সবার শিক্ষা সর্বশিক্ষা অভিযান, Know about Education for all campaign in Bengali



সর্বশিক্ষা অভিযান হল ভারত সরকারের দ্বারা পরিচালিত একটি বিশেষ প্রকল্প যা অটলবিহারী বাজপায়ীর হাত ধরে শুরু করা হয়। প্রাথমিক শিক্ষা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সর্বজনীন করে তোলার উদ্দেশ্যে উক্ত অভিযান প্রকল্পটি শুরু করা হয়েছিল। আমাদের ভারতীয় সংবিধানের ৮৬ তম সংশোধনীর মাধ্যমে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, ৬-১৪ বছর বয়সী সকল শিশুকে বিনামূল্যে তথা বাধ্যতামূলকভাবে শিক্ষা প্রদান তাদের মৌলিক অধিকারের অন্তর্গত। 

সবার শিক্ষা সর্বশিক্ষা অভিযান

সর্বশিক্ষা অভিযান কি? What is Sarva Shiksha Campaign?

 দেশের সংবিধানের নীতি নিয়ম মেনে সমস্ত শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক শিক্ষাকে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক করার উদ্দেশ্যে গৃহীত প্রকল্প হল সর্বশিক্ষা অভিযান। ২০০১ সালে সর্বশিক্ষা অভিযান প্রকল্পের মাধ্যমে সারা দেশের জনসংখ্যার মধ্যে আনুমানিক ২০৫ মিলিয়ন শিশুকে প্রাথমিক শিক্ষা প্রদানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল।

সর্বশিক্ষা অভিযান কি?

চরিত্র গঠনে খেলাধুলার ভূমিকা, Value of sports in character building in Bengali

সর্বশিক্ষা অভিযানের শুরু, The beginning of Sarva Shiksha Campaign

১৯৯৯ সালে আমাদের দেশের সংবিধানের ৮৬ তম সংশোধন করার মধ্য দিয়ে শিশুর মৌলিক অধিকার হিসেবে প্রাথমিক শিক্ষাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং এরই সঙ্গে অভিভাবকদের উপর প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণের বয়সকাল অর্থাৎ ৬ থেকে ১৪ বছর বয়সের প্রত্যেকটি শিশুকে বিদ্যালয়ে পাঠানোর দায়িত্বটি দেওয়া হয়। এই শিক্ষাক্রম নিশ্চিত করার পরিপ্রেক্ষিতেই ২০০০ সালে সার্বজনীনভাবে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করানোর জন্য সর্বশিক্ষা অভিযান প্রকল্পটি শুরু করা হয়। 

সর্বশিক্ষা অভিযানের শুরু

অপসংস্কৃতি ও বর্তমান যুবসমাজ, Best essay on Subculture and current youth in Bengali

সর্বশিক্ষা অভিযানের অন্তর্গত যোজনাগুলো, Schemes under Sarva Shiksha Abhiyan

সর্বশিক্ষা অভিযানে একসাথে মোট ৮ টি যোজনা গৃহীত হয়েছিল। বিদ্যালয় পূর্ববর্তী শিক্ষা গ্রহণের জন্য অঙ্গনওয়াড়ি এবং আইসিডিএস (ICDS)  ইত্যাদিও এই অভিযানেরই অন্তর্ভুক্ত বিষয়। এছাড়াও সমাজের সকল মেয়েদের শিক্ষিত করার উদ্দেশ্যে ২০০৪ সালে কস্তুরবা গান্ধী বালিকা বিদ্যালয় যোজনা (KGBVY) শুরু করা হয়, তাও এই অভিযানেরই অন্তর্ভুক্ত। 

সর্বশিক্ষা অভিযানের মূল ধারণাগুলি, Know the basic concepts of Sarva Shiksha Abhiyan

● ৬ বছর থেকে শুরু করে ১৪ বছর বয়স্ক প্রত্যেকটি শিশুর অষ্টম শ্রেণি অবধি এক গুণগত মানের শিক্ষা সুনিশ্চিত করাই হল  সর্বশিক্ষা অভিযান প্রকল্পের এক অন্যতম উদ্দেশ্য।

● সর্বশিক্ষা অভিযান হল দেশে পরিচালিত এক নিয়মতান্ত্রিক শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে প্রাপ্ত অতিরিক্ত সহায়ক শক্তি কিংবা জনগণের জন্য একটি বাড়তি সুযোগ।

● দেশের সকল ব্যক্তির প্রাথমিক শিক্ষা প্রাপ্তির স্বপক্ষে জাতীয় রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রকাশ ঘটানো হল এই অভিযানের উদ্দেশ্য।

● এই অভিযানের মূল উদ্দেশ্য দেশের বিভিন্ন অংশে বুনিয়াদি শিক্ষা নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠা করা।

● সর্বশিক্ষা অভিযান হল কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার সহ স্থানীয় বেশ কিছু সংস্থার যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত একটি বিশেষ প্রকল্প।

সর্বশিক্ষা অভিযানের লক্ষ্য এবং প্রকল্পের কাজে নির্ধারিত সময়সীমা, Know the Basic Concepts of Sarva Siksha Campaign

সর্বশিক্ষা অভিযানের মূল ধারণাগুলি

বইমেলা, Best Composition on Book Fair in Bengali

সর্বশিক্ষা অভিযানের বিভিন্ন উদ্দেশ্য রয়েছে এবং এর পাশাপাশি একটি নির্ধারিত সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয় প্রকল্পের কাজগুলো সম্পন্ন করার জন্য। সেগুলো হল

● দেশের সকল শিশুকে ২০০৭ সালের মধ্যে পাঁচ বছরের নিম্ন প্রাথমিক শিক্ষা প্রদান করা।

● বিদ্যালয়ে পড়ুয়া ছেলে-মেয়েদের মনে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করা।

● মানুষকে কুসংস্কারমুক্ত করে এক বিজ্ঞান চেতনা মূলক সমাজ গঠন করা।

● বিভিন্ন শিক্ষা ক্ষেত্রে লিঙ্গ বৈষম্য সহ অন্যান্য সকল সামাজিক বৈষম্যগুলো দূর করা।

● শিক্ষা কেন্দ্রে ৬ থেকে ১৪ বছরের সকল ছেলেমেয়েদের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা প্রদানকারী শিক্ষক সুনিশ্চিত করা।

● ২০১০ সালের মধ্যে দেশের সকল শিশুর ৮ বছরের প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করা।

● ২০১০ সালের মধ্যে ৬ থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশুদেরকে শিক্ষা গ্রহণের জন্য বিদ্যালয়ে রোজ উপস্থিত রাখা সুনিশ্চিত করা।

সর্বশিক্ষা অভিযান প্রকল্পে গৃহীত বিভিন্ন কর্মসূচি, Various programs undertaken in the Sarva Shiksha Abhiyan project

সর্বশিক্ষা অভিযান সফল করার উদ্দেশ্যে পরিকল্পিত বিভিন্ন কর্মসূচিগুলোকে বাস্তবায়িত করার উদ্দেশ্যে বেশ কিছু সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছিল। সেগুলো হল :

● সর্বশিক্ষার পরিকল্পনাটি রূপায়ণের উদ্দেশ্যে বিদ্যালয়, গ্রাম এবং বিভিন্ন ওয়ার্ডকে শিক্ষা কমিটির সাথে যুক্ত করে গুচ্ছসম্পদ তৈরি করা হয়।

● সর্বশিক্ষা অভিযানের মাধ্যমে সকলের শিক্ষা সুনিশ্চিত করার পরিকল্পনাকে সফল করে তুলতে সেতু পাঠক্রম চালু করা হয়।

● প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করার পরে শিক্ষার্থীরা যেন পড়া ছেড়ে দিয়ে পুনরায় নিরক্ষর না হয়ে পড়ে এর ব্যবস্থা নেওয়া।

● সরকারি, আধা-সরকারি এবং বেসরকারি সংস্থাগুলোকে একত্রিত করার মধ্য দিয়ে সর্বশিক্ষা অভিযানের বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ ও তা রূপায়ণের ব্যবস্থা করা।

● পরিকাঠামো ও পরিষেবা উন্নত করা।

● ৬ থেকে ১৪ বছর বয়সী সকল ছেলে মেয়েদের বিদ্যালয়ে ভর্তি নিশ্চিত করা।

● বিভিন্ন কারণে শিক্ষায় পিছিয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে ধরে রাখার জন্য প্রয়োজনীয় বিজ্ঞান সম্মত পদক্ষেপ নেওয়া, যাতে সেই ছাত্র বিদ্যালয় ও শিক্ষা থেকে বঞ্চিত না হয়।

● প্রকৃত ভাবে দুস্থ অভিভাবকদের ক্ষেত্রে অনুদানের ব্যবস্থা করা।

● বিদ্যালয়ে শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি করার উদ্দেশ্যে গুচ্ছ সম্পদের কেন্দ্রকে যথাযথভাবে ব্যবহার করা।

● বিদ্যালয়ের যে সকল শিক্ষক ও শিক্ষিকারা প্রকৃতভাবে শিক্ষার্থীদের শিক্ষার গুণগতমান বৃদ্ধি করতে সহায়ক, তাদের নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসা সুনিশ্চিত করা।

● প্রাথমিক শিক্ষা সুনিশ্চিত করতে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত সকল ছাত্রদের মধ্যে বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণ।

● সর্বশিক্ষা অভিযানের দ্বারা মেয়েদের উপর তথা বিশেষভাবে অক্ষম শিশুদের দিকে বিশেষ খেয়াল রাখা হচ্ছে।

● ডিজিটাল দুনিয়া সম্পর্কে শিক্ষার্থীদেরকে অবগত রাখতে গিয়ে এই অভিযানের আওতায় বিদ্যালয়ে কম্পিউটার শিক্ষাদানেরও ব্যবস্থা করা হচ্ছে। 

সর্বশিক্ষার পরিকল্পনাটি রূপায়ণের উদ্দেশ্যে বিদ্যালয়, গ্রাম এবং বিভিন্ন ওয়ার্ডকে শিক্ষা কমিটির সাথে যুক্ত করে গুচ্ছসম্পদ তৈরি করা হয়।

নিরক্ষরতা দূরীকরণে ছাত্র সমাজ, Students and Eradication of illiteracy in Bengali

সর্বশিক্ষা অভিযানের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যা ও সেগুলোর সমাধান, Various problems and their solutions related to Sarva Shiksha Abhiyan

    মানুষের জীবনে প্রাথমিক শিক্ষার অধিকারকে সর্বজনীন করার ক্ষেত্রে যে সকল পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে তাদের মধ্যে অন্যতম উল্লেখযোগ্য হল এই সর্বশিক্ষা অভিযান। তবে সর্বশিক্ষা অভিযানকে বাস্তব রূপ দিতে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে, এমনকি সময়ে সময়ে নতুন সমস্যারও সৃষ্টি হয়েছিল। যদিও সেই সমস্যাগুলিকে সমাধান করার জন্যও বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল।

●      সর্বশিক্ষা অভিযানকে বাস্তব রূপ দিতে গিয়ে দেখা যায় যে বেশ কিছু বিদ্যালয়ে প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো ছিল না, তাই সর্বশিক্ষার জন্য সেই বিদ্যালয়গুলিতে প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো উপযুক্ত করে তোলা হয়েছিল।

●  দেশে দারিদ্রতা থাকার কারণে বহু ছেলে মেয়ে অভুক্ত থাকতো, যার ফলে তারা শিক্ষার সাথেও সঠিকভাবে যুক্ত হতে পারেনি। এই সমস্যা দূর করতে বিদ্যালয়ে মিড ডে মিল ব্যবস্থা শুরু করে দেওয়া হয়, যেন তারা শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত হতে পারে।

●  প্রাথমিক শিক্ষা কেন্দ্রগুলি নির্দিষ্ট একটি দূরত্ব অনুপাতে না থাকার কারণে শিশুরা বিদ্যালয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে অক্ষম হয়ে পড়ত, এই কারণেই বেশ কিছু স্থানে বিদ্যালয় নতুন করে গঠন করা হয়েছিল।

●      সর্বশিক্ষা অভিযানের ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিদ্যালয়ে শিক্ষকের অভাব দেখা দিয়েছিল, সেক্ষেত্রে স্কুলগুলিতে সরকার কর্তৃক যথার্থ পরিমাণ শিক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়।

সর্বশিক্ষা অভিযানের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যা ও সেগুলোর সমাধান

আন্তর্জাতিক নারী দিবস, Know in details about International Women’s Day in Bengali

সর্বশিক্ষা অভিযানের সাফল্য, Success of the campaign

সর্বশিক্ষা অভিযানের প্রকল্পটি বিশেষত গ্রাম অঞ্চলে উল্লেখযোগ্য সাফল্য লাভ করেছে। ২০০৪ সালে ভারতের বেশ কিছু গ্রামে গিয়ে উক্ত অভিযানের কাজ শুরু করা হয় এবং নতুন কয়েকটি প্রাথমিক শিক্ষা কেন্দ্রও প্রতিষ্ঠা করা হয়। উক্ত প্রকল্পটি সর্বপ্রথম দক্ষিণ ভারতে শুরু করা হয়, তামিলনাড়ু রাজ্যের একটি গ্রামে প্রকল্পটির সফল প্রয়োগ করা হয়েছিল।

সর্বশিক্ষা অর্থাৎ সবার জন্য শিক্ষার মানোন্নয়ন ঘটাতে রাজ্য সরকারের সাহায্যে দরিদ্র শিশুদের জন্য দুপুরের খাবারের পরিকল্পনা নেওয়া হয় এবং এইভাবেই সাক্ষরতার হারে এক উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি পরিলক্ষিত হয়েছে। বেশ কিছু বেসরকারি সংগঠন দরিদ্র জনগণের জন্য অকুণ্ঠচিত্তে জমি দান করেছিল এবং এই জমিতে গ্রাম পঞ্চায়েত এর সহায়তায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নির্মাণকার্যও সম্পূর্ণ করা হয়েছিল।

সর্বশিক্ষা অভিযানের সাফল্য

উপসংহার, Conclusion 

সর্বশিক্ষা অভিযান সংক্রান্ত নানা বিষয় সম্পর্কে অবগত থাকা খুব জরুরী, কারণ এই বিষয়গুলি সম্পর্কে বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষাতেও প্রশ্ন আসে, তাই সকল তথ্য জেনে রাখা প্রয়োজন।

সর্বশিক্ষা অভিযান সংক্রান্ত নানা বিষয় সম্পর্কে অবগত থাকা খুব জরুরী

সরকার কর্তৃক গৃহীত এই পদক্ষেপটি দেশ থেকে নিরক্ষরতা দূরীকরণে বিশেষ ভূমিকা পালন করে চলেছে। এই অভিযানের মাধ্যমে শিক্ষা প্রদানের কাঠামো দিনের পর দিন শক্তিশালী রূপে গঠনের জন্য সরকারি অনুদানের দ্বারা অভিযানটিকে আরও সুদৃঢ় করা হচ্ছে।

Recent Posts