শিক্ষক দিবস সেরা রচনা, Best essay on Teacher’s Day in Bengali



“তুমি শিক্ষক তুমি- রুক্ষ প্রস্তর খন্ডকে ঘষে ঘষে, আনাতে পার মসৃণতার ঝলকান। তুমি শিক্ষক তুমি- নীরব নদীর জীর্ণতা কাটিয়ে, শোনাতে পার মিষ্টি মধুর কলতান। “

শিক্ষক কথাটির সাথে আমরা সকলেই পরিচিত। পৃথিবীতে যতদিন শিক্ষা আছে ততদিন শিক্ষকও থাকবে। আমরা বিদ্যালয়ে গিয়ে যাদের থেকে শিক্ষা গ্রহণ করি শুধু তারাই শিক্ষক হয় না, বরং আমাদের জীবনে বেড়ে ওঠার পথে আমরা যা কিছুই শিখে থাকি, তা যাদের থেকে শিখতে পারি তারা সকলেই আমাদের শিক্ষক। তাই অনেকের মতে আমাদের প্রথম শিক্ষক আমাদের মা। কবির ভাষায়, 

“মায়ের কাছে শিশুর শিক্ষা জন্ম থেকেই শুরু, মায়ের পরে শিক্ষক হলেন জ্ঞানের অন্য গুরু। ” 

আমাদের দেশ ভারতে প্রতি বছর ৫ ই সেপ্টেম্বর শিক্ষক দিবস পালন করা হয়। এই দিনে দেশের প্রায় সকল স্কুলে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। পূর্ণ উৎসাহ নিয়ে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি শিক্ষকগণ এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে থাকেন। 

শিক্ষক দিবস সেরা রচনা

৫ সেপ্টেম্বর শিক্ষক দিবস পালিত হয় কেন?, Why is Teacher’s Day celebrated on September 5?

৫ সেপ্টেম্বর হল ড.সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণনের জন্মবার্ষিকী। ১৯৬২ সাল থেকে সর্বপল্লি রাধাকৃষ্ণণের জন্মদিনের দিনটি ভারতে শিক্ষক দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। ক্যালেন্ডারে থাকা লাল দাগটির মত এই দিন টি আমাদের মনে দাগ কেটে আসছে শৈশবকাল থেকেই। দেশের প্রথম উপরাষ্ট্রপতি ও দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ।

শিক্ষাবিদ ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ। দক্ষ কূটনৈতিক, জ্ঞানী পণ্ডিত ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ। কিন্তু এই সব পরিচয় বাদ দিয়েও শেষ পর্যন্ত যে কারণে তাঁকে মনে রাখা হয়, তা হল শিক্ষক ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ। শিক্ষকদের প্রতি ড. রাধাকৃষ্ণন অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। রাজনীতিতে যোগদানের আগে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, মহীশূর বিশ্ববিদ্যালয় এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার কাজ করেছিলেন। তাঁর বিশ্বাস ছিল যে একজন শিক্ষক যুব সমাজকে দেশের ভবিষ্যৎ হিসেবে প্রস্তুত করতে সক্ষম।

তাই তিনি অধ্যাপক হিসেবে নিজের দায়িত্ব আন্তরিকতার সাথে পালন করতেন এবং সর্বদা ছাত্রদেরকে ভাল মূল্যবোধ প্রদানের চেষ্টা করেছিলেন। তিনি যখন রাষ্ট্রপতি ছিলেন তখন তার কিছু ছাত্র এবং বন্ধু ৫ই সেপ্টেম্বর তাঁর জন্মদিন পালন করার জন্য তাঁকে অনুরোধ করেন। তিনি এর উত্তরে বলেছিলেন, “৫ই সেপ্টেম্বর আমার জন্ম দিবস পালন না করে শিক্ষক দিবস হিসাবে পালন করলে আমি আরও অধিক সম্মানিত বোধ করব।”

৫ সেপ্টেম্বর শিক্ষক দিবস পালিত হয় কেন?

সবার শিক্ষা সর্বশিক্ষা অভিযান, Know about Education for all campaign in Bengali

শিক্ষক দিবসের গুরুত্ব, Importance of Teacher’s Day

শিক্ষক দিবস নিঃসন্দেহে একটি বিশেষ এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিন। এই দিনে সকলে নিজের শিক্ষকদের শিক্ষাদানের প্রচেষ্টা এবং শিক্ষাক্ষেত্রে কৃত কাজের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে উদযাপন করে থাকে। শিক্ষকতা করার পেশা এই পৃথিবীর কঠিন কাজগুলোর মধ্যে একটি, এর কারণ হল শিক্ষকদের হাতেই থাকে দেশের তরুণদের শিক্ষিত করে তোলার দায়িত্ব।

তাদের কাজ থাকে একটি সম্পূর্ণ শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে। প্রতিটি শিক্ষার্থী একে অপরের থেকে আলাদা হয় এবং এক একজনের নিজস্ব ভিন্ন ক্ষমতা আছে বলেই কাজটি শিক্ষকদের জন্য আরও কঠিন হয়ে ওঠে। যেমন, বিভিন্ন শিক্ষার্থী বিভিন্ন বিষয়ে ভালো হতে পারে, কেউ যদি খেলাধুলায় ভালো হয় তবে কেউ আবার গণিতে ভালো হয়; অন্যদিকে কেউ দেখা যায় ইংরেজি বিষয়ে বেশি আগ্রহী। একজন ভালো শিক্ষককে সর্বদা এসব ক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে যে, কোনো ছাত্র যেই বিষয়ে আগ্রহী থাকে সেদিকে তাকে আরো উন্নত করে তুলতে হবে এবং এর পাশাপাশি অন্য বিষয়ের ক্ষেত্রেও প্রয়োজনীয় জ্ঞান ছাত্রদের মনে সঞ্চার করে দিতে হবে। এটাই হল একজন শিক্ষকের কর্তব্য। কবির ভাষায়, 

” শিক্ষক জ্বালান মনে প্রদীপ প্রতিভা বিকাশে, শিক্ষক ছড়ান জ্ঞানের আলো অশিক্ষার আকাশে।শিক্ষক হলেন আলোর পথের সত্য নির্ভীক যাত্রী, অনুসরণে পথ চলে সকল ছাত্র-ছাত্রী। “

শিক্ষক দিবসের গুরুত্ব

 এজন্যই শিক্ষক দিবস শিক্ষকদের প্রতি শ্রদ্ধা এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার জন্য নিবেদিত।

মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষাদান, Best essay on Education through mother tongue in Bengali

শিক্ষকের ভূমিকা, Role of a teacher

” তুমি শিক্ষক তুমি- সদ্যোজাত পক্ষী ছানাকে, দিতে পার প্রথম উড়ানের ভরসা। তুমি শিক্ষক তুমি- তপ্ত মরুর বুকে, ঝরাতে পার শান্ত শীতল বরষা। “

" তুমি শিক্ষক তুমি- সদ্যোজাত পক্ষী ছানাকে, দিতে পার প্রথম উড়ানের ভরসা। তুমি শিক্ষক তুমি- তপ্ত মরুর বুকে, ঝরাতে পার শান্ত শীতল বরষা। "

 এক জন সফল মানুষের পেছনে শিক্ষকের যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে, তা নতুন করে বলার কিছু নেই। একজন আদর্শ শিক্ষক কেবলমাত্র পড়াশোনার ক্ষেত্রে নয়, তিনি ছাত্রকে জীবনে চলার পথে পরামর্শ দেবেন, ব্যর্থতায় পাশে দাঁড়িয়ে উৎসাহ দেবেন, সাফল্যের দিনে নতুন লক্ষ্য স্থির করে দেবেন।

তিনি তাকে শুধুমাত্র জীবনে সফল হওয়া নয়, কিভাবে একজন ভাল মানুষ হতে হয় শেখাবেন। তাইতো শিক্ষক সম্পর্কে এ পি জে আবদুল কালাম বলেছিলেন, ‘যদি একটি দেশকে দুর্নীতিমুক্ত এবং সুন্দর মনের মানুষের জাতি হতে হয়, তাহলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি এ ক্ষেত্রে তিনজন সামাজিক সদস্য পার্থক্য এনে দিতে পারে। তারা হলেন বাবা, মা এবং শিক্ষক।’ নার্সারি বা স্কুলে ভর্তি জীবনের আগে পর্যন্ত তো আমরা বাড়িতেই অ আ ক খ বা ইংরাজি বর্ণমালা, ১ থেকে ১০০, ছড়া, রং চেনা, পশুপাখিদের ছবি দেখে চিনতে শেখা, রামায়ণের গল্প আরও কত কি বাড়িতেই শিখে যাই বাবা মায়ের কাছ থেকেই।

হামাগুড়ির বয়স থেকেই হাঁটতে শেখা, কথা বলতে শেখা সবই তাদের কাছেই। একদম কচি বয়স থেকে আমাদের শিক্ষার হাতেখড়ি তাদের হাত ধরেই। আমাদের বাবা ও মা-ই আমাদের প্রথম ও পরম গুরু। জীবনযাপনের অন্যতম শিক্ষক।

আমাদের শিক্ষানবিশী চলতেই থাকে জীবনভর। আমরা প্রতিদিন শিখি। একজন যথার্থ শিক্ষকই পারেন তাঁর ছাত্রের মধ্যে যথাযথ মনন, বুদ্ধি ও চিন্তাভাবনাকে বাস্তব রূপে প্রতিফলিত করতে। এবং আগামী জীবনযাত্রায় প্রতিটি উপযুক্ত জীবিকা ও সৎ নাগরিক তথা মানুষ গড়ার কারিগর তাঁরাই।

শিক্ষকের ভূমিকা

ছাত্রজীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য, Responsibilities and duties of student life in Bengali

শিক্ষকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা বোধ, Gratitude to teachers

” যারা গড়েন আমাদের ছোটবেলা।তাদের সে স্মৃতি কক্ষনো মোছে নাকি।তারা কি কেবলই শিক্ষক-দিদিমণি, শুধু কি স্কুলের‌ই গল্পে জড়িয়ে তাঁরা? “

ছাত্রজীবনে বেড়ে ওঠার পথে আমরা বহু শিক্ষকের সাথে পরিচিত হই, এক একজনের থেকে নতুন কিছু শেখার সুযোগ পাই যা পরবর্তী সময়ে বিভিন্নভাবে আমাদের চলার পথ সুগম করে দেয়। কিন্তু সময়ের সাথে তাদের মধ্যে বেশিরভাগ শিক্ষকের সাথেই আমাদের সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তবে তারা সর্বদাই আমাদের স্মরণে থেকে যান।

তাদের প্রদান করা শিক্ষা আমাদের মধ্যে থেকে যায় স্মৃতি হিসেবে যা বার বার তাদের অবদান স্মরণ করিয়ে দেয়। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা বোধ এবং সম্মান সর্বদাই আমাদের মনের গভীরে জেগে থাকে। 

শিক্ষকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা বোধ

সাহিত্য পাঠের প্রয়োজনীয়তা, Know about the Necessity to study literature in Bengali

বিদ্যালয়ে শিক্ষক দিবস উদযাপন, Teacher’s day celebration in school

সারা ভারতজুড়ে বিভিন্ন বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা শিক্ষক দিবস অত্যন্ত উৎসাহ নিয়ে পালন করে। এই বিশেষ দিন নিয়ে একটি প্রথা বছর বছর ধরে চলে এসেছে। শিক্ষার্থীরা তাদের থেকে নিম্ন শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীদের ক্লাসে পড়াতে যায়। স্কুল কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে এই দিনে শিক্ষার্থীদেরকে বিভিন্ন ক্লাস ঠিক করে দেওয়া হয় যেখানে গিয়ে তারা নির্দিষ্ট বিষয় পড়াতে পারে।

এভাবেই ছোট থেকে বড় সব ছাত্রছাত্রীদের জন্যই দিনটি খুবই আনন্দময় হয়ে ওঠে। তাছাড়াও শিক্ষক দিবস উৎযাপন করতে গিয়ে মনোরঞ্জনের জন্য বেশকিছু অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়, যার মধ্যে বিভিন্ন প্রতিযোগিতা যেমন, নাচ, মঞ্চস্থ নাটক, আবৃত্তি এবং বক্তৃতা ইত্যাদির আয়োজন করা হয়। তাছাড়াও থাকে ভালো খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা। 

শিক্ষক দিবসের এই বিশেষ দিনটিতে, ছাত্রছাত্রীরা নিজের প্রিয় শিক্ষকদেরকে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করার উদ্দেশ্যে কার্ড, ফুল এবং অন্যান্য কিছু উপহারও দিয়ে থাকে যা পেয়ে শিক্ষকগণও খুবই আনন্দিত বোধ করেন।

বিদ্যালয়ে শিক্ষক দিবস উদযাপন

উপসংহার, Conclusion 

 শিক্ষক দিবস উৎযাপন

শিক্ষকদের সম্মান জানানোর উদ্দেশ্যে ভারতে শিক্ষক দিবস উৎযাপন করা হয়, কারণ সারা বছর ধরে কঠোর পরিশ্রম করেন শিক্ষকগণ এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে শুধু এতটুকুই চান যে তাদের শিক্ষার্থীরা যেন স্কুল এবং অন্যান্য ক্রিয়াকলাপে ভাল মানের কর্মক্ষমতা অর্জন করে। শিক্ষক দিবস উৎযাপন ছাত্র এবং শিক্ষকদের মধ্যে থাকা সম্পর্কটিকে যেন আরো শক্তিশালী করে তোলে।

Recent Posts