ভূমিকা, Introduction
“আয় আয় চাঁদ মামা
টিপ দিয়ে যা
চাঁদের কপালে চাঁদ
টিপ দিয়ে যা।” —শিশুদের মন ভোলানাে ছড়াটির চাঁদমামা আমাদের কাছে আসতে না পারলেও আমরা চেষ্টা করলে চাঁদে পৌঁছে যেতে পারি, কেননা ভারতীয় মহাকাশ গবেষণায় এক অভিনব মাইলফলক হিসেবে ভারতীয় ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছে চন্দ্রযান-২।
ISRO -এর পরিকল্পনা, Plans of ISRO
ইসরাে( ISRO) দ্বারা পরিচালিত চন্দ্রযান-২ এর অভিযান চাঁদে একটি ভূস্থিত উপগ্রহ উৎক্ষেপণ যান পাঠানাের পরিকল্পনা করেছিল। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে চন্দ্রযান-২ এর ল্যান্ডারটি পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ চাঁদের মাটিতে নামার কথা ছিল। তবে শেষ মুহূর্তে কোনো এক যান্ত্রিক গােলযােগের কারণে ল্যান্ডার থেকে চন্দ্রযান বিক্রম বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল।
তবে বিক্রমের আংশিক সাফল্যও যে ISRO কে গর্বিত করেছিল, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই, এর কারণ হল চন্দ্রযান-এর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলেও এর অরবিটর এখনও সক্রিয় আছে বলেই বিজ্ঞানীরা জানিয়েছিলেন।
বাংলার ঋতুবৈচিত্র্য, Seasonal diversity of Bengal, Best details in Bengali
চন্দ্রযান-১ সম্পর্কে কিছু তথ্য, Some information about Chandrayaan-1
২০০৮ সালের ২২ শে অক্টোবরে চন্দ্রযান-১ এর সফল অভিযান হয়েছিল। ১৪ই নভেম্বর রাত ৮ টা ৬ মিনিটে চাঁদের কক্ষপথে ভ্রাম্যমান চন্দ্রযান থেকে মুন ইমপ্যাক্ট পােবটি পৃথক হয়ে যায় এবং চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে সফলভাবে অবতরণ করেছিল। এই অভিযানটি চাঁদের মাটিতে জলের উপস্থিতি আছে কি না তার পরীক্ষা করার ক্ষেত্রে ছিল তাৎপর্যপূর্ণ।
চন্দ্রযান-২ প্রকল্প, Chandrayaan-2 project
ইসরাে থেকে পাওয়া বিভিন্ন তথ্য অনুযায়ী চন্দ্রযান-২ এর অভিযানটিতে বিভিন্ন প্রযুক্তির ব্যবহার এবং নানা রকম পরীক্ষা নিরীক্ষা করার পরই অভিযান শুরু করা হয়েছিল।
এই যানের সুবিধার্থে চাকাযুক্ত রােভার তৈরি করা হয়, যায় সাহায্যে চন্দ্রপৃষ্ঠে চলাফেরা সহজ হবে। উক্ত রােভার সকল প্রকার তথ্য চাঁদের কক্ষপথে থাকা চন্দ্রযান-২-এর মধ্য দিয়ে পৃথিবীতে পাঠিয়ে দেবে, যার পিকব্যাক একই উৎক্ষেপনে হয়ে যাবে।
২০০৭ সালের ১২ নভেম্বর তারিখটিতে ISRO এবং রাশিয়ান ফেডারেল স্পেস এজেন্সি( RFSA) নামক দুই মহাকাশ গবেষণা সংস্থা উক্ত চন্দ্রযান-২ এর প্রকল্পে একসাথে কাজ করার উদ্দেশ্যে চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল। ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র ISRO এর পক্ষ থেকে বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে জানানো হয়েছিল যে এই চন্দ্রাভিযান সফল করার লক্ষ্যে ১০০০ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে।
বাঙালীর উৎসব নিয়ে সেরা রচনা, Best composition on Bengali festivals in Bengali
চন্দ্রযান ২ অভিযানের উদ্দেশ্য, Objective of Chandrayaan 2 mission
চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে ISRO এর অভিযান করার কারণ হল—
(১) যেহেতু চাঁদের গর্তগুলিতে কয়েকশাে কোটি বছর যাবত সূর্যের আলাে পড়েনি, সেজন্য সৌরজগতের সৃষ্টি সম্পর্কে নানা তথ্য পাওয়ার সম্ভাবনা।
(২) চাঁদের গর্তগুলি সর্বদা ছায়ায় আছে বলে সেখানে ১০০ মিলিয়ন টন পরিমাণ জল থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
(৩) জলের পাশাপাশি সেখানে থাকতে পারে হাইড্রোজেন, মিথেন, মার্কারি, অ্যামােনিয়া, সােডিয়াম, তথা সিলভারের বিশাল ভাণ্ডার।
(৪) চাঁদের মাটিকে ভবিষ্যত সময়ে মহাকাশ অভিযানের ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করার পরিকল্পনা রয়েছে।
চন্দ্রযান-২ এর প্রেক্ষাপট, Background of Chandrayaan-2
চন্দ্রযান-২ -এর পােশাকী নাম রাখা হয় বাহুবলী। প্রথমে ২০১৯ সালের ১৫ জুলাই এবং পরে ২২ জুলাই চন্দ্রযানের উৎক্ষেপনের কথা ছিল, কিন্তু উৎক্ষেপনের ঠিক এক ঘন্টা আগে কিছু যান্ত্রিক ত্রুটি ধরা পড়েছিল। সেই রকেটের এক ভাল্ব থেকে হিলিয়াম গ্যাস নির্গত হচ্ছিল। এক্ষেত্রে বিজ্ঞানীরা কোনোও ধরনের ঝুঁকি নিতে চাননি।
তাই এই যানের উৎক্ষেপণ সফলভাবে হয়েছিল এবং এর ফলে ভারতীয় স্পেস রিসার্চ প্রােগ্রাম একদিকে যেমন বেশ কয়েক কদম এগিয়ে গিয়েছিল,
তেমনি বিশ্বের অনেক দেশকে স্পেস রিসার্চের ক্ষেত্রে ভারত নিজের পিছনে ফেলে দেয়। আমেরিকা, রাশিয়া এবং চীনের পর চতুর্থ দেশ হিসেবে চাঁদের মাটিতে মুন রােভার্স নামিয়ে ভারত সাফল্য অর্জন করে।
ছাত্রজীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য, Responsibilities and duties of student life in Bengali
প্রযুক্তিগত দিক, Technical aspects
জঙ্গলের হিংস্র জন্তু-জানােয়ারদের চিন্তা না করেই বিভূতিভূষণের কাল্পনিক চরিত্র শঙ্কর হীরের খোঁজে আফ্রিকার চাঁদের পাহাড়ে পাড়ি দিয়েছিলেন, এমন ভাবেই সােনায় মুড়ে প্রায় চার লক্ষ কিমি. দূরে পাড়ি দিতে উৎক্ষেপণ করা হয় ভারতের চন্দ্রযান-২। বিক্রম ও প্রজ্ঞানকে সচল রাখার জন্য তথা সূর্যের বিকিরণ থেকে রক্ষা করার জন্য সোনায় মোড়ানোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়, তা না হলে যন্ত্রগুলি মহাজাগতিক রশ্মির ঝড়-ঝাপটায় গরম হয়ে ক্রমে বিকল হয়ে পড়বে।
গতিপথ, Trajectory
ISRO এর চেয়ারম্যান জানিয়েছিলেন যে চাঁদকে প্রদক্ষিণের জন্য ধীরে ধীরে এর কৌণিক অবস্থানকে ৯০ ডিগ্রিতে নেওয়া হবে এবং এই চন্দ্রযান-২-কে ক্রমে পাঁচটি কক্ষপথে ঘােরাতে হবে। এই অভিযানে চাঁদকে প্রদক্ষিণ করার প্রথম তিনটি কক্ষপথ হবে উপবৃত্তাকার, অর্থাৎ ডিমের মতাে। শেষ দুটো কক্ষপথগুলো হবে বৃত্তাকার। ২০১৯ সালের ২রা সেপ্টেম্বর চন্দ্রযান-২ থেকে চাঁদের কক্ষপথেই আলাদা হবে ল্যান্ডার বিক্রম।
ইউনিক বিজনেস আইডিয়ার হদিস, Best and unique business ideas in Bengali
চন্দ্রযান-২ অভিযান প্রকল্পের সাথে যুক্ত ব্যক্তিগণের তালিকা, List of people associated with the Chandrayaan-2 Abhiyan project
নিম্ন তালিকায় চন্দ্রযান-২ প্রকল্পের উন্নয়নের মূল চালিকা শক্তি হিসেবে যুক্ত বিজ্ঞানী এবং ইঞ্জিনিয়ারদের নাম তালিকাবদ্ধ করা হয়েছে :
● মাইলসওয়ামী অন্নদুরাই – প্রকল্প পরিচালক, চন্দ্রযান-২।
● রিতু কারিধল – মিশন পরিচালক, চন্দ্রযান-২।
● মুথাইয়া ভনিথা – প্রকল্প পরিচালক, চন্দ্রযান-২।
● চন্দ্রকান্ত কুমার – উপ-প্রকল্প পরিচালক (রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবস্থা), চন্দ্রযান-২।
● অমিতাভ সিং – উপ-প্রকল্প পরিচালক (অপটিক্যাল পেইলোড ডেটা প্রসেসিং, এসএসি), চন্দ্রযান-২।
চন্দ্রযান-২ সফল না ব্যর্থ, Chandrayaan-2 is a success or a failure
চাঁদে জলের অস্তিত্বের খোঁজ দিয়েছিল ‘ব্যর্থ’ চন্দ্রযান-২। বলতে গেলে চাঁদের পৃষ্ঠে হাইড্রক্সিল এবং জলের অনুর সন্ধান দিয়ে চন্দ্রযান ২ দারুণ কৃতিত্ব অর্জন করেছে। প্রসঙ্গত বলতে হয়, ISRO এর চন্দ্রযান ২ সফলভাবে চাঁদের মাটিতে অবতরণ না করতে পারলেও সেই মহাকাশযানের অরবিটারটি চাঁদকে ঘিরে নিজ পথে চক্কর কাটছিল, আর সেই দিক থেকেই ইসরোর বিজ্ঞানীরা তাদের এই অভিযানের কিছুটা হলেও সুফল পেয়েছেন।
ইসরোর বিজ্ঞানীরা পরবর্তীতে জানিয়েছিলেন যে, অরবিটারের থাকা ইনফ্রারেড স্পেকট্রোমিটার চন্দ্রযান ২ এর পর্যবেক্ষণকালে চাঁদের ইলেকট্রোম্যাগনেটিক স্পেকট্রাম বিশ্লেষণ করেছিল। এতে চন্দ্রপৃষ্ঠের মধ্যে কত পরিমাণ ধাতু রয়েছে, তা পরীক্ষা করার সময় হাইড্রক্লিল এবং জলের অনুর সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল। যদিও ২০১৯ সালের অভিযানে গতির সমস্যায় চাঁদে অবতরণ করার সময়ে ল্যান্ডার বিক্রম ভেঙে পড়ে, কিন্ত মহাকাশযানটির সাথে পাঠানো অরবিটার ঠিক থাকায় এই অভিযানটি ৯৫ শতাংশ সফল ছিল বলে বিজ্ঞানীদের ধারণা।
ওয়ার্ডপ্রেস সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য, Best ever detailed study about wordpress in Bengali
চাঁদে অবতরণ সম্পর্কে ভবিষ্যত সম্ভাবনা, Future prospects about the moon landing
ISRO এর বিজ্ঞানীরা মনে করছেন যে, উপগ্রহ চাঁদ পৃথিবীতে শক্তির চাহিদা মেটাতে পারবে, এছাড়া শক্তির প্রয়ােজন মেটানোর জন্য কয়লা বা কোনো রকম প্রাকৃতিক গ্যাসও প্রয়োজন হবে না।
চাঁদের শক্তি পৃথিবীর উষ্ণায়ন সম্পর্কিত বিভিন্ন বিপদ থেকে রক্ষা করবে বলে বিজ্ঞানীদের ধারণা, এমনকি পৃথিবীর যাবতীয় শক্তির চাহিদা আগামী ৩০ বছরের মধ্যেই চাঁদ মেটাতে পারবে বলে মনে করছেন তারা।
এমন চিন্তার কারণ হল পৃথিবীতে ৫ হাজার কিগ্রা. ওজনের কয়লা পােড়ালে পরে যতটুকু শক্তি উৎপাদিত হয়, মাত্র ৪০ গ্রাম হিলিয়াম-৩ মৌল থেকে চাঁদে তৈরি হতে পারে ততটা পরিমাণ শক্তিই। সূর্যের হিলিয়াম-৩ মৌলটি পৃথিবীর পুরু বায়ুমণ্ডলে বাধা প্রাপ্ত হয়, ফলে তা আর ভূপৃষ্ঠে পৌঁছতে পারে না।
অন্যদিকে চাঁদে বায়ুমণ্ডল না থাকার কারণে সূর্য থেকে বিকিরিত হিলিয়াম-৩ মৌল চাঁদের পৃষ্ঠে অবিকৃতই থেকে যায়। বিজ্ঞানীদের মতে গামা রে-সহ নানা ধরনের বিষাক্ত বিকিরণ থেকে বাঁচতে হলে চাঁদের পিঠ থেকে প্রায় দেড় মিটার গভীরে কলােনি তৈরি করা যায়, যার সাহায্যে সৌরশক্তি টেনে নেওয়ার জন্য সােলার সেলগুলি বসিয়ে রেখে দেওয়া হবে।
তাছাড়াও বিভিন্ন তথ্য থেকে জানা গেছে যে, চাঁদে বাড়ি বানানাে যাবে যেখানে কোনো ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস নেই।
- গুপ্তমুদ্রা বা ক্রিপ্টোকারেন্সি, Best details on Cryptocurrency in Bengali
- আউটসোর্সিং ও ফ্রিল্যান্সিং, Best write-up on Outsourcing and freelancing in Bengali
- মোবাইল ব্যাংকিং, Know in detail about Mobile banking in Bengali
- সাইবার অপরাধ বা সাইবার ক্রাইম, Best write-up on Cyber crime in Bengali
- ই-লার্নিং ও আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা, Know what is e-learning in Bengali
উপসংহার, Conclusion
চাঁদকে ছাদ থেকে খালি চোখে দেখা যায়, তবে তাকে অনেকেই প্রাণহীন মনে করে, কিন্তু তা একদিন মিথ্যা বলে প্রমাণিত হবে। যদিও চন্দ্রযান বিক্রম শেষমুহূর্তে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল, তাও ইসরাের বিজ্ঞানীরা মনে করেন যে ৯০-৯৫ শতাংশ সাফল্য প্রাপ্তি হয়েছে।
মনসা মঙ্গলের চাঁদ সদাগর যেমন বাণিজ্য করতে গিয়েছিলেন অর্থের সন্ধানে ঠিক সেরকমই চন্দ্রযান-২ একটি যন্ত্র হলেও এক নতুন জগতের শক্তিসন্ধানকারী নাবিক হিসেবে একালের চাঁদ সদাগর ছিল।