রথযাত্রা আষাঢ় মাসে আয়োজিত অন্যতম প্রধান হিন্দু উৎসব হিসেবে চিহ্নিত।ওড়িশা এবং পশ্চিমবঙ্গে এই উৎসব মহাসমারহে ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে পালন করা হয়ে থাকে।দীর্ঘ সময়কাল বিচ্ছেদের যন্ত্রণা সহ্য করার পর কৃষ্ণের বৃন্দাবন প্রত্যাবর্তনের স্মরণে প্রধানত এই উৎসব আয়োজিত করা হয়ে থাকে।
রথের ওপর দেবতাদের মূর্তি (যথাক্রমে বলরাম জগন্নাথ এবং সুভদ্রা) স্থাপন করে রথ চালানো হয়।আষাঢ় মাসের শুক্লা দ্বিতীয়া তিথিতে রথযাত্রা শুরু হয় , আর একাদশী তিথিতে হয় প্রত্যাবর্তন যাকে আমরা বলি,’ উল্টো রথ’। প্রথম দিন যেই স্থানটি থেকে রথ টেনে নিয়ে যাওয়া হয়, আটদিন পরে আবার সেখানেই এনে রাখা হয়।
রথযাত্রার সূত্রপাত, Introduction of Ratha Yatra
ওড়িশার সুপ্রাচীন পুঁথি ব্রহ্মাণ্ডপুরাণ এ কথিত আছে যে সত্যযুগ থেকে চালু হয়েছে ঐতিহ্যশালী এই রথযাত্রা। ওড়িশার নাম সেই সময়কালে ছিল মালব দেশ এবং তৎকালীন রাজা ইন্দ্রদ্যুন্ম বিষ্ণু মন্দির গড়ার এক দৈব স্বপ্ন পেয়েছিলেন ; তবে মন্দির কেমন হবে সে সম্পর্কে রাজার কোনো সুস্পষ্ট ধারণা ছিল না।
সুভদ্রার মূর্তি নির্মাণ করাকে ঘিরে বিশ্বকর্মাকে অসন্তুষ্ট করে ফেলেছিলেন ইন্দ্রদ্যুন্ম এবং ফলস্বরূপ দেবদেবীদের মূর্তি অসম্পূর্ণ রেখেই চলে যেতে হয় বিশ্বকর্মাকে। আবার এ ও কথিত আছে যে শুক্লপক্ষের দ্বিতীয় তিথিতে রথে আরোহণ করে দাদা বলরাম ও বোন সুভদ্রাকে দেখতে যান জগন্নাথদেব আর সেই উপলক্ষ্যে ওই তিথি মেনে গুন্ডিচা মন্দিরে জগন্নাথ দেবের রথযাত্রার আয়োজিত করা হয়ে থাকে।
রথযাত্রা নিয়ে উক্তি সংক্রান্ত আমাদের আজকের এই পোস্টটি ভালো লেগে থাকলে আশা করি জন্মাষ্টমীর শুভেচ্ছা বার্তা সম্পর্কিত আমাদের পোস্টটি ও আপনাদের মনের মতন হবে।
জগন্নাথ ,বলরাম এবং সুভদ্রার এই যাত্রাকে সোজা রথ যাত্রা বলা হয় এবং এর ঠিক সাত দিন পর মন্দির থেকে দেবতাদের ফিরতি যাত্রা উল্টোরথ হিসেবে হিন্দুধর্মে প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। তবে মাসির বাড়ি যাওয়া নিয়ে রথ যাত্রার আরও বিভিন্ন রকম পৌরাণিক কাহিনি শোনা যায়।
রথযাত্রা নিয়ে উক্তি সংক্রান্ত আমাদের আজকের এই পোস্টটি ভালো লেগে থাকলে আশা করি দোল উৎসব রচনা সম্পর্কিত আমাদের পোস্টটি ও আপনাদের মনের মতন হবে।
বিভিন্ন সময়কার রথযাত্রা, Rath Yatra at different times
বিভিন্ন পুরাণে বিভিন্ন দেবদেবীর রথযাত্রার কথা উল্লিখিত আছে, যেমন: ভবিষ্যপুরাণে সূর্যদেবের রথযাত্রা, দেবীপুরাণে মহাদেবীর রথযাত্রা, পদ্মপুরাণ, স্কন্দপুরাণ ও ভবিষ্যোত্তরপুরাণে বিষ্ণুর রথাযাত্রা বিভিন্ন সময়ে বর্ধিত রয়েছে। আবার দেখা গেছে যে বিভিন্ন দেবদেবীর রথযাত্রার সময়কালও বিভিন্ন; কোথাও বৈশাখ মাসে, কোথাও আষাঢ় মাসে, আবার কোথাও কার্তিক মাসে রথযাত্রার অনুষ্ঠান হয়ে থাকে।
তবে আষাঢ় মাসে উদযাপিত রথযাত্রা দেশের সর্বাধিক প্রসিদ্ধ রথযাত্রা হিসেবে পরিগণিত করা হয় এবং এই পরিপ্রেক্ষিতে সর্ব প্রথম স্থানটি দখল করে ওড়িশার পুরী শহরের জগন্নাথ মন্দিরের রথযাত্রা। তা ছাড়া ও পশ্চিমবঙ্গে পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদল, হুগলির মাহেশ, কলকাতা এবং বাংলাদেশের ধামরাই জগন্নাথ রথ ,ইসকনের রথ ও বহুল প্রসিদ্ধ।
রথযাত্রা নিয়ে উক্তি সংক্রান্ত আমাদের আজকের এই পোস্টটি ভালো লেগে থাকলে আশা করি দুর্গাপূজা – বাংলা রচনা সম্পর্কিত আমাদের পোস্টটি ও আপনাদের মনের মতন হবে।
পুরীর রথযাত্রার যাত্রাপথ ; ইতিহাস এবং রথের বর্ণনা, Route of Puri Rath Yatra; History and description of chariots
প্রায় আনুমানিক সাতশো বছরের প্রাচীন হল পুরীর রথযাত্রা উৎসব। জানা যায় যে এই যাত্রা ২ টি ভাগে বিভক্ত ছিল। পুরীধামে মোট দুটি ভাগে তিনটি করে ৬ টি রথ বের হত। প্রথমে যাত্রা করে বড় ভাই বলভদ্রের রথ যার নাম তালধ্বজ। চৌদ্দ টি চাকা এবং চুয়াল্লিশ ফুট উঁচু এই রথটির আবরণ নীল রঙের । শুভদ্রার রথের নাম ‘দর্পদলন’।
বারোটি চাকা সমৃদ্ধ লাল রঙের এই রথের উচ্চতা তেতাল্লিশ ফুট আর সবশেষে থাকে জগন্নাথদেবের রথ যার নাম “নন্দীঘোষ”। পতাকায় কপিরাজ হনুমানের মূর্তি অঙ্কিত আছে তাই এই পতাকাটিকে ‘কপিধ্বজ’ বলেও অভিহিত করা হয় ।এই রথ টির রং হলুদ।প্রতিটি রথের আবরণীর রং পৃথক হলেও সব রথেরই উপরিভাগ লাল বর্ণের হয়ে থাকে। সেই যুগে রথযাত্রার রাস্তায় পড়ত বলাগুন্ডি নালা।
সেটি পার করার উদ্দেশ্য তিন দেবতার মূর্তি মাঝপথে রথ থেকে নামিয়ে নালা পার করে আবার নতুন রথে রাখা হত। শোনা যায় যে পরবর্তীকালে রাজা কেশরী নরসিংহের আমলে এই নালা বন্ধ করা দেওয়া হয়েছিল এবং তারপর থেকে তিনটি রথেই পুরীর রথযাত্রা সম্পন্ন করা হয়।
রথযাত্রা নিয়ে উক্তি সংক্রান্ত আমাদের আজকের এই পোস্টটি ভালো লেগে থাকলে আশা করি কার্তিক পুজো বিস্তারিত তথ্যাদি সম্পর্কিত আমাদের পোস্টটি ও আপনাদের মনের মতন হবে।
উৎসব উদযাপন, Festival celebration
রথযাত্রাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন স্থানে মেলার আয়োজন করা হয়। পশ্চিমবঙ্গের রথযাত্রায় যাত্রাপালা মঞ্চস্থের রীতি বিশেষ করে গ্রামবাংলায় এখনো বেশ জনপ্রিয়। এই বিশেষ দিনটিতে পুরীর জগন্নাথ মন্দির সহ ভারতবর্ষের আর সকল জগন্নাথ মন্দিরে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার মূর্তি জনসমক্ষে বের করা হয়ে থাকে এবং তারপর তিনটি সুসজ্জিত রথে তাঁদের অধিষ্ঠান করিয়ে ও পূজার বিধি পালন করার পরে রথ টানা হয়।
পুরীতে জগন্নাথ মন্দিরের রথ টানতে প্রতি বছর পৃথিবীর সব জায়গা থেকে লক্ষাধিক পুণ্যার্থীর সমাগম হয়। উল্লিখিত তিন দেবতাকে গুণ্ডিচা মন্দিরে জগন্নাথদেবের মাসির বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়। এই বিশেষ দিনটিতেই কেবল পুরীতে অহিন্দু ও বিদেশিদের দেবদর্শনের অনুমতি দেওয়া হয়। বতর্মানে পুরীতে নির্মিত রথ গুলির উচ্চতা ৪৫ ফুট হয়ে থাকে। পশ্চিমবঙ্গে প্রায় সব হিন্দু গৃহস্থ বাড়িতেই বাড়ির ছোটরা বড়দের সাহায্য নিয়ে রথ সাজিয়ে রাস্তায় বের হয়।দূরদর্শন এবং বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমেও রথযাত্রার সরাসরি সম্প্রসারণ হয়ে থাকে।
বিদেশে রথযাত্রা, Rath Yatra abroad
১৯৬৮ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ইসকন হরে কৃষ্ণ আন্দোলনের উদ্যোগে সারা বিশ্বের বিভিন্ন শহরে রথযাত্রা শুভারম্ভ ঘটে । এই সংঘের নেতা এ সি ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ। তিনি লন্ডন, মন্ট্রিল, প্যারিস, নিউ ইয়র্ক, টরেন্টো, ভেনিস প্রভৃতি শহরে রথযাত্রা উৎসবের আধ্যাত্মিক মহিমা এবং জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছিলেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে বাংলাদেশে ধামরাই রথযাত্রা হল সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ রথ উৎসব।
রথযাত্রা উপলক্ষ্যে শুভেচ্ছাবার্তা ~ Bengali Happy Ratha Yatra Wishes, Messages, SMS, Quotes
- জগন্নাথ দেবের কৃপায় যেন সকলের সুস্বাস্হ্য, সুখ ও সমৃদ্ধি বজায় থাকে । তাঁর আশীর্বাদ যেন নিরন্তর ঝরে পড়ে মানবজাতির ওপর!! ঈশ্বরের কাছে এই কামনা এবং প্রার্থনা !!॥॥ শুভ রথযাত্রা ॥॥
- মহাপ্রভু জগন্নাথ আপনাকে এবং আপনার পরিবারকে রথযাত্রার এই পবিত্র দিনটিতে আনন্দ ও সুখে ভরিয়ে তুলুন। সফল হোক আপনার সমস্ত মনষ্কামনা । শুভ রথযাত্রার আন্তরিক প্রীতি ,শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন !
- “জগন্নাথ স্বামী নয়ন পথগামী ভবতু মে” ~ শুভ রথযাত্রার পূণ্য লগ্নে সকলকে জানাই আন্তরিক প্রীতি, শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন!! জয় জগন্নাথ
- রথযাত্রায় পবিত্র দিনটিতে সবাইকে রথযাত্রার শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই । প্রভু সর্বদা আপনার উপর তাঁর আশীর্বাদ বর্ষণ করুন। জয় জগন্নাথ।
- জগন্নাথ দেব আপনাকে শুভ সময় ও সমৃদ্ধি প্রদান করুন, সুস্বাস্থ্য বজায় থাকুক আপনার পরিবারে !!শুভ রথযাত্রা!
- নীলাচলনিবাসায় নিতাই পরআত্মনে । বলভদ্র সুভদ্রারাং শ্রী জগন্নাথায়তে নমোঃ ।।” রথযাত্রার এই পুণ্য তিথিতে আপনাকে ও আপনার পরিবারের সকলকে জানাই রথযাত্রার অভিনন্দন এবং আন্তরিক শুভ কামনা । জয় জগন্নাথ!!
- রথযাত্রার পুণ্যতিথিতে আন্তরিকভাবে জগন্নাথদেবের কাছে এই প্রার্থনা করি আজ ও আগামী ভাল কাটুক সবার । প্রভুর কৃপা থেকে যেন কখনো কেউ বঞ্চিত না হন। পৃথিবী থেকে সকল জড়তাও মলিনতা দূর হয়ে যাক; ঈশ্বরের কাছে সর্বান্তকরণে এই প্রার্থনা রইল!! শুভ রথযাত্রা!! জয় জগন্নাথ !!!
- রথযাত্রার পুণ্য তিথিতে সুভদ্রা, বলরাম ও জগন্নাথ দর্শনে সবার মন যেন অনন্ত সুখ ও শান্তিতে ভরে ওঠে। রথের দড়ির স্পর্শে যেন প্রত্যেকের জীবনে গতি আসে ও সবাকার জীবন আনন্দের জোয়ারে ভেসে ওঠে। শুভ রথযাত্রা !!!জয় জগন্নাথ !!!
- হে প্রভু , তব চরণে জানাই প্রণাম কৃপাময় তুমি
তোমায় জানাই মনের কথা
দূর করে দাও পৃথিবীর সকল ব্যথা
নিয়ে চলো আনন্দ যেথা
সকলকে জানাই সর্বান্তকরণে
” শুভ রথ যাত্রা…!! - রথযাত্রার পুণ্য তিথিতে করুণা সিন্ধুর কাছে করজোড়ে প্রার্থনা যেন প্রভু মিটিয়ে দেন সবার মনের সাধ, দূর করেন সফল অবসাদ ।
“হে প্রভু সকলকে তুমি কৃপা কোরো, দিও তোমার অফুরান আশীর্বাদ”
” শুভ রথ যাত্রা…!!! “ - “আমার মাথা নত করে দাও হে তোমার চরণ ধুলার পরে “
হে মহাপ্রভু সকলের মঙ্গল কর; সকলকে শক্তি প্রদান কর; পৃথিবীতে শান্তি ফিরিয়ে দাও ;সকলের মনোবাসনা পূর্ণ কর।
রথযাত্রার পুণ্য তিথিতে সবাইকে জানাই আন্তরিক শুভকামনা !!!জয় জগন্নাথ!!! - পবিত্র রথযাত্রা উপলক্ষ্যে সকলকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ,অভিনন্দন ও ভালোবাসা । রথের দড়ির টানে ও রথের চাকার ঘূর্ণনের সাথে সাথে আপনার ভাগ্যের চাকা ও ধাবমান হোক সুখ শান্তি ও সমৃদ্ধির পথে !!!জয় জগন্নাথ!!!
রথযাত্রা হিন্দুধর্মের এক অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উৎসব । এই উৎসব দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও সুপ্রসিদ্ধ এবং জনপ্রিয়। রথযাত্রাকে কেন্দ্র করে প্রত্যেক মানুষের মধ্যে শান্তি সৌহার্দ্য ,সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ববোধের এক অটুট মেলবন্ধন গড়ে উঠুক এই কামনাই আগামীতে রাখি। সুখী ও সমৃদ্ধশালী মানবজাতি গঠনে এ উৎসবের ভূমিকা অনস্বীকার্য ।
রথযাত্রা নিয়ে উক্তি সংক্রান্ত আমাদের আজকের এই পোস্টটি ভালো লেগে থাকলে আশা করি গুরু পূর্ণিমার শুভেচ্ছা সম্পর্কিত আমাদের পোস্টটি ও আপনাদের মনের মতন হবে।
পরিশেষে, Conclusion
রথযাত্রা নিয়ে উক্তি সংক্রান্ত আজকের এই পোষ্টটি আপনাদের পছন্দ হলে আশা করব আপনারা আপনাদের বন্ধু মহলে, পরিজনকেও সোশ্যাল মিডিয়াতে পোস্টটি শেয়ার করে নেবেন।