদেশ ,জম্মু এবং কাশ্মীর ,সিকিম, কর্নাটক এবং কেরলে কিউই র উৎপাদন হয়ে থাকে ।

কিউই ফলের চাষ,

বাসন্তী পূজা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য, Detailed information about Basanti Puja in Bengali

ফলের বৈশিষ্ট্য ও উৎপাদন, Kiwifruit characteristics and production

কিউই ফলের গাছ এবং লতা অনেকটা আঙুরগাছের মতন । গাছ লাগানোর এক বছর পর  ফল আসতে শুরু করে।সাধারণত এপ্রিল মাসের দিকে নতুন কুঁড়ি ,পাতা এবং ফুল দেখা যায় । জুন- জুলাই মাস নাগাদ ফলগুলি আকারে  একটু বৃদ্ধি পায় এবং অক্টোবর ও নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি এই ফলগুলি পাকতে শুরু করে। সুস্বাদু এই ফলটি মানুষকে দেয় হাজারো সমস্যা থেকে মুক্তি ।

ফলের বৈশিষ্ট্য ও উৎপাদন

কিউই ফলের  পুষ্টিগুণ, Nutritional benefits of kiwi fruit

মানুষের শরীরের জন্য অত্যাবশ্যকীয় অনেক উপাদান থাকায় মিষ্টি স্বাদের এই ক্ষুদ্র ফলটিকে পুষ্টিবিজ্ঞানীরা বলেন ,”পুষ্টির কারখানা’।চীন দেশে সদ্যোজাত শিশু এবং তার মা কে এই ফলটির টনিক পথ্য হিসেবে দেওয়া হয়ে থাকে।  গবেষকদের মতে কিউই হল, ‘নিউট্রিশনাল অলস্টার’ বা ‘পুষ্টি জগতের মহাতারকা’ কারণ গবেষণা করে দেখা গেছে যে সাধারণভাবে যে একুশ টি ফল সবথেকে বেশি খাওয়া হয় তার মধ্যে সর্বাধিক পুষ্টিগুণ এই ফলটির মধ্যে রয়েছে। প্রতি ১০০ গ্রাম কিউই ফলের মধ্যে নিহিত আছে  ৬১ কিলো ক্যালরি  শক্তি, ১.৩৫ গ্রাম প্রোটিন, ০.৬৮ গ্রাম ফ্যাট ১৪.৮৬ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ২.৭  গ্রাম ফাইবার, ৮.৭৮ গ্রাম চিনি, ৪১ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ০.২৪ মিলিগ্রাম আয়রন, ৩১১ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম, ৯৩.২ মিলিগ্রাম ভিটামিন-সি, ৬৮ আই ইউ ভিটামিন-এ এবং  ৩৭.৮ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন-কে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে তন্তু।

কিউই ফলের  পুষ্টিগুণ

পি.এইচ.ডি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য, Detailed information about Ph.D in Bengali

স্বাস্থ্যের জন্য কিউই, Kiwi fruit for good health

কিউই র মধ্যে একাধিক বায়োঅ্যাকটিভ কম্পাউন্ড আছে  যা স্বাস্থ্যকে সজিব এবং সক্রিয় রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে:
পরিপাক ক্রিয়ার সক্রিয়তার জন্য :
কিউই তন্তুসমৃদ্ধ  হওয়ার কারণে শরীরের পরিপাক ক্রিয়ার জন্য খুব কার্যকরী ভূমিকা গ্রহণ করে। তন্ত্র থাকার দরুণ  এই ফল থেকে রেচক নিঃসরণ হয় যা কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করে। গবেষণায় দেখা দিয়েছে যে নিয়মিত কিউই ফল খেলে পেটের সমস্যা বা ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম উপসর্গ  থেকে মুক্তি পাওয়া যায় এবং মলত্যাগ সহজতর হয়। একটি সমীক্ষায় এও প্রমাণিত হয়েছে যে আমাদের দৈনন্দিন খাদ্যে বিশেষত ইয়োগার্ট , চিজ  বা মাছে যে প্রোটিন থাকে তা পরিপাকের ক্ষেত্রে  কিউই ফল প্রভূত সাহায্য করতে পারে। এই প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য যে, ‘অ্যাক্টিনিডিন ‘নামক একটি এনজাইমএর উপস্থিতির কারণে এই ফল পরিপাক ক্রিয়ার ক্ষেত্রে  এত কার্যকরী।
বার্ধক্যজনিত সমস্যা প্রতিরোধে:
ম্যাকুলার ডিজেনারেশনের  ফলে বৃদ্ধ বয়সে অনেকেই দৃষ্টি হারিয়ে ফেলেন। দৃষ্টি ক্ষীণ হওয়ার ফলে দৈনন্দিন কাজ কেমন গাড়ি বালানো, বই পড়া প্রভৃতি কঠিন হয়ে পড়ে। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে কিউই ফলে রয়েছে ‘লুটিন’ নামক ক্যারোটিনয়েড পিগমেন্ট  যা বার্ধক্যজনিত কারণে দৃষ্টিশক্তির ক্ষীণ হওয়া থেকে  প্রতিরোধ করে এবং দৃষ্টিশক্তি স্বাভাবিক রাখে।
হার্টের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে:
পটাশিয়াম সমৃদ্ধ কিউই ফল রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে এবং কার্ডিও ভ্যাস্কিউলার সমস্যার ঝুঁকি কমায়। রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাবার সাথে সাথে ফলটি হার্টের অক্সিডেটিভ ক্ষতিও রোধ করে। তাছাড়া কিউই তে বিভিন্ন প্রয়োজনীয়  ভিটামিন উপস্থিত :যেমন ভিটামিন সি, ই এবং বি ৯,ক্যারোটেনয়েড এবং ফাইটো কেমিক্যাল যা হার্টের স্বাস্থ্যের পক্ষে অত্যন্ত কার্যকরী। দীর্ঘস্থায়ী হার্টের সমস্যার ঝুঁকি থেকে নিজেকে বাঁচানোর জন্য খাদ্যতালিকায় কিউই আবশ্যিক।

স্বাস্থ্যের জন্য কিউই

চুন এর গুণাবলী | স্বাস্থ্যকর চুনাপাথর | Health Benefits of Limestone in Bengali

শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবার জন্য কিউই ফল  , Kiwifruit for boosting immunity power

ভিটামিন সি সমৃদ্ধ কিউই ফল প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক ।এটি ব্যাকটেরিয়া এবং ফাঙ্গাস  বিরোধী  হওয়ার কারণে প্রতিরোধী ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে ।  কিউই তে উপস্থিত কেরোটিনয়েড এবং ভিটামিন সি প্রতিরোধী কোষগুলিকে কার্যকরীভাবে উত্তেজিত করে তোলে এবং  মানবদেহের ঊর্ধ্ব শ্বাসনালীতে সংক্রমণ রোধ করতে সাহায্য করে। এটি পুড়ে যাওয়া থেকে হওয়া ক্ষত বা ঘায়ের  সংক্রমণের হাত থেকে ও বাঁচায়। 
ক্যানসার প্রতিরোধে,

শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবার জন্য কিউই ফল

ওষুধের দোকানের মানানসই কিছু নাম ও তার অর্থ | Unique Medicine Shop Names in Bengali With Meaning

ক্যানসার প্রতিরোধে, Kiwifruit for prevention of  cancer

কিউই ফলের মধ্যে যে ক্যানসারবিরোধী গুণাবলি আছে তা একাধিক সমীক্ষা থেকে প্রমাণ মিলেছে।
এই উদ্ভিদের শেকড় থেকে একটি পলি স্যাকারাইড যৌগের নির্যাস উৎপন্ন হয় যা টিউমারের বৃদ্ধি  ৮৯% কমাতে সাহায্য করে।
অপর একটি সমীক্ষাতে দেখা যায় যে কিউই র নির্যাসের ভেতরে নির্বাচিত সাইটোটক্সিক থাকার দরুণ মুখের ক্যান্সার রোধ হওয়া সম্ভব হয়। এই ফলটির ভেতরে ফেনোলিক যৌগের অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদান, ফ্ল্যাভোনয়েড এবং ভিটামিন সি র উপস্থিতি আছে যা মুক্ত radical গুলিকে  পরিষ্কার করে এবং অক্সিডেটিভ চাপ হ্রাস করে ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে ।
অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি ফাঙ্গাল উপাদান সমৃদ্ধ :
গবেষণা করে দেখা গেছে যে কিউই উদ্ভিদের বিভিন্ন অংশ যেমন পাতা, ফল ,কাণ্ড এবং বীজের মধ্যে  ব্যাকটেরিয়া বিরোধী গুণাবলী বর্তমান।সোনালি কিউই থেকে লব্ধ প্রোটিন ,অক্টিনচিনিন  আর সবুজ কিউই থেকে পাওয়া প্রোটিন, থোয়া মেটিনের যে গুণাবলি আছে তা বিভিন্ন ফাংগাল সংক্রমণের বিরুদ্ধে কাজ করে।

ক্যানসার প্রতিরোধে

কম্পিউটারের ইতিহাস ~ History of Computer in Bengali

সুনিদ্রার জন্য , Kiwi fruit for sound sleep

কিউই তে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং রাসায়নিক  সেরোটোনিন পর্যাপ্ত  মাত্রায় থাকার কারণে নিদ্রা- জাগরণের চক্র সু- নিয়ন্ত্রণ থাকে। অতএব কিউই খেলে সুনিদ্রা হয় এবং তা  উপযুক্ত সময়সীমা ব্যাপী ঘটে। তাই অনিদ্রা উপশমে কিউই  বেশ কার্যকরী ।
সুন্দর ত্বকের জন্য কিউই, Kiwi fruit for glowing skin
পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন সি থাকার দরুণ কিউই শরীরের ওপর বলিরেখা এবং চামড়াকে এ কুঞ্চিত হওয়া থেকে মুক্ত করে। এই ফলটি একটি অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ  ফল হওয়ায় বার্ধক্য নিয়ন্ত্রণ করতে কার্যকরী  এবং তার সাথে স্বাস্থ্যকর ও উজ্জ্বল ত্বকের অধিকারী করে তোলে। এছাড়া সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মিতে ক্ষতি হওয়া ত্বককে কিউই র মধ্যে উপস্থিত অ্যামাইনো অ্যাসিড রক্ষা করে ।

কিউই ফল  রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে, Kiwifruit controls blood pressure

কিউই  তে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম থাকার কারণে তা মানবদেহের উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে আর রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকলে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ বা স্ট্রোক থেকে মানুষ নিজেকে রক্ষা করতে পারে।

কিউই ফল  রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে

ফোলেটের উৎকৃষ্ট  উৎস কিউই , Kiwi fruit as an excellent source of folate

এটি ফোলেটের একটি ভাল উৎস এবং গর্ভবতী মহিলাদের জন্য এটি বেশ উপকারী ।এটি ভ্রূণের বিকাশে সহায়তা ও তার সুস্বাস্থ্য নিশ্চন্ত করে।বাড়ন্ত বাচ্চাদের জন্য ফলটির বিশেষ কার্যকারিতা আছে। 

বাংলাদেশ সম্পর্কে ৩০ টি অজানা তথ্য ~ Bangladesh Facts and History in Bengali

ফোলেটের উৎকৃষ্ট  উৎস কিউই

হাড় ও দাঁত সুস্থ রাখতে, For healthy bones and teeth

ভিটামিন-এ, ভিটামিন-সি, বি-৬, বি-১২, পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম, আয়রন   এবং ম্যাগনেসিয়ামের মতো ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ সমৃদ্ধ কিউই ফল মানবদেহের  রক্ত সঞ্চালনকে নিয়মিত রাখে  এবং হাড় ও দাঁতকে মজবুত রাখতে সহায়তা করে।

উপসংহার, Conclusion

ভিটামিন সি র সর্বোত্কৃষ্ট উৎস কিউই  যা কমলালেবুর বা লেবুর থেকে দ্বিগুণ কার্যকরী    একটি পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ সুস্বাদু মিষ্টি ফল। রান্নায় যতটা উপকারী ,ফলটিকে কাঁচা খেলে আরও বেশি উপকার পাওয়া যায়। দৃষ্টিনন্দন এই ফলটি  ফলের বাটি সাজাতে কিংবা ডেজার্ট তৈরীর ক্ষেত্রেও এক অনন্য ভূমিকা রেখে এসেছে।কিউই তার সৌন্দর্য্য , দারুণ স্বাদ এবং অনন্য   পুষ্টিগুণের  জন্য তাই অন্যান্য সব ফলের থেকে  উৎকৃষ্টতায় স্বতন্ত্র।

চাইনিজ গুসবেরি  

FAQ (সম্ভাব্য প্রশ্নাবলি)

কিউই ফলকে আর কী নামে সম্বোধন করা হয়?

চাইনিজ গুসবেরি   

কিউই র বিজ্ঞানসম্মত নাম কি?

বৈজ্ঞানিক নাম অ্যাক্টিনিডিয়া ডেলিসিওসা।

ফলটিকে দেখতে কেমন ?

ফলটির বাহ্যিক রঙ সোনালি, বাদামি ও ভিতরকার রং সবুজ।

কোন ফলকে ,'পুষ্টির কারখানা' হিসেবে অভিহিত করা হয় ?

কিউই   ফলকে।

কোন ভিটামিনের সর্বোৎকৃষ্ট উৎস কিউই ফল ?

ভিটামিন সি

Recent Posts