ভূমিকা :
“সাফল্য হলো ছোট ছোট প্রচেষ্টার এক সামস্টিক ফলাফল যার শুরুটা ছাত্রজীবনেই।”
— রবার্ট কোলিয়ার
শিক্ষার কোনো বয়স নেই। মানুষ আমৃত্যু শিক্ষা লাভ করে। কিন্তু মানুষের সম্পূর্ণ জীবনটাকেই ছাত্রজীবন বলে না। বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয় তথা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণ করার সময়কালকেই সাধারণত ছাত্রজীবন হিসেবে ধরা হয়। আমাদের ভবিষ্যৎ নির্মাণের ক্ষেত্রে এই সময়টাই হল সর্বোৎকৃষ্ট সময়।
ভিত্তি প্রস্তর সুদৃঢ় না হলে যেমন ইমারতগুলোও দীর্ঘস্থায়ী হয় না, ঠিক তেমনি ছাত্রজীবন বৃথায় নষ্ট করে দিলে ভবিষ্যৎও ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয় যাবে। তাছাড়া ছাত্রসমাজ হল দুর্বার প্রাণশক্তির প্রতীক, যায় মধ্যে নিহিত থাকে শক্তির প্রাচুর্য এবং সম্ভাবনার সীমাহীন এক রাজ্য। একসময় তারাই জীর্ণতার অন্ধকার থেকে ছিন্নভিন্ন করে নিয়ে আসে আলোকোজ্জ্বল নতুন ভোর। এই ছাত্ররাই তাদের বৈশিষ্ট্য অনুধাবন করে কবির কণ্ঠে বলে ওঠে : “আমরা ছাত্রদল। আমরা শক্তি আমরা বল। মোদের পায়ের তলায় মূর্ছে তুফান ঊর্ধে বিমান ঝড় বাদল। “
ছাত্রজীবনের প্রকৃতি, Characteristics of Student Life
বর্তমানের ছাত্ররাই ভবিষ্যতে দেশের সুনাগরিক হয়ে উঠে। আজকের ছাত্ররাই ভবিষ্যত সময়ে দেশের দায়িত্ব নিজ কাঁধে তুলে নেবে। তাই জীবনগঠনের পথে ছাত্রজীবন হল অত্যন্ত মূল্যবান একটি সময়। এই ছাত্রজীবন চলাকালীনই জ্ঞান-বিজ্ঞানের রাজ্যে বিচরণ করার মধ্য দিয়ে নিজেদেরকে ভবিষ্যতের জন্য যোগ্য করে তুলতে হয়। মানবজীবনের সার্থকতার বিকাশের ক্ষেত্রে মনুষ্যত্বের যে সাধনা তা ছাত্রজীবনে সঠিক রূপ লাভ করে। তাদের মধ্যে থাকা সুপ্ত প্রতিভাগুলি জাগ্রত হয়ে ওঠে।
এইভাবেই তাদের বিকশিত মেধা পরবর্তী জীবনের সম্ভাবনার দ্বারগুলো উন্মুক্ত করে দেয়। তারা নিরলস সাধনায় মধ্য দিয়েই জ্ঞানের রাজ্যে প্রবেশ করে এবং ছাত্রজীবনেই নিজেদেরকে সমৃদ্ধ করে তোলে। তাই ছাত্রজীবন হল ভবিষ্যত প্রস্তুতির জীবন, কারণ এই সময়কালের উপরই নির্ভর করে তাদের পরবর্তী জীবনের সফলতা বা ব্যর্থতা, পাশাপাশি তার ভবিষ্যৎ জীবনের গতি ও প্রকৃতিও নির্ভর করে। এক কথায় ছাত্রজীবন হল ভবিষ্যতের পল্লবিত সৌন্দর্যের এক অস্ফুট পটভূমি।
সাহিত্য পাঠের প্রয়োজনীয়তা, Know about the Necessity to study literature in Bengali
ছাত্রজীবনের কর্তব্যসমুহ, Duties of Student Life
ছাত্রজীবনকে মূলত কর্মজীবনে প্রবেশের প্রস্তুতি পর্ব হিসেবে গণ্য করা হয়। জ্ঞান অর্জনের ক্ষেত্রে আত্মনিয়োগই হচ্ছে একজন ছাত্রের প্রথম তথা প্রধান কর্তব্য। সংস্কৃতে বলা হয় “ছাত্রনং অধ্যয়নং তপঃ”
অর্থাৎ অধ্যয়নই হওয়া উচিত ছাত্রদের একমাত্র তপস্যা। তবে অধ্যয়ন শুরু পুস্তক পড়েই নয় নানা অভিজ্ঞতার মাধ্যমেও সম্ভব। এই অধ্যয়নের পাশাপাশি প্রতিটি ছাত্রকে মানব-চরিত্রের নানাবিধ সৎ গুণাবলিকেও অর্জন করে নিতে হবে। যেমন : মাতা, পিতা, শিক্ষক তথা গুরুজনদের প্রতি সততা, শ্রদ্ধাভক্তি, কর্তব্যনিষ্ঠা, এবং সময়ের সদ্ব্যবহার করা ইত্যাদি।
ছাত্রদের বিভিন্ন দায়িত্ব সমূহ, Various responsibilities of students
ছাত্রজীবনের দায়িত্বগুলো শুধুমাত্র পড়াশোনার গণ্ডিতেই সীমাবদ্ধ নয় বরং সমাজ এবং দেশকে নতুন এক আঙ্গিকে গড়ে তোলার জন্য ছাত্রসমাজকে সঠিক পথ অনুসরণ করতে হবে। আমাদের জাতীয় উন্নয়নের ক্ষেত্রে ছাত্রসমাজের দায়িত্ব সচেতন নাগরিক হিসেবে সবচেয়ে বেশি হয়। ছাত্ররা হল দেশ এবং জাতির ভবিষ্যৎ কর্ণধার, সকলের আশা ও আকাঙ্ক্ষার প্রতীক।
ছাত্রসমাজই হল নির্দিষ্ট দেশ ও জাতির শিক্ষা তথা সংস্কৃতির ধারক এবং বাহক। জাতির বিভিন্ন সমস্যার সমাধান, জ্ঞান-বিজ্ঞানে জাতিকে সমৃদ্ধ করে তুলা, জাতির মর্যাদা বিশ্বের সমাজে বৃদ্ধি করা এই সব দায়িত্ব আজকের দিনের ছাত্রসমাজের হাতেই। ভবিষ্যতে দেশের দুর্দিনের সময়ে আজকের এই ছাত্রসমাজই প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই করবে এবং তাদের দেশ ও জাতিকে রক্ষা করবে। মোটকথা হল, জাতীয় জীবনে ছাত্রসমাজই সর্বক্ষেত্রে নেতৃত্ব প্রদান করবে। পরবর্তীতে জীবনের বৃহত্তর পরিসরে এসে সে সব দায়িত্ব যাতে সুষ্ঠুভাবে পালন করা সম্ভব হয় তার জন্য ছাত্রজীবন থেকেই বিভিন্ন ভাবে প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে।
সমাজে বসবাসকারী আত্মস্বার্থে নিমগ্ন মানুষজন যথার্থ মানুষ হয় না, বরং পরের কল্যাণে উৎসর্গীকৃত জীবনই সার্থক জীবন হয়, এই কথা বিবেচনা করেই ছাত্রজীবনের দায়িত্ব সম্পর্কে আরও সচেতন হতে হবে। মনে রাখতে হবে যে, ” পরের কারণে স্বার্থ দিয়া বলি এ জীবন মন সকলি দাও, তার মত সুখ কোথাও কি আছে? আপনার কথা ভুলিয়া যাও। “
বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং- এর জীবনী, Best Biography of scientist Stephen Hawking in Bengali
ছাত্রদের দেশাত্মবোধ, Students’ patriotism
দেশ এবং জাতি তথা সমাজের কল্যাণ সাধন করা ছাত্রজীবনের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত। ছাত্রসমাজকে দেশাত্মবোধ নিয়ে নিজের ক্ষমতাবলে অবশ্যই উদ্বুদ্ধ হতে হবে। তাদেরকে দেশপ্রেম, সেবাপরায়ণতা ,জনগণের প্রতি ভালোবাসা, অধ্যবসায়, ধৈর্যশীলতা, স্বাবলম্বন, নিয়মানুবর্তিতা, ধর্মপরায়ণতা, উদারতা, সাহসিকতা ইত্যাদি সকল গুণের অধিকারী হতে হবে।
ছাত্রজীবনে যদি জনসেবার বীজ উপ্ত হয় তবেই ভবিষ্যত জীবনের জন্য তা ফলপ্রসূ হতে পারবে। তাছাড়া ছাত্রজীবনে যদি স্বার্থত্যাগ, জনসেবা এবং দেশপ্রেমের ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত হয় তাহলে তা দেশ এবং জাতির জন্য অবশ্যই কল্যাণকর হবে।
ছাত্রজীবনে শিষ্টাচারের গুরুত্ব, Importance of etiquette in student life
নিঃসন্দেহে ছাত্রজীবন শিষ্টাচার এবং সৌজন্য আহরণের যথার্থ কাল, তথা তার উম্মেষলগ্ন। শিষ্টাচার-সৌজন্যের ছোঁয়াতেই ছাত্ররা হয় বিনীত এবং ভদ্র তথা নতুন প্রাণসম্পদে হয় গৌরবন্বিত। ছাত্রজীবনে যারা গুরুজনদের শ্রদ্ধা করতে শেখে নি, যারা উদ্ধত হয়, যাদের দুর্বিনীত ব্যবহারে শিক্ষকগণ বিরক্ত হন বা যাদের ব্যবহার রূঢ়, অথবা যাদের অমার্জিত আচরণে সহপাঠীরা ক্ষুদ্ধ ও বেদনাহত হয়; এর পরবর্তী জীবনেও তাদের এই আচরণের পুনরাবৃত্তি ঘটে থাকে।
তখন তাই হয় অশুভশক্তি এবং অকল্যাণের মূর্ত প্রতীক। এর থেকেই হতাশা এবং ব্যর্থতার তিল তিল দংশন-জ্বালায় তারা নিজেকে নিঃশেষ করে দেয়, আর এর পাশাপাশি সমাজের বুকেও ছড়িয়ে দিয়ে যায় অমৃতের গরল। যেহেতু ছাত্রজীবনই মানুষের সুকুমারবৃত্তি লালনের শুভক্ষণ হয়, তাই এখানেই হয় তার চরিত্রগঠনের ব্রত অনুষ্ঠান। কোনো ছাত্রের শিষ্টাচার এবং সৌজন্যই হল তার মনুষ্যত্ব অর্জনের সোপান এবং এরই মধ্যে থাকে নিজের জীবনকে সুন্দর তথা সার্থকতায় পরিপূর্ণ করে তোলার মহাশক্তি।
ছাত্রদের নিজের অর্জিত শিষ্টাচার ও সৌজন্য প্রকাশের জন্যে কোনো বলিদান দিতে হয় না বা কোনোও অর্থব্যয় করারও প্রয়োজন হয় না, বরং নিষ্ঠার সাথে একটি মহৎ অঙ্গীকারে তাদের সমৃদ্ধ জীবন-বিকাশের পথ প্রশস্ত হয়। একজন বিনয়ী ও ভদ্র ছাত্র শুধু যে শিক্ষকের স্নেহের পাত্র হয় তা না, বরং সে শিক্ষকের আশির্বাদ পায়, পাশাপাশি পায় তাঁর সাহায্যও।
তবে শিষ্টাচার ও সৌজন্যের অভাব একটি ছাত্রকে স্বার্থপর, দুর্বিনীত ও নিষ্ঠুর করে তোলে। এমনকি তার মন থেকে ধ্বংস করে দেয় প্রেম, সহানুভূতি, মমতা, দয়া ইত্যাদি সকল সুকুমারবৃত্তি, আর এই অভাবই অজান্তে তাকে ঠেলে দেয় অন্যায় তথা অসত্যের চোরা-অন্ধকারে। এই অন্ধকার শুধু যে সেই ব্যক্তিকে আচ্ছন্ন করে তা না, বরং গ্রাস করে নেয় গোটা সমাজকেই।
ছাত্র জীবনের সার্থকতা, The importance of student life
বিভিন্ন রকম সাধনার মধ্য দিয়েই ছাত্র-ছাত্রীদের আত্মপ্রকাশ ঘটে, যথা নিরলস সাধনা, একাগ্রতা সহকারে জ্ঞানার্জন তথা যাবতীয় মানবিক গুণাবলিগুলো চর্চা করার দ্বারা উত্তম চরিত্র এবং সুস্বাস্থ্য গঠনের নিরলস সাধনা ছাত্রদের সঠিক আত্মপ্রকাশে সহায়ক। সমাজের প্রতি নিজের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতনতা তথা স্বদেশপ্রেম এবং মানবপ্রেমের দীক্ষায় উজ্জীবিত থাকে ছাত্রজীবনের সময়কাল। তারা উদারতা এবং ত্যাগের চেতনায় দীপ্ত হয়।
দেশ এবং জাতীয় জীবনে ছাত্রসমাজই হল আশার আলো। বিভিন্ন সময়ে যুদ্ধের ঘাত বা প্রতিঘাতে টিকে থাকা বা জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলার ক্ষেত্রে তারাই অপরাজেয় দুর্বার সৈনিক।
- শ্রী সত্য সাই বাবার অনুপ্রেরণামূলক উক্তি ও বাণী, Bhagavan Sri Sathya Sai Baba’s inspirational quotes and sayings in Bengali
- গৌর গোপাল দাসের অনুপ্রেরণামূলক উক্তি ও বাণী, Best inspirational quotes and sayings of Gour Gopal Das in Bengali
- দয়ানন্দ সরস্বতীর অনুপ্রেরণামূলক বাণী ও উক্তি, Dayanand Saraswati’s inspirational sayings in Bengali
- দুর্গাপূজা নিয়ে ইনস্টাগ্রাম ক্যাপশন, ফেসবুক ক্যাপশন, উক্তি, Instagram captions for Durga Puja, Facebook status in Bengali
- বিসর্জন নিয়ে উক্তি / দূর্গা পূজার বিসর্জন নিয়ে বার্তা, Bisarjan quotes in Bengali
উপসংহার, Conclusion
ছাত্রজীবনই হল মানবজীবনের উৎকৃষ্ট একটি সময়। ছাত্ররাই হল দেশের ভবিষ্যৎ। তাদের দিকে তাকিয়ে থাকে দেশ এবং সমাজ। তারাই তো ভোরের শিশির তথা প্রভাতের আলোর মত নবজীবনের দ্যুতি ছড়িয়ে দেয়।
নিজের কর্ম দিয়ে তারা দেশ এবং সমাজের সকল অনাচার, অবিচার এবং অসঙ্গতিগুলো দূরে ঠেলে দেয়। মানবজীবনের স্বার্থে যা কিছুই কল্যাণকর হয়, তা আয়ত্ত করার ক্ষেত্রে প্রকৃষ্ট সময় হল এই ছাত্র জীবন। এই সময়ে নিজের সকল দায়িত্ব এবং কর্তব্য নিষ্ঠার সাথে পালন করার মাধ্যমে ভবিষ্যৎ জীবনের সুদৃঢ় ভিত্তিকে প্রতিষ্ঠিত করা উচিত। তবেই জীবনের সাফল্য এবং গৌরবের মুকুট অর্জন সম্ভব হবে।