বর্তমানে টেকনোলজি অনেকটা এগিয়ে গেছে, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে বেড়ে চলেছে অপরাধের পরিমাণও। টেকনোলজি র যতটা অগ্রগতি হচ্ছে, তার সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে অনলাইনে অপরাধমূলক কাজগুলোও। অনলাইনের অপরাধকে সংজ্ঞায়িত করতে গিয়ে বলা যায়, যেসব অপরাধ অনলাইন বা ইন্টারনেটের মাধ্যমে ব্যবহার করে ঘটে থাকে তাকে সাইবার ক্রাইম বা অপরাধ বলা হয়।
সাইবার অপরাধ বা সাইবার ক্রাইম কি, What is cyber crime?
সামাজিক গণমাধ্যমে হয়রানির শিকার হওয়া যেন আজ একটা অতি সাধারণ বিষয়। বর্তমান সময়ে ফেসবুকে সাইবার ক্রাইম একেবারে মামুলি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আপনি যদি কখনও ফেসবুকে বা অন্য কোনো সামাজিক গণমাধ্যমে সাইবার ক্রাইমের শিকার হন, তবে কোন কোন ব্যাপারে আইনি ব্যবস্থা নিতে পারবেন জেনে নিন :
● সাইবার বুলিং করা : অনলাইনে কেউ যদি আপনাকে অহেতুক জ্বালাতন করে থাকে এবং আপনার কোনো না কোনো ভাবে সম্মানহানি করার চেষ্টা করে, অথবা যেকোনো উপায়ে অনলাইনে কেউ যদি আপনাকে উত্যক্ত করে তবে তা সাইবার বুলিং হিসেবে পরিচিত। সেক্ষেত্রে আপনি আইনি ব্যবস্থা নিতে পারবেন।
● মানহানির চেষ্টা : অনলাইনের কোনো পদ্ধতিতে আপনার বা আপনার কোনও প্রতিষ্ঠানের সুনাম যদি কেউ নষ্ট করার চেষ্টা করে, তাহলে আপনি তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে পারবেন।
● আইডি হ্যাকারের কবলে পড়লে : কেউ যদি আপনার ফেসবুক আইডি কোনোভাবে হ্যাক করে থাকে আর সেখান থেকে আপনার ব্যক্তিগত ছবি সহ আপনার কথোপকথন অনলাইনে সবার সামনে তুলে ধরার হুমকি দেয় এবং এর বিনিময়ে যদি সে আপনার কাছে ভালো পরিমাণ অর্থ দাবি করে, তবে সেক্ষেত্রে আপনি সেই ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে পারবেন।
● যৌন নির্যাতন : কেউ যদি কখনও আপনার ছবি ব্যবহার করে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে কোনো আইডি খুলে বসে এবং আপনার ছবি ব্যবহার করে সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট প্রদান করে, অথবা কোনো বিতর্কিত রকম কিছু খবর বা আপনার আপত্তিকর ছবি প্রকাশ করে থাকে, সেক্ষেত্রে আপনি আইনি ব্যবস্থা নিতে পারবেন।
● হ্যাকিং এর মাধ্যমে তথ্য চুরি : অনলাইনে বিভিন্ন জরুরী ডাটা বা তথ্য আপনার অনুমতি ছাড়া চুরি করলে, অথবা সেগুলোর ধ্বংস বা ক্ষতিসাধন করার প্রক্রিয়াই হ্যাকিং নামে পরিচিত। এতে অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের তথ্য সমূহ চুরি হয়ে যাওয়ার ফলে প্রাতিষ্ঠানিক সুনাম ক্ষুন্ন হয়।
শিক্ষাবিস্তারে গণমাধ্যমের ভূমিকা, Role of mass media in Education in Bengali
এসব ছাড়াও আরো বহু অপরাধ আছে যা সাইবার ক্রাইমের আওতায় আসে।
এরূপ অপরাধগুলো হল :-
• বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে কারোর নামে নকল আইডি খুলে অন্যদের জ্বালাতন করার মাধ্যমে সেই ব্যক্তির নাম খারাপ করা।
• অনলাইনে ই-কমার্সের ভুয়া ওয়েবসাইট খুলে নকল পণ্য বিক্রি করে ক্রেতাদের হয়রানির সম্মুখীন করা। অনেক সময় ক্রেতাদের আগেই সেই পণ্যের দাম দিয়ে দিতে হয়, অথচ দিনের পর দিন চলে গেলেও সেই পণ্য আর ক্রেতার কাছে এসে পৌঁছায় না।
• কারও সামাজিক মাধ্যমে ব্যবহৃত আইডি, ইমেইল অথবা ওয়েবসাইট হ্যাক করে সেখানে থাকা তথ্যের অপব্যবহার করা।
• অনলাইন থাকা বিভিন্ন পর্ন ওয়েবসাইটে কোনো ব্যক্তির অজান্তে তাদের ব্যক্তিগত মুহূর্তের ছবি ধারণ করে সেই ছবি বা ভিডিওগুলো সর্বত্র ছড়িয়ে দেওয়া।
• সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন মানুষেরর আইডি হ্যাক করে অন্যদের থেকে অর্থ দাবি করা, অথবা যার আইডি তার থেকে মানহানি না করার বিনিময়ে অর্থ দাবি করে।
• সামাজিক মাধ্যমে আজকাল বেশ কিছু ট্রল পেজ আছে, যেখানে কারোর ব্যক্তিগত কোনো ছবি ছড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে নির্দিষ্ট ব্যক্তির জন্য সমস্যা সৃষ্টি করা।
• কোনোও কিশোরী বা যুবতী অথবা নারীর শ্লীলতাহানির চেষ্টা করার সময় এসবের ভিডিও ধারণ করে নিয়ে তা অনলাইনে ছড়িয়ে দিয়ে সমস্যা সৃষ্টি করা।
• অনলাইনে বিভিন্ন ক্ষেত্রে টাকা দিতে গিয়ে ফ্রডের শিকার হতে হয় এবং অনেকসময় বড়সড় লোকসানের মুখে পড়তে হয়।
• ভুয়া নম্বর থেকে ফোন করে লটারির সম্পর্কে কথা বলে মানুষকে লোভে ফেলে তাদের থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করা।
• অনলাইনে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় ব্যাংক একাউন্ট এবং এটিএম কার্ডের সকল তথ্য চুরি করে সেখান থেকে সকল অর্থ আত্মসাৎ করে নেওয়া।
কম্পিউটার শিক্ষার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা, What is the Importance of computer education in Bengali
এসবকিছু ছাড়াও অনলাইনে স্ক্যামিং হয়, যা মানুষকে বিভিন্ন কথা বলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে লাভ নিয়ে লোভে ফেলে দিয়ে তাদের থেকে অর্থ নিয়ে তাদের বোকা বানানো তো যেন একটা খুব স্বাভাবিক অপরাধ হয়ে উঠেছে, যা বিশ্বের প্রায় সব জায়গায় হয় এবং মানুষ এগুলো নিয়ে এখন অনেকটা সচেতন হয়ে উঠেছে।
স্ক্যামিং বিভিন্ন ভাবে করা যায়, যেমন চাকরির লাভ দেখিয়ে, অথবা ইন্সুরেন্স কোম্পানীর নাম করে মিথ্যে প্রচার করে টাকা আদায় ইত্যাদি। তাছাড়া দেখা যায় অনেক সময় বড় মাপের মানুষের নামে অনেক আজে বাজে কথা খবরের মাধ্যমে উঠে আছে যা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভুয়া হয়।
সাইবার ক্রাইমে আক্রান্ত হলে আপনার করণীয়, What should you do if you are affected by cybercrime?
এই সমস্যা থেকে প্রতিকার দুই ভাবে পেতে পারেন :
● নিকটবর্তী থানায় এজাহার দায়ের করার মাধ্যমে আপনার সমস্যা নিয়ে একটি মামলা করে প্রতিকার পেতে পারেন। এজাহার দায়েরের মাধ্যমে মামলা করার ক্ষেত্রে আপনার কাছে থাকা সকল প্রমাণগুলো সঠিকভাবে সঞ্চয় করা এবং সেগুলো প্রিন্ট করে রাখতে হবে। অপরাধমূলক যা হচ্ছে অনলাইনে তা যতটা সম্ভব স্ক্রিন ভিডিও করে এবং বিভিন্ন জরুরী লিংকসহ সকল প্রমাণ জোগাড় করে রাখা জরুরি। তা না হলে তথ্য প্রমাণ ছাড়া থানায় হয়তো কোনো অভিযোগ দায়ের নাও করতে পারে।
● সরাসরি সাইবার ট্রাইবুনালের কাছে নিজের সমস্যা নিয়ে মামলা দায়ের করতে পারেন। সেখানে আপনার বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরলে আপনার অসুবিধা তথা সমস্যা সম্পর্কে অনলাইনেই অনেক কিছু জেনে নেওয়া সম্ভব, ফলে সেই অপরাধের উৎসে পৌঁছে যাওয়া খুব একটা কঠিন হয় না।
সবার শিক্ষা সর্বশিক্ষা অভিযান, Know about Education for all campaign in Bengali
অনলাইন জালিয়াতি এবং আর্থিক অপরাধ, Online fraud and financial crime
অনলাইনে জালিয়াতির অন্যান্য ধরনও দেখা যায়, যেমন কম্পিউটার সিস্টেম ব্যবহার করার মাধ্যমে ব্যাংক জালিয়াতি, ATM কার্ড নিয়ে জালিয়াতি, মিথ্যে পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করা, অনলাইনে চাঁদাবাজি করার মাধ্যমে বেআইনিভাবে পয়সা আদায় ইত্যাদি। কম্পিউটার জালিয়াতি করার অপরাধ অপরাধীদের একটি নির্বাচিত দলের দ্বারা সংঘটিত হইয় থাকে।
তবে এই অপরাধ করার জন্য অপরাধীদের প্রযুক্তিগত জ্ঞান প্রয়োজন হয়। তাই প্রযুক্তির সাথে সাথে অপরাধের ধরনও উন্নত হতে থাকে। ইন্টারনেটে এধরনের অসংখ্য অপরাধ আছে, যেমনঃ কম্পিউটার ভাইরাস, কম্পিউটার ম্যালওয়্যার ইত্যাদি।
অপরাধ সম্পর্কে জনসচেতনতা, Public awareness of crime
প্রযুক্তির উন্নতির সাথে মানুষের ইন্টারনেটের উপর নির্ভরতা বেড়ে গেছে। এখন মানুষ ল্যাপটপ, কম্পিউটার, মোবাইল ইত্যাদি ছাড়া কোনো কাজই সম্পন্ন করতে পারে না। উক্ত যন্ত্রগুলোর মধ্যেই আমরা নিজের যাবতীয় জরুরী তথ্য সংগ্রহ করে রেখে দেই, যায় ফলে তথ্য চুরি বা অপব্যবহারের অপরাধও সহজ হয়ে পড়েছে।
আজকের সময়ে সাইবার অপরাধ সারা বিশ্ব জুড়ে মানুষের জন্য এক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেক্ষেত্রে কীভাবে জরুরী তথ্য রক্ষা করা উচিত এবং অপরাধীরা কোন পদ্ধতিতে তথ্য চুরি করছে বা কী কৌশল ব্যবহার করছে তা নিয়ে জনগণের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো আজকের বিশ্বের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মানুষ বিভিন্ন কারণে ইন্টারনেট ব্যবহারের দ্বারা অপরাধীদের শিকারে পরিণত হতে পারে, এজন্য কীভাবে অনলাইনে সতর্ক থাকা যায়, সে বিষয়ে সচেতন হওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
- গুপ্তমুদ্রা বা ক্রিপ্টোকারেন্সি, Best details on Cryptocurrency in Bengali
- আউটসোর্সিং ও ফ্রিল্যান্সিং, Best write-up on Outsourcing and freelancing in Bengali
- মোবাইল ব্যাংকিং, Know in detail about Mobile banking in Bengali
- সাইবার অপরাধ বা সাইবার ক্রাইম, Best write-up on Cyber crime in Bengali
- ই-লার্নিং ও আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা, Know what is e-learning in Bengali
উপসংহার, Conclusion
আজকালের সময় সাইবার অপরাধ ঘরে ঘরে হচ্ছে, অনেকেই এইরূপ অপরাধের ফাঁদে পড়ে ঠকেছেন, এমনকি অনেকে নিজের সর্বস্ব হারিয়ে পথে বসেছেন।
তবে সারা বিশ্ব জুড়ে এই ক্রাইমের পরিমাণ এতটা বেড়ে উঠেছে যে এখন অনলাইনে কোনো কিছু করতে গিয়ে মানুষ পূর্বের তুলনায় বেশি সাবধানতা অবলম্বন করে থাকে। তবে একটা বলতে হয় যে, বর্তমানের জনগণ এসব নিয়ে অনেকটা সচেতন হয়ে উঠেছে, ফলে সহজে তাদের ঠকানো সম্ভব নয়।