আজ সারা পৃথিবীতে অন্তর্জাল বা ইন্টারনেটের মাধ্যমে গোটা বিশ্ব একটি ছোট্র গ্রামে পরিণত হয়েছে। আর তার সূত্রপাত ঘটেছিল এই ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব আবিষ্কারের মাধ্যমে৷
ইন্টারনেটের সাহায্যে একে অপরের সাথে যুক্ত হাইপার টেক্সট ডকুমেন্টগুলো নিয়ে কাজ করার প্রক্রিয়া ওয়াল্ড ওয়াইড ওয়েব নামে সুপরিচিত। এই হাইপার লিংকের সাহায্যে ওয়েব ব্রাউজারের মাধ্যমে,ওয়েব পৃষ্ঠা দেখা যায়, যা টেক্সট, চিত্র, ভিডিও বা অন্যান্য মাণ্টিমিডিয়া সমৃদ্ধ হতে পারে এবং এই সংযোগ বা হাইপারলিঙ্ক ব্যবহার করে নির্দেশনা গ্রহণ ও প্রদান করতে পারে।
১৯৮৯ সালের মার্চে ইংরেজ পদার্থবিদ টিম বার্নাস লি, বর্তমানে যিনি ওয়ার্ণ্ড ওয়েব কনসোর্টিয়ামের ডাইরেক্টর, পূর্ববর্তী হাইপারটেক্সট সিস্টেম থেকে ধারণা প্রাপ্ত করেন এবং তিনি যে প্রস্তাবনা লিখেছিলেন তা থেকেই উপত্তি হয় World Wide Web (WWW) or ওয়াল্ড ওয়াইড ওয়েবের। WWW সম্পর্কে বিশদভাবে বলা যায় এটি হল ইন্টারনেট দিয়ে দর্শনযোগ্য আন্তঃসংযোগকৃত তথ্যাবলীর একটি ভাণ্ডার।দি ওয়েব হল এর সংক্ষিপ্ত রূপ।
এক ঝলকে ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব ( WWW) ~ বিশদ তথ্য ( Details about WWW in Bangla )
আগেই বলা হয়েছে WWW যা “ওয়েব” বা “W3” নামেও পরিচিত সেটি এমন একটি তথ্য ক্ষেত্র যেখানে ওয়েবসাইট সম্পর্কিত সমস্ত নথি এবং ওয়েব Page গুলি URL (Uniform Resource Locator) দ্বারা চিহ্নিত করা হয়ে থাকে। সমস্ত নথি যা এখানে থাকে তা ইন্টারনেটের মাধ্যমে অ্যাকসেস করা হয় যা হাইপারটেক্সট লিঙ্ক দ্বারা সংযোগ স্থাপন করা হয়ে থাকে ।তাই বলা যেতে পারে World Wide Web হল এমন একটি স্টোরেজ সিস্টেম যেখানে বিশ্বের সমস্ত ওয়েবসাইট সংরক্ষিত করে রাখা হয়।
তবে অধিকাংশ মানুষ WWW এবং ইন্টারনেট উভয় কে এক ভেবে ফেলে ; কিন্তু এই দুটি একে অপরের থেকে সম্পূর্ণ পৃথক। যেই মুহূর্তে কোনও ইউসার বা ব্যবহারকারী নিজের ওয়েব ব্রাউজার সফ্টওয়্যারের অ্যাড্রেস বারে একটি URL প্রবেশ করে যেমন www.abcd.com তখন সার্ভারটি সেই নির্দিষ্ট URL এর আইপি Address ব্রাউজার ডোমেন নামক সার্ভারের কাছে প্রেরণ করে আর যখন ব্রাউজারটি একটি আইপি Address লাভ করে, তখন সেটি HTTP প্রোটোকলের মধ্যে দিয়ে ওয়েব পেজের জন্য ওয়েব সার্ভারে request বা অনুরোধ পাঠায় যার ফলে HTTP, ব্রাউজার এবং ওয়েব সার্ভার একে অপরের সাথে যোগাযোগ কিভাবে করে তা নির্দেশ করে থাকে।
TRP er mane ki ? Television Rating ki o kivabe mapa hoi TRP ?
ওয়েব সার্ভারটি তারপরে HTTP প্রোটোকলের মাধ্যমে উক্ত অনুরোধটি গ্রহণ করে এবং তারপর ওয়েব সার্ভারে Page উপস্থিত থাকলে অনুরোধকৃত ওয়েব পেজটি অনুসন্ধান করা হয়ে থাকে। Browser টি তখন সেই ওয়েব পেজটি গ্রহণ করে , তার কোডটি ব্যাখ্যা করে এবং তারপর ওয়েব পেজটি প্রদর্শন করে থাকে।ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব মূলত এইচটিএমএল, এইচটিপি, ওয়েব সার্ভার এবং ওয়েব ব্রাউজারে কাজ করে, ডট এবং ডট কম এর সাথে যুক্ত ওয়েব সার্ভারের সব ওয়েবসাইটের জন্য একটি লিঙ্ক রয়েছে অর্থাৎ ওয়েব address এবং সেই ঠিকানার লিংকে ক্লিক করলে সেই লিঙ্ক সম্পর্কিত সমস্ত তথ্য পাওয়া যাবে॥
ওয়েবের সাথে সংযোগ স্থাপন বা অ্যাক্সেস করার জন্য একটি ব্রাউজার থাকা দরকার যা আপনার কম্পিউটারে ইনস্টল করতে হবে যেমন: Google Chrome.
ইতিহাস ~ History of WWW in Bangla
আগেই বলা হয়েছে World Wide Web বা WWW এর জনক হলো স্যার টিম বার্নার্স-লি(Tim Berners-Lee). তিনি একজন ব্রিটিশ কম্পিউটার বিজ্ঞানী যিনি লন্ডনে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। টিম বার্নার্স-লি’র পিতা-মাতা কম্পিউটার বিজ্ঞানী ছিলেন, যারা প্রথম দিকের কম্পিউটার সংক্রান্ত বিষয়ে কর্মরত ছিলেন।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করার পর টিম বার্নার্স লি সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় CERN এর একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন । এখানে কাজ করার সময় ১৯৮৯ সালে তিনি ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব (WWW) আবিষ্কার করেছিলেন যাকে আমরা সংক্ষেপে web ও বলে থাকি। সেই সময় ‘ওয়েব’ তৈরি করা হয়েছিল মূলত বিশ্বব্যাপী বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইনস্টিটিউটগুলির বিজ্ঞানীদের মধ্যে স্বয়ংক্রিয় তথ্য-ভাগ করে নেওয়ার চাহিদা পূরণ করার জন্য। বেশ কিছু বিদ্যমান ধারণাকে তিনি একটিমাত্র ব্যবস্থাতে সংযুক্ত করেছিলেন যাতে পদার্থবিজ্ঞানীরা ইন্টারনেটে আরও সহজ ভাবে তথ্য ব্যবহার করতে সক্ষম হন ।
টিম বার্নার্সের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অবদান হল তিনি পূর্বেকার ব্যবহৃত হাইপারলিংকের ধারণার সাথে নব্য মাল্টিমিডিয়া প্রযুক্তির অর্থাৎ ছবি অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষমতার এক অবিস্মরণীয় সমন্বয় ঘটিয়েছিলেন। তিনি ১৯৮০-র দশকের শুরুর দিকেই হাইপারটেক্সট নিয়ে গবেষণা শুরু করেন ।এর প্রোটোটাইপ রূপ ১৯৮৯ সাল থেকে সার্নে ব্যবহার করা শুরু হতে থাকে।
সেই সালেই টিম বার্নার্স-লি এনকোয়ার সহ আরো বিশদ একটি তথ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির প্রস্তাবনা করেছিলেন।এই কাজে পরবর্তী সময়ে লি’র সাথে যোগ দিয়েছিলেন বেলজিয়ান বিজ্ঞানী রবার্ট কাইলিয়াউ। এইসময় তারা উভয়েই সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় সের্নে কর্মরত ছিলেন । রবার্ট কাইলিয়াউ এর সহায়তায় ১৯৯০ সালের ১২ নভেম্বর টিম বার্নার্স লি ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের আরো আনুষ্ঠানিক একটি প্রস্তাবনা প্রদান করেন। টিম বার্নার্স লি এর এই অভিনব উদ্ভাবন খুব দ্রুত পৃথিবীর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাদৃত হয়ে পড়ে ।
পরবর্তীকালে ন্যাশনাল সেন্টার ফর সুপারকম্পিউটিং অ্যাপ্লিকেশন্সের কিছু দল ওয়েব প্রযুক্তির উন্নতি সাধন করে এবং তাঁরা ১৯৯৩ সালে ওয়েবের জন্য প্রধান ব্রাউজার সফটওয়্যার নির্মাণ করে, যার নাম ছিল মোজাইক। এর কিছুদিনের মধ্যেই কম্পিউটার প্রোগ্রামার মার্ক অ্যান্ডারসেন নেটস্কেপ কমিউনিকেশন্স কর্পোরেশন নামক একটি বাণিজ্যিক কোম্পানি আরম্ভ করেছিলেন যার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল এ ধরনের ওয়েব প্রযুক্তি নির্মাণ করা ও সেগুলি কে বিক্রয় করা।
ওয়েব কীভাবে কাজ করে ( How does Web or Internet Work – explained in Bengali Language )
ওয়েব পেজ বা পৃষ্ঠা দেখার প্রক্রিয়া কোন ব্রাউজারে ইউআরএল টাইপ করে বা কোন পাতা থেকে হাইপারলিঙ্ক অনুসরণের মাধ্যমে আরম্ভ হয়ে থাকে। এরপর যোগাযোগ স্থাপন করার লক্ষ্যে ওয়েবব্রাউজার পরপর কিছু বার্তা পাঠিয়ে থাকে যার ফলস্বরূপ পাতাটি দৃশ্যমান হয়ে ওঠে পরিশেষে ।
ইউআরএল এর সার্ভারে আইপি এ্যাড্রেস থাকে ;আর তার জন্য এটি একটি বিশ্বজনীন ইণ্টারনেট ডাটাবেস ব্যবহার করে যা ‘ডোমেইন নেম সিস্টেম’ নামে পরিচিত। এই আইপি অ্যাড্রেস টি ওয়েব সার্ভারে ডাটা প্যাকেট পাঠাবার জন্য প্রয়োজনীয় ।
কোন ওয়েব পৃষ্ঠার ক্ষেত্রে , পাতাটির এইচটিএমএল লেখার জন্য প্রথমেই আবেদন জানানো হয় আর তারপর ওয়েব ব্রাউজারটি ছবিসহ অন্যন্য দরকারী ফাইলের জন্য আবেদন পৌছে দিয়ে থাকে।
কম্পিউটারের ইতিহাস ~ History of Computer in Bengali
ওয়েব সার্ভার থেকে আবেদন করা ফাইল গুলি পাবার পর ওয়েব ব্রাউজারটি এইচটিএমএল, সিএসএস ও অন্যান্য ওয়েব ল্যাঙ্গুয়েজ অনুসারে পেজ টিকে স্ক্রিনে সাজিয়ে ফেলে। বেশির ভাগ ওয়েব পেজগুলিতে নিজস্ব হাইপারলিঙ্ক থাকে যাতে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য পাতা এবং ডাউনলোডসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় লক্ষ্য উল্লেখ করা থাকে। এই প্রয়োজনীয় ও পরস্পর সংযুক্ত হাইপারলিঙ্কগুলোর সমষ্টিই ওয়েব নামে সুপরিচিত।
www এবং তার অগ্রগতি ( Advancements of WWW )
ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব সহজে ব্যবহার যোগ্য ও সাবলীল পক্রিয়ায় ইন্টারনেটের মাধ্যমে তথ্য সমূহের প্রসার বা বিস্তৃতি ঘটিয়েছে।
টিম বার্নার্স লি ওয়েবের উন্নতিসাধনে এক অতীব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। উদাহরণস্বরূপ, তিনি মার্কআপ ল্যাংগুয়েজ তৈরিতে অবদান রেখেছেন যার মাধ্যমে ওয়েবপৃষ্ঠা অলঙ্করণ বা কম্পোজ করা হয়।
সাম্প্রতিক সময়ে তিনি সেমান্টিক ওয়েব তৈরিতেও প্রেরণা এবং উৎসাহ প্রদান করেছেন। আজকের ওয়েব পদ্ধতি থেকে এটি অনেকটা আলাদা হলেও এদের ভিতরে যথেষ্ট মিল আছে। বর্তমানে ওয়েবের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী তথ্য প্রচার, ‘ডোমেইন নেম ‘ও এইচটিএমএল-এর মান বজায় রাখার উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করেছেন তিনি। যুক্তরাজ্য সরকারের বেশ কিছু ওয়েব নিয়ে ও কর্মরত ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের জনক টিম বার্নার্স লি।
WWW এমন একটি টেকনোলজি যা বিশ্বজুড়ে সবকিছু বদলে দিয়েছে এবং এর মাধ্যমে তথ্য আদান প্রদান অনেক সহজতর হয়ে উঠেছে যা আমরা প্রতিদিন ব্যবহার করছি নিত্য প্রয়োজনে । আজ প্রায় ২৯ বয়স হয়ে গেছে এই টেকনোলজির আর এটি আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে গেছে ।