থানকুনি পাতা খাওয়ার বিবিধ উপকারিতা, Best known utilities  of eating Thankuni leaves in Bengali 


ছোটো ছোটো বৃত্তাকার থানকুনি পাতা আমাদের অতি পরিচিত। এমনকি অনেকের বাড়িতেও এই গাছ দেখা যায়। এই থানকুনি হল এক ধরনের খুব ছোট বর্ষজীবী ভেষজ উদ্ভিদ। এই উদ্ভিদের বৈজ্ঞানিক নাম Centella asiatica এবং থানকুনি পাতার বৈজ্ঞানিক পরিবারের নাম হল ম্যাকিনলেয়াসি যাকে অনেকে এপিকেসি পরিবাবের উপপরিবার বলে মনে করেন। ভেষজ উপাদানে ভরপুর থানকুনি পাতা পেটের বিভিন্ন রোগ সারাতে দারুণ কার্যকরী, তাছাড়াও এর আরো অনেক গুণ রয়েছে, শারীরিক বিভিন্ন সমস্যা নিরাময়ে এটি কার্যকরী। 

থানকুনি পাতা খাওয়ার বিবিধ উপকারিতা

বিশ্বে থানকুনি পাতার বিস্তৃতি, Distribution of Thankuni leaves in the world

খ্রিষ্টপূর্ব ১৭ শতক থেকে আফ্রিকা, ফ্রান্স, সুমাত্রা, শ্রীলঙ্কা, জাভা এবং ফিলিপিন্সে ওষুধ হিসেবে থানকুনি পাতা ব্যবহার হয়ে আসছে। ভারত, উত্তর অস্ট্রেলিয়া, বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, মালয়েশিয়া এবং এশিয়ার অন্যান্য প্রান্তে এই উদ্ভিদের বিস্তৃতি রয়েছে। ভেষজ হিসাবে এই বিশেষ পাতার বহুল ব্যবহার আছে।  আয়ুর্বেদিক, প্রাচীন আফ্রিকীয়, চৈনিক সহ অনেক দেশের চিকিৎসাবিদ্যায় থানকুনি পাতা ব্যবহার করা হয়। অঞ্চলভেদে এই পাতার বিভিন্ন নাম রয়েছে। যেমন- থানকুনি, দোলামনি, মানকি, আদামনি, টেয়া, থুলকুঁড়ি, তেতুরা, মানামানি ইত্যাদি। এটি মূলত বর্ষজীবী উদ্ভিদ যা স্যাঁতস্যাঁত এবং ছায়াযুক্ত স্থানে ভালো জন্মে। এই পাতাগুলো বৃত্তাকার হয় এবং এর প্রান্ত খাঁজকাটা মত হয় এবং এর ফুল ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ও ঈষৎ লাল আভাযুক্ত।

বিশ্বে থানকুনি পাতার বিস্তৃতি

চুন এর গুণাবলী | স্বাস্থ্যকর চুনাপাথর | Health Benefits of Limestone in Bengali

থানকুনি পাতা খেলে আমাদের যা যা উপকার হয়, Benefits of eating Thankuni leaves

থানকুনি পাতা খেলে আমাদের যা যা উপকার হয়

সাধারণত পুকুর পাড় বা জলাশয়ের পাশে এই পাতা বেশি দেখা যায়। বেশিরভাগ মানুষই পেটের রোগ সারাতে, বিশেষ করে টাইফয়েড, ডায়রিয়া, কলেরার মতো রোগ সারাতে থানকুনি পাতার রস ব্যবহার করে থাকেন। রোজ সকালে নিয়মিত এই পাতা চিবিয়ে খেলে বা এর রস খেলে কি কি উপকারিতা পাওয়া যায় জেনে নিন-  

ত্বকের সতেজতা বৃদ্ধি পায় : শুধু পেটের সমস্যাই নয়, আলসার, অ্যাজমা সহ বেশ কিছু চর্মরোগ সারানোর কাজে থানকুনি পাতা বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এটি নিয়মিত খেলে ত্বকের সজীবতা বৃদ্ধি পায় ফলে কারও মুখে থাকা ব্রণ দূর হয়। থানকুনি পাতার রস বয়স বেড়ে গেলেও ত্বকে তারুণ্য ধরে রাখতে সাহায্য করে। প্রতিদিন থানকুনি পাতা চিবিয়ে খাওয়ার অভ্যাস করলে বড় বড় কিছু রোগ থেকেও রক্ষা পাওয়া যায়৷ 

ত্বকের সতেজতা বৃদ্ধি পায়

মস্তিষ্কের ক্ষমতা বাড়ে : থানকুনি পাতা নিয়মিত খাওয়ার অভ্যাসে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়। এছাড়া রোজ থানকুনি পাতা খাওয়া শুরু করার ফলে শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং পেনটাসাইক্লিক ট্রিটারপেন্স নামক একটি উপাদানের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। এতে মস্তিষ্কের কোষের ক্ষমতা বেড়ে যায় এবং স্মৃতিশক্তির উন্নতি ঘটে। বয়স্ক ব্যক্তিরাও যদি নিয়মিত থানকুনি পাতার রস খেয়ে থাকেন, তা হলে শেষ বয়সের দিকে অ্যালঝাইমার্স অথবা ডিমেনশিয়ার মত রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কম হয়ে যায়। তাছাড়া এই পাতার রস স্নায়ুতন্ত্রকে সক্রিয় রাখার ক্ষেত্রেও সাহায্য করে।

অনিদ্রার সমস্যা দূর হয় : সুপরিচিত ভেষজ এই থানকুনি পাতা পর্যাপ্ত পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান সমৃদ্ধ, তাই এটি আমাদের অ্যাংজাইটি এবং মানসিক অবসাদের প্রকোপ কম করে, আর সেই সঙ্গে আমাদের নার্ভাস সিস্টেমকেও শান্ত রাখে; যার ফলে অনিদ্রার মত সমস্যা দেখা দেয় না; কারণ, এতে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা সেরোটোনিন নামক হরমোনের ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয়, ফলে আমাদের দেহে স্ট্রেস হরমোনের প্রভাব কম হতে শুরু করে। 

অনিদ্রার সমস্যা দূর হয়

শরীরকে টক্সিনমুক্ত করে : আমাদের শরীরকে টক্সিন মুক্ত রাখার ক্ষেত্রে থানকুনি পাতার জুড়ি মেলা ভার। প্রত্যেক দিন ঘুম থেকে উঠে ২ চামচ করে থানকুনি পাতার রসের সঙ্গে ১ চামচ মধু মিশিয়ে খাওয়া উচিত, এভাবে রক্তে মিশে থাকা টক্সিক উপাদানগুলি আমাদের প্রস্রাবের সঙ্গে বেরিয়ে যায় ফলে শরীর সুস্থ থাকে। তাছাড়া মুখে ঘা এবং অন্যান্য ক্ষত সারাতেও এই ভেষজ টি উপকারী।

আমাশয় দূর করে: আমাশয় সারাতে থানকুনি ভাল কাজ করে। এর জন্য প্রতিদিন সকালে উঠে খালি পেটে নিয়ম করে কয়েকটা থানকুনি পাতা খেতে হবে। এইভাবে টানা ৭ দিন খেলে আপনি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠবেন।

পেটের অন্যান্য রোগের চিকিৎসা: পরিমাণ মতো থানকুনি পাতার সঙ্গে ১ টা আনারসের পাতা এবং অল্প পরিমাণ আম গাছের ছাল, হলুদের রস ভালো করে মিশিয়ে বেটে নিতে হবে। এই মিশ্রনটি নিয়মিত খাওয়ার ফলে অল্প দিনের মধ্যেই যে কোনো ধরনের পেটের অসুখ সেরে যাবে।

পেটের অন্যান্য রোগের চিকিৎসা

কাশির প্রকোপ কমে: থানকুনি পাতা সাময়িকভাবে কাশি কম করতে সাহায্য করে। এছাড়া সর্দি এবং গলা ব্যাথার ক্ষেত্রেও এটি উপকারী। ২ চামচ থানকুনি পাতার রসের সাথে কয়েক দানা চিনি মিশিয়ে খেলে সঙ্গে সঙ্গে কাশি কম হয়ে যায়। আর যদি এভাবে এক সপ্তাহ লাগাতার খেতে পারেন, তাহলে অবশ্যই সুস্থ হয়ে উঠবেন।

জ্বরের প্রকোপ কমে: জ্বরের ধাক্কায় অনেকেই সহজে কাবু হয়ে পড়েন। সেক্ষেত্রে এই ভেষজ পাতায় আছে প্রচুর ভিটামিন সি যা আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে উল্লেখ রয়েছে যে- জ্বরের সময় যদি কেউ সকালে খালি পেটে ১ চামচ থানকুনি পাতার রস এবং ১ চামচ শিউলি পাতার রস মিশিয়ে খায় তবে অল্প সময়েই জ্বর সেরে যায়।

জ্বরের প্রকোপ কমে

কিউই ফল কি, কিউই ফলের উপকারিতা, kiwifruit benefits in Bengali  

চুল পড়া কমে যায়: প্রতি সপ্তাহে ২-৩ বার থানকুনি পাতা চিবিয়ে বা এর রস খাওয়ার ফলে স্কাল্পের ভেতরে পুষ্টির ঘাটতি দূর হয়। ফলে চুল পড়ার সমস্যা কম হতে শুরু করে। তাছাড়াও আপনি চুল পড়া রোধে থানকুনির আরেকটি ব্যবহার করতে পারেন, সেটি হল, পরিমাণ মত থানকুনি পাতা নিয়ে সেগুলো থেঁতো করে নিতে হবে। এরপর সেগুলোর সঙ্গে পরিমাণ মতো কিছু তুলসি পাতা এবং আমলা মিশিয়ে নিয়ে একটা বাটা বা পেস্ট বানিয়ে নিতে হবে।  এই পেস্টটাকে চুলে ভালোভাবে লাগিয়ে নিয়ে কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে। তারপরে ভাল করে ধুয়ে ফেলতে হবে, এটা চুলের সৌন্দর্য্য বজায় থাকবে।

চুল পড়া কমে যায়

শরীর থেকে বেরিয়ে যায় টক্সিক উপাদান: বিভিন্ন সময় নানা কারণে কিছু ক্ষতিকর টক্সিন আমাদের শরীরে বা রক্তে প্রবেশ করে থাকে। কিন্তু আপনি যদি প্রতিদিন সকালে অল্প পরিমাণ থানকুনি পাতার রস নিয়ে তার সঙ্গে ১ চামচ মধু মিশিয়ে খান তবে রক্তে উপস্থিত ক্ষতিকর উপাদান বেরিয়ে যায়, ফলে শরীরে সুস্থ রক্ত প্রবাহ অব্যাহত থাকে।

ক্ষতের চিকিৎসা: শরীরের কোনো অংশ কেটে গেলে সঙ্গে সঙ্গে সেখানে অল্প করে থানকুনি পাতা চটকে নিয়ে বা বেঁটে লাগিয়ে দিতে পারেন। এতে নিমেষে জ্বালা কম হয়ে যাবে। পুরাতন কোনো ক্ষত কোনোভাবে নিরাময় না করতে পারলে সেদ্ধ থানকুনি পাতার প্রলেপ লাগলে অনেক বেশী উপকার পাওয়া যায়।

হজম শক্তি বৃদ্ধি: থানকুনি পাতা আমাদের খাবার হজম করার ক্ষমতাকে উন্নতি করে। এই ভেষজে উপস্থিত একাধিক উপকারি উপাদান হজমের ক্ষেত্রে সহায়ক অ্যাসিডের ক্ষরণ যাতে ঠিক মতো হয় সেইদিকে খেয়াল রাখে। ফলে বদহজম হলে বা গ্যাস ও অম্বলের মত সমস্যা কম হয়। বিশেষ করে Asiaticoside নামক একটি উপাদান থানকুনি পাতায় রয়েছে, যা আমাদের হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটায় এবং স্টমাক আলসারের মতো মারাত্মক সমস্যার প্রকোপ কম করার ক্ষেত্রেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

হজম শক্তি বৃদ্ধি:

স্ট্রেচ মার্ক কম করে: বেশ কিছু গবেষণার দ্বারা পরিলক্ষিত হয়েছে যে, থানকুনি পাতা শরীরে থাকা স্ট্রেচ মার্কগুলোও কম করার ক্ষেত্রে সহায়ক। থানকুনি পাতায় টারপিনয়েড থাকে যা শরীরে কোলাজেন উৎপাদন বাড়িয়ে দেয় ফলে নতুন করে স্ট্রেচ মার্ক তৈরিতে বাধা সৃষ্টি হয়।

জেনে নিন কলার বিভিন্ন উপকারিতা

থানকুনি পাতা খাওয়ার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, Side effects of eating Thankuni leaves 

যেকোনো কিছুর ভালো দিক যেমন থাকে, তেমনই খারাপ দিকও থাকে। ঠিক সেভাবেই থানকুনি পাতা সেবনে অনেক সময় কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও দেখা দেয়। যেমন— সবসময় তন্দ্রাভাব আসা, হঠাৎ মাথা ঘোরানো, বমি বমি ভাব করা অথবা ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা প্রভৃতি। যে সব ব্যক্তি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত বা যাদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে, তারা এই ভেষজ সেবনের ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

থানকুনি পাতা খাওয়ার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

শেষ কথা, Conclusion 

থানকুনি পাতার রোগ নিরাময়কারী ক্ষমতার উপর আমাদের দেশের মানুষের আস্থা সুপ্রাচীন। বহুযুগ ধরে এদেশের মানুষ মহা ঔষধ রূপে থানকুনি পাতাকে ব্যবহার করে আসছে। আয়ুর্বেদের মত অনুযায়ী থানকুনি পাতা রসায়ন গুণসম্পন্ন। সকাল-সকাল উঠে খালি পেটে থানকুনি পাতার রস খেলে যেমন উপকার পাওয়া যায়, তেমনই কাঁচা থানকুনি পাতা চিবিয়ে খেলেও সমান উপকার পাওয়া যায়। ইচ্ছে হলে খেতে পারেন থানকুনি পাতার পেস্ট অথবা বড়াও। অনেকেরই এই ভেষজ পাতা রোজ সকালে খাওয়ার অভ্যাস রয়েছে, তবে যারা এমন টা করেন না, তারা আজকে থেকেই প্রতিদিন খালি পেটে এই পাতা খাওয়া শুরু করুন।

Viral Telegram Channel 🔥

Recent Posts

link to রাজনীতিবিদদের বিখ্যাত উক্তি ও বাণী, Best quotation and sayings of Politicians in Bengali

রাজনীতিবিদদের বিখ্যাত উক্তি ও বাণী, Best quotation and sayings of Politicians in Bengali

আমাদের আজকের এই পোস্টটিতে আমরা রাজনীতিবিদদের বিখ্যাত কিছু বাণী তুলে ধরব।...