আউটসোর্সিং ও ফ্রিল্যান্সিং বিষয়গুলোর সাথে আমাদের মধ্যে অনেকেই পরিচিত। যুগ বিবর্তনের সাথে প্রযুক্তির যে দ্রুত অগ্রগতি হচ্ছে তা নতুন করে বলে দেওয়ার নয়, সকলের চোখেই এই বিষয় লক্ষণীয়, আর এই প্রযুক্তির সাথেই দেশ বিদেশে আউটসোর্সিং ও ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আজকাল অনেকেই এই পদ্ধতিতে বিভিন্ন কাজের সাথে যুক্ত। তবে এমনও অনেক মানুষ আছেন যারা এইসব বিষয়ে অজ্ঞাত। আবার অনেকে এমনও ভাবেন যে দুটো বিষয় একই রকম, তাই আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা আউটসোর্সিং ও ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করবো এবং এই লেখাগুলো পড়ে আপনারা এদের পার্থক্য সহজে বুঝে নিতে পারবেন।
আউটসোর্সিং কি? What is Outsourcing?
আউটসোর্সিং মূলত একটি ব্যবসায়িক অনুশীলন, এই অনুশীলনের মাধ্যমে কোনো তৃতীয় পক্ষকে দিয়ে বিভিন্ন সেবা প্রদান করা। সাধারণভাবে বলতে গেলে এক ব্যবসায়িক প্রক্রিয়ায় কোনো প্রতিষ্ঠানের নিজের কাজগুলো অন্য কাউকে দিয়ে করিয়ে নেওয়াই হল আউটসোর্সিং। “আউটসোর্সিং” পক্রিয়ার ধারনাটি এসেছে ৮০-র দশকের দিকে। “outsourcing” কথাটি এসেছে আমেরিকান শব্দ ‘outside resourcing’ থেকে।
বিজ্ঞান ও কুসংস্কার, Best composition on Science and Superstition in Bengali
আউটসোর্সিং এর ইতিহাস, History of Outsourcing
একটি ব্যবসায়ের কৌশল হিসাবে ১৯৮৯ সালে আউটসোর্সিং প্রথমত স্বীকৃত লাভ করেছিল এবং পরবর্তীতে ১৯৯০ সালের দিক থেকে সম্পূর্ণ দশক জুড়ে ব্যবসায়িক অর্থনীতির এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হিসেবে পরিণত হয়। প্রযুক্তির মধ্য দিয়ে আউটসোর্সিং এর ভিন্ন ধরনের কাজের চাহিদা এবং সুযোগ দুটোই একসাথে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে। এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোনো অফিসে বসে কাজ করার পরিবর্তে প্রতিষ্ঠানের বাইরে যেকোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিকে দিয়ে নির্দিষ্ট কাজ করিয়ে নেওয়া যায়। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কাজে চাপ হ্রাস করা যায় বলেই বিশ্বজুড়ে আউটসোর্সিং খাতের প্রবৃদ্ধি ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আধুনিক জীবন ও প্রযুক্তি রচনা, Best composition about Modern life and technology in Bengali
আউটসোর্সিং-এর বিভিন্ন সুবিধা সমূহ, Various facilities of outsourcing
আউটসোর্সিং এর বিভিন্ন কাজসমূহ ব্যবসার পরিস্থিতি অনুসারে পরিবর্তিত হয়। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আউটসোর্সিংয়ের যে সুবিধাগুলি থাকে সেগুলি হল :
● প্রতিষ্ঠানের নিয়মিত কর্মীদের থেকে অপেক্ষাকৃত ব্যায় কম হয়।
● প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে আউটসোর্সিং-এর কাজ করানোর ফলে কাজের মানও বেশ ভালো হয়।
● দ্রুততা এবং দক্ষতা, উভয়ের সহিত কাজ করানো হয়।
● প্রয়োজনীয় কাজ বিশ্বের যে কোনো প্রান্ত থেকে করিয়ে নেওয়া যায়, এরজন্য প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কোনো কর্মীর প্রয়োজন হয় না।
● বেশিরভাগ ক্ষেত্রে খন্ডকালীন পদ্ধতিতে বা চুক্তি নির্ভর করে কাজ করিয়ে নেওয়া সম্ভব।
● তৃতীয় পক্ষকে দিয়ে কাজ করিয়ে নেওয়া হয় বলে কর্মদাতাদেরকে আলাদা কোনো অফিস নেওয়ার প্রয়োজন হয় না।
মোবাইল ব্যাংকিং, Know in detail about Mobile banking in Bengali
আউটসোর্সিং-এর বিভিন্ন অসুবিধাগুলো, Disadvantages of outsourcing
আউটসোর্সিং এর ক্ষেত্রে পরিস্থিতি অনুসারে বেশ কিছু অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়, সেই অসুবিধাগুলি হল :
● কাজ করতে গিয়ে বিভিন্ন তথ্য তৃতীয় পক্ষকে দিতে হয়, সেক্ষেত্রে কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির গোপনীয়তা সেই তৃতীয় পক্ষের দ্বারা ভঙ্গ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
● কাজ অনুযায়ী সঠিক আউটসোর্সিং কর্মী খুঁজে পাওয়ার ক্ষেত্রে ব্যর্থ হলে সেই কাজের মান নিম্ন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
● অনেক ক্ষেত্রে সঠিক আউটসোর্সিং কর্মী না পাওয়ায় আর্থিক ভাবেও ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
সর্বোপরি নির্দিষ্ট কোনো ব্যবসার ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে বেশ কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে।
ফ্রিল্যান্সিং কি ? What is Freelancing?
ফ্রিল্যান্সিং মূলত মুক্ত ও স্বাধীনভাবে কাজ করার প্রক্রিয়া, যে কাজে কোনো বাধা থাকে না। ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার জন্য সাধারণত যেসব জিনিস প্রয়োজন হয়, সেগুলি হল :
১. ভালো কনফিগারেশন আছে এমন ল্যাপটপ বা ডেক্সটপ কম্পিউটার ।
২. ইন্টারনেট সংযোগ ভালো থাকা জরুরী।
৩. কাজ করার উপযুক্ত পরিবেশ।
৪. কোনো কাজ শিখা এবং এর সঠিক অনুশীলন করার জন্য প্রয়োজনীয় সময় ।
প্রাথমিক অবস্থায় এসবকিছু থাকলেই ফ্রিল্যান্সিং জগতে প্রবেশ করা যায়।
সাইবার অপরাধ বা সাইবার ক্রাইম, Best write-up on Cyber crime in Bengali
ফ্রিল্যান্সিং এর সুবিধাগুলি কি কি, Advantages of Freelancing
ফ্রিল্যান্সিং এর সুবিধা নিম্নরূপ :-
● নিজের পছন্দমত সময় ও কাজের ধরণ নির্ধারণের স্বাধীনতা।
● কর্ম স্থানের ক্ষেত্রে স্বাধীনতা।
● নিজের ইচ্ছে অনুযায়ী কাজের মূল্য নির্ধারণ করার স্বাধীনতা।
● নির্দিষ্ট কোনো প্রতিষ্ঠানে কাজ না করে বরং একই সাথে একাধিক প্রতিষ্ঠানে কাজের সুবিধা।
● এককভাবেও কাজ করা যায় আবার এর পাশাপাশি দলগত ভাবে কাজ করারও সুবিধা রয়েছে।
● প্রজেক্টভিত্তিক কাজ করার মাধ্যমে অল্প সময়ের মধ্যেই বেশি প্রজেক্টের কাজ সম্পন্ন করে নিজের আয় বৃদ্ধি করার সুযোগ থাকে।
● নিজের যোগ্যতা ও দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে একজন ফ্রিল্যান্সার একসাথে একাধিক প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত থাকতে সক্ষম।
ই-লার্নিং ও আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা, Know what is e-learning in Bengali
ফ্রিল্যান্সিং এর অসুবিধাগুলো কি কি, Disadvantages of freelancing
ফ্রিল্যান্সিং এ বিভিন্ন ধরনের সুবিধা পাওয়া যায়, কিন্তু এর ক্ষেত্রে বেশ কিছু অসুবিধাও রয়েছে। ফ্রিল্যান্সিং এর অসুবিধাগুলো নিম্নরূপ :
● কাজের জন্য ফ্রিল্যান্সারদেরকে দিনের বেশির ভাগ সময়ই কম্পিউটার বা ল্যাপটপের সামনে বসে থাকতে হয়, এর ফলস্বরূপ অনেক ক্ষেত্রে তাদের ফিজিক্যাল অ্যাকটিভিটি খুবই কম হয়; এর থেকে উচ্চ রক্তচাপ, ওজন বৃদ্ধি পাওয়া, স্ট্রেস এর মত সমস্যায় পড়ার সম্ভাবনা থাকে, উল্লেখ্য সমস্যা সহ আরো নানা ধরনের সমস্যার সৃষ্টিও হতে পারে।
● ফ্রিল্যান্সারদের কাজের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাদের দীর্ঘক্ষণ একই স্থানে বসে থাকতে হয় এর ফলে কোমরে দীর্ঘস্থায়ী ব্যথার মত সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।
● দীর্ঘ সময় ধরে কম্পিউটারের স্ক্রিনের আলোর সম্মুখীন হওয়ার ফলে চোখের বিভিন্ন রকম সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
● শান্তিপূর্ণ ভাবে কাজ করার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ পেতে গিয়ে দীর্ঘ সময় কম্পিউটারের সামনে বা একলা ঘরে বসে কাজ করতে হয় বলে অনেকের ক্ষেত্রে একাকীত্ববোধ সৃষ্টি হয় এবং এর থেকে অনেকসময় বিষন্নতারও সৃষ্টি হয়।
● অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যে কাজ সম্পন্ন করার জন্য রাত জেগে কাজ করতে হয়, তাই তাদের ঘুমের নানা সমস্যা দেখা দেয়।
● কোনো ফ্রিল্যান্সার ব্যক্তিগত কিংবা শারীরিক সমস্যা সংক্রান্ত যেকোন কারণে হাতে নেওয়া প্রজেক্টের কাজ যদি সম্পূর্ণ করতে ব্যর্থ হয় তবে এর দায়ভার কর্তৃপক্ষ নেবে না, সেই অসম্পূর্ণ কাজের ক্ষেত্রে ফ্রিল্যান্সার পারিশ্রমিক থেকে বঞ্চিত হয় এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে তার কাজের প্রোফাইল-এ খারাপ প্রভাব পড়তে পারে। এইসব কারণেই ফ্রিল্যান্সিংয়ের ক্ষেত্রে ভাল কাজ পেতে হলে নিজের মধ্যে অনেক ধৈর্য্য ধারণ করতে হয়।
ফ্রিল্যান্সিং এবং আউটসোর্সিং এর মধ্যে পার্থক্য, difference between Outsourcing and freelancing
ফ্রিল্যান্সিং ও আউটসোর্সিং এর মধ্যবর্তী পার্থক্য সমূহ নিম্নরূপ-
● ‘Freelancing’ কথাটি এসেছে ‘free’ এবং ‘lance’; এই দুইটি শব্দ থেকে। যাদের সম্মিলিত অর্থ মুক্তপেশা। অন্যদিকে ‘out’ এবং ‘source’ শব্দ দু’টির সমন্বয়ে তৈরী হয়েছে ‘outsourcing’ শব্দটি। এর অর্থ বহিরাগত উৎস থেকে প্রয়োজনীয় কাজ করিয়ে আনা।
● ফ্রিল্যান্সিং এর ক্ষেত্রে কোনো ধরাবাঁধা নিয়ম ছাড়াই স্বাধীনভাবে কাজ করা হয়। অন্যদিকে আউটসোর্সিং এর ক্ষেত্রে চাকরি না দিয়ে চুক্তি ভিত্তিতে কোনো ফ্রিল্যান্সার কে অর্থের বিনিময়ে কাজ করানো হয়।
● ফ্রিল্যান্স হিসেবে যারা কাজ করেন তারা কাজের শেষে বাইরের নির্দিষ্ট উৎস থেকে কাজের বিনিময়ে অর্থ পেয়ে থাকেন। অন্যদিকে একজন আউটসোর্সিং গ্রাহক নির্দিষ্ট ফ্রিল্যান্সারকে দিয়ে কাজ করিয়ে পেমেন্ট করেন।
● ফ্রিল্যান্সার হিসেবে যারা কাজ করে তারা স্বাধীন কর্মী হিসেবে কাজ করে। অন্যদিকে আউটসোর্স ক্লায়েন্ট নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন কাজের জন্য প্রয়োজনীয় লোকবল বাইরে থেকে প্রতিষ্ঠানে এনে উক্ত কর্মীকে কোনো স্থায়ী চাকরী প্রদান না করেই কাজ করিতে নেন।
- কিভাবে হোয়াটস্যাপ এ ফিঙ্গারপ্রিন্ট লক সক্রিয় করবেন | Bengali Guide to set Fingerprint Lock in Whatsapp
- হোয়াটস্যাপ এ টেক্সট ফরম্যাট করার সহজ উপায় | How to format text in Whatsapp in Bengali
- ফোনের লক বাটন খারাপ হয়ে গেছে ? জেনে নিন সহজ উপায়ে হার্ডওয়্যার লক বাটন ছাড়াও ম্যানেজ করা
- ইউটিউব ভিডিও ও অডিও ডাউনলোড করার ৭টি সহজ উপায়
- মোবাইল থেকে কাটুন লোকাল ট্রেন এর টিকিট, প্ল্যাটফর্ম টিকেট, জানুন UTS অ্যাপ এর ব্যবহার
উপসংহার, Conclusion
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা বিষয়গুলো থেকে বুঝতে বাকি থাকে না যে, আউটসোর্সিং এর জন্য নিয়োগ কৃত কর্মী হল ফ্রিল্যান্সার। আবার অন্যদিকে ফ্রিল্যান্সার যে কাজ পেয়ে থাকে তা মূলত নির্দিষ্ট কোনো প্রতিষ্ঠানের কাজ হয় যা তাকে প্রদান করা হয় আউটসোর্সিং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। এই দুটো বিষয় একই রকম মনে হলেও এদের মধ্যে বেশ কিছু পার্থক্য রয়েছে। এক কথায় অর্থের দিক থেকে দুইটি ব্যাপার বিপরীতধর্মী। দুটি বিষয়কে একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ বললেও হয়তো ভুল হবে না।