শিশু দিবস -সেরা রচনা, Best essay on Children’s Day in Bengali


“শিশু সুখ শিশু মুখ, শিশু মধুগানের স্বরলিপির প্রতিস্বর, শিশু মানবিক দৃশ্যায়ন শিশু জীবন্ত ঈশ্বর।”

শিশুরাই দেশের ভবিষ্যত, তারাই আগামীর আলো। এই কথা মাথায় রেখেই ভারতে প্রতি বছরের ১৪ নভেম্বর ‘শিশু দিবস’ পালন করা হয়। আজকের শিশু ভবিষ্যতের সুনাগরিক। তাই শিশুদেরকে আলোর পথে উজ্জীবিত করার জন্য এবং তাদের বিভিন্ন অধিকার, সুরক্ষা তথা শিক্ষার প্রতি জোর দেওয়ার উদ্দেশ্যে দিনটি বিশেষভাবে পালন করা হয়।

শিশু দিবস -সেরা রচনা
Pin it

তবে, শিশুদের উদ্দেশেই এই বিশেষ দিনটি উদযাপন করার সূচনা করেছিলেন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু, তাই এই দিনে এই বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বকেও স্মরণ করা হয়, কারণ ১৪ নভেম্বর ছিল তাঁর জন্ম তারিখ। 

১৪ নভেম্বর শিশু দিবস হিসেবে পালিত হয় কেন?, Why is November 14 celebrated as Children’s Day?

১৯৫৪ সালে রাষ্ট্রসংঘ কর্তৃক ২০ নভেম্বর তারিখে শিশু দিবস পালনের কথা ঘোষণা করা হয়েছিল। সেই ঘোষণার পর থেকে পণ্ডিত নেহরুর মৃত্যুর আগে অবধি ভারতেও ২০ নভেম্বর শিশু দিবস পালন করা হত। ১৯৬৪ সালে চাচা নেহেরুর জীবনাবসান ঘটে, এরপর তাঁকে উপযুক্ত সম্মান জানাতে একটি নতুন বিল পাস করা হয় যাতে বলা হয়েছিল যে, তাঁর জন্মবার্ষিকী এবং শিশু দিবস একই দিনে পালন করা হবে। সেই বিল পাশের পর থেকেই ১৪ নভেম্বর তারিখটি ভারতে শিশু দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।

১৪ নভেম্বর শিশু দিবস হিসেবে পালিত হয় কেন?
Pin it

সবার শিক্ষা সর্বশিক্ষা অভিযান, Know about Education for all campaign in Bengali

পন্ডিত নেহেরুর শিশুদের প্রতি স্নেহ, Pandit Nehru’s love for children

১৮৮৯ সালের ১৪ নভেম্বর পন্ডিত জওহরলাল নেহরু জন্মগ্রহণ করেছিলেন। আমরা প্রত্যেকেই জানি যে শিশুদের প্রতি তাঁর মনে গভীর স্নেহ এবং ভালোবাসার ছিল। শিশুর প্রতি নেহেরুর ভালবাসা ছিল অফুরন্ত।

জওহরলাল নেহরু ছোটদের সঙ্গে সময় কাটাতে ভালোবাসতেন। তিনি শিশুদের খুব আদর করতেন, যে কারণে শিশুদের মধ্যে তিনি ‘চাচা নেহেরু’ নামেও সুপরিচতি লাভ করেছিলেন। তিনি বলতেন যে, ‘শিশুরাই দেশের ভবিষ্যত’। জীবদ্দশায় তিনি সর্বদাই শিশুদের শিক্ষা ও কল্যাণের দিকে বিশেষ জোর দিতেন। তাই চাচা নেহেরুকে স্মরণ করে প্রতিবছর তাঁর জন্মদিনের দিনই ভারতে ‘শিশু দিবস’ পালিত হয়।

পন্ডিত নেহেরু শিশুদের স্নেহ, ভালবাসার দেওয়ার পাশাপাশি তাদের সঠিকভাবে বেড়ে ওঠার ব্যাপারেও জোর দিতেন। তাঁর মতে, আমরা আজ যেভাবে নিজের শিশুদের বড় করবো, কাল তারা সেভাবেই দেশ চালাবে। সেজন্য, শিশুদের মধ্যে পারস্পরিক সৌহার্দ্য বিনিময় করা, বোঝাপড়া করার শিক্ষাদান এবং তাদের কল্যাণে আরো বেশ কিছু জরুরী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন তিনি।

পন্ডিত নেহেরুর শিশুদের প্রতি স্নেহ
Pin it

তিনি বলতেন, বর্তমানের শিশুদেরকে ভবিষ্যতের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে তাদের সঠিক পথ দেখানো উচিত এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া শেখানো উচিত। পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরু বলতেন,” শিশুরা বাগানের কুঁড়ির মতো এবং তাদের যত্ন সহকারে এবং ভালোবাসার সাথে লালনপালন করা উচিত, কারণ তারা জাতির ভবিষ্যত এবং আগামী দিনের নাগরিক। “

মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষাদান, Best essay on Education through mother tongue in Bengali

শিশুদের প্রতি যত্ন, Care for children

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতে, 

” প্রত্যেক শিশু এই বার্তা নিয়ে আসে যে ঈশ্বর এখনও মানুষের প্রতি নিরুৎসাহিত হননি। “

দেশের শিশুদেরকে ভবিষ্যতের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য অভিভাবদের উচিত তাদের সঠিক শিক্ষা দান করা। শিশুদের সঠিক যত্ন নেওয়ার পাশাপাশি তাদের মধ্যে জ্ঞান সঞ্চার করার মাধ্যমে বিশ্বের দরবারে মাথা উচুঁ করে বাঁচার মত আত্মবিশ্বাস তাদের মধ্যে জাগিয়ে তুলতে হবে। ছোটো বয়স থেকেই তাদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানো হল অভিভাবক তথা শিক্ষকদের দায়িত্ব। শিশুদের নিজের দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের শিক্ষা দান করা জরুরি।

সময়ের সাথে সাথে শিশুদের বেড়ে ওঠার সময়কালে অনেক কিছু শেখার সুযোগ পায় তারা, তবে সেই শিক্ষা যাতে কোনো অকাজে না লাগে সেদিকে লক্ষ্য রাখা খুব জরুরী। আমাদের দেশে শিশুদের ভগবানের স্বরূপ হিসেবে মনে করা হয়। কিন্তু ভগবান কখনও ভুল করেন না এমনটা ভেবে শিশুদের ভুল ত্রুটিগুলো অবহেলা করা উচিত নয়, বরং তাদেরকে নিজের ভুল সম্পর্কে অবগত করে সঠিক পথ দেখানো উচিত। বিনয় সম্পর্কে শিশুদের সাথে সময়ে সময়ে অল্প বিস্তর আলোচনা করা উচিত যাতে তারা কখন কি করা উচিত বা কি না করা উচিত সে সম্পর্কে সচেতন থাকে।

শিশুদের প্রতি যত্ন
Pin it

তাছাড়া শিক্ষা ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে সঠিকভাবে শিক্ষা বিস্তার হচ্ছে কি না সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে, তবেই শিশুরা উপযুক্ত জ্ঞান অর্জন করতে পারবে। শিশুদের মধ্যে ভালো খারাপ বুঝার জ্ঞান তেমনটা থাকে না, তবে সেই ক্ষেত্রে তাদের শিক্ষক তথা অভিভাবকেরা সহায়তা করতে সক্ষম।

অভিভাবকদের উচিত নিজের শিশুদের সাথে যতটা সম্ভব সময় কাটানোর সুযোগ বের করা। তবেই তারা নিজের শিশুদের কোথায় কি সমস্যা হচ্ছে বা শিশুটি কি কি করতে পছন্দ করে তা বুঝতে পারেন এবং তাদেরকে বিভিন্ন দিক থেকে সঠিক পথ প্রদর্শন করতে পারেন। 

নিরক্ষরতা দূরীকরণে ছাত্র সমাজ, Students and Eradication of illiteracy in Bengali

সমাজে শিশুদের প্রতি অবহেলা, Neglect of children in society

 আজও আমাদের দেশের বেশ কিছু স্থানে অবহেলিত থেকে যাচ্ছে শিশুরা। সঠিক শিক্ষা দানের বদলে শিশু শ্রমিক হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে তাদেরকে। শিশুদের ছোটো ছোটো হাতে বই খাতা পরিবর্তে তুলে দেওয়া হচ্ছে কাজ করার জন্য বিভিন্ন সামগ্রী। এর ফলস্বরূপ দেশের নিরক্ষরের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং দেশের উন্নতি বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। এই বিষয়ে আমরা সকলেই জানি যে কোনো দেশে যত বেশি নিরক্ষর থাকবে সেই দেশ ততই অনুন্নত থেকে যাবে।

কিন্তু বেশ কিছু দরিদ্র পরিবার কর্মসংস্থানের অভাবে নিজের শিশুদেরকে কাজে যাওয়ার জন্য বাধ্য করে। তাদের শিক্ষার খরচ চালানোর ক্ষমতা অভিভাবকদের নেই, সেজন্য ওই খুদেগুলো শিক্ষা থেকে বঞ্চিত থেকে যায়। শিশুদেরকে স্কুল মুখি করতে বেশ কিছু সামাজিক সংস্থা বিভিন্ন উদ্যোগ নিতে থাকে, কিন্তু এটাই যথেষ্ট নয়।

সমাজে শিশুদের প্রতি অবহেলা
Pin it

দেশের সকল শিশুকে শিক্ষার আলোয় উজ্বল করতে সমাজের সকলকেই একসাথে এগিয়ে আসতে হবে। একে অপরকে সাহায্য করতে হবে যাতে আমাদের দেশ উন্নতির দিকে এগিয়ে যায় এবং দেশ থেকে নিরক্ষরতা দূর হয়। তবেই শিশুদের ভবিষ্যত উজ্জ্বল হয়ে উঠবে। দেশের অবহেলিত শিশুদেরকেও দেখাতে হবে সঠিক পথ, তবেই সফল হবে শিশু দিবস পালনের উদ্দেশ্য এবং সফল হবে চাচা নেহেরুর স্বপ্ন।

ছাত্রজীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য, Responsibilities and duties of student life in Bengali

দেশের বিভিন্ন স্থানে শিশু দিবস উৎযাপন, Children’s Day celebrations in different parts of the country

শিশু দিবসের দিনে বিদ্যালয়, কলেজ এবং বিভিন্ন সামাজিক বা অসামাজিক সংস্থায় নানা রকম অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। শিশুদের উদ্দেশ্যে আয়োজিত হয় বিভিন্ন প্রতিযোগিতা এবং ইভেন্টও। শিশুদের আনন্দ দেওয়ার উদ্দেশ্যে তাদের পছন্দের খাবার, চকলেট, বিস্কুট, কেক ইত্যাদি খাওয়ানো হয়, আবার বেশ কিছু স্থানে প্রয়োজনই বই বা প্রয়োজনই শিক্ষা সামগ্রী বিতরণ করা হয়।

দেশের বিভিন্ন স্থানে শিশু দিবস উৎযাপন
Pin it

বিভিন্ন বিদ্যালয়ে শিক্ষকরা একত্রিত হয়ে শিশুদের জন্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজনও করে থাকেন। তাছাড়াও ছাত্রদের মধ্যে মিষ্টি, বই এবং অন্যান্য বেশ কিছু উপহার বিতরণ করা হয়। অন্যদিকে টেলিভিশন এবং রেডিও ইত্যাদিতে শিশুদের জন্য বিশেষ প্রোগ্রামও প্রচারিত হয়। এসব কিছু ছাড়াও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বা সংস্থাগুলোর পাশাপাশি অভিভাবকেরাও নিজের বাড়িতেও শিশু দিবস পালন করে থাকেন।

কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় যে শুধুমাত্র বিদ্যালয়গুলিতেই এই বিশেষ দিবস পালন করা হয় যে তা না, বরং যেসব দরিদ্র শিশুরা রাস্তায় থাকে এবং অনাথ আশ্রমে থাকা শিশুদের মুখেও হাসি ফোটানোর জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়ার চেষ্টা করা হয়।

শেষ কথা, Conclusion 

শিশু দিবসের দিনে
Pin it

শিশুদের জন্য নির্দিষ্ট একটি দিন থাকা খুবই আনন্দ এবং গর্বের বিষয়। শিশুদেরও মন আছে, তারাও স্বপ্ন দেখে, তবে এটা অনেকেই ভাবেন না, ভুলে যান তাদের ইচ্ছা অনিচ্ছার ব্যাপারে জানার কথা এবং নিজেদের ইচ্ছেগুলি শিশুদের ওপর চাপিয়ে দেন। এমনটা না করে তাদের নিজের ইচ্ছে অনুযায়ী কাজ করতে দেওয়া উচিত এবং সঠিক ভুল বোঝার শিক্ষা দানের মাধ্যমে তাদেরকে এগিয়ে যাওয়ার আগ্রহ প্রদান করতে হবে।


Recent Posts