বর্তমান সময়ের ডিজিটাল দুনিয়ায় বিল গেটসকে চেনেন না এমন লোক হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবেনা। বিশ্বের খ্যাতনামা ধনকুবেরদের একজন তিনি। বহুল আলোচিত হার্ভার্ড ড্রপআউট তথা মাইক্রোসফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা এবং বিশ্বনন্দিত জনহিতৈষী- বিল গেটস সম্পর্কে বহু প্রচলিত তথ্য রয়েছে যা অনেকেরই অজানা।
তিনি যে কী রকম প্রতিভার অধিকারী সে ব্যাপারে আমাদের অনেকেরই জ্ঞান নেই। বিল গেটস এক অসাধারণ প্রতিভার অধিকারী ও তাঁর জীবনে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনাবলী তাঁর ব্যক্তিত্বের স্বাক্ষর বহন করে। মাইক্রোসফ্ট কোম্পানিতে কর্মরত থাকাকালীন গেটস চেয়ারম্যান, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বা সিইও, প্রেসিডেন্ট এবং প্রধান সফটওয়্যার আর্কিটেক্টের পদেও নিয়োজিত ছিলেন, তাছাড়া ২০১৪ সালের মে মাস অবধি বৃহত্তম স্বতন্ত্র শেয়ারহোল্ডারও ছিলেন তিনি।
বিল গেটসের জীবনের প্রথমার্ধ, The first half of Bill Gates’ life
বিল গেটস ১৯৫৫ সালের ২৮ শে অক্টোবর, ওয়াশিংটনের সিয়াটলে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর পিতা উইলিয়াম এইচ গেটস সিনিয়র ছিলেন একজন বিশিষ্ট আইনজীবী, এবং মা মেরি ম্যাক্সওয়েল গেটস ‘ফার্স্ট ইন্টারস্টেট ব্যাঙ্কসিস্টেম এবং ইউনাইটেড ওয়ে অব আমেরিকা’ -র পরিচালনা পর্ষদে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। গেটসের একটি বড় বোন রয়েছে যার নাম ক্রিস্টিয়েন এবং লিবি নামের আরো একটি ছোট বোন রয়েছে।
বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং- এর জীবনী, Best Biography of scientist Stephen Hawking in Bengali
বিল গেটস এর শিক্ষাজীবন, Education of Bill Gates
পড়াশুনার দিকে বরাবরই আগ্রহ ছিল ধনকুবের বিল গেটসের। তাঁর বাবা-মা চেয়েছিলেন যেন তিনি আইন পেশার দিকেই এগিয়ে যান। কিন্তু গেটস এই বিষয়ে মোটেই আগ্রহী ছিলেন না, তিনি স্কুলজীবন থেকেই কম্পিউটারের প্রতি আগ্রহী ছিলেন। লেকসাইড স্কুল থেকে শিক্ষাজীবন শুরু করেছিলেন তিনি এবং ১৩ বছর বয়স অবধি সেখানে পড়াশুনা করেন।
লেকসাইড স্কুলে পড়া লেখা করার সময় থেকেই বিল গেটস এর মনে কম্পিউটারের প্রতি আগ্রহ জন্মায়। সেখানে থাকাকালীন তিনি বেশিরভাগ সময়ই কম্পিউটার নিয়ে পড়ে থাকতেন, কারণ উক্ত স্কুলে কম্পিউটার শিক্ষার প্রতি বিশেষ কদর ছিল। বিল গেটস সেখান থেকে বেসিক কম্পিউটার লেংগুয়েজ ব্যবহার করে প্রোগ্রামিং সম্পর্কে বিষদ জ্ঞান লাভ করেন। পরবর্তীতে তিনি প্রিপারেটরি স্কুলে ভর্তি হন এবং সকলকে বিস্মিত করে দিয়ে তিনি ১৬০০ নম্বরের মধ্যে ১৫৯০ নম্বর পেয়েছিলেন।
এরূপ বিস্ময়কর ফলাফলের দরুণ বিল গেটস ১৯৭৩ সালে হার্ভার্ড কলেজে পড়াশুনার সুযোগ পান। Harvard University ছিল সেই সময়কার বিখ্যাত একটি ইউনিভার্সিটি। কিন্তু Harvard ছেড়ে তিনি নিজের স্বপ্নের কোম্পানি মাইক্রোসফট এর প্রতিষ্ঠার দিকে পা বাড়িয়ে দেন।
প্রাথমিক ভাবে গেটস এর পরিবার তার এই সিদ্ধান্তকে অপছন্দ করেছিলেন, কিন্ত পরবর্তী সময়ে তারা গেটসকে পূর্ণ সমর্থন করেন।
বিল গেটস এবং মাইক্রোসফট এর প্রতিষ্ঠা, Bill Gates and the foundation of Microsoft
মাইক্রোসফট কর্পোরেশন হল আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র স্থিত একটি বহুজাতিক কোম্পানি। আমাদের মধ্যে অনেকেরই এটা অজানা নয় যে উক্ত কোম্পানিতে কম্পিউটার সহ আধুনা তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক বিভিন্ন পণ্য উৎপাদন এবং বিপণন হয়। উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম এবং মাইক্রোসফট অফিস অ্যাপ্লিকেশন ইত্যাদি হল এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু পণ্য।
বিশ্বের সেরা ধনী ব্যক্তিদের একজন বিল গেটস হলেন এই কোম্পানির সহপ্রতিষ্ঠাতা। ১৯৭৫ সালে তিনি নিউ মেক্সিকো এর আলবুকার্কে নিজের শৈশব কালের বন্ধু পল অ্যালেনের সাথে মিলে মাইক্রোসফ্টের প্রতিষ্ঠা করেন; যা পরবর্তী সময়ে বিশ্বের বৃহত্তম ব্যক্তিগত কম্পিউটার সফ্টওয়্যার সংস্থা হিসেবে খ্যাত হয়ে ওঠে। সহকারী পল অ্যালেন “মাইক্রো কম্পিউটার” এবং “সফটওয়্যার” এই দুটি শব্দ মিলিয়ে কোম্পানিটির এহেন নামকরণ করেছিলেন। কোম্পানির প্রথম কর্মচারী হিসেবে গেটস এবং অ্যালেন তাদের হাই স্কুল সহযোগী রিক ওয়েল্যান্ডকে নিয়োগ করেছিলেন।
২৬ নভেম্বর ১৯৭৬ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে “মাইক্রোসফ্ট” ট্রেড নামটি নিউ মেক্সিকো রাজ্যের সেক্রেটারির কাছে রেজিস্টার করা হয়। ১৯৭৬ সালের শেষের দিকে মাইক্রোসফ্ট কোম্পানি এমআইটিএস থেকে স্বাধীন হয়ে যায় এবং বিভিন্ন সিস্টেমের জন্য প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ সফ্টওয়্যার বিকাশের কাজ করতে থাকে। উক্ত সংস্থাটি ১৯৭৯ সালের ১ জানুয়ারী আলবুকার্ক থেকে বেলভ্যু, ওয়াশিংটনে নিজের কার্যক্রম শুরু করে। সংস্থাটি বড় হওয়ার সাথে সাথে গেটসের দায়িত্ব পরিচালকের ভূমিকায় রূপান্তরিত হয়েছিল এবং পরবর্তীতে একজন নির্বাহী হিসেবে নিযুক্ত হন তিনি।
২০০০ সালের জানুয়ারি মাসে কোম্পানির সিইও হিসাবে পদত্যাগ না করা পর্যন্ত গেটস চেয়ারম্যান এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসাবে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, পরবর্তীতে সিইও হিসাবে পদত্যাগ করার পর তিনি মাইক্রোসফট কোম্পানির চেয়ারম্যান ছিলেন এবং প্রধান সফটওয়্যার আর্কিটেক্ট হিসেবে কাজ করেছেন। ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মাইক্রোসফ্টের চেয়ারম্যান পদ থেকে তিনি পদত্যাগ করেন এবং সদ্য নির্ধারিত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সত্য নাদেলাকে সমর্থন করার জন্য প্রযুক্তি উপদেষ্টা হিসাবে কোম্পানির একটি নতুন পদ গ্রহণ করেন।
বিল গেটস এর জনহিতৈষী কার্যকলাপ, Philanthropic activities of Bill Gates
বিল গেটস নিজের কর্মজীবন এবং মাইক্রোসফ্ট এর উপদেষ্টার পদ ছেড়ে যাওয়ার পর থেকে বহু জনহিতকর কাজ চালিয়ে যান। ২০২০ সালের মার্চ মাসে বিল গেটস বিশ্ব স্বাস্থ্য ও উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তন, এবং শিক্ষাসহ বিভিন্ন জনহিতকর প্রচেষ্টায় মনোনিবেশ করার উদ্দেশ্যে মাইক্রোসফ্ট এবং বার্কশায়ার হ্যাথওয়েতে বোর্ডের অবস্থান ছেড়ে দেন।
ব্যক্তিগত জীবন, Personal Life
বিল গেটসের পারিবারিক জীবনের দিকে তাকালেও দেখা যাবে যে নিজের পরিবারের প্রধান হিসেবে তিনি যথেষ্ট দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করছেন। ব্যক্তিগত জীবনে স্ত্রী এবং তিন সন্তানের সহ সুখী এবং সরল জীবনযাপন করেন তিনি। তিন সন্তানের মধ্যে দুইজন মেয়ে এবং এক পুত্র রয়েছে। নিজের কাজটি তিনি নিজের হাতেই করতে বেশি সাচ্ছন্দবোধ করেন, সোশাল মিডিয়ার মাধ্যমে জানা যায় যে তিনি খাওয়াদাওয়ার পর নিজের থালা বাসন নিজের হাতেই ধুয়ে মেজে পরিষ্কার করে রাখেন। সন্তানদের পিতা হিসেবে তিনি একজন আদর্শ দৃষ্টান্ত, তিনি নিজের সন্তানদের বয়স ১৪ বৎসর হওয়ার আগে পর্যন্ত কোনো ধরণের মোবাইল ফোন কিনে দেননি।
বং গাই কিরণ দত্তের জীবনী, Biography of You Tuber Kiran Dutta aka Bong guy in Bengali
স্বীকৃতি, Recognition
মাইক্রোকম্পিউটার বিপ্লবের পিছনে ১৯৭০ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত বিল গেটসের অবদান অনস্বীকার্য। ১৯৮৭ সালে ‘ফোর্বস পত্রিকা’ বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ধনী ব্যক্তিদের তালিকায় তাঁর নাম অন্তর্ভুক্ত করেছিল। পরবর্তীতে ২০২১ সালের মধ্যে তাঁর সঞ্চিত সম্পদের পরিমাণ ১২৯.৭ বিলিয়ন ডলার হয়ে যায়, যা ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় দশ লক্ষ কোটি টাকা।
বিল গেটসের লেখা বই, Books written by Bill Gates
বিল গেটস এর লেখা বইগুলো হল:
● মাইক্রোসফ্টের নির্বাহী নাথন মাইরভল্ড এবং সাংবাদিক পিটার রাইনারসন এবং বিল গেটসের সম্মিলিত প্রয়াসে লেখা দ্য রোড এহেড ( The Road Ahead) নামক বইটি ১৯৯৫ সালের নভেম্বর মাসে প্রকাশিত হয়। উক্ত বই ব্যক্তিগত কম্পিউটিং বিপ্লবের প্রভাবগুলি সম্বন্ধে সংক্ষিপ্তসার জ্ঞান প্রদান করে এবং বিশ্বব্যাপী সুপারহাইওয়ের আগমনের মাধ্যমে ভবিষ্যতের গভীর পরিবর্তনের বর্ণনা দিয়েছে।
● ১৯৯৯ সালে বিজনেস @ স্পিড অফ থিওট প্রকাশিত হয়েছিল। বইটিতে কীভাবে ব্যবসা এবং প্রযুক্তি একীভূত হয়েছে তা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে এবং ডিজিটাল অবকাঠামো ও তথ্য নেটওয়ার্ক কীভাবে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে যাওয়ার পক্ষে সহায়তা করতে পারে সে সম্পর্কেও ধারণা দেওয়া হয়েছে।
শহীদ বিপ্লবী ভগৎ সিং এর জীবনী, Biography of Revolutionary Bhagat Singh in Bengali
বিল গেটস এর প্রতিষ্ঠিত সেবা প্রতিষ্ঠান, Institution established by Bill Gates to serve humanity
২০০০ সালে ধনকুবের বিল গেটস এবং তাঁর স্ত্রী মেলিন্ডা গেটস মিলে “Bill & Melinda Gates Foundation” গড়ে তুলেছিলেন, যার মাধ্যমে তারা সমাজের জন্য বিভিন্ন ধরণের সেবামূলক কাজ করে থাকেন । গেটস নিজের আয়ের বেশিরভাগটাই উক্ত চ্যারিটিতে দান করেন। বর্তমানে এটি আমেরিকার সবচেয়ে বড় ব্যক্তিগত সেবা প্রতিষ্ঠান যার মোট সম্পত্তির পরিমান $ 46.8 বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
উক্ত ফাউন্ডেশনের মূল উদ্দেশ্যগুলো হল–
● সুস্থতার প্রসার ঘটানো।
● দুস্থ মানুষকে চরম দারিদ্রতা থেকে বের করে আনা।
● ইনফরমেশন টেকনোলজির সাথে মানুষের পরিচিতি ঘটানো।
তাছাড়াও এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অন্য বিভিন্ন দাতব্য সংস্থা এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণার কর্মসূচিকে প্রচুর পরিমাণ অর্থ প্রদান করেছেন গেটস।
উপসংহার, Conclusion
বিল গেটসের জীবনের প্রতিটি ধাপ আমাদের মনে অনুপ্রেরণা যোগায়, কিভাবে তিনি নিজের জ্ঞান কে কাজে লাগিয়ে নিজের স্বপ্নের কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন এবং সেই কোম্পানিকে বিশ্বের অন্যতম বহুজাতিক কোম্পানি হিসেবে বিশ্বের সমক্ষে তুলে ধরেন। তাছাড়াও নিজের আয়ের সাহায্যে তিনি বহু অভাবী মানুষকে সহায়তাও করে থাকেন। এই থেকে আমরা অনেক ভালো শিক্ষা গ্রহণ করতে পারি।
- স্বামী বিবেকানন্দের জীবনী ও বাণী সমূহ | Swami Vivekananda biography and Quotes in Bangla
- হুমায়ূন আহমেদ এর জীবনী ~ Biography of Humayun Ahmed in Bengali
- বীরাঙ্গনা মাতঙ্গিনী হাজরার জীবনী
- সত্যেন্দ্রনাথ বসুর জীবনী ~ Biography of Satyendra Nath Bose in Bengali
- শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের জীবনী ~ Biography of Shirshendu Mukhopadhyay
Frequently asked questions
বিশ্বের খ্যাতনামা ধনকুবেরদের একজন, বহুল আলোচিত হার্ভার্ড ড্রপআউট তথা মাইক্রোসফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা এবং বিশ্বনন্দিত জনহিতৈষী।
১৯৫৫ সালের ২৮ শে অক্টোবর।
১৯৭৫ সালে তিনি নিউ মেক্সিকো এর আলবুকার্কে শৈশবের বন্ধু পল অ্যালেনের সাথে মাইক্রোসফ্টের সহ-প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
১৯৮৭ সালে।