টমাস আলভা এডিসন এর জীবনী, Best Biography of Thomas Alva Edison in Bengali


আমরা আজ বাড়িতে যে লাইট বাল্বের আলোয় দৈনন্দিন কাজগুলো করতে পারছি, সেই বাল্বের আবিষ্কর্তা ছিলেন থমাস আলভা এডিসন। বলতে গেলে তাঁর দৌলতেই গোটা মানবজাতি আজ বৈদ্যুতিক বাল্বের আলোর বিভিন্নভাবে ব্যবহার করতে পারছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ইতিহাসে টমাস আলভা এডিসন খুব গুরুত্বপূর্ণ এক নাম।

টমাস আলভা এডিসন এর জীবনী

টমাস আলভা এডিসনকে অনেকে ‘ আবিষ্কারের মেশিন ‘ বলে সম্বোধন করেন। তিনি নিজের নামে সহস্রাধিক ছোট-বড় আবিষ্কারের জন্য পেটেন্ট নিয়েছিলেন৷ আজ আমরা এই মহান বিজ্ঞানীর জীবনের বিভিন্ন অভিজ্ঞতা সম্পর্কে তুলে ধরার চেষ্টা করবো।

টমাস আলভা এডিসন কে? Who was Thomas Alva Edison?

ছোটবেলায় পাঠ্য পুস্তকে আমরা টমাস আলভা এডিসন এর নাম অনেকবার পড়েছি, তার বিভিন্ন আবিষ্কারের উল্লেখও পেয়েছি, তাই বলা যায় যে এই নামের সাথে আমরা অপরিচিত নয়। তিনি ছিলেন একজন মার্কিন উদ্ভাবক তথা ব্যবসায়ী। তাঁর ঝুলিতে বিভিন্ন জিনিস আবিষ্কারের পেটেন্ট আছে, যে জিনিসগুলো বিংশ শতাব্দীর জীবনযাত্রায় ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে, যেমন গ্রামোফোন, ভিডিও ক্যামেরা এবং বৈদ্যুতিক বাল্ব, ইত্যাদি সহ আরো বহু যন্ত্র।

সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়ের জীবনী, Best biography of renouned author Sanjib Chattopadhyay in Bengali  

টমাস আলভা এডিসন কে

বিজ্ঞানী এডিসনের জন্ম ও পিতামাতার পরিচয়, Birth and Family identity

 টমাস আলভা এডিসনের জন্ম হয় ১৮৪৭ সালে, তিনি মিলান ওহাইওতে জন্মগ্রহণ করেন। তবে এডিসনের শৈশবের বেশিরভাগ সময় কেটেছিল মিশিগানের পোর্ট হুরনে, তিনি সেখানেই বেড়ে উঠেন, কারণ ১৮৫৪ সালে তাঁর পরিবার সেখানে স্থানান্তরিত হয়ে গিয়েছিলেন। এডিসন স্যামুয়েল ওগডেন এডিসন জুনিয়রের সপ্তম তথা শেষ সন্তান ছিলেন এবং তাঁর মায়ের নাম ছিল ন্যান্সি ম্যাথিউজ এলিয়ট।

শৈশবে নিজের পরীক্ষাগার তৈরি, Edison built his own laboratory in childhood

এডিসনের বয়স যখন সাত বছর ছিল তখনই তিনি নিজে একটি পরীক্ষাগার তৈরি করে ফেলেন, সেখানে তিনি বিভিন্ন জিনিস দিয়ে ভিন্ন ভিন্ন গাছের পাতা জলে মিশিয়ে আবার সেই দ্রবণগুলোকে একসাথে একটি পাত্রে নিয়ে দেখতেন যে এর রং বদলায় কিনা। দরিদ্র পরিবারের সন্তান এডিসন কিশোর বয়স থেকেই উপার্জনের উদ্দেশ্যে ঘোড়ার গাড়ি চালাতেন এবং বাজারে সবজি বিক্রির কাজ করতেন। কিন্তু এসব থেকে যা টাকা আয় হতো তার মধ্যে বেশিরভাগটাই পরীক্ষামূলক রাসায়নিক দ্রব্যগুলো কেনার জন্য খরচ হয়ে যেতো। 

হোমি জাহাঙ্গীর ভাভা- নিউক্লীয় পদার্থবিজ্ঞানী, Best Biography of Homi J. Bhabha in Bengali

শৈশবে নিজের পরীক্ষাগার তৈরি

এডিসন এর একের পর এক আবিষ্কার, Edison’s inventions

থমাস আলভা এডিসনের বয়স যখন সতেরো বছর ছিল তখন তিনি সামান্য মাইনের একটা চাকরিতে যোগ দেন । তখনকার সময়ে টেলিগ্রাফ অফিস থেকে একসাথে একটির বেশি সঙ্কেত পাঠানো সম্ভব ছিল না। এটা দেখে এডিসনের মনে হলো যে বিদ্যুতের সহায়তায় হয়তো একই সঙ্গে অনেকগুলো টেলিগ্রাফ সঙ্কেত পাঠানো যাবে। এর মাত্র ৩০ বছর আগেই মাইকেল ফ্যারাডে তড়িৎ বিজ্ঞানের জন্ম দেন, অর্থাৎ বিদ্যুৎ উৎপাদন পদ্ধতি আবিষ্কার করেছিলেন। এই বিষয় নিয়ে ফ্যারাডের লেখা বইটি এডিসন ভালোভাবে পড়ে নিয়েছিলেন। এরপর শুরু করেন নিজের আবিষ্কার মূলক কার্যকলাপ।

এডিসন এর একের পর এক আবিষ্কার

টেলিগ্রাফ, Telegraph

এডিসন নিজের বাড়িতেই টেলিগ্রাফের সাথে বিদ্যুতের ব্যবহার নিয়ে বিভিন্নভাবে পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে শুরু করেন। তখনকার সময়ে ব্যাটারী খুব একটা বেশি কিনতে পাওয়া যেত না, সেজন্য তিনি নিজেই এক ব্যাটারী তৈরি করে নিয়েছিলেন। কয়েক মাস যেতে না যেতেই এডিসন একটা টেলিগ্রাফ যন্ত্র তৈরি করে ফেলেন যার মাধ্যমে একই সঙ্গে অনেকগুলো সঙ্কেত পাঠানো সম্ভব হয়ে ওঠে।

কিন্তু তৎক্ষণাৎ টমাস আলভা এডিসন তার আবিষ্কারটি প্রকাশ করলেন না, কারণ , দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করে তিনি ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন । তাই টমাস আলভা এডিসন চেয়েছিলেন এই আবিষ্কারটি বিক্রি করে তিনি বড়ো অঙ্কের অর্থ লাভ করবেন ৷ তখন আমেরিকার সবচেয়ে বড় টেলিগ্রাফ কোম্পানি ছিলো ‘ গোল্ড ইনডিকেটর টেলিগ্রাফ ‘ কোম্পানি । সেখানে গিয়ে প্রস্তাবটি রাখতে না রাখতেই পেলেন অপ্রত্যাশিত প্রতিদান । কোম্পানি এডিসনকে দিলো চল্লিশ হাজার ডলার ।

১৮৭০ সালে এই টাকার মূল্য যে কতো ছিল সেটা বুঝিয়ে বলা যাবে না । এই অর্থ নিয়ে টমাস আলভা এডিসন নিউইয়র্ক থেকে ৪০ মাইল দূরে মেনলো পার্ক নামক জায়গায় বিশাল এক কারখানা খুলে ফেললেন । সেই কারখানার শ্রমিক ছিল একশ’রও বেশি । তৈরি হতো টেলিগ্রাম যন্ত্রের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ ৷ 

বিক্রম সারাভাইয়ের জীবনী, Best Biography of Vikram Sarabhai in Bengali

ফোনোগ্রাফ, Phonograph

 এভাবে টমাস আলভা কারখানার মাধ্যমে বিরাট শিল্পপতি হয়ে উঠতে পারতেন । কিন্তু আবিষ্কারের নেশা কখনোই তাঁর পিছু ছাড়েনি। একবার তিনি এক জনসমাবেশ ডাকেন। সেখানে মঞ্চের ওপর দাঁড় করিয়ে রাখা ছিল এক টিনের বক্স, এর ওপর ছিল একটা সরু পিন ও পিনের সঙ্গে আটকে রাখা ছিল এক ধাতব চোঙ।

এডিসন সেই হাতলকে ঘোরাতে শুরু করতে গিয়ে গান ধরলেন , ‘ মেরি হ্যাড এ লিটল ল্যাম্ব ‘। তারপর হাতলটাকে দুটি তার দিয়ে একটা ব্যাটারীর সঙ্গে যোগ করে আবার ঘোরাতে শুরু করলেন। হঠাৎ সেই চোঙের ভিতর থেকে ভেসে এলো সেই গানের সুর, এই দেখে দারুণ হাততালি পড়ল দর্শকদের থেকে । অনেকে ভেবেছিলেন এটা জাদু, তখন এডিসন তাঁদের বললেন ,” এটা ম্যাজিক নয় , এটা বিজ্ঞান ” । যন্ত্রটা ছিল আধুনিক গ্রামোফোনের আদিরূপ , এডিসন এর নাম দেন ফোনোগ্রাফ। 

ফোনোগ্রাফ

বিদ্যুৎ আবিষ্কার, The discovery of electricity

  ১৮৭৮ সালের দিকে এডিসনের মাথায় মানুষকে বৈদ্যুতিক আলো দেখানোর খেয়াল চাপে। তখনকার সময়ে রাস্তায় টিমটিম করতো গ্যাসের আলো । বাড়ির ভিতর জ্বলতো মোমবাতি । এডিসন হাতের কাছে যা পেতেন তা দিয়েই ব্যাটারীর দু’প্রান্ত যোগ করে পরীক্ষা করতে লাগলেন । দিন রাত ধরে নানারকম জিনিস দিয়ে ফিলামেন্ট তৈরি করে পরীক্ষা করতে লাগলেন তিনি । তাঁর জীবনী থেকে জানা যায় যে প্রায় ন’হাজার রকম জিনিসের ফিলামেন্ট তৈরি করেছিলেন এডিসন। বহু পরীক্ষার পর অবশেষে তিনি দেখলেন যে কার্বন ভেজানো বাঁশের আঁশ দিয়ে ফিলামেন্ট তৈরি করলে কয়েক মাস ধরে আলো জ্বলবে । এভাবেই আবিষ্কৃত হয় বৈদ্যুতিক বাতি।

শ্যামল মিত্রের জীবনী, Best biography of eminent singer Shyamal Mitra in Bengali

বিদ্যুৎ আবিষ্কার

এডিসনের বৈবাহিক জীবন এবং সন্তানদের পরিচিতি, Family life

টমাস আলভা এডিসন ১৮৭১ সালের ২৫ ডিসেম্বরে ১৬ বছর বয়সি মেরি স্টিলওয়েলকে বিয়ে করেন। পরবর্তী সময়ে তাদের তিনজন সন্তানের জন্ম হয়েছিল। এই দম্পতি তাদের নাম রাখেন মেরিওন এসটেলা এডিসন (১৮৭৩–১৯৬৫), টমাস আলভা এডিসন জুনিয়র (১৮৭৬–১৯৩৫) এবং উইলিয়াম লেসলি এডিসন (১৮৭৮–১৯৩৭)।

১৮৮৪ সালের ৯ই আগস্ট মেরি এডিসননের মৃত্যু হয়, তারপর টমাস ওহাইওতে ২০ বছর বয়সি মিনা মিলারকে বিয়ে করেন। তাদের সাংসারিক জীবনে দুইজন সন্তান রয়েছে, যাদের নাম রাখা হয়  মেডেলিইন এডিসন (১৮৮৮–১৯৭৯) চার্লস এডিসন (১৮৯০–১৯৬৯),থিওডর এডিসন(১৮৯৮–১৯৯২)। চার্লস বাবার মৃত্যুর পর এডিসনের প্রতিষ্ঠানটি দেখাশোনা করেছিলেন এবং পরবর্তী সময়ে নিউ জার্সির গভর্নর নির্বাচিত হন। অন্যদিকে থিওডর ছিলেন একজন পদার্থবিদ, যার বিভিন্ন বিষয়ে ৮০টিরও বেশি পেটেন্ট রয়েছে।

এডিসনের বৈবাহিক জীবন এবং সন্তানদের পরিচিতি

বিজ্ঞানী টমাস আলভা এডিসন এর জীবনাবসান, Death of Edison

 বিশ্ব বিখ্যাত বিজ্ঞানী টমাস আলভা এডিসন ১৯৩১ খ্রিঃ ১৮ ই অক্টোবর শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর  মৃত্যু হয় ওয়েস্ট অরেঞ্জে। জীবনাবসানের সময়কালে তাঁর বয়স ছিল চুরাশি বছর। তিনি পরলোকে চলে গেলেও রেখে গেছেন তাঁর অনন্য আবিষ্কারের এক লম্বা তালিকা।

বিজ্ঞানী টমাস আলভা এডিসন এর জীবনাবসান

উপসংহার, Conclusion 

টমাস আলভা এডিসনের প্রতিভা নিঃসন্দেহে ছিল বিস্ময়কর। তিনি যে বিষয়েই হস্তক্ষেপ করেছিলেন তাতেই সাফল্য লাভ করেছেন। বিশ্ব বিজ্ঞাপনের ইতিহাসের এক বিস্ময়কর প্রতিভার স্বরূপ ছিলেন এই মহান বিজ্ঞানী। তিনি আজও বহু বিজ্ঞানী তথা বিজ্ঞামনস্ক ব্যক্তিদের কাছে অনুপ্রেরণা প্রদানকারী হিসেবে অমর হয়ে আছেন। এত কম সময়ে বিত্তশালী তথা খ্যাতিমান বিজ্ঞানী হয়ে ওঠা আর কারু পক্ষেই সম্ভব হয়নি।

 Frequently Asked Questions

টমাস আলভা এডিসন কে ছিলেন ?

 টমাস আলভা এডিসন ছিলেন মার্কিন উদ্ভাবক এবং ব্যবসায়ী ।

টমাস আলভা এডিসন এর জন্ম কবে হয় ?

 টমাস আলভা এডিসন এর জন্ম ১১ ফেব্রুয়ারি ১৮৪৭ সালে হয় ।

টমাস আলভা এডিসন এর পিতার নাম কী ?

টমাস আলভা এডিসন এর পিতার নাম স্যামুয়েল ওগডেন এডিসন জুনিয়র ।

টমাস আলভা এডিসন এর মাতার নাম কী ?

 টমাস আলভা এডিসন এর মাতার নাম ন্যান্সি মেথিউস এলিয়ট ।

টমাস আলভা এডিসন কী আবিষ্কার করেন ?

টমাস আলভা এডিসন টেলিগ্রাফ যন্ত্র আবিষ্কার করেন ।

টমাস আলভা এডিসন কবে ফোনোগ্রাফ আবিষ্কার করেন ?

টমাস আলভা এডিসন ১৮৭৭ সালে ফোনোগ্রাফ আবিষ্কার করেন ।

টমাস আলভা এডিসন কবে জন্মগ্রহণ করেন ?

 টমাস আলভা এডিসন জন্মগ্রহণ করেন ১১ ফেব্রুয়ারি ১৮৪৭ সালে হয় ।

টমাস আলভা এডিসন কবে মারা যান ?

 টমাস আলভা এডিসন মারা যান ১৮ অক্টোবর ১৯৩৩ সালে ।

Recent Posts