বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের জন্মদিন, বাণী ও বার্তা, Bankim Chandra Chattopadhyay quotes in Bengali 


বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বাংলা সাহিত্যের অন্যতম মহান সাহিত্যিক। তাঁর জন্ম হয় ১৩ আষাঢ় ১২৪৫ বঙ্গাব্দের ভারতের নদীয়া জেলার কাঁকুড়গাছি গ্রামে। তাঁর বাবার নাম যাদবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ও মাতার নাম দুর্গাসুন্দরী দেবী। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা বাংলা সাহিত্যে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। তার রচনাবলীর মধ্যে রয়েছে কাব্য, উপন্যাস, প্রবন্ধ এবং গান ইত্যাদি। তিনি ছিলেন একজন অগ্রগামী সাহিত্যিক, যিনি তাঁর রচনার মাধ্যমে ভারতের জাতীয় ঐক্য, সমাজের শোষিত অবস্থা এবং ভারতীয় সংস্কৃতির মহত্ত্ব তুলে ধরেছেন।

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের জন্মদিন, বাণী ও বার্তা

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সাহিত্যজীবন

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সাহিত্যজীবন শুরু হয় তাঁর পিতা রামনাথ চট্টোপাধ্যায়ের অধীনে। তিনি প্রথমে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন এবং পরবর্তীতে সরকারি চাকরি গ্রহণ করেন। তবে তাঁর সাহিত্যিক জীবনের উত্থান ঘটেছিল কাব্য রচনার মাধ্যমে। তিনি তাঁর প্রথম কবিতা ১৮৫৭ সালে প্রকাশিত করেছিলেন। তাঁর লেখা অন্যতম জনপ্রিয় মহাকাব্য হল  “কৃষ্ণকান্তের উইল” এবং “আনন্দমঠ”। এছাড়াও তিনি দুর্গেশনন্দিনী, কপালকুণ্ডলা, মৃণালিনী, বিষবৃক্ষ, দেবী চৌধুরানী এর মতো বিখ্যাত উপন্যাস লিখেছেন।

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সাহিত্যজীবন শুরু হয় তাঁর পিতা রামনাথ চট্টোপাধ্যায়ের অধীনে।

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের পড়াশোনা শুরু হয় মেদিনীপুরে তারপর তিনি হুগলির মহসীন কলেজে পড়াশোনা করেন। এই কলেজ থেকে তিনি ইংরেজি ও বাংলা দুটো বিষয় নিয়েই শিক্ষা লাভ করেন। এরপর তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি. এ পাশ করেন।  

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের “বন্দে মাতরম”

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সবচেয়ে পরিচিত রচনা “বন্দে মাতরম” গানটি। তিনি ১৮৭০ সালে এই গানটি রচনা করেন। এটি ভারতের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে পরিগণিত হয় এবং স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। “বন্দে মাতরম” এর মাধ্যমে তিনি দেশপ্রেম ও মুক্তির সংকল্পে জাতিকে উদ্বুদ্ধ করেন। তিনি সাহিত্য সম্রাট হিসেবেও পরিচিত।

বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাসগুলির একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হল সেগুলোতে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট, সামাজিক সমস্যা, রোমান্টিক উপাদান, এবং নৈতিক ও ধর্মীয় আদর্শ সবকিছুরই মিশ্রণ পাওয়া যায়।

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের "বন্দে মাতরম"

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের শেষ লেখা উপন্যাস হল সীতারাম।

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের জন্মদিন, বাণী ও বার্তা সংক্রান্ত আমাদের আজকের এই পোস্টটি ভালো লেগে থাকলে আশা করি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেরা রসিকতার কিছু অজানা কাহিনী সম্পর্কিত আমাদের এই পোস্টটি ও আপনার মনের মতন হবে।

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যু

২৬ চৈত্র ১৩০০ বঙ্গাব্দে তাঁর মৃত্যু হয় কলকাতায়।

আজ তাঁর জন্মদিনের দিনে তাঁকে শ্রদ্ধা জানিয়ে তাঁর কয়েকটি বাণী ও বার্তা পরিবেশন করবো।

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সেরা বাণী, Bankim Chandra Chattopadhyay best quotes 

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সেরা বাণী 1
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সেরা বাণী 2
  • কতকগুলি লোক আছে, এদেশের লোক তাহাদের বর্ণনার সময় বলে, “ইহারা কুকুর মারে, কিন্তু হাঁড়ি ফেলে না৷”
  • যে ক্ষুধার্ত নয়, তাকেই বেশি করে খাওয়াতে চায়।
  • সংসার-সমুদ্রে স্ত্রীলোক তরণী স্বরুপ- সকলেরই এই আশ্রয় গ্রহন করা কর্তব্য।
  • আত্মোপকারীকে বনবাসে বিসর্জন করা তাহাদিগের প্রকৃতি, তাহারা চিরকাল আত্মোপকারীকে বনবাস দিবে–কিন্তু যত বার বনবাসিত করুক না কেন, পরের কাষ্ঠাহরণ করা যাহার স্বভাব, সে পুনর্বার পরের কাষ্ঠাহরণে যাইবে। তুমি অধম–তাই বলিয়া আমি উত্তম না হইব কেন?
  • যে কখনো রোদন করে নাই, সে মনুষ্য মধ্যে অধম। তাহাকে কখনও বিশ্বাস করিও না। নিশ্চিত জানিও সে পৃথিবীর সুখ কখনো ভোগ করে নাই। এর সুখও তাহার সহ্য হয় না।
  • পাহাড় যত নিকট দেখায়, তত নিকট নয়।
  • ওপারে যে যন্ত্রণার কথা শুনিতে পাও, সে আমরা এই পার হইতে সঙ্গে করিয়া লইয়া যাই। আমাদের এ জন্মের সঞ্চিত পাপগুলি আমরা গাঁটরি বাঁধিয়া, বৈতরিণীর সেই ক্ষেয়ারীর ক্ষেয়ায় বোঝাই দিয়া, বিনা কড়িতে পার করিয়া লইয়া যাই। পরে যমালয়ে গিয়া গাঁটরি খুলিয়া ধীরে সুস্থে সেই ঐশ্বর্য্য একা একা ভোগ করি।
  • স্ত্রীলোকদিগের উপর যেমন কঠিন শাসন, পুরুষের উপর তেমন কিছু নেই। কথায় কিছু হয় না, ভ্রষ্ট পুরুষের কোন সামাজিক দণ্ড নেই। একজন স্ত্রী সতীত্ব সম্বন্ধে কোন দোষ করিলে সে আর মুখ দেখাইতে পারে না। হয়তো আত্মীয় স্বজন তাকে বিষ প্রদান করেন, আর একজন পুরুষ প্রকাশ্যে সেই সব কাজ করিয়া রোশনাই করিয়া জুড়ি হাকাইয়া রাত্রিশেষে পত্নীকে চরণরেণু স্পর্শ করাইয়া আসেন, পত্নী পুলকিত হয়েন।
  • বই পড়াই জীবনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ আনন্দ।
  • সমাজের উন্নতির জন্য সবার অবদান প্রয়োজন।
  • সমাজে ন্যায় প্রতিষ্ঠা করা উচিত।
  • সমাজের উন্নতির জন্য শিক্ষার প্রসার করা উচিত।
  • সমাজে সৎ মানুষের কদর করা উচিত।
  • সমাজে সমতা থাকা উচিত।
  • মরিলে যদি রণজয় হইত,তবে মরিতাম। বৃথা মৃত্যু বীরের ধর্ম নহে।
  • আমরা সকলেই স্বার্থাভিলাষী। লেখক মাত্রই যশের অভিলাষী। যশ, সুশিক্ষিতের মুখে। অন্যে সদসত্ বিচারক্ষম নহে। তাহাদের নিকট যশ হইলে তাহাতে রচনার পরিশ্রমের সার্থকতা বোধ হয় না। সুশিক্ষিতে না-পড়িলে সুশিক্ষিত ব্যক্তি লিখিবে না।
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সেরা বাণী 3
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সেরা বাণী 4

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সেরা উক্তি, Bankim Chandra Chattopadhyay quotes 

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সেরা বাণী 5
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সেরা বাণী 6
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সেরা বাণী 7
  • সমাজে নারীর অবস্থান উন্নত করা উচিত।
  • যে সমাজে অন্যায়ের বিরুদ্ধে কেউ দাঁড়ায় না, সে সমাজ ধ্বংস হয়।
  • যাকে ভালবাস তাকে চোখের আড়াল করোনা।
  • কুসুম আপনার জন্য ফোটে না, পরের জন্য তোমার হৃদয় কুসুমটিকে প্রস্ফুটিত করিও।
  • যাহার ঘরে চাকরানী নাই তাহার ঘরে ঠকামি, মিথ্যা সংবাদ, কোন্দল এবং ময়লা, এই চারটি বস্তু নাই।
  • সুখ যায় স্মৃতি যায় না, ক্ষত ভাল হয় দাগ ভাল হয় না, মানুষ যায় নাম থাকে।
  • রূপে মুগ্ধ, কে কার নয়। আমি এই হরিতনীল চিএিত প্রজাপতিটির রূপে মুগ্ধ। তুমি কুসুমতি কামীনি শাখার রূপে মুগ্ধ। তাতে দোষ কি? রূপত মোহের জন্য হইয়া ছিল।
  • বাঘ গরু মারে সকল গরু খায় না। স্ত্রীলোক পুরুষ কে জয় করে কেবল জয় পতাকা উড়াইবার জন্য।
  • এ সংসারে বিশেষ দুঃখ এই যে মরিবার সময়ে কেহ মরে না। অসময়ে সবাই মরে।
  • আমার এমন গুন নাই যাহাতে আমায় তুমি ক্ষমা করিতে পার কিন্তু তোমার ত অনেক গুন আছে , তুমি নিজ গুনে আমায় ক্ষমা কর।
  • এ পৃথিবীর সুখ নহে সুখ ও দুঃখময়, কোন সুখেই সুখ নাই কোন সুখই সম্পূর্ণ নহে।
  • পথিক, তুমি পথ হারাইয়াছো?
  • যে ব্যক্তি সত্যিকারের মুক্তি চায়, তাকে ত্যাগ শিখতে হবে।
  • অন্যায়ের প্রতিবাদ না করাও অন্যায়।
  • সমাজের উন্নতির জন্য শিক্ষার প্রয়োজন।

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের জন্মদিন, বাণী ও বার্তা সংক্রান্ত আমাদের আজকের এই পোস্টটি ভালো লেগে থাকলে আশা করি বুদ্ধদেব বসুর জীবনী ও সাহিত্যকর্ম সম্পর্কিত আমাদের এই পোস্টটি ও আপনার মনের মতন হবে।

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সেরা বাণী 8

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সেরা বার্তা, Bankim Chandra Chattopadhyay sera barta

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সেরা বাণী 9
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সেরা বাণী 10
  • অর্থই একমাত্র সত্য, বাকি সব মিথ্যা।
  • মানুষের জীবনে চিরকাল শুধুমাত্র সংগ্রাম।
  • আশা করাই জীবনের সর্বাপেক্ষা বড় মিথ্যা।
  • সময় একমাত্র এমন ধন যা ফেরত পাওয়া যায় না।
  • যতই পাণ্ডিত্যের অহঙ্কার করো, জীবন সবার জন্যই একই।
  • আমাদের জীবনে যা কিছু ঘটে, তা সবই শিক্ষার অংশ।
  • মানুষ কখনও পূর্ণতা পায় না, তবে চেষ্টা করতেই হয়।
  • মৃত্যুই জীবনের একমাত্র নির্ভরযোগ্য সত্য।
  • যা কিছু পাও, তাই নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হবে।
  • জীবন একটি পরীক্ষামূলক ক্ষেত্র।
  • সুখ ও দুঃখ দুইই জীবনের অংশ।
  • প্রত্যেক মানুষ তার নিজের সৃষ্টির ফল ভোগ করে।
  • প্রত্যেকের জীবনে কোনো না কোনো দুঃখ থাকে।
  • সত্যই সর্বাপেক্ষা বড় ধর্ম।
  • অপেক্ষাই জীবনের একমাত্র ধারাবাহিকতা।
  • সমাজের প্রতি দায়িত্ব পালন করা প্রতিটি মানুষের কর্তব্য।
  • যে সমাজে ন্যায় নেই, সে সমাজ ধ্বংসের পথে।

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রেম নিয়ে উক্তি, Bankim Chandra Chattopadhyay love quotes 

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সেরা বাণী 11
  • ভালোবাসা হলো জীবনের সবচেয়ে বড় আশীর্বাদ।
  • প্রেমে শুধু আনন্দ নয়, কষ্টও থাকে।
  • যে প্রেমে ত্যাগ নেই, সে প্রেম অপূর্ণ।
  • প্রেমের কোনো সীমা নেই, সে নিরবচ্ছিন্ন।
  • প্রেমের প্রকৃত রূপ হলো ত্যাগ।
  • প্রেমে কোনো শর্ত থাকে না।
  • প্রেম হলো জীবনের সবচেয়ে বড় শিক্ষা।
  • প্রেমের সাথে সম্পর্কের গভীরতা বৃদ্ধি পায়।
  • প্রেম মানুষকে পরিবর্তন করতে পারে।
  • যে প্রেমে বন্ধুত্ব নেই, সে প্রেম স্থায়ী হয় না।
  • প্রেম হল জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান ধন।
  • প্রেম ছাড়া জীবন অপূর্ণ।
  • প্রেমে দয়া এবং সহানুভূতির প্রয়োজন।
  • প্রেমের মাধ্যমে মানুষ নিজেকে আবিষ্কার করে।
  • প্রেম হলো জীবনের সবচেয়ে বড় শক্তি।
  • প্রেমের মাধ্যমে সম্পর্কের বন্ধন দৃঢ় হয়।
  • প্রেম মানুষকে মহৎ করে তোলে।

উপসংহার 

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় শুধু সাহিত্যিক ছিলেন না, তিনি একজন সমাজ সংস্কারকও ছিলেন। তিনি সবসময় তাঁর রচনায় জাতীয়তাবাদ, ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং মানবাধিকারের উপর গুরুত্ব দিয়েছিলেন। তিনি ভারতীয় সমাজের দুর্দশা ও শোষণের বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি করতে চেয়েছিলেন তাই তিনি তাঁর লেখার মাধ্যমে জনগণের মধ্যে সচেতনতা ও প্রতিবাদের আগুন জ্বালিয়েছিলেন। 

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখায় যেমন ছিল বাংলা ভাষার সৌন্দর্য তেমনি ছিল গভীরতা। তিনি তাঁর লেখনির মাধ্যমে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে বিশ্বের দরবারে একটি নতুন পরিচয় দিতে সক্ষম হয়েছিলেন। বঙ্কিমচন্দ্রের জন্মদিন আমাদের আজও তাঁর অবদানকে মনে করিয়ে দেয়। তাঁর লেখা আমাদের দেশের স্বাধীনতার সংগ্রামের ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং ভাষার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা তৈরি করে। 

আশা করছি আমাদের এই প্রতিবেদনটি আপনাদের পছন্দ হবে। যদি পছন্দ হয় তাহলে এই পোস্টটি আপনি আপনাদের বন্ধু, আত্মীয় স্বজন ও চেনা পরিচিতদের সঙ্গে শেয়ার করে নিতে পারেন। 


Recent Posts